আমাদের দেশের অনেক এলাকাতেই এখন পর্যন্ত মোবাইলের নেটওয়ার্ক অত্যন্ত দূর্বল। বিশেষ করে, গ্রাম এলাকাগুলোতে মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়াটা বেশ ভাগ্যের ব্যাপার। শহরে যদিও নেটওয়ার্ক নিয়ে তেমন একটা সমস্যায় পড়তে হয় না, কিন্তু গ্রামে নেটওয়ার্ক এতই দূর্বল থাকে যে, আমাদেরকে ইন্টারনেটের স্পিড বাড়ানোর উপায় নিয়ে ভাবতে হয়।
আপনিও যদি গ্রামে বাস করেন, কিংবা এমন এলাকায় থাকেন যেখানে নেটওয়ার্ক সিগন্যাল পাওয়াটাই কঠিন, তবে আপনার জন্যেই হৈচৈ বাংলার আজকের টিউটোরিয়াল। এই টিউটোরিয়াল থেকে জানবেন দূর্বল মোবাইল নেটওয়ার্কে ইন্টারনেটের স্পিড পাওয়ার উপায় যা হয়তো আপনার হতাশা দূর করে দেবে।
এটা আসলেই খুব হতাশার ব্যাপার যে, ফোন কোম্পানীগুলোকে ঠিকই নেট বিল দিচ্ছেন, অথচ ঠিক মতো নেট ব্যবহার করতে পারছেন না। আমাদের দেশের মোবাইল অপারেটর কোম্পানীগুলো ফোরজি ফোরজি করে মুখে ফ্যানা তুলে ফেলছে, চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে নেটের বিভিন্ন প্যাকেজ বিক্রি করছে, কিন্তু নেটের স্পিড দিতে পারছে না।
অধিকাংশ সময় সাধারণ ইউজাররা জানতেও পারে না যে তারা কতটুকু স্পিড পাচ্ছে। আমাদের ফোন কোম্পানীগুলো এক্ষেত্রেও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকে। কাজেই, তাদের কথার উপর নির্ভর না করে নিজেই ইন্টারনেটের স্পিড চেক করে নিন। তবে, স্পিডের অবস্থা দেখে হতাশ হবেন না।
ইন্টারনেটের স্পিড নিয়ে আপনার হতাশা দূর করার জন্যেই আমাদের আজকের পোস্ট।
দূর্বল নেটওয়ার্কে নেট চালাতে হলে আপনাকে কিছু টেকনিক অ্যাপ্লাই করে নেটের স্পিড বাড়িয়ে নিতে হবে। আসুন, সেই টেকনিক অর্থাৎ স্পিড বাড়ানোর উপায় সম্পর্কে জানা যাক-
স্মার্টফোনে ইন্টারনেটের স্পিড বাড়ানোর উপায়
যারা মোবাইলে ফেসবুকের স্পিড বাড়ানোর উপায় জেনেছেন, তারা ইতিমধ্যেই এ লেখাটির একটা অংশ পড়ে ফেলেছেন। তবে, এই ভেবে বসে থাকবেন না যে, আপনি সব জানেন। বরং, এমন কিছু টেকনিক নিয়ে কথা বলবো যেগুলো সম্পর্কে আপনি আগে থেকে জানতেন না। আসুন, সেগুলো জানা যাক-
১. নেটওয়ার্ক সেটিংস্ রিসেট দিন
অনেক সময়ই নেটওয়ার্ক সেটিংস্ রিসেট করে স্মার্টফোনে ইন্টারনেটের স্পিড বাড়িয়ে নেয়া যায়। এতে নেটওয়ার্ক রিফ্রেশ হয়ে যায়। যারফলে, ইন্টারনেট স্পিড প্রকৃত অবস্থায় ফিরে আসে।
তবে, নেটওয়ার্ক রিসেট দেয়ার পর আপনার সেভ করা ওয়াইফাই পাসওয়ার্ডও রিসেট হয়ে যেতে পারে। সুতরাং, পাসওয়ার্ড যদি মুখস্থ না থাকে, তবে আগে ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড টুকে নিন, পরে রিসেট দিন। এছাড়া, যদি ভিপিএন ব্যবহার করে থাকেন, তবে সেটিও নতুন করে সেট আপ দিতে হতে পারে।
যাইহোক, নেটওয়ার্ক রিসেট দেয়ার জন্যে প্রথমে সেটিংস্-এ যান, সেখান থেকে জেনারেল আর জেনারেল থেকে রিসেট এবং সেখান থেকে রিসেট নেটওয়ার্ক সেটিংস্ এ যান।
২. আপনার ফোনটি রিস্টার্ট দিন
ভাবছেন দূর্বল নেটওয়ার্কে স্পিড বাড়ানোর সঙ্গে স্মার্টফোন রিস্টার্ট দেয়ার কী সম্পর্ক! হুম, সম্পর্ক আছে, যদিও সেটা অনেকেই জানে না। আমাদের স্মার্টফোন অনেকটা মিনি কম্পিউটারের মতো। কম্পিউটারের বিভিন্ন ধরণের অযাচিত সমস্যা সমাধানের জন্যে আমরা যেমন রিস্টার্ট দিয়ে থাকি, তেমনই স্মার্টফোনও রিস্টার্ট দিয়ে কিছু সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। বিশেষ করে, ফোন রিস্টার্ট দিলে এটি নেটওয়ার্ক রিবুট করে। অর্থাৎ, নতুন করে নেটওয়ার্ক নেয়। যারফলে, নেটওয়ার্কের স্পিড বেড়ে যায়।
আসুন, জানা যাক কোন স্মার্টফোন কিভাবে রিস্টার্ট দেবেন-
অ্যান্ড্রয়েড: পাওয়ার বাটন চেপে ধরে রাখুন। কিংবা, আপনার স্মার্টফোনের ধরণ অনুযায়ী অন্য উপায় অবলম্বণ করুন, যেমন পাওয়ার বাটন ও ডাউন কী একসঙ্গে চেপে ধরতে পারেন। ততক্ষণ পর্যন্ত চেপে ধরে থাকুন, যতক্ষণ পর্যন্ত স্ক্রিণে Restart শব্দটি ভেসে না উঠবে।
যখন দেখবেন স্ক্রিনে অন্যান্য ফাংশনের পাশাপাশি Restart শব্দটি এসেছে, তখন ছেড়ে দিন এবং Restart শব্দটির উপরে ট্যাপ করুন। রিস্টার্ট হয়ে যাবে। এছাড়াও, আপনার ফোনের সেটিংস্ থেকেও এটিকে আপনি রিস্টার্ট দিতে পারবেন।
আইফোন: আপনার আইফোনের যদি একটি হোম বাটন থাকে, তবে পাওয়ার স্লাইডার ডিসপ্লে না হওয়া পর্যন্ত Sleep বা Wake বাটন চেপে ধরে রাখুন। স্লাইডার ডিসপ্লে হলে ডানের দিকে ড্র্যাগ করুন। আপনার ডিভাইসটি অফ হয়ে গেলে Sleep বা Wake বাটন প্রেস করে ধরে রাখুন, যতক্ষণ না অ্যাপলের লোগো দেখতে না পাচ্ছেন।
আইফোন এক্স সিরিজ: যারা আইফোন এক্স সিরিজের স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন, তারা আপ অথবা ডাউন ভলিউম কী-এর সাথে Side বাটন চেপে ধরে রাখুন। এতে পাওয়ার স্লাইডার শো হবে আর ফোন রিস্টার্ট দেয়ার জন্যে আপনার কাজ হচ্ছে ডানের দিকে স্লাইড করা।
৩. Airplane Mode অন-অফ করুন
মোবাইলের দূর্বল নেটওয়ার্কে ইন্টারনেটের স্পিড বাড়ানোর আরেকটি কার্যকরী উপায় হচ্ছে Airplane Mode অন-অফ করা। এটি চালু এবং বন্ধ করার কারণে প্রায়ই দেখা যায় যে, নেটওয়ার্ক সিগন্যাল স্ট্রং হয়ে উঠে। আসুন, জানা যাক কিভাবে Airplane Mode অন-অফ করবেন-
অ্যান্ড্রয়েড: আপনার স্মার্টফোনের স্ক্রিনটাকে নিচের দিকে সোয়াইফ করুন। এতে কুইক সেটিংস্ ভিউ হবে। এবার Airplane আইকনটিতে ট্যাপ করুন এবং আপনার ফোনটি সব ধরণের ওয়াইফাই ও সেলুলার কানেকশন থেকে ডিসকানেক্ট হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। যদি সঙ্গে সঙ্গে না হয়, তবে অন্তত ৩০ সেকেন্ড অপেক্ষা করুন। আর যখন হয়ে যাবে, তখন আবার ট্যাপ করে চালু করে দিন।
আইফোন: পুরনো আইফোন ইউজাররা নিচ থেকে উপরের দিকে স্ক্রিন সোয়াইফ করুন আর আইফোন এক্স সিরিজের ইউজাররা উপর থেকে নিচের দিকে সোয়াইফ করে Control Center ওপেন করুন। এরপর, Airplane Mode চিহ্নটিতে ট্যাপ করে চালু করে দিন এবং কিছুক্ষণ পর আবার বন্ধ করে দিন।
৪. সিম কার্ড খুলে নিন এবং আবার প্রবেশ করান
মোবাইলের দূর্বল সিগন্যালকে সবল করার আরো একটি সাধারণ ট্রাবল শ্যুটিং হচ্ছে সিম খুলে ফেলা এবং পূনরায় প্রবেশ করানো। সুতরাং, সিম খুলুন ও আবার ঢুকান। তবে, অবশ্যই তার আগে স্মার্টফোনটি অফ করে নেবেন। চালু অবস্থায় সিম খুলবেন না, এতে আবার অন্য সমস্যা দিতে পারে।
৫. লোকেশন পরিবর্তণ করুন
স্মার্টফোনে ইন্টারনেটের স্লো কানেকশনের নানা রকম কারণ থাকে। যেমন, খারাপ ওয়েদার, নেটওয়ার্ক কনজেশন, এমনকি সোলার অ্যাক্টিভিটি। তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জিওগ্রাফিক্যাল লোকেশনের কারণেই নেটওয়ার্ক দূর্বল হয়ে থাকে।
অনেক সময় দেখা যায় যে পাহাড়ি এলাকা কিংবা সমুদ্রের তীরবর্তী অঞ্চলে মোবাইলের নেটওয়ার্ক দূর্বল থাকে। আপনি যদি এ-রকম কোনও এলাকায় বেড়াতে গিয়ে থাকেন, তবে এটা আপনাকে মেনে নিতে হবে, যতক্ষণ না আপনি লোকেশন পরিবর্তণ করছেন।
যদি ইন্টারনেটে করার মতো অত্যন্ত জরুরী কোনও কাজ পড়ে যায়, ওই দূর্বল নেটওয়ার্কের এলাকা থেকে কিছুক্ষণের জন্যে বেরিয়ে আসুন। আর প্রয়োজনীয় কাজ সেরে আবার সেখানে চলে যান।
৬. নেটওয়ার্ক খেকো অ্যাপ ডিজঅ্যাবল করে দিন
প্রায়ই দেখা যায় যে, কিছু বিশেষ অ্যাপ মোবাইলের ডাটা কানেকশন স্লো করে দেয় যা সাধারণভাবে বোঝাও যায় না। এক্ষেত্রে, আপনাকে একটা ইনভেস্টিগেশন চালাতে হবে। অর্থাৎ, দেখতে হবে কোনও অ্যাপ আপনার ডাটা নেটওয়ার্ক খেয়ে ফেলছে কিনা। যদি এ-রকম অ্যাপ খুঁজে পান, তবে হয় সেটি ডিজঅ্যাবল করে দিন, অথবা আনইনস্টল করে দিন।
অ্যান্ড্রয়েড: সেটিংস্-এ যান এবং সেখান থেকে নেটওয়ার্ক এন্ড ইন্টারনেট অপশনটিতে যান। আর সেখানে দেখুন মোবাইল নেটওয়ার্ক রয়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্কে গেলেই অ্যাপ ডাটা ইউজেজ খুঁজে পাবেন। সেখান থেকে নেটওয়ার্ক খেকো অ্যাপগুলোকে ডিজঅ্যাবল করে দিন।
আইফোন: সেটিংস্ থেকে Cellular-এ যান এবং সেলুলার ডাটা কানেকশন থেকে কালপ্রিট অ্যাপগুলোকে ডিজঅ্যাবল করে দিন।
৭. ডাটা সেভার ডিজঅ্যাবল করে দিন
অনেক সময় দেখা যায়, ইন্টারনেট ডাটা সেভ করার জন্যে স্মার্টফোনে অনেকেই ডাটা সেভার অ্যানাবল করে রাখে। আর পরবর্তীতে সেটা ডিজঅ্যাবল করতে ভুলে যায় যা তাদের কানেকশনকে স্লো করে ফেলে।
সুতরাং, সেটিংস্ থেকে নেটওয়ার্ক এন্ড ইন্টারনেটে যান এবং সেখান থেকে ডাটা সেভারে গিয়ে দেখুন সেটি অ্যানাবল করা আছে কিনা। যদি থাকে, তবে ডিজঅ্যাবল করে দিন। কিছু স্মার্টফোনে এই Data Saver Mode-টি Low Data Mode নামে থাকে। যে নামেই থাকুক না কেন, আপনার কাজ হচ্ছে এটি চালু থাকলে বন্ধ করে দেয়া।
৮. ভিপিএন ব্যবহার বন্ধ রাখুন
অনেকেই প্রাইভেসির জন্যে কিংবা বিশেষ কোনও কাজের জন্যে ভিপিএন ব্যবহার করে থাকেন। জেনে অবাক হবেন যে ভিপিএন কিন্তু ইন্টারনেট কানেকশন স্লো করে ফেলে। আপনি বসে আছেন বাংলাদেশে, অথচ অ্যামেরিকার লোকেশন ইউজ করে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। ইন্টারনেট তো স্লো হবেই!
কাজেই, ইন্টারনেটের স্পিড বাড়ানোর উপায় হিসেবে অন্যতম একটি কার্যকরী পদক্ষেপ হচ্ছে প্রয়োজনের মূহুর্তে ভিপিএন ব্যবহার বন্ধ করে রাখা। অর্থাৎ, যখন আপনার ভিপিএনের কাজ শেষ, তখন অবশ্যই এটি ব্যবহার বন্ধ করে দিন। পরবর্তীতে আবার প্রয়োজন হলে আবারও ব্যবহার করবেন।
শেষ কথা
নানা কারণেই মোবাইলের নেটওয়ার্ক দূর্বল হতে পারে। আপনি যদি এমন কোনও দূর্বল নেটওয়ার্কের মধ্যে থাকেন, তবে ইন্টারনেটের স্পিড বাড়ানোর জন্যে উপরোক্ত উপায়গুলো ব্যবহার করে দেখতে পারেন। আমি এটুকু নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি যে, উপরে দেয়া ৮টি উপায়ের কোন না কোনটি আপনার কাজে লাগবে। অর্থাৎ, একটা না একটা উপায় ব্যবহার করে আপনি আপনার স্মার্টফোনের ইন্টারনেট স্পিড বাড়িয়ে নিতে পারবেন।
আপু মনে হয় ৫জি স্পিডে পোস্ট করছেন?
কেন আপনার এই রকম মনে হলো? আর আপনার নাম কিভাবে হৈচৈ হয়? কেন ফেক নাম ইউজ করছেন? তাও আবার আমাদের সাইটের নাম!!!
নেটওয়ার্ক ও নেটের স্পিড নিয়ে আমার একটু হেল্প দরকার। অনেকদিন ধরেই রাতের বেলা আমার ল্যাপটপ + ব্রাউজার খুব স্লো কাজ করে। সেই ক্ষেত্রে আমার করণীয় কি?