আপনি নিশ্চয়ই জানেন পুরনো মোবাইল কেনা-বেচা করে আয় করা যায়। হয়তো সবগুলো উপায় বা সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন না। এ লেখায় আজ আপনি পুরনো স্মার্টফোন কিনে আবার সেটি বিক্রি করে আয় করার নানা রকম উপায় জানবেন।
সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন কেনা-বেচা হতে পারে আপনার আয়ের একটি দারুণ উৎস। ইংরেজীতে এটাকে বলে ফোন ফ্লিপিং বা স্মার্টফোন ফ্লিপিং এবং এটি বিভিন্ন দেশে দারুণ জনপ্রিয়। আমাদের দেশেও কিছু বুদ্ধিমান লোক এই কাজটি করছেন।
বিশেষ করে যাদের মোবাইল ফোনের দোকান রয়েছে কিংবা নষ্ট ফোন ঠিক করার দোকান আছে, তারা এই ব্যবসাটি করছেন। আপনি চাইলে ব্যক্তিগত উদ্যোগেই লাভজনক এই ব্যবসাটি করতে পারেন।
আর আপনার যদি মোবাইল ফোন বিক্রি বা সারাইয়ের দোকান থাকে, তাহলে তো আপনার জন্যে এই ব্যবসা করা আরো সহজ। না থাকলেও সমস্যা নেই, দোকান ছাড়াই আপনি এই দোকানদারি করতে পারেন।
পুরনো স্মার্টফোন ক্রয়-বিক্রয়ের ৫টি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ব্যবহার করে আপনি আপনার ব্যবসা স্টার্ট করতে পারেন। পরবর্তীতে আপনার জন্যে ফোন কেনা এবং বেচার আরো অনেক দরজা খুলে যাবে। তবে, ব্যবসা দাঁড় করাতে অর্থাৎ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আয়ের পর্যায়ে যেতে আপনার হয়তো কিছুটা সময় লাগবে। কিন্তু নিশ্চিত থাকতে পারেন যে আপনার ব্যবসা দাঁড়াবেই, আপনি অবশ্যই ভাল অংকের টাকা আয় করতে পারবেন। আজ আপনাকে আয় করার সেই উপায়গুলোই জানাবো।
পুরনো স্মার্টফোন কেনা-বেচা করে আয় করার উপায়
উপায়টি একেবারেই সিম্পল, আপনি কম দামে স্মার্টফোন কিনবেন আর তার থেকে যতটা সম্ভব বেশি দামে বিক্রি করে দেবেন। তবে, এটার জন্যে আপনার সাধারণ কিছু অভিজ্ঞতার প্রয়োজন, বিশেষ করে স্মার্টফোন সম্পর্কে মোটামুটি আইডিয়া থাকা দরকার।
একটা ফোনের প্রসেসর, র্যাম, স্টোরেজ এবং অন্যান্য ফিচার সম্পর্কে জানা থাকা জরুরী। তা না হলে আপনি বুঝতে পারবেন না কোন ফোনটা ঠিক কত টাকায় বিক্রি করতে পারবেন। আর এটা বুঝতে না পারলে কিনতে গিয়ে আপনি ঠকে যাবেন। সুতরাং, ব্যবসা ফ্লপ। এটা যদিও যে ৫টি ব্যবসা কখনো ফ্লপ খায় না, তার মধ্যে পড়ে না, তবু আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না আপনার ফোন কেনা-বেচার ব্যবসাটা ফ্লপ খেয়ে যাক। তাই, ফোন সম্পর্কে পুরোপুরি না হলেও অন্তত পক্ষে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ধারণা থাকা উচিৎ। নৈলে আপনি এই ব্যবসা করতে পারবেন না, অর্থাৎ এখানে সফল হবেন না।
প্রথমেই বলেছি, এ উপায়টি খুবই সিম্পল। আর আপনি যদি এই সিম্পল উপায়টিতেই এক্সপার্ট হয়ে যেতে পারেন, তবে আপনি এই ফোন ফ্লিপিং ব্যবসাটি করতে পারবেন এবং সফল হবেন। এটা শুধু এই ব্যবসাতেই নয়, যে কোনও ব্যবসাতেই সফল হতে হলে আপনাকে “Buy Low, Sell High” এর সিম্পল উপায়টি ব্যবহার করতে হবে।
কেন কেনা-বেচার জন্যে মোবাইল ফোন বেছে নেবেন?
কারণ, বর্তমান সময়ে প্রায় প্রত্যেকের পকেটেই মোবাইল ফোন রয়েছে আর প্রত্যেকেই হয় বাটন ফোন, না হয় স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন। যারা বাটন ফোনে আছেন, তাদের একটা বিশাল অংশ ধীরে ধীরে স্মার্টফোনের দিকে ঝুঁকছে। আর যারা স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন, তাদের একটা বড় অংশ প্রতিনিয়তই ফোন পাল্টাচ্ছেন। পুরনো ফোনটি বিক্রি করে দিচ্ছেন আর বাজারে আসা নতুন মডেলের ফোন কিনছেন।
কাজেই, এখানে ব্যবসা করার বড় স্কোপ রয়েছে। কারণ, স্মার্টফোন অন্যান্য নানা রকম পণ্যের মতো পড়ে থাকে না, বিক্রি হয়ে যায়। সুতরাং, এটি কেনা-বেচা সহজ, যেহেতু মোবাইল ফোনের একটা বিশাল বাজার আগে থেকেই তৈরি হয়ে আছে। কাজেই, ব্যবসার জন্যে কাউকেই এখানে নতুন করে বাজার তৈরি করার প্রয়োজন নেই।
পুরনো ফোন কেনা-বেচার ব্যবসায় কেমন পুঁজি লাগবে ?
যদিও মাত্র ৫ হাজার টাকা দিয়েই আপনি এই ব্যবসা শুরু করে দিতে পারেন, তবু আমি মনে করি আপনার প্রাইমারি পুঁজি কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা হওয়া উচিৎ। ৫ হাজার টাকায় শুরু করতে পারেন এইভাবে যে, আপনি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার একটা ফোন কিনবেন এই ৫ হাজার টাকায়। এরপর, এটাকে সেল করে দেবেন ৬ থেকে ৮ হাজার টাকায়।
ধরে নিলাম, দুইটার মাঝামাঝি অর্থাৎ ৭ হাজার টাকা। তাহলে, আপনি লাভ করলেন ২ হাজার টাকা। এখন আপনার পুঁজি হয়ে গেল ৭ হাজার। এবার এই ৭ হাজার টাকা দিয়ে ১৩ থেকে ১৮ হাজার টাকা দামের একটা ফোন কিনে নিন। এরপর, এটাকে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করুন।
ধরে নিলাম, ২ হাজার টাকা লাভ করলেন। তাহলে, আপনার পুঁজি দাঁড়ালো ৯ হাজার টাকা। এভাবে আপনার পুঁজি বাড়তে থাকলো। যখন আপনার পুঁজি ২০ হাজার টাকার মতো হয়ে যাবে, তখন আপনি ৩/৪টা ফোন কিনতে পারবেন এবং প্রতিটি থেকে যে লাভ আসবে সেটা আপনার পুঁজি আরো বাড়িয়ে দেবে।
আর যদি আপনি শুরুতেই ২০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন, তাহলে আপনার ব্যবসা আরো দ্রুত দাঁড়াবে। কারণ, শুরুতেই আপনি ৩/৪টা ফোন কিনতে পারছেন এবং সেগুলো থেকে লাভ এসে আপনার পুঁজি বাড়িয়ে দিচ্ছে। কাজেই, চেষ্টা করুন প্রথম দিকেই একটু ভাল পুঁজি নিয়ে নামতে।
কারা করতে পারেন পুরনো ফোনের ব্যবসা?
যদিও এই ব্যবসা সবাই করতে পারেন, তবে সবার জন্যে এটা যুৎসই হবে না। যেহেতু এটা ছোট উদ্যোগ, ছোট আকারের ব্যবসা, তাই এটি সবচেয়ে উপযোগী হচ্ছে ছাত্রদের জন্যে, যারা এখনো কর্ম জীবনে পদার্পণ করেনি।
আবার, যারা কর্ম জীবনে রয়েছেন কিন্তু বেতন তেমন একটা সন্তোষজনক নয়, সেই সাথে কর্মস্থলে সময় দিয়ে হাতেও বেশ সময় থাকে, তাদের জন্যেও ফোন ক্রয়-বিক্রয়ের এই ব্যবসাটি বেশ উপযোগী হবে। আর যারা বেকার, হাতে প্রচুর সময়, তাদের জন্যেও চমৎকার একটি ছোট ব্যবসা হতে পারে এটি।
কোথা থেকে কিনবেন আর কোথায় বিক্রি করবেন?
শুরুর দিকে আমাদের দেশের জনপ্রিয় কেনা-বেচার ওয়েবসাইটগুলো থেকে কিনতে পারেন। এগুলোর মাঝে পুরনো স্মার্টফোনের বিশাল বাজার রয়েছে নিচের ওয়েবসাইটগুলোতে-
ক্রয়-বিক্রয়ের এই ওয়েবসাইটগুলো নিয়ে বিস্তারিতভাবে লেখা একটি পোস্টের লিংক এই লেখার ভূমিকাতে দেয়া হয়েছে। পঞ্চম প্যারাগ্রাফে থাকা এই লিংকে ক্লিক করে সাইটগুলো সম্পর্কে আরো বিস্তারিতভাবে জেনে নিতে পারেন। এগুলো ছাড়াও পুরনো ফোন কেনার আরো কিছু ওয়েবসাইট আছে যেগুলোতে একই সাথে বিক্রিও করা যায়।
শুরুর দিকে আপনি এসব ওয়েবসাইট থেকে কিনতে পারেন আর আপনার এলাকার বন্ধু-বান্ধব এবং পরিচিতদের কাছে বিক্রি করতে পারেন। আপনি যদি পড়াশুনায় থাকেন, তবে স্কুল, কলেজ এবং ইউনিভার্সিটির বন্ধু সার্কেলে বিক্রি করতে পারেন। আস্তে আস্তে যখন আপনার একটি বড় সার্কেল তৈরি হবে, সবাই যখন জানবে যে আপনি পুরনো ফোন কেনেন ও বিক্রি করেন, তখন অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে বিক্রি করার জন্যে আপনার কাছে ফোন নিয়ে আসবে। এমনকি, কেনার জন্যে অনেক ক্রেতা আসবে। আর এভাবেই আপনার ব্যবসাটি বড় হতে থাকবে।
বিক্রি করার জন্যে আপনার আরেকটা ভাল জায়গা হচ্ছে ফেসবুক। ফেসবুকে এমন অনেক পেজ ও গ্রুপ পাবেন যেগুলোতে পুরনো ফোন বিক্রি হয়। গ্রুপ ও পেজগুলোতে জয়েন করুন। কয়েকদিন এগুলোতে লাইক ও কমেন্ট করে আপনার অ্যাক্টিভিটি বাড়ান। এরপর, আপনার নিজের ফোনও বিক্রির জন্যে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে পোস্ট করুন। এছাড়াও, আপনি নিজেও একটি পেজ খুলে নিতে পারেন।
পুরনো ফোন কেনা-বেচার ব্যবসায় আপনার সাফল্য কামনা করে আজ এখানেই বিদায়।
anika tahsin says
হৈচৈ বাংলা একটি দারুণ ওয়েব সাইট, ভালো লেগেছে ওয়েবসাইটের কন্টেন্টগুলো, এই লেখাটিও।