বন্ধু-বান্ধব কিংবা আত্মীয়-স্বজনের জন্যে শখের বশে গ্রীটিং কার্ড ডিজাইন করা বেশ মজার একটি কাজ। আর নিজের শখ পূরণ ছাড়াও অন্যান্য সৌখিন মানুষের জন্যে প্রপেশনাল্লি গ্রীটিং কার্ড তৈরি করা আরো মজার। কেননা, একই সঙ্গে যেমন নিজের সৃজনশীলতা প্রকাশ করা যাচ্ছে, আবার তা থেকে ইনকামও জেনারেট হচ্ছে।
নতুন বছর, ঈদ, বিবাহ-বার্ষিকী, জন্মদিনসহ যে কোনও উৎসবে গ্রীটিং কার্ডের ব্যবহার আমাদের পুরনো ঐতিহ্য। যদিও সোশ্যাল মিডিয়ার মারাত্মক প্রভাবের কারণে প্রিন্টেড গ্রীটিং কার্ড উপহার দেয়া অনেকটাই কমে গিয়েছে, কিন্তু ভার্সুয়াল কার্ডের ব্যবহার কিন্তু প্রচুর পরিমাণে বেড়েছে।
শখের বশেই করুন আর প্রপেশনের প্রয়োজনেই করুন, প্রিন্টের জন্যেই করুন আর ভার্সুয়াল ব্যবহারের জন্যেই করুন, গ্রীটিং কার্ডকে অবশ্যই আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে।
আপনার কার্ডটির ডিজাইন যদি আকর্ষণীয় হয়, তবে বন্ধু-বান্ধবরা যেমন পছন্দ করবে, তেমনই পছন্দ করবে ক্লায়েন্ট। আর যদি ক্লায়েন্টের পছন্দ হয়ে যায়, তবে বিভিন্ন উপলক্ষে যত গ্রীটিং কার্ডই দরকার হোক না কেন, ক্লায়েন্ট সেগুলো আপনাকে দিয়েই ডিজাইন করাবে।
ফলে, ধীরে ধীরে আপনার ক্লায়েন্ট বাড়তে থাকবে। আর আপনি বিভিন্ন কোম্পানী থেকেই কাজ পাওয়া শুরু করবেন। গ্রীটিং কার্ড লিখে আয় করার অনেক কোম্পানী আছে যেগুলো থেকে আপনি নিয়মিত কাজ পাবেন, যদি গ্রীটিং কার্ডের জন্যে প্রথমবারই আপনি আকর্ষণীয় কোনও ডিজাইন দিয়ে তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেন।
সুতরাং, গ্রীটিং কার্ডকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্যে আপনাকে কিছু টিপস্ ফলো করতে হবে। আসুন, সেই টিপসগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক-
গ্রীটিং কার্ড ডিজাইন টিপস্
১. যথেষ্ট রিসার্চ করুন
গ্রীটিং কার্ড ডিজাইনের শুরুতেই আপনার যে কাজটি করা উচিৎ, তা হচ্ছে রিসার্চ। আপনাকে একদিকে যেমন মার্কেট রিসার্চ করতে হবে, অন্যদিকে রিসার্চ করতে হবে ডিজাইন ট্রেন্ড। অর্থাৎ, বর্তমানে কী ধরণের ডিজাইন চলছে সে সম্পর্কে রিসার্চ করে ধারণা নিয়ে রাখতে হবে।
এমনকি আপনাকে ফিগার আউট করতে হবে যে, আপনার কাস্টোমার বা ক্লায়েন্ট কি ধরণের কার্ড চাইছেন। তবে, এর মানে এই নয় যে, ক্লায়েন্টের চাওয়ার সাথে আপনি আপনার সৃজনশীলতাকে বিকিয়ে দেবেন। বরং, ক্লায়েন্টের ডিমান্ড আর আপনার সৃজনশীলতা, দুটোকে কম্বাইন্ড করে ব্যতিক্রমী একটি গ্রীটিং কার্ড ডিজাইন করবেন।
২. তাড়াহুড়ো করবেন না
যদি ক্লায়েন্টের দিক থেকে চাপ না থাকে, তবে কার্ড ডিজাইনে কারোই খুব একটা তাড়াহুড়ো করা উচিৎ। সুতরাং, সময় নিয়ে ডিজাইন করুন। তবে, শুরু করতে কিন্তু সময় নেবেন না। যদিও তাড়াতাড়ি শুরু করা বুদ্ধিমানের কাজ, তবু সময় নিয়ে ডিজাইনের কাজ করা কার্যতই ফলফ্রসূ।
এক্সপার্ট ডিজাইনারদের ক্ষেত্রে যদিও একটা গ্রীটিং কার্ড ডিজাইন করা বড়জোর এক ঘন্টার ব্যাপার, তবু সৃজনশীলতার সর্বোচ্চ পর্যায় ব্যবহার করতে হলে অন্তত এক সপ্তাহ সময় নেয়া উচিৎ। বিশেষত, যদি নিজের কাজ হয় অথবা ক্লায়েন্টের কাজ কিন্তু টাইম ফ্রেম বাঁধা নেই।
৩. লেখার জন্যে স্পেস রাখুন
গ্রীটিং কার্ডের অন্যতম একটি আকর্ষণীয় পার্ট হচ্ছে শুভেচ্ছা বাণী। বিখ্যাত উক্তি, কবিতার লাইন কিংবা সুন্দর সুন্দর কথা দিয়ে লেখা হয় এই শুভেচ্ছা বাণী। ডিজাইনের মাঝে বসানো এই কথাগুলো অত্যন্ত হাইলাইট করা হয় এবং যাকে দেয়া হয় তার চোখে ডিজাইনের আগে কথাগুলোই পড়ে।
এখন আপনি যদি এমনভাবে গ্রীটিং কার্ড ডিজাইন করেন যাতে আর এক্সট্রা জায়গা না থাকে, তাহলে কথাগুলো কোথায় বসানো হবে! সুতরাং, আপনাকে এমনভাবে ইলাস্ট্রেশন করতে হবে যাতে ক্যাপশন, নোট বা হেডিং বসানোর যথেষ্ট জায়গা থাকে।
৪. গ্রীটিং কার্ডের বিষয়বস্তুর দিকে খেয়াল রাখুন
গ্রীটিং কার্ডের বিষয়বস্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়বস্তুর সঙ্গে কার্ডের ডিজাইনের মিল থাকতে হবে। কাজেই, আপনাকে অবশ্যই বিষয়বস্তুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই কার্ড ডিজাইন করতে হবে। যেমন, আপনার কার্ডের বিষয়বস্তু যদি ক্রিসমাস ডে হয়, আর আপনি যদি কার্ডের ডিজাইনে ঈদের আমেজ তুলে আনেন, তাহলে কার্ডটি নিশ্চয়ই কারোই পছন্দ হবে না।
বিষয়বস্তুর দিকে খেয়াল রেখে এমনভাবে গ্রীটিং কার্ড ডিজাইন করা উচিৎ যাতে প্রথম দেখাতেই অডিয়েন্স সেটি বুঝতে পারে। যদি ডিজাইন দেখে এক মূহুর্তে কেউ সেটির বিষয়বস্তু না বুঝতে পারে, তবে আপনার উচিৎ আবার ডিজাইন করা। কার্ডটি যদি কোনও সিজন বা নির্দিষ্ট ইভেন্ট উপলক্ষে হয়, তবে অবশ্যই লেখা ছাড়াই সেটি দেখে যে কারো বুঝতে পারা উচিৎ।
৫. সঠিক কালার বেছে নিন
বিষয়বস্তুর মতো কালারও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যে ধরণের ইভেন্টের জন্যে গ্রীটিং কার্ড ডিজাইন করছেন, সে ধরণের কালার ব্যবহার করতে ভুলবেন না। ঈদ হলে ঈদ কেন্দ্রিক কালার, ভালবাসা দিবস হলে লাভিং কালার, ম্যারেজ ডে হলে মানাসই কালার ব্যবহার করুন।
মনে রাখবেন, কালারই কথা বলে এবং জানিয়ে দেয় কোন জিনিসটি কিসের। কাজেই, গ্রীটিং কার্ডে কালার ব্যবহারে আপনাকে অবশ্যই ক্রিয়েটিভ হতে হবে।
৬. পারফেক্ট ফন্ট নির্বাচন করুন
গ্রীটিং কার্ডের ক্যারেক্টার ফুটিয়ে তোলার জন্যে পারফেক্ট ফন্ট পিক করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে ফন্টটি নির্বাচন করছেন, ভেবে দেখুন সেটি কি কোয়ার্কি, বোল্ড, ইলিগেন্ট? ফন্টও অনেক সময় কথা বলে, বুঝিয়ে দেয় নির্দিষ্ট কোনও বিষয়। কাজেই, সঠিক ফন্ট নির্বাচন গ্রীটিং কার্ডের জন্যে কার্যকর পদক্ষেপ।
৭. ঠিক করে নিন ভার্টিক্যাল না হরাইজন্টাল লে-আউট
গ্রীটিং কার্ডের ক্ষেত্রে প্রচলিত লে-আউট হচ্ছে ভার্টিক্যাল এবং এটি স্পেস ইফিসিয়েন্ট। ভিজ্যুয়াল্লি ভ্যালেন্সড্ প্রপোরশনের জন্যে ভার্টিক্যাল লে-আউটই বেটার। বেশিরভাগ গ্রীটিং কার্ড স্টোরগুলোতে ভার্টিক্যাল লে-আউটের কার্ডই সাজানো থাকে।
তবে, আপনার কার্ডটি যদি কোনও স্টোরের জন্যে না হয়, যদি প্রিন্টের চিন্তা না থাকে, তবে হরাইজন্টাল লে-আউটই বেশি ভাল হবে। বিশেষ করে, কার্ডটি যদি ইমেলে পাঠানোর চিন্তা করার হয়, কিংবা যে কোনও মাধ্যমে ভার্সুয়াল্লি ব্যবহার করার জন্যে হয়, তবে এই লে-আউটটি আপনার কার্ডটিকে বিশেষ মর্যাদা দেবে।
আপনি যদি উপরোক্ত গ্রীটিং কার্ড ডিজাইন টিপস্গুলো মেনে চলেন, তবে অবশ্যই আপনি ভাল মানের ডিজাইন করতে পারবেন। বিজনেস ক্লায়েন্ট বা কাস্টোমারকে খুশি করার পাশাপাশি আপনি সাধারণ মানুষকেও মুগ্ধ করতে পারবেন। সুতরাং, গ্রীটিং কার্ড ডিজাইনে ক্রিয়েটিভ হওয়ার চেষ্টা করুন।
গ্রীটিং কার্ড ডিজাইনের নানা দিক নিয়ে লেখা এই রকম দরকারি একটা পোস্ট দেওয়ার জন্য হৈচৈ বাংলাকে অনেক ধন্যবাদ।
গ্রীটিং কার্ডকে আকর্ষণীয় করতে ডিজাইন টিপস্গুলো খুব ভাল লেগেছে।