নতুন স্মার্টফোন কেনার পর করণীয় প্রথম কাজগুলো কি কি এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর অনেক অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহাকরারীর নিকটই এখনও অজানা। বেশ কয়েক বছর আগেও মানুষ একটি ফোন কিনে সেটি কত বছর ধরে ব্যবহার করা যাবে সেই হিসাব করতে ব্যস্ত থাকতো, কিন্তু এখন আর তেমনটি হয় না। অধিকাংশক্ষেত্রেই একজন ব্যবহারকারী একটি ফোন কতদিন ব্যবহার করবেন তা নির্ভর করছে স্মার্টফোন ও অপারেটিং সিস্টেমগুলির প্রযুক্তিগত আপডেট এর উপর।
বর্তমানে দেখা যায় যে, স্মার্টফোন বা অপারেটিং সিস্টেমগুলির নতুন কোন আপডেট আসলেই প্রযুক্তিপ্রেমীরা তাদের পুরাতন ফোনটি বদলে নতুন ফোন কেনার জন্য আগ্রহী হয়ে থাকেন। কিন্তু নতুন ফোন কেনার পর করণীয় কাজগুলি সম্পর্কে তাদের অনেকেই এখনো অবগত নন। ফলে কিছু সাধারণ সেটিংস এবং কাস্টমাইজেশন না করার ফলে তাদের শখের কেনা ফোনটি আশানুরুপ পারফরমেন্স দিতে সক্ষম হয়ে ওঠে না।
স্মার্টফোন কেনার পর করণীয়
একটি স্মার্টফোন কেনার পর পরই সেটি ব্যবহারের পূর্বে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাস্টমাইজেশনের প্রয়োজন হয় যা একে ব্যবহারীর কাছে অধিক পরিমাণে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। স্মার্টফোনের সকল ফিচারের সুযোগ সুবিধা ভোগ করার জন্য এই সেটিংসগুলো অনেক বেশি প্রয়োজনীয়। তাই চলুন দেরী না করে জেনে নেওয়া যাক আপনার ফোনটি শো-রুম থেকে বাসায় নিয়ে আসার পর সেটি ব্যবহারের পূর্বে আপনার করণীয় কাজগুলো সম্পর্কে।
ডিভাইসটি পর্যবেক্ষণ করুন
আপনার ফোনটি বাসায় নিয়ে আসার পরেই আপনার প্রথম কাজটি হলো আপনার ক্রয়কৃত ডিভাইসটির সাথে প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রাংশ সরবরাহ করা হয়েছে কিনা সে ব্যাপারটি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া। সাধারণ একটি স্মার্টফোনের সাথে হেডফোন, চার্জার, ওয়ারেন্টি কার্ড ইত্যাদি দেওয়া হয়ে থাকে। কিছু কিছু স্মার্টফোনে এর অতিরিক্তভাবেও বেশ কিছু অ্যাক্সেসরিজ দেওয়া হয়ে থাকে। তাই ফোনটি বাসায় আনার পরেই ধীরভাবে মিলিয়ে দেখতে হবে শো-রুম থেকে সবকিছু সঠিকভাবে সরবরাহ করা হয়েছে কিনা।
ডাটা ডাউনলোডের জন্য প্রস্তুতি নিন
এবার ফোনটিকে চার্জারের সাথে সংযুক্ত করে চার্জে বসিয়ে দিন এবং যতক্ষণ না পর্যন্ত ফোনটির ব্যাটারী সম্পূর্ণরুপে চার্জ হচ্ছে ততক্ষণ অপেক্ষা করুন। কারণ, প্রথম ব্যবহারের জন্য ফোনটিকে পুরোপুরি চার্জ করে নেওয়া খুবই জরুরী। একই সাথে ফোনটি পরিচালনার জন্য আপনার যে সকল অ্যাপস এবং টুলস এর প্রয়োজন হবে তার জন্য ফোনটিকে ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত করে সেগুলো ডাউনলোড করার জন্য প্রস্তুতি নিন।
ফোনটিকে আপনার গুগল অ্যাকাউন্টের সাথে সংযুক্ত করুন
প্রথমবার যখন আপনি আপনার ফোনটিকে অন করেন, তখন অবশ্যই লক্ষ্য করে থাকবেন যে আপনাকে আপনার গুগল অ্যাকাউন্টটি ফোনে যুক্ত করার জন্য বলা হয়। আপনি ইচ্ছা করলে এই মুহুর্তে এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন না করেও চলে যেতে পারেন কিন্তু আমি আপনাদের অবশ্যই বলব এটি না করার জন্য। কারণ গুগল আপনার ফোনটিকে অন্যান্য আরো হাজার হাজার পরিসেবা গ্রহণের জন্য উপযুক্ত করে তোলে এবং আপনার ফোন কাস্টমাইজেশনের প্রথম পদক্ষেপই হলো ফোনকে গুগলের সাথে সংযুক্ত করা।
গুগল অ্যাকাউন্ট অ্যাক্টিভেট করার সাথে সাথে আপনার ফোনের ইমেইল, ক্যালেন্ডার, কনট্যাক্ট লিষ্ট এবং অন্যান্য আরো অনেক কিছু স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করা শুরু করবে। তাছাড়া আপনাকে ফোনটি পরিচালনার জন্য গুগল প্লে ষ্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করার জন্যেও অবশ্যই এটি করতে হবে।
ব্লোটওয়্যার ডিজেবল করুন
প্রত্যেকটি নতুন স্মার্টফোনেই নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কিছু অ্যাপ আগে থেকেই ইনষ্টল করে দিয়ে থাকে। এগুলোকে ব্লোটওয়্যার বলা হয়। এই অ্যাপগুলো সাধারণত আমাদের কোন কাজেই আসে না বরং এগুলো বিনা কারণে আমাদের ফোনের মেমরী ব্যবহার করে ফোনের স্টোরেজ দখল করে এবং ফোনকে স্লো করে ফেলে। আপনার ফোনের সামর্থকে আরো বেশি কাজে লাগাতে এ ধরনের অ্যাপগুলো ডিজেবল করা খুবই জরুরী।
অনেক ফোনের ক্ষেত্রে নতুন অ্যাকাউন্ট সেটআপ করার সময় বিভিন্ন অ্যান্টিভাইরাস বা মালওয়্যার প্রোটকশনের অফার করা হয়। এ ধরনের সার্ভিসগুলি অবশ্যই এড়িয়ে চলুন। নতুন ফোন সেটআপ করার সময় একমাত্র গুগল ছাড়া অন্য কোন অ্যাকাউন্ট বা সেবার সাথে যুক্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই।
একবার আপনার ফোনটি ব্যবহারের জন্য তৈরী হয়ে গেলে আপনাকে সেটিংস এ যেয়ে আগে থেকে ইনষ্টল থাকা অ্যাপগুলোকে ডিজেবল করে দিতে হবে। কারণ নির্মানগত পলিসির কারণে একমাত্র রুট করা ছাড়া আপনি এই অ্যাপগুলো আনইনষ্টল করতে পারবেন না।
ডিভাইসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন
একটি স্মার্টফোনে হাজারো স্পর্শকাতর তথ্য থাকে। বিশেষ করে যারা অনলাইনে পেমেন্ট করে সেবা বা পণ্য ক্রয় করেন তাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফোনে জমা থাকে। তাই সেগুলোকে সুরক্ষা করার জন্য ডিভাইসের নিরাপত্তার ব্যাপারটি আগেই নিশ্চিত করতে হবে।
সব ফোনেই পিন এবং প্যাটার্ন লকের ব্যবস্থা থাকে। হাল সময়ের ফোনগুলিতে আবার ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে যা পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি দ্রুত এবং নিরাপদ। তাই ফোন ব্যবহারের পূর্বেই ফোনকে অনাকাঙ্খিত হস্তক্ষেপ থেকে রক্ষা করতে এ ধরনের সেটিংসগুলি আগেই করে নিতে হবে।
স্মার্টফোন কেনার পর করণীয় বিষয়গুলির দিকে খেয়াল না দিয়ে আমরা অনেকেই সেটি ব্যবহারের জন্য উৎসুক হয়ে পড়ি। এর কারণে অনেক সময় অতীব প্রয়োজনীয় অনেক সেটিংস করার কথা আমাদের মনে থাকে না। স্মার্টফোন ক্রয়ের পর অবশ্যই উপরের বিষয়গুলি ছাড়াও মোবাইল ট্র্যাকিং এবং অ্যান্টি থেফট্ এর মত ফিচারগুলি সঠিকভাবে সেটআপ করে নিয়ে তারপরেই ব্যবহার করা উচিত। এটি না করা হলে ভবিষ্যতে ডিভাইসটি হারিয়ে গেলে, চুরি হলে বা তথ্য চুরি হলে আপনার আর কিছুই করার থাকবে না।
শাহরিয়ার আহমেদ says
নতুন কেনা স্মার্টফোনের স্মার্ট ব্যবহারের জন্য উপকারী টিপস, লেখককে ধন্যবাদ 🙂