চাকরির ইন্টারভিউ প্রতিটি চাকরিপ্রার্থীর জীবনে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
সিভি বা রিজিউম দেখে আপনার সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা নিলেও, ইন্টারভিউতেই নিয়োগকর্তা সিদ্ধান্ত নেন আপনি উপযুক্ত কিনা।
তাই, চাকরির ইন্টারভিউর প্রস্তুতি নেয়ার পাশাপাশি নিজেকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করাও জানতে হবে এবং এটিই আপনার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো, যেগুলো মেনে চললে আপনি ইন্টারভিউয়ে নিজেকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তুলে ধরতে পারবেন।
এক নজরে দেখে নিন যা আছে এই লেখায়-
চাকরির ইন্টারভিউ বোর্ডে নিজেকে যেভাবে উপস্থাপন করবেন
পোশাকে পরিচ্ছন্নতা ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখুন
ইন্টারভিউতে প্রথম ইমপ্রেশন হয় পোশাকে। তাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, উপযুক্ত ও পরিপাটি পোশাক পরুন। পুরুষদের জন্য হালকা রঙের শার্ট ও ডার্ক ট্রাউজার বা স্যুট, আর মহিলাদের জন্য শালীন ও প্রফেশনাল ড্রেস পরাই বাঞ্ছনীয়।
সময়ের আগে উপস্থিত থাকুন
ইন্টারভিউয়ের জন্য ১০-১৫ মিনিট আগে উপস্থিত থাকুন। দেরি করা আপনার দায়িত্বজ্ঞানহীনতা প্রকাশ করতে পারে। আগে উপস্থিত হলে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সুযোগও পাবেন।
নিজের সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখুন
ইন্টারভিউ বোর্ড প্রায়শই জানতে চায় – “আপনি নিজেকে কিছু বলুন।” এই প্রশ্নের জন্য আগে থেকেই প্র্যাকটিস করুন। নিজের শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও ক্যারিয়ার লক্ষ্য সম্পর্কে স্পষ্টভাবে বলুন।
শরীরের ভাষা (Body Language) নিয়ন্ত্রণে রাখুন
আপনার মুখাবয়ব, চোখের যোগাযোগ, বসার ভঙ্গি সবকিছুতেই আত্মবিশ্বাস ফুটে উঠতে হবে। চোখে চোখ রেখে কথা বলুন, অকারণে হাত-পা নাড়বেন না, সোজা হয়ে বসুন।
ভদ্রতা ও নম্রতা বজায় রাখুন
প্রথমে সালাম বা শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করুন এবং প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর শালীন ভাষায় দিন। ‘ধন্যবাদ’, ‘অনুগ্রহ করে’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করুন। ইন্টারভিউ শেষে ধন্যবাদ জানাতে ভুলবেন না।
প্রাসঙ্গিক প্রশ্নে যুক্তিযুক্ত উত্তর দিন
প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ বা না-তে শেষ করবেন না। প্রয়োজনে উদাহরণ দিয়ে বোঝান। তবে কথা অপ্রয়োজনীয়ভাবে বড় করবেন না। উত্তর সংক্ষিপ্ত, স্পষ্ট এবং প্রাসঙ্গিক হওয়া উচিত।
নিজের সাফল্য ও ব্যর্থতার কথা বাস্তবভাবে বলুন
যখন আপনি আপনার অর্জনের কথা বলবেন, তখন তা নম্রভাবে বলুন। আর যদি ব্যর্থতার কথা বলা হয়, তবে কীভাবে আপনি তা থেকে শিক্ষা নিয়েছেন, সেটাও ব্যাখ্যা করুন।
প্রযুক্তিগত বা পেশাগত দক্ষতার বাস্তব উদাহরণ দিন
আপনার দক্ষতা শুধু বলা নয়, বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বোঝানো বেশি কার্যকর। যেমন: “আমি Microsoft Excel ভালো জানি” বলার চেয়ে “আমি Excel-এ গত মাসে আমাদের বিক্রয় বিশ্লেষণ করেছি” বললে বেশি প্রভাব পড়ে।
কোম্পানির সম্পর্কে আগেই জেনে রাখুন
কোন কোম্পানির ইন্টারভিউ দিচ্ছেন, তারা কী ধরনের কাজ করে, তাদের মিশন-ভিশন কী – এসব সম্পর্কে জেনে গেলে আপনার আগ্রহ এবং প্রস্তুতির পরিচয় পাওয়া যায়।
বেতন নিয়ে সরাসরি আলোচনা এড়িয়ে চলুন (যদি নিজের থেকে না প্রশ্ন করে)
প্রথম সাক্ষাৎকারেই বেতন নিয়ে কথা বলা সবসময় ভালো দেখায় না। যদি নিয়োগকর্তা প্রশ্ন করেন, তখন নম্রভাবে নিজের প্রত্যাশা জানান।
ইন্টারভিউ শেষে কৃতজ্ঞতা জানান
ইন্টারভিউ শেষ হলে সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং এই সুযোগ দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। এতে আপনি একটি পজিটিভ ইমপ্রেশন রেখে যেতে পারবেন।
উপসংহার
চাকরির ইন্টারভিউতে সফল হতে শুধু দক্ষতা থাকলেই হয় না, নিজেকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারাটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আত্মবিশ্বাস, নম্রতা, পেশাদারিত্ব এবং প্রস্তুতির সম্মিলনে আপনি সহজেই নিজের জায়গা করে নিতে পারবেন।
শুভকামনা আপনার ইন্টারভিউয়ের জন্য!
Leave a Reply