আপনার কাছে কি পুরোনো স্মার্টফোন আছে? যদি থেকে থাকে, তাহলে পুরোনো স্মার্টফোনকে নতুন করে ব্যবহার করার পদ্ধতি নিয়ে আপনার জন্যে এই আর্টিকেল। পুরোনো স্মার্টফোনকে পুনরায় ব্যবহার করার পাঁচটি স্মার্ট উপায় নিয়ে লেখা এটি। আপনার পুরোনো অ্যান্ড্রয়েড ফোনটিকে আপনার নিজের ব্যক্তিগত ব্যবহার থেকে শুরু করে অন্যের জন্যে অন্যান্য নানা কাজে ব্যবহার করতে পারেন।
এমন কি, আপনার বাসায় বসে থেকেই ক্যান্সার- ইবোলার মত মারাত্নক ব্যাধির নিরাময় আবিষ্কার করার মত মহান কাজে নতুন করে ব্যবহার করতে পারেন পুরনো ফোন। পুরনো ফোন দিয়ে সামাজিক কাজে কন্ট্রিবিউশন করার মত বিশ্বজনীন অবদান রাখতেও কীভাবে ব্যবহার করতে পারেন, সেটাই আমরা দেখব এই পোস্টে।
এক্ষেত্রে শুরুতেই একটা কথা বলে নেই, পুরানো ফোনগুলো সাধারণত অনেক স্লো হয়ে যায়। তাই, আর রেগুলার ইউজের উপক্রম থাকে না। কিন্তু যদি এর থেকে অপ্রয়োজনীয় সব অ্যাপস ফেলে দিয়ে আমরা শুধু একটি মাত্র উদ্দেশ্যে ব্যবহার করি, তাহলে কিন্তু খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
সাধারণত, আমাদের ফোনগুলোতে ব্রাউজার অ্যাপস, পিডিএফ রিডার অ্যাপস, বিভিন্ন গেইমস-সহ আরও অনেক আলাদা আলাদা ধরণের অ্যাপস থাকে। এতকিছুর বদলে যদি আমরা কেবল একটা মাত্র টাইপের অ্যাপসগুলো রেখে দেই, তাহলে কিন্তু ফোনের স্লো হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা তেমন একটা বুঝা যাবে না।
পুরোনো স্মার্টফোনকে নতুন করে ব্যবহার করার পদ্ধতি
তো, চলুন আমরা কথা না বাড়িয়ে দেখে নেই, অসাধারণ পাঁচটি উপায়, যাতে করে আপনার পুরনো অ্যান্ড্রয়েড ফোনটিকে আবার নতুন উপায়ে ব্যবহার করতে পারবেন নতুন একটা ডিভাইস হিসেবে।
১) ডেডিকেটেড ডিভাইস হিসেবে
যে কথাটা এতক্ষণ বলছিলাম, আপনার ফোন থেকে সব ব্রাউজার অ্যাপস, গেইমস-সহ অন্য সব ধরণের অ্যাপস আন-ইন্সটল করে আপনার পুরাতন অ্যান্ড্রয়েড ফোনটাকে খুব সহজেই কিন্তু আপনি ব্যবহার করতে পারেন ই-বুক রিডার হিসেবে। অথবা শুধুমাত্র ক্যালেন্ডার, নোটবুক আর স্কেজ্যুলার অ্যাপসগুলো রেখে দিয়ে আপনি আপনার ফোনটিকে ব্যবহার করতে পারেন ডিজিটাল ডায়েরি হিসেবে। এরকম আরও অন্যান্য ডেডিকেটেড ডিভাইস হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন আপনার পুরাতন অ্যান্ড্রয়েড ফোন।
এছাড়াও আপনার পুরাতন মোবাইল ফোনটিকে ডিজিটাল ক্যালেন্ডার, ডিজিটাল ফটোফ্রেম, আপনার গাড়ির জিপিএস ট্র্যাকারসহ এরকম আরও অনেক ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যে ডেডিকেটেডভাবে ব্যবহার করতে পারেন।
২) আপনার পিসির ওয়্যারলেস ট্র্যাকপ্যাড হিসেবে
আপনার পুরানো অ্যান্ড্রয়েড ফোনে শুধুমাত্র পিসি কন্ট্রোলার অ্যাপস রেখে, সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন আপনার পিসির ওয়্যারলেস ট্র্যাকপ্যাড হিসেবে। গুগোল প্লে-স্টোরে গেলে এমন অনেক অ্যাপস পাবেন, যেগুলো ইন্সটল করে খুব সহজেই আপনি আপনার পুরাতন অ্যান্ড্রয়েড ফোনটাকে ব্যবহার করতে পারবেন আপনার পিসির মাউস বা ওয়্যারলেস ট্র্যাকপ্যাড হিসেবে।
আর সাজেশন চাইলে উইনিফাইড রিমোট নামের এই অ্যাপসটি ব্যবহার করতে পারেন। প্লেস্টোরে এর ফ্রি ভার্শনও পাবেন আবার প্রিমিয়ার ভার্শনও ৩.৯৯ ডলারে কিনতে পারবেন।
৩) ইউনিভার্সাল স্মার্ট রিমোট হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন
আপনার পুরাতন হয়ে যাওয়া অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসটিকে ইউনিভার্সাল স্মার্ট টিভি রিমোট হিসেবেও কিন্তু ব্যবহার করতে পারেন। আপনার যদি সনি, প্যানাসনিক বা অন্য কোন ব্র্যান্ডের স্মার্ট টিভি থাকে, তাহলে প্লে-স্টোরে অনেক স্মার্ট রিমোট অ্যাপস পাবেন। সেগুলোর কোন একটি ইন্সটল করে আপনার মোবাইল ফোনটিকে আপনার স্মার্ট টিভির রিমোট কন্ট্রোলার বানিয়ে ফেলতে পারেন। আমাদের এখানে আগেই প্রকাশিত সেরা ১০টি ফ্রি টিভি অ্যাপস্ থেকে যে কোনটি ইন্সটল করতে পারেন।
স্মার্ট টিভির রিমোট হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়াও এখন কিন্তু প্লে-স্টোরে থাকা বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে। এমন কি, এয়ার কন্ডিশনারের রিমোর্ট কন্ট্রোলার হিসেবেও ব্যবহার করা যায় স্মার্টফোনকে।
৪) বৈজ্ঞানিক গবেষনার ক্ষেত্রেঃ
হ্যাঁ, আপনার ফোন আপনি ঘরে বসেই আপনি দান করতে পারেন বৈজ্ঞানিক গবেষনার উদ্দেশ্যে। ভাবছেন কীভাবে? বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষনা সংস্থা আছে, যারা তাদের অ্যাপের মাধ্যমে আপনার ফোনের অবশিষ্ট প্রোসেসিং পাওয়ার তাদের গবেষনার কাজে ব্যবহার করেন। এদের মধ্যে অন্যতম হল বোইঙ্ক – BOINC (Berkeley Open Infrastructure for Network Computing). এরা পদার্থবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং বায়োমেডিসিন নিয়ে গবেষনা করেন। এদের গবেষনায় সাহায্য করতে চাইলে, তাদের নিজস্ব অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও, ভোডাফোন ফাউন্ডেশন এবং অস্ট্রেলিয়ার গার্ভান ইন্সটিটিউট অফ মেডিকেল রিসার্চ এর যৌথ প্রোজেক্ট ড্রিমল্যাবে কন্ট্রিবিউট করতে পারেন। যেখানে, ক্যান্সারের প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য গবেষনা চলছে। ওখানে কন্ট্রিবিউট করতে চাইলে, ডাউনলোড করতে পারেন তাদের ড্রিমল্যাব অ্যাপটি।
এছাড়াও, মাইশেক আপনার মোবাইলের সেন্সর ব্যবহার করে ভূমিকম্প ডিটেকট এবং এনালাইজ করে। সেখানেও আপনি আপনার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন।
৫) সিকিউরিটি ক্যামেরা হিসেবে
আপনার পুরোনো অ্যান্ড্রয়েড ফোনটিকে আপনি সিকিউরিটি ক্যামেরা হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। আর এই জন্য বাকি সবগুলো পয়েন্টের মতই, আপনার মোবাইলের অন্যান্য অ্যাপ-ডাটা সবকিছু আনইন্সটল করে, ইন্সটল করতে পারেন সেরা ৫টি হোম সিকিউরিটি অ্যাপস্ এর যে কোনটি।
এটা দিয়ে খুব সহজেই আপনার মোবাইলকে সিকিউরিটি ক্যামেরা হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। আর পরে লাইভ ভিডিওতেও যেমন একদিক দিয়ে একসেস করতে পারবেন যে কোন ওয়েব ব্রাউজার, তেমন অন্যদিকে ভিডিও সেইভও করে রাখতে পারবেন ড্রপবক্স থেকে সেরা ৫টি ফ্রি ক্লাউড স্টোরেজে। এতে করে পরবর্তীতেও চেক করার সুযোগ থাকবে ভিডিওটা।
যাই হোক, এই ছিল আজকের মত আপনার পুরোনো স্মার্টফোনকে পুনরায় ব্যবহার করা নিয়ে আলোচনা। ফোন পুরাতন হয়ে গেলে প্রথমেই যে আমাদের মাথায় বিক্রয় করার আইডিয়া আসে, সেটাও খারাপ না। কিন্তু, যদি একটু ভিন্ন কিছু করতে চান, তাহলে পেপার ওয়েট হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়াও আরও অনেক সুন্দর সুন্দর উপায়ে ব্যবহার করতে পারেন। আর এগুলো ছাড়াও আপনাদের যদি অন্য কোন আইডিয়া থাকে পুরোনো স্মার্টফোন পুনরায় ব্যবহার করার ব্যাপারে, তাহলে কমেন্ট বক্সে সেটা আমাদেরকে জানাতে ভুলবেন না।
Leave a Reply