কম্পিউটার বা মোবাইল ক্রয় এবং আপডেট করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন এটাই যে, আপনার ঠিক কতো পরিমাণ র্যাম এর প্রয়োজন। কম্পিউটার ও মোবাইলের জন্য র্যাম এর প্রয়োজনীয়তা এবং ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে এর উত্তরটি একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম। কখনওই নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয় যে, ঠিক কতটুকু র্যাম আপনার চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।
কম্পিউটারের গতির জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখায় র্যাম অনেক আগে থেকেই কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের কাছে অতি পরিচিত ডিভাইস হিসেবে জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু স্মার্টফোনে এর ব্যবহার শুরু হওয়ার পর থেকেই এটি একইভাবে তাদের কাছেও গুরুত্ব লাভ করে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে র্যামের গুরুত্ব এতটাই বেশি যে কম্পিউটার বা মোবাইল কেনার সময় সিপিইউ এর চাইতে র্যামের উপরেই অনেককে বেশি গুরুত্ব দিতে দেখা যায়। বেশি র্যাম মানেই দুর্দান্ত পারফরমেন্স, বিষয়টি আমাদের কাছে সাধারণ জ্ঞানের মত করেই গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।
আমাদের দেশে এখন প্রায় সবাইরই কম্পিউটার ও মোবাইল দু’টোই আছে। অল্প কিছু মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, কম্পিউটার নেই কিন্তু মোবাইল আছে। তবে, অনেকেই কম্পিউটার কিংবা মোবাইলের জন্যে র্যামের পরিমাণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ক্লিয়ার না।
তাই, অনেকের মনেই প্রশ্ন, আমার কম্পিউটারের জন্যে আসলে কতটুকু র্যাম দরকার। কিংবা মোবাইলের জন্যে ঠিক কতটুকু র্যামের প্রয়োজন। আজ জেনে রাখুন র্যামের পরিমাণ ও প্রয়োজনীতা সম্পর্কে বিস্তারিত।
কম্পিউটার ও মোবাইলের জন্য র্যাম
র্যাম কি এটা নতুন করে বলার মত কিছু নেই। ইতিপূর্বেই আমরা র্যাম কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে তা নিয়ে আলোচনা করেছি। এখন যদি মোবাইলের কথা বলা হয় সেক্ষেত্রে বিষয়টি অপরিবর্তিত থাকবে। কম্পিউটার এরং মোবাইলের র্যাম দুইটি ডিভাইসের জন্যই একই কাজ করে থাকে।
আজকের দিনে বাজারে যে সমস্ত স্মার্টফোন পাওয়া যায়, তার বেশিরভাগেই যথেষ্ট পরিমাণে র্যাম থাকে। একটি ফোনের সাধারণ তথ্য ধারণের জন্যেও র্যাম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ফোনের র্যামগুলিতে কম্পিউটারে ব্যবহৃত র্যামের চাইতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করায় এটি আরো দ্রুত গতি সম্পন্ন হয়ে থাকে।
মোবাইলের অপারেটিং সিস্টেম তাৎক্ষনিক ব্যবহারের জন্য র্যামে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন লোড করে থাকে। এ কারণেই কম্পিউটারের তুলনায় মোবাইলে অনেক দ্রুত সময়ে অ্যাপ্লিকেশন রান হয়ে থাকে। এতক্ষণে নিশ্চয়ই আপনারা কম্পিউটার এবং মোবাইলের র্যাম এবং এর কার্যাবলী সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পেয়ে গেছেন।
এবার চলুন দেরি না করে জেনে নিই আপনার কম্পিউটার বা মোবাইলের জন্য ঠিক কতটুকু র্যাম প্রয়োজন।
কম্পিউটারের জন্য কতটুকু র্যাম
আপনার সিস্টেমে কতটুকু র্যামের প্রয়োজন, তা নির্ভর করে আপনি আপনার কম্পিউটার দিয়ে কি ধরনের কাজ করবেন, তার উপর। তবে কোন কাজের জন্যই নির্দিষ্ট করে র্যামের পরিমাণ নির্ধারিতভাবে বলা যায় না। এটি সব সময় অনুমানের ভিত্তিতেই নির্ধারিত হয়।
যেমন, আপনি যদি শুধুমাত্র অফিস অ্যাপ্লিকেশন, মাল্টিমিডিয়া ফাংশন এবং ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর কাজ করতে চান, তাহলে একটি ডুয়েল কোর প্রসেসরের সাথে দুই গিগাবাইট র্যাম হয়তো আপনার জন্য যথেষ্ট হবে। যদি ফটোশপ বা গ্রাফিক্স সর্ম্পকিত কাজ, যেমন ইমেজ এডিটিং, ভিডিও এডিটিং এর কাজ করতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই র্যামের পরিমাণ চার থেকে আট গিগাবাইট পর্যন্ত বর্ধিত করা ভালো।
তবে র্যামের সাথে সাথে অবশ্যই এক্ষেত্রে আরো উন্নত প্রযুক্তির প্রসেসরেরও প্রয়োজন হবে।
এবার আসি গেমিং এর কথায়। যারা কম্পিউটারে গেমিং করতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য বিশেষ ধরনের কনফিগারেশনের কম্পিউটারের প্রয়োজন হয়, যাকে গেমিং পিসি বলে। বিভিন্ন কম্পিউটার যন্ত্রাংশ নির্মাতা কোম্পানী প্যাকেজ আকারে তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডের গেমিং পিসি বাজারজাত করে থাকে। চলতি বছরের সেরা ৫টি গেমিং ল্যাপটপ দেখে নিতে পারেন।
আবার আপনি চাইলে আপনার নিজের মত করেও বেশ কিছু ব্র্যান্ডের ভালো ভালো ডিভাইসের সমন্বয়ে একটি গেমিং পিসি তৈরী করে নিতে পারেন। বাজারে যেসব গেমিং পিসি পাওয়া যায়, তার বেশিরভাগেই ষোল থেকে বত্রিশ গিগাবাইট র্যাম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আপনি যে ধরনের গেম খেলতে ইচ্ছুক, তার সিস্টেম রিকোয়ারমেন্ট এর উপর ভিত্তি করে র্যাম কেনাই ভালো।
মোবাইলের জন্য র্যাম:
আপনি দেখে থাকবেন যে বর্তমানে বাজারে অনেক ফোনেই দশ গিগাবাইট বা তারও বেশি পরিমাণে র্যাম থেকে থাকে। টেকনিক্যালি এটি একটি গেমিং পিসির র্যামের কাছাকাছি। এছাড়াও চার গিগাবাইট এবং ছয় গিগাবাইট সমৃদ্ধ র্যামের ফোনের সংখ্যাও একেবারে কম নয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আসলেই কি আপনার মোবাইলে চার বা ছয় গিগাবাইটের বেশি র্যামের প্রয়োজন রয়েছে?
ফোনের জন্য র্যাম হচ্ছে এমন একটি স্থান যেখানে প্রসেসর অ্যাপগুলিকে রান করিয়ে থাকে। তাই সহজভাবেই বলা যায় যে, যত বেশি পরিমাণে র্যাম থাকবে, ফোনকে কোন প্রকার ধীর গতির করা ছাড়াই তত বেশি পরিমান অ্যাপ্লিকেশন এক সাথে রান করানো যাবে, এটা ভাবাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আসলে যতটা সহজে আমরা এটি ভেবে নিই, বিষয়টি ততটা সোজা নয়। মোবাইলের ক্ষেত্রেও কম্পিউটারের মতই বেশি কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে র্যাম কাজ করে থাকে।
মোবাইলের ব্যবহারের উপর যদি নজর দেওয়া হয়, তাহলে দেখা যায় যে এই সময়ে বিভিন্ন কাজের চাহিদার উপর ভিত্তি করে মোবাইল ক্রয় করা হয়। একইভাবে নির্দিষ্ট ফিচারকে লক্ষ্য করেও বিভিন্ন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মোবাইল তৈরী করে থাকে। এর কোনটিতে জোর দেওয়া হয় ক্যামেরার দিকে, আবার কোনটিতে জোর দেওয়া হয় গেমিং এর দিকে। আর বাদ বাদি ফিচার প্রায় সব ফোনেই একই রকম।
র্যাম কি আসলেই সিস্টেমের গতি বৃদ্ধি করে?
এই প্রশ্নটির উত্তর একটু জটিল। কিছু ক্ষেত্রে এর উত্তর হ্যাঁ এবং কিছু ক্ষেত্রে না। কারণটি হলো একটি আদর্শ কনফিগারেশনের ডিভাইসের সাথে পরিমাণ মত র্যাম যোগ করলে ডিভাইসটি দুর্দান্ত গতি সম্পন্ন হয়ে ওঠে। এটি যেমন সত্য, তেমনি আপনি সিস্টেমে যতই র্যাম যোগ করেন না কেন, আপনার প্রসেসর, মাদারবোর্ডের মত গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশগলি যদি দুর্বল হয়ে থাকে, তাহলে শুধু র্যাম আপনার কোন কাজেই আসবে না।
আপনি যদি ল্যাপটপ ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন, তাহলে লক্ষ্য করে থাকবেন যে, হাল সময়ের হাই-এন্ড ল্যাপটপগুলিতেও পরবর্তীতে অতিরিক্ত র্যাম যোগ করার সুবিধা থেকে থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখার বিষয়টি হচ্ছে আপনি যখনই আপনার ল্যাপটপে অতিরিক্ত র্যাম যোগ করবেন, তখন আপনার ল্যাপটপ আগের তুলনায় অনেক বেশি ব্যাটারীর চার্জ ব্যবহার করা শুরু করবে।
মোবাইলে যেহেতু এখনও অতিরিক্ত র্যাম যোগ করার মত সুবিধা আসেনি, তাই মোবাইল কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই ডিভাইসে কি পরিমাণ র্যাম ব্যবহার করা হয়েছে, তার সাথে সাথে সেটির প্রসেসর, জিপিইউ, ব্যাটারীর ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয়ের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। তবে, আপনি কিছুটা নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, যে-সব মোবাইলে বেশি পরিমাণ র্যাম দেয়া হয়ে থাকে, সে-সব মোবাইলে স্বাভাবিকভাবেই ভাল মানের প্রসেসর, ব্যাটারি এবং জিপিইউ ইউজ করা হয় বা দেয়া থাকে।
কম্পিউটার ও মোবাইলের জন্য র্যাম কতটুকু প্রয়োজন, তা বোঝার জন্য প্রথমেই আপনি কি করতে চান, তা ঠিক করে নিন। তারপর আপনার প্রয়োজনের ভিত্তিতে কেমন কনফিগারেশনের ডিভাইস আপনার প্রয়োজন তা নির্ধারণ করুন। এরপর বাজারে থাকা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ডিভাইসের কনফিগরেশনের তুলনা করে যে কম্পিউটার ও মোবাইলটি আপনার প্রয়োজন, যেটি আপনার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য, সেটিই ক্রয় করুন।
Leave a Reply