প্রবল ইচ্ছা থাকলেও ট্যুর গাইড হয়ে আয় করতে চাইলে কি কি করতে হয় তা নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তায় পড়ে থাকেন। আর না হয়েই উপায় কি বলুন! বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় এবং সর্বাধিক ইনকাম জেনারেটকারী পেশাগুলির মধ্যে ট্যুর গাইডিং অন্যতম।
আমাদের সেরা কিছু ট্যুর বিষয়ক চাকরি সম্পর্কিত আর্টিকেলটি পড়ে অনেকেই হয়তো ইতিমধ্যেই ট্যুর গাইড হবার পরিকল্পণা করে ফেলেছেন। কারণ, একজন গাইড তার কর্মজীবনে এমন সব কাজ করতে পারেন যা অন্যদের দ্বারা শুধুমাত্র ছুটি কাটানোর সময়ই করা সম্ভব হয়।
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সাথে পরিচিত হবার সুযোগের পাশাপাশি, নিত্য নতুন জায়গায় ঘুরে বেড়ানো এবং তা থেকে ইনকাম করার মত সৌভাগ্য একজন ট্যুর গাইডের পক্ষেই লাভ করা সম্ভব।
ট্যুর গাইডিংকে যদি আপনি পেশা হিসেবে গ্রহণ করতেই চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই এ কাজটির দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। একটি ট্যুরের সফলতা এবং বিফলতা উভয়ই গাইডের উপর নির্ভর করে। একজন দক্ষ গাইড একটি ট্যুরকে প্রত্যাশার চাইতে বেশি সুন্দর, উত্তেজনাময় ও স্মরণীয় করে তুলতে পারে।
আর যদি গাইড অদক্ষ হন, তাহলে ঘটে ঠিক এর বিপরীতটা। তাই আপনি যদি ট্যুর গাইডিংকে পেশা হিসেবে বেছে নিতেই চান, তাহলে চলুন জেনে নিই কাজটি করার জন্য আপনার মধ্যে ঠিক কি কি গুনাবলী থাকা প্রয়োজন।
ট্যুর গাইড হয়ে আয় করার জন্যে যেসব গুণ প্রয়োজন
ঘুরে বেড়ানোর রোমাঞ্চকর এই পেশাটিকে আয়ে রূপ দেয়ার জন্যে বেশকিছু গুণের প্রয়োজন। এগুলো একজন ট্যুর গাইড ধীরে ধীরে অর্জণ করে থাকেন। তবে, কিছু উল্লেখযোগ্য গুণ রয়েছে, যেগুলো না থাকলেই নয়; সেগুলো নিয়েই আজকের আলোচনা।
ট্যুর গাইড হওয়ার জন্যে ধৈর্য্য প্রয়োজন:
একটি ট্যুরে একজন গাইডের সাথে অনেক ট্যুরিষ্ট থাকে। অনেক সময় এমন হয় যে আপনি হয়তো একটি বিষয় সম্পর্কে সবাইকে পরিষ্কারভাবে ধারণা দিয়েছেন। তারপরেও এমন কিছু মানুষ সেখানে থাকবে যারা সেই একই প্রশ্ন আপনাকে বার বার করবে। এ সময় আপনাকে ধৈর্য্য হারালে চলবে না, বরং ধৈর্য্য সহকারে তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
বন্ধুসুলভ ব্যবহার করতে হবে:
যারা আপনার ভ্রমনসঙ্গী হবেন, তারা সব সময় আপনার আশানুরুপ আচরণ করবে এমনটা ভাবা ভুল হবে। এমন অনেক মানুষ রয়েছে (ট্যুরিস্ট কিংবা ট্যুরিস্টদের বাইরে) যাদের আচার আচরণ আপনার হয়তো পছন্দ নাও হতে পারে। আর শুধু আপনিই কেন, এমন মানুষের দ্বারা গ্রুপের অন্যান্য ট্যুরিষ্টরাও বিরক্ত বোধ করতে শুরু করেন।
একজন ভালো গাইড হিসেবে আপনাকে সব ট্যুরিষ্টদের পাশাপাশি এ ধরনের মানুষের সাথেও বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে। একই সাথে গ্রুপের অন্যান্য টুরিষ্টগণ যেন তাদের দ্বারা বিরক্ত বোধ না করেন, সে ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে হবে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে।
নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ অতীব প্রয়োজন:
নতুন জায়গায় সাধারণ সব মানুষের মধ্যেই নিরাপত্তা নিয়ে এক ধরনের চিন্তার উদ্বেগ ঘটে। আপনারা যেখানে ট্যুর প্ল্যান করছেন সেই জায়গাটি যে আপনার নখদর্পনে এটি আপনাকে ট্যুরিষ্টদের সামনে তুলে ধরতে হবে। একই সাথে তারা যত সময় আপনার সাথে রয়েছেন ততক্ষন তারা নিরাপদ এ ব্যাপারেও তাদের নিশ্চিত করতে হবে।
সেন্স অফ হিউমার ট্যুর গাইডের বিশেষ গুণ:
রোবটের মত মানুষদের কেউই পছন্দ করেন না। আর সেই রোবটের মত মুখস্ত কোন জায়গা সম্পর্কে বলে যাওয়া ব্যক্তিটি হন একজন ট্যুর গাইড, তাহলে তো কথাই নেই। পুরো ট্রিপটাই মাটি হওয়া নিশ্চিত। গাইড হিসেবে ট্যুরিষ্টরা যেন ট্রিপটি উপভোগ করেন, তা নিশ্চিত করা আপনার দায়িত্ব।
এক্ষেত্রে আপনার সেন্স অফ হিউমার হতে পারে আপনার সবচেয়ে শক্তিশালি হাতিয়ার। বিভিন্ন মজার মজার কথা বার্তার মাধ্যমে সবাইকে গোটা ট্রিপে আনন্দমুখর রাখতে পারাটাই একটি ট্যুরকে সফল করে তোলে। কাজেই, যদি ট্যুর গাইড হয়ে আয় করতে চান, তবে নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনার মধ্যে সেন্স অব হিউমার রয়েছে।
উদ্যমী হওয়া ট্যুর গাইড হওয়ার জন্যে জরুরী:
আপাতদৃষ্টিতে গাইডিংয়ের কাজটিকে শুধু সবাইকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো মনে হলেও বাস্তবতা তার থেকে অনেক ভিন্ন। স্বাভাবিকভাবেই একটি ট্যুর অনেক বড় সময় জুড়ে হয়ে থাকে। পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে ট্যুরের সাথে অনেক শারীরিক কার্যাবলীও সম্পৃক্ত থাকে। তাছাড়া অবস্থানরত ট্যুরিষ্টদের বিভিন্ন চাহিদার যোগান দেওয়াসহ একজন গাইডকে আরো অনেক কাজ করতে হয়। তাই এ সকল কাজ করতে হলে গাইডকে অনেক বেশি উদ্যমী হতে হয়।
সময় সচেতনতা:
সময় সম্পর্কে সচেতনার শিক্ষা আমরা বাল্যকাল থেকেই লাভ করে থাকি। কিন্তু এ ধরনের কাজে তার উপযোগিতা যেন একটু বেশি মাত্রায় প্রমাণিত। প্রায় প্রতিটি ট্যুর একাধিক দিনের হয়ে থাকে এবং ট্যুরের একেক দিনে একেক ধরনের কার্যাবলী থেকে থাকে। তাই নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে নিজে হাজির হওয়া এবং ট্রিপের অন্যান্য সদস্যদের সময় মেনে চলতে উৎসাহিত করা একজন গাইডের দায়িত্ব।
শেখার আগ্রহ:
মানুষ হিসেবে সবাই যে সব বিষয়ে অবগত থাকবেন, এমনটা না হওয়াটাই স্বাভাবিক। হতে পারে আপনি হয়তো যে জায়গায় ট্যুরে যাচ্ছেন, সে জায়গাটি আপনার কাছে একেবারেই নতুন। কিন্তু আপনার সঙ্গে যেসব ট্যুরিষ্ট যাবেন, তারা আপনার কাছে সেই জায়গা সম্পর্কে জানতে চাইবেন সেটাই অতি স্বাভাবিক।
এ ধরনের পরিস্থিতিতে ঘাবড়ে গেলে চলবে না। ইন্টারনেটের এই বিপ্লব কালে যে কোন স্থান সম্পর্কে খুব সহজেই তথ্য লাভ করা যায়। এক্ষেত্রে যেটি প্রয়োজন তা হচ্ছে নতুন কিছু সম্পর্কে, বিশেষ করে বিভিন্ন স্থানের কৃষ্টি ও কালচার সম্পর্কে জানা ও শেখার প্রবল আগ্রহ থাকতে হবে। নতুন কোন স্থানে গেলে অন্তত উইকিপিডিয়া থেকে ঐ স্থান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে নিন।
ট্যুর গাইড হয়ে আয় করতে চাইলে যা করণীয় সে সম্পর্কে তো জানলেন। এবার অল্প কথায় বলে দেই কি কি এক্ষেত্রে বর্জনীয়। গাইড হতে গেলেই প্রথমেই আপনাকে রাগ ত্যাগ করা শিখতে হবে। কারো কোন প্রশ্নে বিরক্ত বোধ করা যাবে না, এমনকি কেউ খারাপ ব্যবহার করলে তার সাথেও ভালো ব্যবহার করতে হবে।
কোন জায়গা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা বা তথ্য ছাড়া ট্যুরে যাওয়া যাবে না। এতে হিতে বিপরীত হবার সম্ভাবনাই বেশি থাকবে। তাছাড়া আপনি যদি কোন জায়গা সম্পর্কে না জানেন, তাহলে কোন জায়গা কতটা নিরাপদ সেটা বুঝতে পারবেন না। ফলে হতে পারে আপনার অবহেলার কারণে অন্যান্য ট্যুরিষ্টদের নিরাপত্তা হুমকীতে পড়তে পারে। তাই একজন ট্যুর গাইড হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হলে অবশ্যই উপরের গুনাবলীগুলি আয়ত্ব করার চেষ্টা করুন এবং নিচের গুলিকে বর্জণ করুন।
Mish says
যারা ট্যুর গাইড হতে চান এবং এটাকে পেশা হিসেবে নিতে চান, তাদের জন্যে দারুণ উপকারী একটি পোস্ট।