বর্তমানে লেখালিখির কাজে গুগল ডকস ব্যবহার করে সেরকম মানুষের সংখ্যা বেশ লক্ষ্যনীয়। কম্পিউটারে লেখালিখির কাজটি সম্পাদনের জন্য যে সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করা হয়, সেগুলোকে সাধারণভাবে ওয়ার্ড প্রসেসসর সফটওয়্যার বলা হয়। গুগল ডকসও এরকম একটি সফটওয়্যার।
নাম পরিবর্তনের পর গুগলের অনলাইন ভিত্তিক এই ওয়ার্ড প্রসেসর অ্যাপ্লিকেশনটি যাত্রা শুরু করে ২০১২ সালে। এর আগে অন্য নামে এর অস্তিত্ব থাকলে, গুগল ডকস এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে মূলত ২০১২ সালের পর থেকেই। বর্তমানে গুগলের অন্যতম জনপ্রিয় সার্ভিস এটি এবং গুগলের অন্য সব সার্ভিসের মতোই গুগল ডকসও সম্পূর্ণ ফ্রীতেই ব্যবহার করা যায়।
কেন গুগল ডকস ব্যবহার করবেন?
গুগল ডকস কি কীভাবে এটি ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আজকে চলুন দেখে নিই, কেন আপনি গুগল ডকস ইউজ করবেন? অর্থাৎ কী কী সুবিধা রয়েছে এতে?
Google Docs ফ্রী
গুগল ডকস ব্যবহারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয়, এটি সম্পূর্ণ ফ্রী। কোন রকম অর্থ খরচ না করে একদম বিনামূল্যে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে এটি ব্যবহার করা যায়। তবে এমনটা মোটেও ভাবার কারণ নেই যে ওয়ার্ড প্রসেসর হিসেবে এটিই একমাত্র ফ্রী অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার।
বর্তমানে LibraOffice, WPS Office, TextMaker, Dropbox Paper, Zoho এর মতো বহু সংখ্যক ওয়ার্ড প্রসেরর অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে। যেগুলো কিছু সীমাবদ্ধতা সাপেক্ষে অনলাইন বা অফলাইনে ফ্রীতে ব্যবহার করে লেখালিখির কাজ করা যায়। কিন্তু তারপরও কেন গুগল ডকস উল্লেখযোগ্য? কারণ এর ফিচার ব্যবহারের কোন সীমাবদ্ধতা নেই। বাকি কারণগুলো জানার জন্য নিচের পয়েন্টগুলো পড়ে ফেলুন।
ক্লাউড বা ওয়েব ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন, কাজ করুন যে কোন জায়গা থেকে
ওয়েব ভিত্তিক অ্যপ্লিকেশন, এই কথাটা শুনেই বোঝা যাচ্ছে এর কাজকর্মের সাথে ওয়েব বা ইন্টারনেট যুক্ত। হ্যাঁ, গুগল ডকস ব্যবহার করার পূর্ব শর্ত হচ্ছে ইন্টারনেট। এই অ্যাপ্লিকেশনটি আপনি আপনার কম্পিউটারে ইনস্টল করতে পারবেন না।
কম্পিউটারে এটি ব্যবহার করতে হবে যে কোন একটি ব্রাউজার থেকে। যেহেতু এটি ইন্সটলের প্রয়োজন নেই এবং সব ফাইল অনলাইনে সেভ হয়ে থাকে, তাই এটি ব্যবহার করতে পারবেন যে কোন জায়গায় যে কোন কম্পিউটার থেকে।
একসাথে অনেকে কাজ করা যায়
অনলাইন ভিত্তিক সফটওয়্যার হওয়ায় এর দারুন কিছু সুবিধার মধ্য এটি অন্যতম। একসময়েই একটি ডকুমেন্টে একাধিক মানুষ কাজ করতে পারবেন। কে কোন অংশ পরিবর্তন করছেন সেটিও সাথে সাথেই দেখার ব্যবস্থা রয়েছে এতে।
গুগল ডকস ব্যবহার করা যায় অফলাইনেও
অনলাইনের পাশাপাশি গুগল ডকস ব্যবহার করা যাবে ইন্টারনেট না থাকলেও। সে জন্য কম্পিউটারে ইন্সটল করা থাকতে হবে গুগল ক্রোম ব্রাউজারটি। এ ছাড়া স্মার্টফোনের অ্যাপ্লিকেশনটিও অফলাইনে ব্যবহার করা যায়। এ বিষয়ে বিস্তারিত নিয়ে অচিরে একটা লেখা আসছে হৈচৈবাংলা ডট কমে।
অটোসেভ সুবিধা আছে গুগল ডকসে
ওয়েব ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন হওয়ায় এতে ডিফল্টভাবেই রয়েছে অটোসেভের ব্যবস্থা। সামান্য একটি অক্ষর লিখলে বা কেটে দিলেও এটি সাথে সাথে তা সেভ করে নেয় গুগল ড্রাইভে। ফলে কারেন্ট চলে গেলে, ম্যালওয়্যার বা যে কোন কারণে কম্পিউটার বন্ধ হয়ে গেলেও আপনার কাজ হারানোর ভয় নেই এতোটুকুও। যদি অফলাইনেও কাজ করেন, তবুও সেটা একইভাবে প্রতিটি চেঞ্জে সেভ হয়ে থাকবে।
আনলিমিটেড স্টোরেজ
গুগল ডকস এ তৈরি করা ডকুমেন্টসগুলোর কোন ফাইল সাইজ নেই। ফলে এতে তৈরী করা ডকুমেন্টসগুলো গুগল ড্রাইভের কোন জায়গা ব্যবহার করে না, তা সে যত বড়ই ডকুমেন্ট হোক না কেন। যার ফলে গুগল ড্রাইভে আপনার জন্য ১৫ গিগাবাইট জায়গা ফ্রীতে বরাদ্দ থাকলেও সেটির এক মেগাবাইটও খরচ করবে না এটি। তবে বিভিন্ন ফরম্যাটে এক্সপোর্ট বা ডাউনলোড করতে গেলে তখন সেই ফরম্যাটে ফাইল সাইজ তৈরী হয়ে ডাউনলোড হবে।
ফাইল করাপ্টেডের ভয় নেই
কম্পিউটারে ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার এর আক্রমণে প্রায়ই দেখা যায় ফাইল করাপ্টেড হয়ে গেছে এবং ওপেন হচ্ছে না। গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টের ক্ষেত্রে এটি যে কতোটা কষ্টের ব্যাপার সেটা একমাত্র ভুক্তভোগীই জানে। সুখবর হচ্ছে, গুগল ডকস এই ধরণের কোন ঝামেলা নেই। ফাইলগুলো গুগলের সুরক্ষিত সার্ভারে সেভ হয়ে থাকার ফলে ভাইরাসের আক্রমণের সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায়।
ডাউনলোড করুন পছন্দের ফরম্যাটে
যদি কখনো গুগল ডকস ভালো না লাগে বা আপনার কাজের জন্য অপর্যাপ্ত মনে হয়, তাহলে গুগল ডকস থেকে সব ডকুমেন্টই ডাউনলোড করে নিয়ে অন্য যে কোন ওয়ার্ড প্রসেসর অ্যাপ্লিকেশনে কাজ করতে পারবেন। জনপ্রিয় প্রায় সব ফরম্যটেই ডাউনলোড করতে পারবেন, আপনার ডকুমেন্ট। এর মধ্য *.pdf, *.rtf, *.otd, *.docx, *.epub ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
সরাসরি সার্চ এবং ডিকশনারি সুবিধা
গুরুত্বপূর্ণ কোন কিছু বা আর্টিকেল লেখার সময় প্রয়োজন পড়ে নানা রকম রেফারেন্সের। সেইসাথে বানান বা শব্দের সঠিক অর্থটি জেনে নেওয়ার জন্য ডিকশনারিও থাকতে হয়। আর এই দুইটি কাজই কোন রকম উইন্ডো পরিবর্তন না করে খুব সহজে করা যায় এতে লেখালিখির সময়।
Google Docs ভয়েস টাইপিং করা যায়
ভয়েস টাইপিং এর মতো দারুণ সুবিধাও রয়েছে গুগল ডকস এ। তবে এ জন্য গুগল ক্রোম ব্রাউজার ব্যবহার করতে হবে। কীভাবে ভয়েস টাইপিং সুবিধাটি উপভোগ করবেন সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।
গুগল ডকস ব্যবহার করে করা যায় ওসিআর
যে কোন ছবি থেকে লেখা আলাদা করার পদ্ধতিটাকে বলা হয়ে থাকে ওসিআর। অনলাইন ও অফলাইনে অনেক ওসিআর অ্যাপ্লিকেশন থাকলেও পারফরমেন্সের দিক থেকে গুগল ডকস সবার চেয়ে এগিয়ে। যাদের কোন ডকুমেন্টের ছবি তুলে এডিট করার প্রয়োজন হয়। কিংবা যারা ই-বুক তৈরী করে থাকেন, তাদের জন্য গুগল ডকস এর বিকল্প কিছু আমার চোখে এখন পর্যন্ত পড়েনি। বাংলা, ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষায় প্রায় নির্ভুলভাবে ওসিআর করে নিতে পারবেন গুগল ডকস থেকে।
গুগল ডকস এর সবগুলো দিক নিয়ে আলোচনা এতো স্বল্প পরিসরে সম্ভব নয়। এরা বাইরে আরও অনেক দারুন ফিচার রয়েছে গুগল ডকস এর। তারপরও এখানে আলোচিত এতোসব দারুণ সুবিধা নিয়ে এই মুহূর্তে বাজারে গুগল ডকের মতো এতো চমৎকার ফ্রী ওয়ার্ড প্রসেসর নেই।
যদি ইতিমধ্য গুগল ডকস ব্যবহার করে থাকেন এবং অন্যান্য ওয়ার্ড প্রসেসর ব্যবহারের অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে কথার সত্যতাটি বুঝতে পারবেন। আর যদি এখনও গুগল ডকস এর ব্যবহারকারী না হয়ে থাকেন, তাহলে ব্যবহার করা শুরু করতে পারেন। আশাকরি, হতাশ হবেন না; সেই সাথে কেমন লাগলো গুগল ডকস এর আলোচনা, সেটিও আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন।
Leave a Reply