ডার্ক চকলেটের স্বাস্থ্য উপকারিতা জানা সকলের প্রয়োজন। ডার্ক চকলেট আমাদের অতি পরিচিত একটি লোভনীয় খাদ্য। তবে, সকলের সচেতনতার জন্য বলা দরকার যে, চিনি বা গুড় দিয়ে তৈরী এক ধরনের ক্যাণ্ডি বাজারে পাওয়া যায় যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
এখানে কিন্তু সেই ক্যাণ্ডি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে না, বরং কোকো গাছের বীজ থেকে তৈরী কালো বা ডার্ক চকলেট নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বয়স্ক লোকেরাও ডার্ক চকলেট ভালোবাসে। তাই, সচেতন লোক হিসেবে আমাদের সকলের অতি প্রিয় এই খাবারটির স্বাস্থ্য উপকারিতা জানা দরকার।
সচেতন মানুষ হিসেবে আমাদের খাবার হিসেবে গাছ-গাছালি থেকে পাওয়া উপাদান বেশি বেশি খাওয়া উচিৎ। কারণ, আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, উদ্ভিদজাত খাবার আমাদের দেহের জন্য প্রাণিজ খাবারের চাইতে অধিক উপকারি। ডার্ক চকলেট কোকো গাছের বীজ থেকে তৈরী করা হয় বলে এটি উদ্ভিদজাত খাবার।
ডার্ক চকলেটে কি আছে?
“সুপারফুড” হিসেবে পরিচিত ডার্ক চকলেটের অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এ-সব উপকারিতা জানা থাকলে আপনার এই চকলেটের স্বাদ গ্রহণ করতে ইচ্ছা করবে। ডার্ক চকলেটে রয়েছে গ্রিনটি এবং রেডওয়াইনের চাইতে বেশি পরিমাণে অ্যাণ্টিঅক্সিডেণ্ট এবং ফ্লাভনইডস নামক ফাইটোনিউট্রিয়েণ্ট।
যৌণ স্বাস্থ্যের জন্যে প্রয়োজনীয় দু’টি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে Serotonin এবং Phenethylamine। ডাক চকলেটে এ দু’টি উপাদানই বিদ্যমান। যার ফলে, ভায়াগ্রার বিকল্প ১০টি খাবার এর তালিকায়, এটিকে সব সময়ই প্রথমে রাখা হয়ে থাকে।
এ-সব উদ্ভিদজাত খাদ্য উপকরণ ক্যান্সার প্রতিরোধ, হার্ট সুস্থ্য রাখা, দেহের ওজন কমানো ইত্যাদি কাজ করে থাকে। এছাড়া ডার্ক চকলেটে থিওব্রোমাইন নামক এক প্রকার উদ্ভিদজাত কেমিক্যাল আছে যা দেহের ক্ষত বা ঘা শুকাতে এবং দেহের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
খাদ্য ও পুষ্টিবিদদের মতে, ভালো মানের ডার্ক চকলেটে ৭০% কোকো থাকে। আর দেহের ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিন ১ আউন্স ডার্ক চকলেট খাওয়া উচিত। এখানে ডার্ক চকলেটের ৭টি স্বাস্থ্য উপকারিতা আলোচনা করা হলো।
ডার্ক চকলেটের স্বাস্থ্য উপকারিতা
ডার্ক চকলেট ব্লাড প্রেশার বা রক্তচাপ কমায়
ডার্ক চকলেটের একটি স্বাস্থ্য উপকারিতা হলো ব্লাড প্রেশার বা রক্তচাপ কমানো। ডার্ক চকলেটে থাকা ফ্লাভনয়েডস নামক ফাইটোনিউট্রিয়াণ্ট শিরা-উপশিরার মধ্যে এক প্রকার উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এর ফলে শিরা-উপশিরার মধ্যে নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি হয়। আর এর ফলে শিরা-উপশিরার পেশি নমনীয় হয়। ফলে, রক্ত চলাচল দ্রুত হয় এবং ব্লাড প্রেশার বা রক্তচাপ কমে গিয়ে দেহ-মন শীথিল হয়ে আনন্দের অনুভূতি তৈরী হয়।
ডার্ক চকলেট হার্টের অসুখ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়
ডার্ক চকলেটের স্বাস্থ্য উপকারিতা যে কতো বেশি তা খাদ্য-পুষ্টিবিদ এবং বিশেষজ্ঞ ডাক্তারা ভালো জানেন। হার্ট জার্নালে (heart.bmj) ২০১৫ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে যে, নিয়মিত ডার্ক চকলেট খায় এমন লোকদের হার্টের অসুখ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কম।
ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন (Clinical Nutrition) জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনের গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে যে, সপ্তাহে ৫ বার ডার্ক চকলেট খেলে ৫৭% পরিমাণ হার্টের অসুখের সম্ভাবনা কমে যায়। ডার্ক চকলেটের নানা যৌগিগ উপাদান লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন (LDL) রক্তে মিশতে বাধা দেয় এবং শিরা-উপশিরায় কোলেস্টেরল জমতে দেয় না। এতে হার্টের অসুখ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়।
গবেষনায় (Trusted Source) দেখা গেছে যে, অত্যাধিক ডার্ক চকলেট না খেলে ডার্ক চকলেটের তেমন কোনো খারাপ প্রভাব নেই, যদিও এই সব গবেষণার সরাসরি কার্য-কারণ সম্পর্ক তৈরীতে সীমাবদ্ধতা আছে।
ডার্ক চকলেট ডায়াবেটিকের জন্য উপকারি এবং ব্লাডের শুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ করে
ডার্ক চকলেটের স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে রক্তের চিনি বা ব্লাড শুগার এবং ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও। কোকোসমৃদ্ধ ডার্ক চকলেট দেহের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে প্রভাব ফেলে। এ বিষয়ে ইংরেজি ২০১৯ সালের মার্চ মাসের স্টাটপার্লস (StatPearls) পত্রিকার আর্টিকেলটি পড়ে নেয়া যেতে পারে।
ডার্ক চকলেট দেহে ইনসুলিন উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে প্রভাব বিস্তার করে যা ডায়াবেটিক রোগ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য দরকারি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ব্যবহার করে ডার্ক চকলেট খাওয়ার আগের এবং খাওয়ার পরের অবস্থা নিজেই যাছাই করে নিতে পারেন।
ডার্ক চকলেট পুষ্টিকরও বটে
ডার্ক চকলেট দেহের জন্য উপকারি আঁশ এবং খণিজ পদার্থে পরিপূর্ণ। ভালো মানের ১০০ গ্রাম ডার্ক চকলেটের পুস্টি উপাদান হলোঃ
- ম্যাংগানিজ —–দেহের মোট চাহিদার ৯৮%
- আইরন——— দেহের মোট চাহিদার ৬৭%
- কপার——— দেহের মোট চাহিদার ৮৯%
- ম্যাগনেসিয়াম——- দেহের মোট চাহিদার ৫৮%
- আঁশ—————- ১১ গ্রাম।
এই ১০০ গ্রাম কিন্তু হিসাবের সুবিধার জন্য ধরা হয়েছে। এটা আপনার প্রতিদেনের ডার্ক চকলেট খাওয়ার পরিমাণ না। তাই ডার্ক চকলেট যে অতি পুষ্টিকর তা বোঝা যাচ্ছে।
ডার্ক চকলেট ত্বকের জন্য উপকারি
গবেষণা থেকে জানা যায় যে, ডার্ক চকলেটে ম্যাগনেসিয়াম, আইরন, কপারসহ অনেক উপাদান আছে। এ-সব উপাদান আমাদের দেহে কোলাজেন নামক এক ধরনের প্রোটিন তৈরী করে। এই কোলাজেন আমাদের দেহের ত্বক মোলায়েম ও স্বাস্থ্যবান রাখে।
ডার্ক চকলেটে ক্যালসিয়াম থাকে এবং এই ক্যালসিয়াম ত্বকের ক্ষয় রোধ করে ও নতুন ত্বক তৈরীতে সাহায্য করে। তাছাড়া ডার্ক চকলেটে এ্যাণ্টি-অক্সিডেণ্ট থাকে যা ত্বককে সুর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে।
ডার্ক চকলেটের ক্যান্সারসহ নানা রোগ প্রতিরোধ
ডার্ক চকলেট আমাদের দেহে রোগ সৃষ্টিকারি মুক্ত বিচরণকারি কণাগুলো ( Free Radicals ) ধ্বংস করে এবং আমাদের দেহকে ক্যান্সারসহ নানা রোগ থেকে রক্ষা করে। আমাদের দেহের রোগ সৃষ্টিকারি এই সব ফ্রি র্যাডিকেলস ক্যান্সার, ডায়াবেটিক, এ্যালঝেইমার (Alzheimer’s) ইত্যাদি রোগের কারণ।
ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমিয়ে উপকারি কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয়
Journal of the American heart association এ প্রকাশিত গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে যে, ডার্ক চকলেট, কাজুবাদাম এবং নির্ভেজাল মিষ্টি না মেশানো প্রাকৃতিক কোকো আমাদের দেহের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়।
কোকো দিয়ে ডার্ক চকলেট তৈরী হয় এবং কোকোতে কোকো বাটার নামে একটি খাদ্য উপাদান আমাদের দেহের উপকারি কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। দেহে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকলে আপনার কি কি খাবার খাওয়া উচিৎ এবং কি কি খাবার খাওয়া উচিৎ না, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারেন everyday health প্রকাশিত এই আর্টিকেল থেকে।
ডার্ক চকলেটের স্বাস্থ্য উপকারিতা বিষয়ে আমাদের এতক্ষণের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, ডার্ক চকলেট তৈরীর উপাদান কোকো একটি ভেষজ উদ্ভিদ। প্রত্যেক ভেষজ উদ্ভিদই আমাদের দেহের জন্য উপকারি। কিন্তু মনে রাখবেন, যে কোনো ওষধি খাবার সঠিক পরিমাণে খাওয়া উচিৎ।
Chocolate Lover says
ডাক চকোলেট নিয়ে আপনার লেখা অমায়িক হয়েছে, অনেক তথ্য নির্ভর এবং উপকারি হয়েছে।