কেন ট্যুর গাইডের মত পেশাকে বেছে নেওয়া উচিত তা জানার পূর্বে ট্যুর গাইড কে এবং তাকে কি কি দায়িত্ব পালন করতে হয় তা জানা আবশ্যক। একজন ট্যুর গাইড তার ব্যক্তিগত ভ্রমণ অভিজ্ঞতা থেকে অন্যদেরকে সেই জায়গার দর্শনীয় স্থানগুলি ঘুরে দেখতে সাহায্য করে। যার ফলে বিভিন্ন স্থান দর্শনার্থীরা খুব সহজেই কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই ঐ এলাকার বিশেষ স্থানগুলি সম্পর্কে জানতে পারেন এবং ঘুরে দেখতে পারেন।
আপনি যদি কোন দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে যান এবং সৌভাগ্যবশত যদি আপনার সাথে একজন ট্যুর গাইড থাকেন, তাহলে আপনি ভ্রমনে বিশেষ কিছু সুবিধা লাভ করবেন। যেমন-
- আপনি সহজেই ঐ এলাকায় কি কি দর্শনীয় স্থান আছে সেগুলি সম্পর্কে জানতে পারবেন।
- দর্শনীয় স্থানগুলিতে সহজে কিভাবে যাওয়া যাবে সে বিষয়ে তিনি আপনাদের গাইড করবেন ও সাথে নিয়ে যাবেন।
- দর্শনীয় স্থানগুলির ইতিহাস আপনার সামনে তুলে ধরবেন।
- আপনার ভ্রমণকে সহজ ও আনন্দদায়ক করে তুলবেন।
যে কারণে ট্যুর গাইড হওয়া উচিত
এ তো গেল দর্শনার্থী হিসাবে একজন ট্যুর গাইড আপনার জন্য কেন জরুরী সে কথা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কেন আপনি ট্যুর গাইডের মত পেশাকে বেছে নেবেন?
হতে পারে কাজটি আপনার জন্য একটি স্বপ্ন, যার জন্র আপনি আপনার বর্তমান কাজ ত্যাগ করে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের জন্য বেরিয়ে পড়বেন। কিন্তু সেটা তখনই সম্ভব, যখন ট্রাভেলিং করার সময়েও আপনার ইনকাম হতে থাকবে। এ কারণে সেরা ভ্রমণ বিষয়ক চাকরিগুলি সম্পর্কে জানা আপনার জন্য অত্যন্ত জরুরী।
আশা করি, ট্যুর বিষয়ক কিছু লোভনীয় চাকরি বা কাজ সম্পর্কে জেনেছেন। এবার জানুন কেন অন্যের ভ্রমণসঙ্গী বা ভ্রমণ প্রদর্শক হবেন।
পরিচিতি লাভ করা:
এ ধরনের কাজকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া সবচেয়ে ভালো দিকটি হলো এর মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সাথে আপনার পরিচয় হবে। আপনাকে গাইড হিসেবে একদল মানুষকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলোতে ঘুরে বেড়াতে হবে। আপনার অভিজ্ঞতা থেকে ঐ জায়গাগুলির বিশেষত্ব তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে।
স্বাভাবিকভাবেই এর ফলে অনেক মানুষ আপনার প্রতি আকর্ষিত হবে এবং তাদের সাথে আপনার একটি ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠবে। এর ফলে নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিতি লাভ করার মাধ্যমে আপনি ভবিষ্যত ক্যারিয়ারে অনেক বেশি লাভবান হবেন।
ভ্রমণের সুযোগ:
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একজন প্রফেশনাল গাইড কখনো একই জায়গায় বার বার যেতে আগ্রহী হন না। একজন দক্ষ ও প্রশিক্ষিত গাইড বিভিন্ন কোম্পানী থেকে নতুন নতুন সব জায়গায় ভ্রমণের সুযোগ লাভ করে থাকেন। এর মধ্যে এমন অনেক জায়গাই থাকবে যেখানে অনেক গাইডই যাওয়ার স্বপ্ন দেখে থাকেন।
ব্যক্তিগত ট্যুরের ক্ষেত্রে অনেকের পক্ষেই এত বেশি জায়গায় যাওয়া সম্ভব হয় না। গাইড হওয়ার সুবিধাটা এখানেই, আপনি এত বেশি সংখ্যক জায়গা ঘুরে দেখার সুযোগ পাবেন যা হয়তো আপনার কল্পনাতেও ছিল না।
ইতিহাস এবং সংষ্কৃতি সম্পর্কে জানা:
একজন দক্ষ গাইড হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আপনাকে অবশ্যই আপনার ভ্রমণের স্থানগুলির বিশেষত্ব সম্পর্কে জানতে হবে। আপনার সাথে যারা ট্যুরে অংশ নেবেন, তারা অবশ্যই আপনার কাছে ঐ স্থানগুলি সম্পর্কে জানতে চাইবেন। এ কারণে কোন ট্যুরে যাওয়ার পূর্বে আপনাকে ঐ জায়গা সম্পর্কে খুব ভালোভাবে রিসার্চ করে নিতে হবে। বিশেষ করে ঐ স্থানের ইতিহাস এবং সংষ্কৃতি সম্পর্কে ভালো ধারণা নিতে হবে।
অনেক ট্যুরিষ্ট রয়েছেন যারা কোন নির্দিষ্ট এলাকার আচার-আচরণ এবং সংষ্কৃতির অভিজ্ঞতা গ্রহণের জন্য সেই সব জায়গায় ট্যুর প্লান করেন। গাইড হিসেবে তাদের চাহিদা পূরণের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা আপনার দায়িত্ব। আর এ কারণে অবশ্যই পর্যাপ্ত পড়াশোনা ও রিসার্চ থাকা প্রয়োজন। আপনি চাইলে এ কাজটির জন্য উইকিপিডিয়া বা অন্যান্য ওয়েবসাইটের সাহায্য নিতে পারেন।
খরচবিহীন ট্যুর:
একবার ভেবে দেখুন তো, স্বাভাবিকভাবে আপনি যদি কোন জায়গায় ঘুরতে যান, তাহলে কি কি খরচ হতে পারে? কোন নতুন জায়গায় যেতে হলে সেখানে যাওয়া আসার খরচ, থাকা খাওয়ার খরচ ইত্যাদির পাশাপাশি অন্যান্য আরো অনেক ধরনের খরচ থেকে থাকে। কিন্তু গাইড হিসেবে কাজ করার সুবিধা হলো আপনার ভ্রমণের যাবতীয় খরচ একটি ট্যুর কোম্পানী বহন করবে, যার মধ্যে যাওয়া-আসা, থাকা-খাওয়া, ঘুরে বেড়ানোর মত সকল খরচই অর্ন্তভুক্ত থাকবে। আর সবচেয়ে মজার বিষয়টি হলো ট্যুর প্যাকেজটি গাইড করার জন্য আপনি আলাদাভাবেও পারিশ্রমিক লাভ করবেন।
অনেক বেশি ইনকামের সুযোগ:
গতানুগতিক কাজের চাইতে এ ধরনের পেশায় অনেক বেশি ইনকামের সুযোগ থাকে। ট্যুরের ধরনের উপর নির্ভর করে একজন দক্ষ গাইড প্রতি ঘন্টায় ৮ থেকে ১৫ ডলারের মত ইনকাম করে থাকেন। এছাড়া ৮ ঘন্টা গাইডিং এর পর থেকে ওভারটাইম হিসেবে ২০ থেকে ২৫ ডলার ইনকাম করার সুযোগ থাকে।
এছাড়া এ পেশায় কয়েক বছরের অভিজ্ঞতার পর আপনি চাইলে নিজে থেকে বিভিন্ন ট্যুর প্যাকেজ ডিজাইন করে নিজেকে ট্যুর ডিরেক্টর বা ট্যুর ম্যানেজার হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। আপনি জেনে অবাক হবেন একজন ট্যুর ডিরেক্টর একটি ট্যুরের প্রতিদিনের জন্য ২৫০ থেকে ৩৫০ ডলার পর্যন্ত পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন।
এছাড়া অধিকাংশ গাইডেরই নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল থাকে, যেখানে তারা সম্পূর্ণ ট্যুর প্রোগ্রামটিকে সংক্ষিপ্ত ভিডিও আকারে আপলোড করে থাকেন। ইউটিউবে ট্যুর সংক্রান্ত চ্যানেলগুলির জনপ্রিয়তা এখন আকাশচুম্বি। এ কারণে আপনি যদি গাইডিং এর কাজটিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েই থাকেন, তাহলে পারিশ্রমিকের পাশাপাশি আপনার জন্য ইউটিউব থেকেও অতিরিক্ত ইনকামের সুযোগ রয়েছে।
ট্যুর গাইড হওয়া খুব সহজ কোন কাজ নয়। আপনি ইচ্ছা করলেই এ কাজটিকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে পারবেন না। এর জন্য প্রথমত আপনার নিজস্ব ভ্রমণ বিষয়ে আগ্রহ থাকতে হবে। শুধু ইনকামের দিকে তাকিয়ে কারো এ পেশায় নিয়োজিত হওয়া উচিত নয়।
আপনি যদি আপনার সহযাত্রীদের তাদের দর্শনীয় স্থানগুলি সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য না দিতে পারেন, তাহলে পরবর্তীতে তারা আপনার কোম্পানিকে কোন ট্যুরে আপনাকে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিরুতসাহিত করবে। এর ফলে আপনার ক্যারিয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। তাই কাজটিকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার পূর্বে অবশ্যই ভালোভাবে ভেবে দেখুন।
Leave a Reply