আমরা অনেকেই আছি যারা সকালে ঘুম ভাঙার পরই ভাবা শুরু করি আজকে কি কি কাজ করতে হবে। মনে মনে একটা লিস্ট বানিয়ে ফেলি। তারপর আবার সেই কাজের কথা ভুলে গিয়ে আরামে ঘুম দেই। এই ঘুমের ফাদ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আপনাকে “গেটিং থিংকস ডান” সিস্টেমটি সাহায্য করবে।
যারা এই সমস্যার জন্য প্রতিদিনের সব কাজ শেষ করতে পারেন না তাদের জন্য আমার আজকের এই আর্টিকেলটি। আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে আশা করি আপনি আপনার প্রতিদিনের সব কাজ সময় মতো শেষ করতে পারবেন।
গেটিং থিংকস ডান সিস্টেম যেভাবে কাজ করে
সব কাজ শেষ করতে না পারার সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমি আপনাদের ডেভিড অ্যালেনের বই “গেটিং থিংকস ডান” থেকে কিছু টিপস শেয়ার করবো।
আমাদের ব্রেন হার্ড ডিক্সের মতো শুধু ইনফর্মেশন হোল্ড করার জন্য না, বরং কম্পিউটার র্যামের মতো ইনফর্মেশনগুলোকে প্রসেসিং এ হেল্প করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। যেটাতে একসাথে বেশি অ্যাপ্লিকেশন খুলে দিলে পারফর্মেন্স স্লো হয়ে যায়।
সকালে উঠেই আমরা মাথার মধ্যে এক সাথে দশ-বারোটা অ্যাপ্লিকেশন খুলে নেই। আজকে কি পড়তে হবে, কি বলতে হবে, কোথায় যেতে হবে, ফেসবুকে কি করতে হবে, হোয়াটসঅ্যাপে কাকে কি বলতে হবে ইত্যাদি। মানে যার কোনো শেষ নেই। যার ফলে অবার লোড হওয়ার কারণে ব্রেন হ্যাং করতে শুরু করে। আর শেষ পর্যন্ত কোনো অ্যাপ্লিকেশনই ভালোভাবে প্রসেসিং হতে পারে না।
এই সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য আপনাকে আপনার ব্রেনে নতুন একটি অ্যাপ্লিকেশন স্টার্ট করতে হবে। যার নাম “গেটিং থিংকস ডান”। এই সিস্টেমটি ৫টি স্টেপে কাজ করে।
ফাস্ট স্টেপ হলো কালেকশন
সকালে ঘুম থেকে উঠার পর আপনাকে আপনার স্মার্টফোন বা একটি নোটবুক নিতে হবে। সেখানে আপনার মাথায় থাকা সব টাক্সগুলোকে একে একে নাম্বারিং করে লিখতে হবে। অর্থাৎ আজকে আপনি সারাদিন কি কি করবেন, অন্য কোনো ডেটে কোনো কাজ করার কথা থাকলে সেটা লিখতে হবে।
লিখার ফলে আপনি এটা ভেবে অনন্দ পাবেন যে আপনার যে যে কাজ করার কথা সেগুলো আপনি মাথার বাইরে কোনো এক জায়গায় লিখে রেখেছেন। এখন আর একটা কাজও আপনার মিস হওয়ার চান্স নেই।
এখানে একটা মজার ব্যাপার হলো আপনি যখন একটা কাজ শেষ করবেন, তখন এই কাজটা আপনি সেই নোটবুক থেকে কেটে দিবেন। তখন আপনার অনেক ভালো লাগবে। কাজ করার আগ্রহ বাড়বে।
সেকেন্ড স্টেপ হলো প্রসেসিং
এখন আপনার লিখা প্রতিটা আইটেমের পাশে একটি করে সলিউশন লিখতে হবে। যেমন গার্লফ্রেন্ডকে বার্থডে উয়িশ করা। সলিউশন হচ্ছে সেই ডেটে মোবাইলের রিমাইন্ডার সেট করতে হবে। এইভাবে প্রতিটা কাজের সলিউশন বের করে পাশে লিখতে হবে।
থার্ড স্টেপ হলো অর্গানাইজ
অর্গানাইজ হলো আপনার এই পুরো লিস্টকে একরার পড়তে হবে। তারপর ভাবতে হবে কোন কাজের পর কোন কাজটি করবেন। যেমনঃ ফ্রেশ হওয়ার পর ব্যায়াম করা, তারপর প্রেজেন্টেশনের টপিকটা আবার চেক করা ইত্যাদি। এবার এই লিস্ট অনুযায়ী আপনি একের পর এক কাজ শেষ করতে থাকবেন।
ফোর্থ স্টেপ হলো রিভিউ
এই স্টেপে আপনাকে পুরো লিস্ট আরেকবার চেক করে নিতে হবে। তখন যদি কোনো টাক্স বাদ যায় বা নতুন কোনো ভালো সলিউশন মাথায় আসে, তাহলে সেটা এডিট করবেন।
লাস্ট স্টেপ হলো ডু ইট
লাস্ট স্টেপ পড়লে যতটা কম ইম্পরট্যান্ট মনে হবে, এই স্টেপ ততটাই বেশি ইম্পরট্যান্ট। এমন অনেক হয় যে, চারটা স্টেপ শেষ করার পর ফেসবুকে ঢুকে ২/৩ ঘন্টা সময় নষ্ট করে তারপর আবার প্রতিদিনের মতোই চলাফেরা করা। তাই চার নাম্বার স্টেপ শেষ করার পরেই আপনাকে লিস্ট অনুযায়ী কাজ করা শুরু করতে হবে।
গেটিং থিংকস ডান সিস্টেমটি শেষ করতে আপনার ৩০ মিনিটের বেশি সময় লাগবে না। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ৩০ মিনিটে এই সিস্টেমটি করতে পারেন। আপনি চাইলে দুই দিন এই “গেটিং থিংকস ডান” সিস্টেমটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন। আশা করি, ব্যবহার করলে অবশ্যই বুঝতে পারবেন এই সিস্টেমের উপকারিতা কতটুকু।
আপনি হয়তো বলতে পারেন প্রতিদিন সকালে উঠে এই ৩০ মিনিট সময় ব্যায় করা আপনার সম্ভব না। তাহলে আপনি আরেকটা কাজ করতে পারেন। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে আপনি এই “গেটিং থিংকস ডান” সিস্টেমটি করতে পারেন। এতে সকালে আপনার সময় নষ্ট হবে না।
আশা করি, আপনি এই গেটিং থিংকস ডান সিস্টেম ব্যবহার করে আপনার প্রতিদিনের সব কাজ শেষ করতে পারবেন। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে, নতুন উদ্যমে কাজ করার উৎসাহ পান এবং উপকার হয় তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।
Leave a Reply