ইন্টারনেট বললেই আমরা বুঝি গুগল। ইন্টারনেটের যতকিছু আছে সবকিছুই কেবল গুগলকে ঘিরে। কিন্তু গুগলেই কি ইন্টারনেটের সব? না এই ধারণা ভুল। আজকে এমন একটি ওয়েবের কথা বলব যার সম্পর্কে জানলে আপনি অবাক হবেন। সেই ওয়েবের নাম ডীপ ওয়েব।
গুগল সার্ফেস ওয়েবের একটি সামান্য অংশ আর সার্ফেস ওয়েব পুরো ওয়েবের চারভাগের এক ভাগ। তাও মাত্র ১০-১২% এই ওয়েবের সবচেয়ে বড় অংশ যাকে নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা তা হল ডীপ ওয়েব।
তাহলে চলুন আর দেরি না করে জেনে নিয় ডিপ ওয়েব নিয়ে অজানা তথ্য।
ডিপ ওয়েব নিয়ে ২০ টি অজানা তথ্য
ডিপ ওয়েব কি
ডিপ ওয়েব বা ডার্ক ওয়েব হল ইন্টারনেটের লুকায়িত অংশ। সাধারণ সার্ফেস ওয়েবে আপনি এই ডার্ক ওয়েবকে পাবেন না। এমনকি এই ওয়েবের সাইটগুলোও কখনো গুগলে সার্চ করে পাবেন না।
- আরো জানুন: ইন্টারনেট সম্পর্কে ১৫টি অজানা তথ্য
ডিপওয়েবে নিরাপত্তা
ডিপ ওয়েব হল ওয়েবের এমন একটি বড় অংশ যা সাধারণ মানুষ জানতে পারলে অনেক কিছুই শিখতে পারবে। কিন্তু এখানে কোন নিরাপত্তা নেই।
ডিপ ওয়েবে কনটেন্ট
ডিপ ওয়েবে প্রায় ৫৫০ বিলিয়িন ইনডিভিজ্যুয়াল কনটেন্ট আছে। যা সাধারণ সার্ফেস ওয়েবের ডকুমেন্ট থেকে অনেক বেশি।
ডিপ ওয়েবে এক্সেস
ডিপ ওয়েবের ৯৫% ইনফরমেশনেই সাধারণ মানুষের এক্সেসিবল ইনফরমেশন। আর বাকি ৫% ইনফরমেশন চাইলেও এক্সেস করা যাবে না। মানে আমরা সার্ফেস ওয়েবে যে সাইট বানাই, তার মধ্যে অনেক কনটেন্ট থাকে, যা সবাই এক্সেস করতে পারে না। নিদিষ্ট পাসওয়ার্ডের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু এখানে চাইলেই প্রবেশ করা যায়।
ডিপ ওয়েবে বিটকয়েন
সাতোশি নাকামটো যিনি বিটকয়েন আবিস্কার করেছেন তিনিও এই ডিপ ওয়েবে যুক্ত ছিলেন। আর এই ওয়েবে ট্রানজেকশনও হয় বিটকয়েন দিয়ে। কারণ, বিটকয়েনেই অপরাধীকে সহজে ধরা যায় না।
- আরো জানুন: বিটকয়েন নিয়ে ১০টি অদ্ভূত তথ্য
ডিপ ওয়েব কত বড়?
সার্ফেস ওয়েবের চেয়ে ডিপ ওয়েব ৫০০ গুণ বেশি বড়। তার মানে আমরা যে সার্ফেস ওয়েবে পড়ে আছি, তা ডিপ ওয়েবের তুলনায় কিছুই না। অনেকটা সূর্য আর পৃথিবীর মতোই।
কিভাবে যাবো ডিপ ওয়েবে?
আচ্ছা এই ডিপ ওয়েবে আপনি কীভাবে প্রবেশ করবেন? গুগল দিয়ে? না এই ডিপওয়েবে যেতে হলে লাগবে একটা স্পেশাল ব্রাউজার, যার নাম টর ব্রাউজার।
ইন্টারনেট ডিপওয়েব
ইন্টারনেটের ওয়েবের মাত্র ১৬% সার্চ ইঞ্জিণ দিয়ে পাওয়া যায়, বাকি ৮৪% সার্চের আয়ত্তের বাইরে।
মেসেজ আদান প্রদান
আচ্ছা ফেসবুকে তো আমরা একজন আরেকজেনের সাথে সহজেই ইনবক্সে কথা বলি, যা ১০০% সিকিউর। কিন্তু ডীপ ওয়েবে আপনার সাথে যার কথা হবে, তার কোন নিরাপত্তা থাকে না। ১০০% আনসিকিউর।
ডিপ ওয়েবে হ্যাকিং
প্রতিদিন ডিপ ওয়েবের ৩০ হাজার ওয়েবসাইট হ্যাক হয়। কারণ, ডিপ ওয়েব এমন একটি জিনিস, যেখানে কোন সিকিউরিটি নাই।
কেনা বেচায় ডিপ ওয়েব
ডিপ ওয়েবে টাকার জন্য অনেকেই ক্রেডিট কার্ড বিক্রি করে। যা সরকারিভাবে পুরোপুরি অবৈধ। আবার মজার বিষয় হল এখানে আপনি খুব কম দামেই জিনিস কিনতে পারবেন।
ডিপ ওয়েবে ট্রাফিক
ব্রিটেনের পোটসমাউত ইউনিভার্সিটির এক গবেষনা থেকে বলা হয়, ডিপ ওয়েবের সবচেয়ে বেশি ট্রাফিক থাকে চাইল্ড পর্ণোগ্রাফি ওয়েবসাইটে।
ডিপ ওয়েবের সিল্করোড
সিল্করোড হল ডিপ ওয়েবের সবচেয়ে সফল একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে সবকিছুই কেনা-বেচা হয়। এমন কোন অবৈধ কাজ নাই যা এখানে হয় না।
ডিপ ওয়েবের জনপ্রিয়তা
ডিপ ওয়েব সার্ফেসওয়েবের তুলনায় খুব দ্রুত বাড়ছে। যার কারণ, বর্তমান তরুণ প্রজন্ম এই ওয়বেই অধিক আগ্রহবোধ করছে। এটা একদিকে ভাল, আবার অন্যদিকে এর পরিনাম খারাপও হতে পারে।
- আরো জানুন: ইউটিউব সম্পর্কে ১৫টি অজানা তথ্য
ওয়েবের যত ভাগ
ওয়েবের চারটি ভাগের সবচেয়ে বড় অংশ হল ডিপওয়েব। এই চারটি হল ডীপ ওয়েব, সার্ফেস ওয়েব, ডার্ক ওয়েব, ম্যারিয়ানা ওয়েব।
ডিপ ওয়েবের ওজন
ডিপ ওয়েবে আছে প্রায় ৭৫০০ ট্যারাবাইট ইনফরমেশন। যা সার্ফেস থেকে হাজার কানেক বেশি।
ডিপ ওয়েবের ডোমেইন
ডিপ ওয়েবের সাইটগুলো সাধারণ আমাদের সার্ফেস ওয়েবসাইটের মত ডট কম ডোমেইনে হয় না। এসব ওয়েবসাইটের ডোমেইন হয় ডট অনিয়ন। ডীপ ওয়েব যেহেতু ওনিয়ন বা পেঁয়াজের মতোই ঢাকা, তাই এই ডোমেইন এক্সটেশন দেয়া হয়েছে।
টর ব্রাউজার দিয়ে ডিপ ওয়েবে প্রবেশ
টর ব্রাউজার যার মাধ্যমে ডার্ক ওয়েব কিংবা ডিপ ওয়েবে এক্সেস করা যায়, সেই টরের জন্য ২০১২ সালে প্রায় ১.২ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে।
বৈধ অবৈধ চোরাচালান
ডিপওয়েবে সাধারণত কোন ভাল জিনিস বা বৈধ জিনিসের কেনা-বেচা হয় না। এখানে হয় মানুষের নিলাম, সিরাম, বিষ, বিভিন্ন মাদকের চোরাচালান আর অবৈধ বইয়ের কেনা বেচা।
হ্যাকার থেকে হিটম্যান
এখান থেকে বিভিন্ন হ্যাকার কিংবা হিটম্যান ভাড়া করা হয়। হ্যাকার আবার অনেক রকমের আছে। হোয়াইট হ্যাকার এবং ব্ল্যাক হ্যাকারেই প্রধান। তবে এখানে ব্ল্যাক হ্যাকারেই বেশি থাকে।
প্রযুক্তির এত বিকাশ স্বত্তেও এই ডিপ ওয়েব কোন সরকারই বন্ধ করতে পারছে না। অনেকেই মনে করেন ডিপ ওয়েবের সব তথ্য বের হয়ে গেলে পৃথিবীর অনেক গোপন তথ্য বের হয়ে আসবে, যার ফলে সৃষ্টি হবে অনেক সমস্যা। এজন্য আমাদের উচিৎ এই ডিপ ওয়ার্ক সম্পর্কে জানা এবং সচেতন হওয়া। আর ডিপ ওয়েব সত্যি বলতে খারাপ কিছু না।
আমরা চাইলে গবেষনার কাজে এবং বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের জন্য এই ওয়েব ব্যবহার করতে পারি। যা আমাদের উপকারে আসবে। আশা করি, ডিপ ওয়েব সম্পর্কে লেখাটি আপনাদের ভাল লেগেছে। ভাল লেগে থাকলে শেয়ার করুন আপনার বন্ধুদেরকেও জানান ডিপ ওয়েব সম্পর্কে।
Leave a Reply