হাতের কাছে গিটার কেনার গাইড থাকলে অনেক ঝামেলাই এড়ানো যায়। বিশেষ করে, বিগিনাররা যদি আগে থেকেই একটা গাইড লাইন পায়, তবে মিউজিক শপে গিয়ে মিশ্র সমস্যায় পড়তে হয় না। কারণ, প্রথমবারের মতো গিটার কেনার আনন্দ ও উত্তেজনার ফলে অনেকেই সঠিক গিটারটি কিনতে পারেন না। ফলে, সঙ্গীতের শুরুটাই হয় ভুল দিয়ে।
আজকাল তরুণদের বড় একটি অংশ ঝুঁকে পড়ছে সংগীতের দিকে। গান গেয়ে জনপ্রিয় হবার একটি অদম্য ইচ্ছা বর্তমানে অনেক তরুণের মাঝেই লক্ষণীয়। শুধু গান নয়, পাশাপাশি বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের প্রতিও তাদের আকর্ষণ সমানভাবে বিদ্যমান। আর বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের মাঝে গিটারই এখন পর্যন্ত তরুণদের পছন্দের শীর্ষে।
গিটারের এ শখ পূরণে অনেকে কিনে ফেলেন পছন্দের গিটার। কিন্তু পূর্ব ধারণা এবং প্রস্তুতি না থাকায় পরবর্তীতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন তারা। এ সমস্যা থেকে বাঁচার জন্যই আজ থাকছে বিগিনারদের গিটার কেনার এটুজেড গাইড।
গিটার কেনার গাইড
আগের মিউজিক্যাল পোস্টে আমরা গিটার শেখার সেরা কিছু অ্যাপস্ নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আর আজ আলোচনা করতে যাচ্ছি গিটার কেনার সঠিক গাইড লাইন নিয়ে। সুতরাং, দেখে নিন গিটার কেনার সময় যে বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে।
গিটার কি?
গিটার হচ্ছে ৬ তার বিশিষ্ট্য এমন একটি বাদ্যযন্ত্র যা প্রায় সকল সঙ্গীতের সঙ্গেই ব্যবহার করা হয়। ফ্রেট যুক্ত এই পাওয়ারফুল বাদ্যযন্ত্রটি সাধারণত দুই হাত দিয়েই বাজানো হয়।
গিটার কয় প্রকার?
গিটার নানা প্রকারের। তার মাঝে পরিচিত হচ্ছে-
- অ্যাকুস্টিক গিটার
- ইলেকট্রিক বা লীড গিটার
- হাওয়াইয়ান গিটার
- ক্ল্যাসিক্যাল গিটার, প্রভৃতি।
এর মাঝে অ্যাকুস্টিক গিটারই তরুণদের প্রথম পছন্দ।
কোন কোন ব্র্যান্ডের গিটার আছে?
বাজারে রয়েছে অসংখ্য ব্র্যান্ডের গিটার। ইন্ডিয়ান ব্র্যান্ডগুলোর মাঝে রয়েছে-
- সিগনেচার
- গিভসন
- গ্র্যাসন
- গডসন, ইত্যাদি।
চাইনিজ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মাঝে যে-সব গিটার পাওয়া যায়, সেগুলো হলো-
- রকজ্যাম
- এক্স
- টিজিএম
- ডিভাইজার
- জিলাক্স, ইত্যাদি।
মনোমুগ্ধকর সাউন্ডের জন্য বিখ্যাত কোরিয়ান গিটারের পরিচিত ব্র্যান্ডগুলো হচ্ছে-
- কাস্টম
- স্যামিক
- কোরটেক
- আনিশা, ইত্যাদি।
আর জাপানের আরেক স্বনামধন্য ব্র্যান্ড ইয়ামাহাও তাদের গিটার দিয়ে বাজার মাত করেছে। আমেরিকান ব্র্যান্ড ফেন্ডার এবং গিবসনের খ্যাতি তো পৃথিবী জুড়েই।
এছাড়া বাংলাদেশি গিটারও রয়েছে। সাধারণত এই গিটারগুলো সস্তা এবং নিম্নমানের হয়ে থাকে। তবে, এই প্রচলিত ধারণা পালটে দিতে বর্তমানে অ্যাকুস্টিকার তৈরি অ্যাকুস্টিকা গিটার, সিটি মিউজিক সেন্টারের সিএমসি গিটার, মেলোডি এন্ড কোং এর এ.এস. গিটার বদ্ধপরিকর। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমাদের দেশেই এ-সব গিটার তৈরি হয়।
আমি কিনি কোন গিটার?
অনেকেই মনে করেন অ্যাবসলিউট বিগিনারদের জন্য সবচেয়ে ভালো ইন্ডিয়ান সিগনেচার কিংবা গিভসন গিটার। স্বল্পমূল্যের এসব গিটারের মান আসলেই খারাপ না।
তবে, আমি মনে করি এ-সব গিটার না কেনাই ভালো। কারণ, গিটারের দোকানগুলো ছেয়ে গেছে এ-সব গিটারের রেপ্লিকায়। আর বিক্রেতারাও বেশিরভাগ সময়েই বিগিনারদের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে এসব রেপ্লিকা তাদের হাতে নির্দ্বিধায় তুলে দিচ্ছেন।
এ-সব গিটারের সাউন্ডও যেমন ভালো না, ফ্রেটবোর্ডও তেমনি অমসৃণ ও প্রায়ই বাঁকা থাকে, যা গিটার শেখার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধকতা। এ কারণে ইন্ডিয়ান গিটার পরিহার করাই উত্তম।
সেক্ষেত্রে চাইনিজ ডিভাইজার, জিলাক্স, এক্স অথবা টিজিএম দেখা যেতে পারে। ৬০০০- ৯০০০ টাকার মাঝে এসব গিটারের বিভিন্ন মডেল পাওয়া যায়।
বিগিনারদের জন্য ইকুয়ালাইজার ছাড়া পিউর অ্যাকুস্টিক মডেলগুলোই ভালো। বাজেট আরো বাড়িয়ে ১০০০০-১৬০০০ টাকা করা হলে ফেন্ডার, ইয়ামাহা, এপিফোন, আনিশা, কাস্টম কেনা যাবে। আবার, ৬০০০-১৫০০০ টাকায় দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর ভালো মানের গিটার কেনা সম্ভব।
কিভাবে বুঝবো গিটারের মান কেমন?
যত নামী ব্র্যান্ডই হোক না কেন, বিভিন্ন নির্মাণজনিত ত্রুটি সব ব্র্যান্ডেরই কিছু গিটারে দেখা যায়। এজন্য গিটার খুব ভালোভাবে চেক করে আনতে হবে। গিটারে পারদর্শী কাউকে নিয়ে গেলে ভালো হয়। এ-রকম কাউকে না পেলেও অসুবিধা নেই। সেক্ষেত্রে কিছু ব্যাপার খেয়াল করতে হবে। যেমন :
- গিটারের ফ্রেটবোর্ড সোজা আছে কিনা দেখতে হবে। চোখ ও ফ্রেটবোর্ডের অবস্থান থাকবে এ-রকম-:
- অনেকে এভাবে দেখলেও ফ্রেটবোর্ড সোজা আছে কিনা বুঝতে পারেন না। এ-রকম হলে প্রতিটা ফ্রেট বাজিয়ে দেখতে হবে সাউন্ড ক্লিয়ার কিনা। ক্লিয়ার না হলে বুঝতে হবে ফ্রেটবোর্ড বাঁকা, অর্থাৎ, অ্যালাইনমেন্ট ঠিক নেই। তখন বিক্রয়কর্মীকে বলতে হবে গিটারটি অ্যালাইন করে দিতে। তবে এক্ষেত্রে, একই অথবা অন্য ব্র্যান্ডের অন্য আরেকটি গিটার বেছে নিয়ে সেটি পরীক্ষা করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
- গিটারে কোন দাগ থাকলে তা ভুলেও কিনবেন না। কারণ, এ-রকম দাগ থেকে পরবর্তীতে গিটারে চিঁড় ধরতে পারে। যার ফলে, ভেঙে যেতে পারে আপনার গিটার। এ-রকম বা প্রায় একই রকম দাগ থাকলে বিক্রয়কর্মী আপনার পাঁয়ে পড়লেও সে গিটার কিনবেন না।
গিটার কেনার গাইড হিসেবে আরো অনেক বিষয় আছে। আশা করি, পরবর্তী কোনও একটা পোস্টে সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
Leave a Reply