বর্তমানে আমরা প্রযুক্তি, শিক্ষা, বিজ্ঞান ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে অসামান্য সফলতা অর্জন করেছি। তবে এসব সফলতার পাশাপাশি আমরা আরও একটি জায়গায় সফলতা অর্জন করেছি সেটা হলো ‘কুসংস্কার’ তৈরিতে।
অনেকে হয়তো হাসি দিয়ে বলতে পারেন, আধুনিক যুগে আবার কিভাবে কুসংস্কার তৈরি হবে। আসলে আমাদের কুসংস্কারগুলো ঠাকুরমার ঝুলি কিংবা গল্পকারের গল্পে সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের প্রযুক্তি নিয়ে ব্যাপক কুসংস্কার রয়েছে অর্থাৎ প্রযুক্তি সম্পর্কে আমাদের অসংখ্য ভুল ধারণা রয়েছে।
আসুন এরকম ৫টি ভুল ধারণা নিয়ে আজকে আলোচনা করি।
প্রযুক্তি সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারনা
১. মোবাইলের ব্যাটারি ০% হলে চার্জ দিতে হবে
অনেক অনেক দিন আগে থেকে মানুষের একটা বদ্ধমূল ধারণা, ব্যাটারি চার্জ একদম জিরো না করে চার্জ দিলে ব্যাটারি তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। আপনারও যদি এ রকম ধারণা থেকে থাকে, তবে আজকে থেকে তা পরিহার করুন। কারণ এই ধারণাটা প্রযোজ্য কেবল নিকেল ক্যাডমিয়াম ব্যাটারির ক্ষেত্রে।
বর্তমান কালের লিথিয়াম-আয়ন এবং লিথিয়াম-আয়ন পলিমার ব্যাটারির ক্ষেত্রে এই ধারণা প্রযোজ্য নয়। আপনার ব্যাটারি ৪০%-৮০% এর মধ্যেই চার্জ করা ভালো। প্রয়োজনে আপনার মোবাইল ফোনের সাথে দেওয়া, ম্যানুয়াল বইটি পড়ে দেখতে পারেন। আপনি এ ধরনের ব্যাটারি যেভাবেই চার্জ করুন না কেন, এটা মোটামুটি ২-৩ বছর সেরা সার্ভিস দিবে।
তাহলে জানলেন যে ব্যাটারি ০% হলে চার্জ দিতে হবে, এটা ভুল। এবার আরো জেনে নিন ব্যাটারি চার্জ করার সময় যে ১০টি কাজ কখনোই করা উচিৎ নয়। আপনি হয়তো এগুলোর কোন না কোনটি করে থাকেন। তবে, যেহেতু এখন আপনি জানলেন, ভবিষ্যতে আর করবেন না, করবেন কি?
২. লেবু দিয়ে মোবাইল চার্জ
আজকের দিনে অনলাইন বা ইউটিউব দেখে, অধিকাংশ মানুষের ধারণা লেবু দিয়ে মোবাইল ফোন চার্জ করা যায়। তবে এ ধরনের ধারণা শুরু হয় ম্যাকগাইভারের টিভি সিরিয়ালের মাধ্যমে।
লেবুর রসে নিমজ্জিত তারগুলো কেবলমাত্র একটি ভোল্টের একটি ছোট ভগ্নাংশ তৈরি করতে পারে, যা প্রায় একটি ফোন চার্জ করতে পারে না।
যদি আপনি আমাকে বিশ্বাস না করেন এবং কিছু মনে না করেন তবে চার্জার তার কেটে বাড়িতেই চেষ্টা করতে পারেন।
কারণ, যদি লেবু দিয়ে ব্যাটারি চার্জ করা যেত, তবে পাওয়ার ব্যাংক প্রস্তুতকারী কোম্পানিরা পাওয়ার ব্যাংক বাদ দিয়ে লেবু চাষে মনোযোগী হত।
৩. প্রাইভেট ব্রাউজিং ইন্টারনেটে নিজেকে অ্যানোনিমাস রাখে
আপনি যদি ব্রাউজিং হিস্ট্রি লুকানোর চিন্তা ভাবনা করেন, তবে প্রাইভেট ব্রাউজিং এর ধারনা ঠিক আছে। প্রাইভেট ব্রাউজিংকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয় যেমন: InPrivate, Private Browsing, Incognito or Private Tab।
এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে, আপনার কম্পিউটার বা মোবাইল স্বামী-স্ত্রী, অফিস সঙ্গী, বন্ধু, বাচ্চা কিংবা অন্যদের হাতে গেলেও তারা জানবে না, আপনি কোন ওয়েবসাইটে কি পরিদর্শন করেছেন।
কিন্তু আপনি যদি মনে করেন এভাবে ইন্টারনেট ব্রাউজিং করলে আপনি অনেক নিরাপদ, তবে এ ধারণা ভুল। এভাবে ইন্টারনেট ব্রাউজ করলেও প্রায় সকল ওয়েবসাইটই আপনার সম্পর্কে তথ্য নিতে পারবে।
৪. যত বেশী মেগাপিক্সেল তত ভাল ক্যামেরা
ডিজিটাল ক্যামেরার লক্ষ লক্ষ মাইক্রোস্কোপিক লাইট সেন্সরকে পিক্সেল বলে আখ্যায়িত করা হয়। আর এই পিক্সেল বৈদ্যুতিক সংকেতগুলোকে একটি ছবিতে রূপান্তরিত করে।
পিক্সেলের থেকে বেশী জরুরি সেন্সর। তাই ৬ বা ৮ মেগাপিক্সেল সেন্সর সহ একটি ক্যামেরা একটি ১৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরার চেয়ে ভাল ছবি সরবরাহ করতে পারে।
তাই ভাল মানের ছবির জন্য শুধু মেগাপিক্সেলের নয়, সেন্সর এবং রেজুলেশনের দিকেও লক্ষ্য রাখুন। আর এ ফাঁকে দেখে নিন বর্তমান বাজারে সবচেয়ে ভাল ক্যামেরার ১০টি স্মার্টফোনের তালিকা।
৫. প্রতিদিন রাতে কম্পিউটার বন্ধ করা উচিত
আপনি যদি মনে করেন শুধুমাত্র কম্পিউটার বন্ধ করে রাখলে, কম্পিউটারে ভালো থাকবে কিংবা বিদ্যুৎ বিল কমা আসবে। তবে বলতে হবে আপনি ভুল ধারণার মধ্যে আছেন।
কম্পিউটার বন্ধ না করে Sleep কিংবা Hibernate করে রাখলে বন্ধ করার থেকে বেশি ভালো কাজে দিবে। কারণ কম্পিউটার স্লিপ করে রাখলে কোন ধরনের বিদ্যুৎ খরচ করবে না। এছাড়া প্রতিবার কম্পিউটার চালু করার সময় পাওয়ার সাপ্লাই এবং হার্ড-ডিস্কের উপর যে চাপ পড়ে, সেটাও আর পড়বে না। এ কাজ আপনি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগেও করতে পারেন কোন সমস্যা নেই।
আর কাজ করতে করতে যদি কখনো আপনার কম্পিউটার স্লো মনে হয়, তবে একবার রিস্টার্ট দিলেই হবে। তাহলে, জেনে গেলেন যে, কম্পিউটার প্রতিদিন রাতে বন্ধ করা উচিৎ, এ কথাটিও ভুল। তারপরও আরো ভাল বোঝার জন্যে ইয়ারুপ কায়সারের লেখা থেকে জেনে নিতে পারেন কম্পিউটার আসলে কত সময় পর পর বন্ধ করা উচিৎ।
Leave a Reply