বর্তমান সময়ে অ্যানিমেশন নিয়ে যেমন তৈরি হচ্ছে কার্টুন তেমনিভাবে মুভিতেও দিনকে দিন এর ব্যবহার বেড়েই চলেছে। গুড়ো থেকে বুড়ো সবার কাছেই এখন অ্যানিমেশন খুবই জনপ্রিয়। এই অ্যানিমেশন তৈরি জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরণের সফটওয়্যার। 2D এবং 3D দুই ধরণের অ্যানিমেশন সফটওয়্যারই লাগে কার্টুন ও ভিডিও তৈরির জন্য। ভালো অ্যানিমেশন তৈরির জন্য অবশ্যই ভালো একটি সফটওয়্যার বাছাই করা প্রয়োজন। এই পোস্টে আমরা এরকমই কিছু টু-ডি অ্যানিমেশন সফট্ওয়্যার সম্পর্কে জানবো।
টু-ডি অ্যানিমেশন সফট্ওয়্যার
2D অ্যানিমেশন সফটওয়্যার দিয়ে আপনি খুব সহজেই একটি অ্যানিমেশন বানাতে পারেন। ক্যারেক্টার নিন, সাজ-সরঞ্জাম বাছাই করুন, দৃশ্য দিন, ব্যাস সহজেই হয়ে যাবে 2D অ্যানিমেশন। এই 2D অ্যানিমেশন নিয়ে কাজ করলে আপনি স্টোরিবোর্ডিং এর ধারণা পাবেন যা ৩D অ্যানিমেশন এর মূল ভিত্তি। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক ৫টি দারুন 2D অ্যানিমেশন সফটওয়্যার সম্পর্কে।
Pencil
এটি একটি ওপেন সোর্স সফটওয়্যার যা আপনাকে অবাধে 2D অ্যানিমেশন তৈরি করতে সহায়তা করবে। কিছু সহজ কিন্তু উদ্ভাবনীমূলক টুলস এর মাধ্যমে আপনার সৃজনশীল আবিষ্কারকে রঙিন 2D গ্রাফিক্সে প্রকাশ করতে এটি সাহায্য করবে। এটির ইন্টারফেস অত্যন্ত সহজ এবং নিখুঁত।
পেনসিলের মূল ফাংশনটি হল টাইমলাইন বৈশিষ্ট্য, যা আপনাকে চারটি ভিন্ন ধরনের স্তর যোগ করতে সহায়তা করবে। সেগুলো হলো সাউন্ড, বিটম্যাপ ইমেজ, ক্যামেরা এবং ভেক্টর ইমেজ। সেটিং কী-ফ্রেমের মাধ্যমে একটির উপর আরেকটি লেয়ার সাজানো হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, প্রথমে ক্যারেক্টারগুলোকে পেন্সিল টুল দিয়ে বিটম্যাপ ফরম্যাটে স্কেচ করে নিয়ে সেটিকে ভেক্টর লেয়ারে যুক্ত করা যেতে পারে। তারপর পেন এবং ফিল টুলস ব্যবহার করা এগুলোকে কানেক্ট করা যায়। ম্যাক ওএস এক্স, উইন্ডোজ এবং লিনাক্সের জন্য এই সফটওয়্যারটি রয়েছে।
Creatoon
এটি ইউজার ফ্রেন্ডলি, সহজবোধ্য এবং একটি স্বতন্ত্র সফ্টওয়্যার যা আপনাকে কাট আউট ফ্যাশনে 2D অ্যানিমেশন তৈরি করতে এবং একই সাথে বিভিন্ন ধরণের বিশেষ প্রভাব যোগ করতে সাহায্য করে। এই সফটওয়্যার এর মাধ্যমে কিছু জটিল কাজ করা যায় যা উল্লেখযোগ্য ফলাফল প্রদান করে। এর মাধ্যমে আপনি স্পেশাল ইফেক্ট দিতে পারেন এবং সুবিধামত ম্যানুয়ালিভাবে আপনার কাজগুলোকে স্টোর করতে পারেন। অথবা এটি ৫ মিনিট পর পর নিজে থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার কাজগুলিকে সংরক্ষণ করবে।
ড্রয়িং টুলসগুলোকে নিজের সুবিধামতো ব্যবহার করা এবং সাজিয়ে নেওয়ার মতো সুবিধাও এতে রয়েছে। সফটওয়্যারটি অ্যানিমেশন উপাদানগুলিকে স্লাবে আলাদা করে দেয়, যার ফলে প্রয়োজনীয় পরিবর্তণগুলো সহজেই সম্পাদন করা যায়। সামগ্রিকভাবে সফটওয়্যারটির মাধ্যমে অ্যাডভান্স ফিচার ব্যবহার করে অনায়াসেই অ্যানিমেশনটি তৈরি করা যায় এবং একই সাথে এটি বিগিনার্সদের জন্য একটি পারফেক্ট সলিউশন।
Plastic Animation Paper
অন্যতম একটি সেরা সফটওয়্যার এটি যা সহজ এবং পাওয়ারফুল টুলসের মাধ্যমে আপনার আইডিয়াকে সুন্দর কার্টুন কিংবা অ্যানিমেশনে কনভার্ট করতে পারে। এটি আপনাকে রিয়েল টাইম সাজেশন এবং একটি সহজ প্রক্রিয়া প্রদান করে যা আপনার কনসেপ্টকে সহজ এবং সাবলীল গতি এনে দেয়।
Plastic Animation Paper এর মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হচ্ছে স্কেচিং স্পেস, স্কেচে রঙ যোগ করা, ফ্রেম স্পিড সেটিং করা, জুম ইন এবং জুম আউট, সঙ্গীত সন্নিবেশ করা এবং আরও অনেক কিছু। স্কেচ শেষ করার পর সেগুলোকে AVI, PNG, TGA, GIF এবং অন্যান্য ফরম্যাটে সেভ করা যায়।
কাস্টমাইজেবল টুল বার এবং কুইক সিলেক্ট মারকিং মেনু রয়েছে যার ফলে আপনার পছন্দের ফাংশন প্রয়োগ করতে পারেন। সফটওয়্যারটি বর্তমানে উইন্ডোজ পিসি এবং ম্যাক ওএস এক্স ব্যবহারকারীদের জন্য রয়েছে এবং লিনাক্স, অ্যান্ড্রয়েড এবং আইপ্যাড প্রো ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
Synfig Studio
এটি একটি ওপেন সোর্স এবং একটি মাল্টি প্ল্যাটফর্ম মুক্ত সফটওয়্যার যা আপনাকে 2D অ্যানিমেশন তৈরি করতে সাহায্য করবে। এর ডিজাইন “Pencil” সফটওয়্যার এর কাছাকাছি। তবে দুইটির মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো এতে রয়েছে “avant-garde” ফিচার এর শার্প লার্নিং কার্ভ এবং আশ্চর্যজনক ফলাফল, যেটি আপনি খুব সহজেই অর্জন করতে পারবেন যদি এর টুলসগুলোর কাজ আপনি প্রোফেশনাল গ্রেড এ করতে পারেন।
প্রোগ্রামটির ইন্টারফেসকে চারটি পৃথক উইন্ডোতে আলাদা করা হয়। এগুলো হচ্ছেঃ টুলস উইন্ডো, এডিটিং উইন্ডো, ন্যাভিগেটর উইন্ডো এবং প্যারামিটার উইন্ডো। যখন এর ফিচারগুলো আপনি দক্ষতার সাথে ব্যবহার করতে পারবেন তখন আপনি উচ্চমানের কার্টুন, অ্যানিমেশন এবং মুভি তৈরি করতে পারবেন।
Synfig Studio ভেক্টর এবং বিটম্যাপ কৌশল উপর ভিত্তি করে তৈরি করা। সফটওয়্যারটি ওপেন সোর্স এবং ক্রস প্ল্যাটফর্মভিত্তিক। এটি উইন্ডোজ, ম্যাক এবং লিনাক্স এর জন্য প্রযোজ্য।
PowToon
বিশ্বব্যাপী কোম্পানিগুলি যেমন কোকা কোলা, কোস্টকো, ইবে, ফিজার এবং স্টারবাক্স এর মতো কোম্পানিগুলো এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে। এটি একটি ওয়েব ভিত্তিক অ্যানিমেশন সফটওয়্যার যেটিতে প্রি-ক্রিয়েটেড অবজেক্টস, ইম্পোর্টেড ইমেজ, ভয়েস ওভার এবং মিউজিক ব্যবহার করে কোন প্রেজেন্টেশন তৈরি করা যায়।
পিক্সেল এবং প্রক্সি সার্ভারের মধ্যে পার্থক্য জানা না থাকলেও এটি যে কেউ সহজে ব্যবহার করতে পারবে। এই ইউজার ফ্রেন্ডলি সফটওয়্যারটি ছোট ভিডিও তৈরির জন্য আদর্শ, একই সাথে প্রোফেশনাল লুক এবং ফিল দিতে পারে। এই প্রোগ্রামটি গুগল ক্রোমের স্টোর এ এবং এডমোডো ডটকমের একটি অ্যাপ্লিকেশন হিসাবেও পাওয়া যায়।
মাত্র কয়েক ঘণ্টা কাজ করেই আপনি এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে একটি 2D অ্যানিমেশন তৈরি করতে পারবেন। ক্যারেক্টার বাছাই করুন, সাজ-সরঞ্জাম এবং দৃশ্য নির্বাচন করুন, এডিটরে ড্র্যাগ অ্যান্ড ড্রপ করুন, এবং আপনি যে অ্যানিমেশন প্রয়োগ করতে চান তা নির্বাচন করুন, ব্যাস একটি 2D অ্যানিমেশন তৈরি হয়ে যাবে। সেরা অ্যানিমেশন সফটওয়্যার হিসাবে এরই মধ্যে এটি বাজার দখল করে নিয়েছে।
আপনি যদি একজন অ্যানিমেশন ক্রিয়েটর হতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনার অ্যানিমশন সফটওয়্যার সম্পর্কে জানা লাগবে। আর এই আর্টিকেল এ দারুণ দারুণ কিছু টু-ডি অ্যানিমেশন সফট্ওয়্যার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যেগুলো ব্যবহার করে খুব সহজেই সুন্দর 2D অ্যানিমেশন তৈরি করা যায়।
Leave a Reply