একবার চোখ বন্ধ করে ভাবুন তো এমন একটা পৃথিবীর কথা, যেখানে আপনি মাঝরাতে কোন গুরুত্বপূর্ণ ডেডলাইন সাবমিট করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। হঠাৎ দেখলেন আপনার প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে। বাসায় সবাই ঘুমন্ত, ফ্রিজেও খাবার রাখা নাই। ডেডলাইন সাবমিট নিয়ে এত ব্যস্ত যে কিছু তৈরি করবেন এমন সময়ও নেই আপনার হাতে। আপনি সোজা আপনার ল্যাপটপ ওপেন করলেন। আর ইন্টারনেট থেকে থ্রিডি ফুড প্রিন্টার দিয়ে খাবার ডাউনলোড করে খেয়ে নিলেন।
নাহ, কোন সায়েন্স ফিকশন মুভির কাহিনী বলছি না। কোন প্যারালাল ইউনিভার্সের কথাও বলছি না। বলছিলাম, থ্রিডি ফুড প্রিন্টার এর কথা। থ্রিডি প্রিন্টারের ব্যাপারে তো আমরা অনেকেই কম বেশি জানি। থ্রিডি অবজেক্ট প্রিন্ট করতে পারে। আর নাম শুনে নিশ্চয়ই এও বুঝতে পারছেন, থ্রিডি ফুড প্রিন্টার হল এমন একটি থ্রিডি প্রিন্টার যা খাবার প্রিন্ট করতে পারে।
থ্রিডি ফুড প্রিন্টার
ছয় বছর আগে, ২০১২ সালেই আবিষ্কার হয় সর্ব প্রথম থ্রিডি ফুড প্রিন্টার। কিন্তু সেটা শুধুমাত্র মিষ্টি জাতীয় খাবারই প্রিন্ট করতে পারত। এছাড়াও এই থ্রিডি ফুড প্রিন্টারটারের আরও অনেক লিমিটেশন ছিল। আর যথেষ্ট এক্সপেন্সিভও ছিল প্রিন্টারটা। কিন্তু, এরপর আরও দুইটা কোম্পানির ফুড প্রিন্টার বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। চলুন, চট করে জেনে নেই তাদের ফুড প্রিন্টারগুলো সম্পর্কে।
ফুডিনি
প্রথম ফুড প্রিন্টারের দুই বছর পর ২০১৪ সালে, ন্যাচারাল মেশিনস নামে একটা কোম্পানি ফুডিনি নামে আরেকটা থ্রিডি ফুড প্রিন্টার আবিষ্কার করে। এই ফুড প্রিন্টারটার আরেকটা মজার ফিচার হল, এটা ছিল অ্যান্ড্রয়েড কন্ট্রোলড। এমন কি, ইন্টারনেট কানেকশন থাকলে ফুডিনি ইন্টারনেট থেকে খাবারের লাইব্রেরি ডাউনলোড করেও খাবার প্রস্তুত করতে পারে।
তবে, কাঁচা শাক-সবজি, আটা, চিনি বা এমন সাধারণ উপাদান দিয়ে কিন্তু খাবার তৈরি করে না এরা। এগুলা খাবার বানায় বিশেষভাবে তৈরি ফুড ক্যাপসুল ব্যবহার করে। আর যথেষ্ট সম্ভাবনাময় হলেও ফুডিনিরও কিন্তু অনেক লিমিটেশন আছে। ফুডিনির ব্যাপারে আরও জানতে চাইলে, ন্যাচারাল মেশিনস-এর ওয়েবসাইটটা ভিজিট করতে পারেন।
শেফ থ্রিডি
এর আরও দুই বছর পর, অর্থাৎ, ২০১৬ সালে শেফ থ্রিডি নামে একটা কোম্পানি আরেকটা থ্রিডি মেশিন আবিষ্কার করে। এই থ্রিডি প্রিন্টারটা পাঁচ মিনিটেরও কম সময়ে লেস একটা ১২ ইঞ্চি পিজ্জা তৈরি করতে সক্ষম। শেফ থ্রিডির একটা মজার ফিচার হল, মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে খাবার তৈরি করার ইন্সট্রাকশন দেয়া যায় দূরে বসেই।
শেফ থ্রিডি পিজ্জা বানানো ছাড়াও, বিভিন্ন রকম মিষ্টি জাতীয় পদার্থ, যেমন প্যানকেক বা এমন অনেক কিছুই তৈরি করতে পারে। যদিও এখনো এই থ্রিডি প্রিন্টার দিয়ে বানানো খাবারগুলো খরচের দিক দিয়ে খুব বেশি সুবিধাজনক নয়। তবে, শেফ থ্রিডি প্রায়ই তাদের থ্রিডি প্রিন্টারের খাবার প্রিন্ট করার ডেমো দেখানোর ইভেন্ট আয়োজন করে।
আর চাইলে আপনিও তাদের অফিসিয়াল সাইটে গিয়ে ডেমো দেখার জন্য বুকিং দিয়ে আসতে পারেন। শেফ থ্রিডির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
তবে, আসল কথা হল এগুলা আপাতত সবই এক্সপেরিমেন্টাল লেভেলে আছে। ন্যাচারাল মেশিন বা শেফ থ্রিডি কেউই পুরোপুরি বিজনেস লেভেলের প্রোডাকশনে যেতে পারে নাই এখনো। তবে, লিমিটেশনগুলো কাভার করে তাক লাগানো এই প্রযুক্তি নিয়ে পুরোদমে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে উৎপাদন শুরু করা সময়ের ব্যাপার মাত্র বলেই মনে হচ্ছে।
Leave a Reply