আপনি কি ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন? কেমন হয় যদি আপনি ঘুরে বেড়াবেন এবং তার বিনিময়ে আপনি ইনকামও করতে থাকবেন? আপনি হয়তো জেনে অবাক হবেন যে গোটা বিশ্বে এমন অসংখ্য মানুষ রয়েছে ট্রাভেল ব্লগ থেকে আয় করার মাধ্যমে বছরের প্রায় পুরো সময়টাই বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানোটাকেই নিজেদের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
আপনিও যদি এমন একটা লাইফস্টাইল চান, তবে ট্রাভেল ব্লগিং হতে পারে আপনার জন্য একটি আদর্শ পেশা। তবে অবশ্যই এর আগে আপনাকে ট্রাভেল ব্লগিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। একজন ট্রাভেল ব্লগারের কাজ কি? সে কিভাবে ইনকাম করে এসব তথ্য না জেনে কখনই এ ধরনের কাজকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
সেক্ষেত্রে, আপনি আগে ট্যুর গাইড হতে পারেন এবং জেনে নিতে পারেন যে ৫টি কারণে ট্যুর গাইড হওয়া উচিৎ। একজন ট্যুর গাইডের অনেক অভিজ্ঞতা অর্জণ হয়। আপনিও আগে অভিজ্ঞতা নিন, এরপর ট্রাবেল ব্লগ চালু করুন। কারণ, ট্রাবেল ব্লগ থেকে বলতে গেলে বসে বসেই আয় করা যায়।
ট্রাভেল ব্লগ থেকে আয়
ট্রাবেল বিষয়ক সেরা কিছু চাকরি সম্পর্কে অনেকেই জানেন। কিন্তু ট্রাবেল ব্লগিং সম্পর্কে সবাই ভাল করে জানেন না। তাই, ট্রাভেল ব্লগিং এর ক্ষেত্রে সবার মনে যে-সব প্রশ্নের উদয় হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ প্রশ্নটি হচ্ছে এ ধরনের কাজে কি পরিমাণ আয় করা সম্ভব? উত্তরটা খুবই সহজ। ট্রাভেল ব্লগিং করে আপনি কত টাকা ইনকাম করবেন তা নির্ভর করে আপনার পরিশ্রমের উপর।
আপনি যত বেশি পরিশ্রম করবেন, তত বেশি আয় করার সম্ভাবনা বাড়বে। তবে, একজন সাধারণ ট্রাভেল ব্লগার প্রতি মাসে ১০০০ ডলার থেকে শুরু করে ৫০০০ ডলার পর্যন্ত ইনকাম করে থাকেন। এ ধরনের ব্লগাররা তাদের ইনকাম জেনারেট করার জন্য যে পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করে থাকেন, তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে-
- গুগল অ্যাডসেন্স
- অ্যাফিলিয়েট পার্টনারশীপ
- প্রেস ট্রিপ
- স্পন্সরড ক্যাম্পেইন
- ফ্রিল্যান্স রাইটিং
তাই চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক ট্রাভেল ব্লগ থেকে আয় করার সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত।
গুগল অ্যাডসেন্স:
এটি সম্পর্কে নতুন করে বলার মতো কিছু নেই। আমরা সবাই কম বেশি গুগল অ্যাডসেন্স কি তা সম্পর্কে অবগত। ট্রাভেল ব্লগাররা তাদের ওয়েবসাইটে আসা বিপুল পরিমাণ ভিজিটরদের গুগল অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের মাধ্যমে আয় করে থাকেন।
আপনার সাইটে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিজিটর আসেন, তবে তাদেরকে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করানোর মাধ্যমে আপনিও ভালো ইনকাম জেনারেট করতে পারবেন।
অ্যাফিলিয়েট পার্টনারশীপ:
আমরা এর আগে অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট সম্পর্কে জেনেছি। এই বিষয়টাও হুবুহু একই রকম। যারা নতুন করে ট্রাভেল ব্লগিং করতে আগ্রহী, তারা ট্রাভেলিং এর সময় কি কি জিনিস সাথে রাখতে হয় এসব বিষয় সম্পর্কে জানতে চায়। আর এখান থেকেই ইনকামটা আসে।
এ ধরনের ব্লগাররা ভ্রমণের সময় কি কি জিনিস প্রয়োজনীয়, তার একটি তালিকা তৈরী করে ব্লগে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেন। আর কোন প্রোডাক্টটি সবচেয়ে ভালো হবে সে সম্পর্কে তাদের মতামত দিয়ে থাকেন। একই সাথে প্রোডাক্টটি কিনতে পাওয়া যায় এমন ওয়েবসাইটের লিংক সেখানে দেওয়া থাকে।
এই ওয়েবসাইটগুলির সাথে ব্লগারদের অ্যাফিলিয়েট পার্টনারশীপ থাকে। অর্থাৎ, কেউ যখন আর্টিকেল পড়ে সেখানে থাকা লিংকে ক্লিক করে উক্ত ওয়েবসাইটে যেয়ে কোন কিছু কেনা-কাটা করে, তখন তার একটা নির্দিষ্ট কমিশন ব্লগাররা লাভ করে থাকেন।
প্রেস ট্রিপ:
এই প্রক্রিয়াটি ট্রাভের ব্লাগারদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। একজন ব্লগার যখন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন, তখন বিভিন্ন হোটেল, ট্যুরিজম কোম্পানী তাদের স্থান, সেবা ইত্যাদি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে জানানোর উদ্দেশ্যে ব্লগারদের অর্থ প্রদান করে থাকে।
ব্লগাররা কোম্পানীর খরচে উক্ত স্থানগুলি ভ্রমণ করেন এবং তাদের প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা ব্লগের মাধ্যমে সবার সাথে শেয়ার করেন। সাধারণত এ ধরনের ভ্রমণের জন্য একজন ব্লগার কমপক্ষে ২০০০ ডলার পারিশ্রমিক গ্রহণ করে থাকেন।
স্পন্সরড ক্যাম্পেইন:
এই পদ্ধতিটি প্রচলিত বিজ্ঞাপন দেওয়ার মতই। ধরে নিন, আপনি ট্রাভেল ব্লগিং করে মোটামুটি জনপ্রিয়তা অর্জণ করেছেন। এমন সময় বহু কোম্পানী আপনার কাছে আসবে স্পন্সরড ক্যাম্পেইনের প্রস্তাব নিয়ে। আপনাকে এ ক্যাম্পেইনের আওতায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ওই কোম্পানীর বিজ্ঞাপন আপনার ওয়েবসাইটে প্রদর্শন করতে হবে। পাশাপাশি কোম্পানীর প্রচারের জন্য বিভিন্ন ব্লগ ও সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টের মাধ্যমেও সবাইকে কোম্পানীটির সেবা সম্পর্কে জানাতে হবে।
তবে একজন আদর্শ ব্লগার হিসেবে অবশ্যই কোন পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন প্রচারের পূর্বে তার মান সম্পর্কে অবগত হতে হবে। খারাপ কোন পণ্যের পণ্যের প্রচারণা করতে গেলে সাময়িক কিছু অর্থ আসলেও আপনি আপনার ভিজিটরদের বিশ্বস্ততা হারাবেন।
ফ্রিল্যান্স রাইটিং:
একজন ট্রাভেল ব্লগারের কাজ শুধু নিজের ওয়েবসাইটে আর্টিকেল পাবলিশ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য অন্যান্য ট্রাভেল সম্পর্কিত ব্লগেও তাকে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে হয়। তবে মজার ব্যাপার হলো এর জন্যে তারা ভালো অংকের পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন।
ফ্রিল্যান্স ট্রাভেল রাইটার হিসেবে কাজ করার বহু সুবিধা রয়েছে। আপনি একাধিক ব্লগে আপনার অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরার জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমান পারিশ্রমিক পাবেন। এর মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটের বাইরেও অসংখ্য মানুষ আপনাকে চিনবে এবং আপনার জনপ্রিয়তা আরো বৃদ্ধি পাবে।
তাছাড়া আপনার আর্টিকেলে রেফারেন্স হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় আপনি আপনার ওয়েবসাইটের লিংক বসাতে পারেন যেটা ব্যাকলিংক হিসেবে কাজ করে আপনার নিজের ওয়েবসাইটটিকে গুগলের কাছে আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে।
সত্যি বলতে এটা এমন কোন কাজ নয় যা আপনাকে রাতারাতি ধনী বানিয়ে দিতে সক্ষম। তবে আপনি যদি ট্রাভেল ব্লগ থেকে আয় করার যথাযথ পদ্ধতিগুলি সম্পর্কে অবগত থাকেন, তাহলে কাজটা আপনার জন্য অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। তবে অবশ্যই আপনাকে সফলতা লাভ করতে হলে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। ওয়েবসাইট তৈরীর পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া পেজ, ইউটিউব চ্যানেল ইত্যাদির মাধ্যমেও আপনাকে প্রচারণা চালিয়ে যেতে হবে। প্রথমেই ইনকামের দিকে নজর না দিয়ে মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে থাকুন, সফলতা আসবেই।
RONI AHMED says
আমি রাইটার হতে চাই। কিভাবে হবো বড় ভাইয়েরা একটু উপদেশ দিয়ে যান।