আপনি ফেসবুক ব্যবহারকারী হয়ে থাকলে নিশ্চয়ই টু স্টেপ ভেরিফিকেশন শব্দটির সাথে আপনার পরিচয় আছে। ফেসবুক বলুন, আর গুগল বলুন, যে কোন ডিজিটাল সিস্টেমের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বর্তমানে এটি একটি বহুল ব্যবহৃত এবং কার্যকর পদ্ধতি।
সবকিছু কম্পিউটারে, স্মার্টফোন বা অনলাইনে করার সহজ এবং সুবিধার হওয়ায় আমরা দিন দিন আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি ডিজিটাল মাধ্যমের উপর। ব্যাক্তিগত তথ্যগুলোও আমরা রাখছি বিভিন্ন ক্লাউট স্টোরেজে। এটি কতখানি ভালো কিংবা কতোখানি খারাপ সে তর্ক আমরা আজকে করবো না।
কিন্তু, একথাও ঠিক যে ডিজিটাল ব্যবস্থায় আপনার তথ্য যেভাবে আপনার অজান্তে চুরি বা হ্যাক হতে পারে, সাধারণ ব্যবস্থায় তা কিন্তু সম্ভব নয়। আর তাই, নিরাপত্তার প্রশ্নে অনেক বেশি সতর্ক থাকা উচিত স্মার্টফোন, কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেট ইত্যাদি ব্যবহারের সময়। এই সতর্ক থাকার ক্ষেত্রে আপনার প্রথম ধাপ হতে পারে যে কোন অনলাইন একাউন্টের টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন অন করে রাখা।
টু-স্টেপ ভ্যারিফিকেশন অন করে ফেসবুক আইডির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় শতভাগ পর্যন্ত। সেক্ষেত্রে আর ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়া কিংবা অন্য কোন স্প্যামের শিকার হওয়ার সম্ভাবণা একেবারেই থাকে না। কারণ, যে-ই আপনার ফেসবুক অ্যাকউন্ট লগ-ইন করতে যাবে, সাথে সাথেই আপনার মোবাইলে একটি কোড আসবে। আর যতক্ষণ না ওই ব্যক্তি এই কোড না পাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কিছুতেই আপনার আইডিতে প্রবেশ করতে পারবে না।
একইভাবে আপনি এই টু-স্টেপ বা সেকেন্ড লেয়ার ভেরিফিকেশন যোগ করে আপনার জিমেল অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন। আসলে, শুধু ফেসবুক কিংবা জিমেইল নয়, যে কোন অনলাইন অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তাই আপনি এটি দিয়ে নিশ্চিত করতে পারবেন।
টু স্টেপ ভেরিফিকেশন কি এবং কেন এই ভেরিফিকেশন অন করে রাখা প্রয়োজন অর্থাৎ কীভাবে এটি আপনাকে আরও সুরক্ষিত করে তোলে, সে-সব নিয়ে সহজ ভাষায় জানার চেষ্টা করবো আজকে আমরা।
টু স্টেপ ভেরিফিকেশন কী?
টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন মূলত টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA) এর সহজ একটি নাম। তবে, বোঝার সুবিধার্থে আমরা এই লেখায় পদ্ধতিটাকে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন নামেই উল্লেখ করবো।
এটি মূলত কী, তা জানার জানার আগে আমাদের জানতে হবে মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (MFA) বিষয়টি সম্পর্কে। সহজ ভাষায় মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন হচ্ছে, কোন একটি ডিজিটাল একাউন্টে প্রবেশের জন্য ব্যাবহারকারীকে একাধিক উপায়ে যাচাই প্রক্রিয়া।
ধরুণ, আপনি ফেসবুক বা গুগলের কোন অ্যাকাউন্টে লগইন করতে চাচ্ছেন। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে যদি আপনি লগইন করতে পারেন, তাহলে সেটা মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন বলা হবে না। তবে, যদি পাসওয়ার্ড দেওয়ার পর আরও এক বা একাধিকবার একাউন্ট যে আপনি তার কোনো না কোনো প্রমাণ দিতে হয়, তাহলে সেই পদ্ধতিটিকে বলা হবে মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন।
মাল্টি ফ্যাক্টর অথেনটিকেশনের একটি প্রকার বা বিশেষ অবস্থা বলা যায় টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন। কোন একাউন্টে ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড, এরপর একাধিক ধাপ পার করা আসলে খুব বিরক্তিকর এবং সময় সাপেক্ষ। কিন্তু আবার নিরাপত্তার জন্য পাসওয়ার্ড যথেষ্ট নয়। তবে পাসওয়ার্ড দেওয়ার পর শুধুমাত্র আর একটি স্টেপের মাধ্যমে ব্যাবহারকারীরে শনাক্ত করা অপেক্ষাকৃত কম ঝামেলার। এতে নিরাপত্তাও অনেক জোরদার হয়। আর এই পদ্ধতিকেই বলা হয় টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন।
এতে পাসওয়ার্ড দেওয়ার পর আরেকটি কোড চাওয়া হয় ব্যাবহারকারীর কাছ থেকে, যেটি তার ফোনে কল বা মেসেজ কিংবা বা ইমেইলের মাধ্যমে তাৎক্ষনিকভাবে আসে ঐ সিস্টেম থেকে।
কেন এটি ব্যবহার করবেন?
টু-স্টেপ বা টু-ফ্যাক্টর ভেরিফিকেশন কী তা আশাকরি ইতিমধ্যই আপনি বুঝতে পেরেছেন। এত আলোচনার পর নিশ্চয়ই এটাও বুঝতে পেরেছেন, যে এই ভেরিফিকেশন কেন গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি যদি আপনার কোন অনলাইন অ্যাকাউন্টে এই ভেরিফিকেশন চালু করে রাখেন, তাহলে সেটি শুধুমাত্র পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করা যাবে না। পাসওয়ার্ড এর সাথে সাথে প্রয়োজন হবে একটি কোডের। অর্থাৎ, কেউ যদি কোনভাবে আপনার পাসওয়ার্ড জেনেও ফেলে তবুও সে আপনার একাউন্টে লগ ইন করতে পারবে না।
লগইন করার জন্য আপনার ফোনে আসা কোডটিও জানতে হবে তাকে। যেহেতু ফোন বা মেইলটি শুধুমাত্র আপনার কাছে থাকছে, তাই কোড জানার কোন সম্ভাবনাই নেই তার। ফলে আপনার একাউন্টটি থাকবে আরও সুরক্ষিত।
এই ছিলো, টু স্টেপ ভেরিফিকেশন নিয়ে আজকের আলোচনা। লেখা সহজ এবং সংক্ষিপ্ত করতে গিয়ে অনেক কিছু বাদ দিতে হয়েছে। তাই এই ভেরিফিকেশন নিয়ে আপনার মনে যদি কোন প্রকার প্রশ্নের উদয় হয়, তাহলে কমেন্টে লিখে ফেলুন সেটি, যতো দ্রুত সম্ভব আমি তা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো।
Leave a Reply