আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করব একটা অসাধারণ টপিক নিয়ে। সেটা হল গুগল ডিজাইন স্পিরিট। আপনারা যারা ওয়েব বা বিভিন্ন অ্যাপ বা সফটওয়্যার ডিজাইন করেন, বা কোন নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে স্টার্ট আপ খোলার কথা ভাবছেন, কিন্তু গুগল ডিজাইন স্প্রিন্ট সম্পর্কে জানেন না, তাদের জন্য যথেষ্ট হেল্পফুল হবে এই আর্টিকেলটা।
গুগল ডিজাইন স্প্রিন্ট
আসলে, শুধু মাত্র সফটওয়্যার ডিজাইনই নয়, রিয়াল লাইফ যে কোন প্রবলেমের সল্যুশনই খুব কম সময়ে বের করে ফেলতে পারবেন এই টেকনিক ব্যবহার করে। সত্যি কথা বলতে, গুগলের মত একটা প্রতিষ্টান এই পদ্ধতি ব্যবহার করছে বহুদিন ধরে, তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে। সেখানে আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য যে ব্যাপারটা অবশ্যই উপযোগী হবে, সে ব্যাপারটা নিয়ে সন্দেহও উঠা উচিত নয়।
গুগল ডিজাইন স্প্রিন্ট কি?
প্রায় ৫ বছর আগে গুগোল ভেঞ্চারের আবিষ্কার করা একটা পদ্ধতি বা ফ্রেমওয়ার্ক, যা তারা এখনও কম সময়ে তাদের যে কোন ডিজাইন সমস্যার সমাধানে ব্যবহার করে আসছে। এর মূলত ৫টি ধাপ আছে। আর সমস্যা সমাধানকারী টিম প্রতিদিনে একটি করে ধাপ সম্পন্ন করে। তাতে করে মাত্র ৫ দিনে কমপ্লেক্স ডিজাইনেরও সিম্পল সল্যুশন দাঁড়িয়ে যায়।
গুগল ডিজাইন স্প্রিন্ট কেন?
এর মধ্যেই বলে ফেলেছি, খুব কম সময়ে আপনার যেকোন কিছু ডিজাইন রিলেটেড সমস্যার সমাধান করতেই গুগোল ডিজাইন স্প্রিন্ট। শুধু মাত্র সফটওয়ারই নয়, এটা আপনার মেসের মিল এর মত খুব সাধারণ একটা সমস্যার সমাধান থেকে শুরু করে দেশের রোহিঙ্গা ইস্যুর মত বিশাল সমস্যার সমাধানেও এটা ব্যবহার করা সম্ভব। তাছাড়া, এই পদ্ধতিতে করা ডিজাইন ফেইল করার সম্ভাবনাও খুব কম থাকে। কেন কম থাকে, সেটা ধাপগুলো বর্ণনা করার সময় আলোচনা করব।
গুগোল ডিজাইন স্প্রিন্ট কিভাবে কাজ করে?
গুগোল ডিজাইন স্প্রিন্ট-এর মূলত ৫ টি ধাপ আছে। আন্ডারস্ট্যান্ডিং, ডাইভার্জ, কনভার্জ, প্রটোটাইপ, ভেলিডেট। আর একটা টিম থাকে, সাধারণত ৫জন মেম্বারের। তারাই প্রতিটা ধাপের মধ্যে দিয়ে গিয়ে সমস্যার সমাধান করেন। নিচে প্রতিটা ধাপ নিয়ে আমরা স্টেপ বাই স্টেপ আলোচনা করব।
১। আন্ডারস্ট্যান্ডিংঃ
এই ধাপে আপনাকে প্রথমে বুঝতে হবে যে সমস্যাটা কি। যেমনঃ আপনি যেই সফটওয়্যার ডিজাইন করবেন তা কি সমস্যার সমাধান করবে, সেটা আপনাকে ভাল ভাবে বুঝতে হবে। রোহিংগা ইস্যু সলভ করতে চাইলে আপনাকে বুঝতে হবে রোহিংগা ইস্যুতে দেশের, দেশের মানুষের, দেশের বাইরের, রোহিংগাদের- কার কি সমস্যা হচ্ছে। এইটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ধাপ। কারণ, সমস্যাই পুরোটুকু না বুঝলে তার ইফেক্টিভ সমাধান করাও সম্ভব না।
২। ডাইভার্জঃ
এই ধাপে, সমাধানকারী গ্রুপের প্রতিটা মেম্বার বাধ্যতামূলকভাবে একটা করে সমাধান দিবে। ধরেন, একটা ওয়েবসাইট ডিজাইন করছেন। গ্রুপে একজন মেম্বার খুব সিম্পল একটা ডিজাইন সাজেস্ট করল, অন্য আরেকজন মেম্বার হয়তো খুব জাঁকজমকপূর্ণ একটা ডিজাইন সাজেস্ট করল।
রোহিংগা ইস্যুর কথা যদি ধরেন, মনে করেন, বাংলাদেশ সরকার একটা সমাধান সাজেস্ট করল। মিয়ানমার সরকার আরেকটা সমাধান সাজেস্ট করল। একজন রোহিংগা প্রতিনিধি হয়তো আরেকটা সমাধান সাজেস্ট করল।
৩। ডিসাইড / কনভার্জঃ
এবার সবগুলো মত মিলে একটা কমন মত-এ আসতে হবে এই ধাপে। এই ধাপে প্রত্যেকে কেন নিজের বা অন্যের মত বা মতের কোন একটা অংশ বাকিদের চেয়ে ভাল এই বিষয়ে বলে, অন্যের মতের বিভিন্ন পার্টকে ভোট দিবে। এভাবে, বেশি ভোট প্রাপ্ত পার্টগুলো নিয়ে সমস্যাটার কমন সমাধান তৈরি করা হবে।
যেমনঃ হয়তো আগের ধাপে যে সিম্পল ডিজাইন সাজেস্ট করেছিলেন, তার পুরো ডিজাইনটুকুই সবার পছন্দ হয়েছে, কিন্তু জাকজমকপূর্ণ ডিজাইন যিনি দিয়েছিলেন, তার নেভিগেশন বার আর ফুটারটা পছন্দ হয়েছে। তাহলে, নেভিগেশন বার আর ফুটার তারটা আর বাকিটুকু প্রথম জনেরটা নিয়ে ওয়েবসাইটটা ডিজাইন করা হবে।
প্রয়োজনে সবার সম্মতিতে হয়তো বাকি অংশের সাথে মিল রাখতে ফুটারের কালারটাও চেইঞ্জ করা যেতে পারে। রোহিংগা ইস্যুর ক্ষেত্রেও হয়তো তিনটা পার্টিইরই একটা করে পার্ট নিয়ে নতুন সমাধান ডিজাইন করা যেতে পারে।
৪। প্রোটোটাইপঃ
এবার সর্ব সম্মতিক্রমে যেই সমাধানটা সিলেক্ট করা হল, সেটার একটা প্রোটোটাইপ বানাতে হবে। প্রোটোটাইপটা খুব কম সময়ে দ্বার করাতে হবে এবং যতটা কম খরচে পারা যায় বানাতে হবে। সেটা আপনার ওয়েব সাইটেরই হোক বা রোহিংগা সমস্যারই হোক। ওয়েবসাইটটার শুধু একটা স্ক্র্যাচও দাঁড় করাতে পারেন বা স্বল্প পরিসরে রোহিংগা সমস্যার সমাধানটা ২০-২৫ জন রোহিংগার উপরে প্রয়োগ করে দেখা যেতে পারে।
৫। ভ্যালিডেটঃ
আর এর পরই আমাদের সর্বশেষ ধাপ, ভ্যালিডেশন। উপরের চারটা ধাপ থেকে পাওয়া সমাধানের প্রোটোটাইপটা আমরা সিস্টেমের ইউজারদেরকে দিয়ে টেস্ট করিয়ে নেব। টেস্ট করিয়ে নেয়ার পর তাদের থেকে পাওয়া রিভিউ এর উপরে ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আমাদের দ্বার করানো সমাধানটা কি সত্যি বড় পরিসরে এপ্লাই করার যোগ্য কি না।
যদি, পজিটিভ রিভিউ পাওয়া যায়, তাহলে আমরা এই সমাধানটিকেই ফাইনাল হিসেবে নিতে পারি। আর যদি সমস্যা হয়, তাহলে কোথায় সমস্যা, তারও অনেকটাই কিন্তু আমরা ইউজার রিভিউ থেকেই বুঝে নিতে পারব। তারপর সেই অনুযায়ী আবার প্রথম ধাপ থেকে শুরু করে নতুন সমাধানের দিকে আগাব।
২০১৫ সালের হ্যাকাথনে অংশগ্রহনের পর গুগোল স্প্রিন্ট ব্যাপারটা জানতে পারি। আজকে আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পেরে ভাল লাগল। এই ব্যাপারটা নিয়ে যে কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জেনে নিতে দ্বিধা বোধ করবেন না। আর অবশ্যই পোস্টটা শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরও এ ব্যাপারে জানতে সাহায্য করুন।
SAIFUL ISLAM says
সত্যি বলছি গুগল ডিজাইন প্রিন্টের ডিটেইলস্ নিয়ে লেখা এই আর্টিকেলটা আমার খুব উপকারে এসেছে। আপনাদের কাছে অনুরূপ ui ux design নিয়ে কিছু লেখা চাই। ধন্যবাদ।