আপনার যদি গল্প লেখার হাত ভাল থাকে আর যদি ইংরেজীতে আপনি স্বত:ষ্ফূর্তভাবে গল্প লিখতে পারেন, তবে এই অনলাইন ম্যাগাজিনে একটা মাত্র গল্প লিখে আয় করতে পারেন ৭৫০ থেকে ১০০০ ডলার বা ৬০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা।
আর্থ আইল্যান্ড জার্নাল নামের এই অনলাইন ম্যাগাজিনটি প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর প্রকাশিত হয়। অনলাইনের পাশাপাশি এটির প্রিন্ট ভার্সণও রয়েছে। আপনার লেখা গল্প সম্পাদনার টেবিলে মনোনীত হলে শুধু অনলাইনেই নয়, ছাপা হবে প্রিন্ট ভার্সণেও। তার মানে, আপনার গল্প অনলাইনে পড়বে যে কোন দেশের পাঠক আর বিশেষভাবে পড়বে আমেরিকার পাঠক। আর গল্প লেখার জন্য সন্মানী তো রয়েছেই। নিচের ছবিতে সন্মানীর অংকটা দেখে নিন।
এর আগে আমরা এ রকম আরো কয়েকটি ওয়েবসাইটের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম যেগুলোতে আর্টিকেল লিখে একজন লেখক প্রতি মাসে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা আয় করতে পারে। আর এ ওয়েবসাইটে আপনি নিজেই দেখলেন যে, শুধু একটা গল্পের জন্যই সর্বনিম্ন ৬০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা সন্মানী দেয়া হয়। এটার মতো আরো একটি ওয়েবসাইট রয়েছে যারা প্রতি আর্টিকেলের জন্য ৫০০ ডলার দিয়ে থাকে। আসলে, কারো যদি লেখার যোগ্যতা থাকে তবে এ রকম হাজারো ওয়েবসাইট খোলা রয়েছে তার জন্য।
এ ওয়েবসাইটি আর্থ আইল্যান্ড নামের আমেরিকার একটি নন-প্রপিটেবল অর্গানাইজেশনের অনলাইন ম্যাগাজিন। এ ম্যাগাজিনের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে পরিবেশ বাঁচাও, পৃথিবী বাঁচাও। এ মোটোকে সামনে রেখে অর্গানাইজেশনটি এই ম্যাগাজিনটি চালু করেছে এবং চিন্তাশীল, আকর্ষণীয় এবং উপকারী গল্প খুঁজছে যা চমকে দেবে তাদের পাঠকদের। তবে গল্প লিখতে হবে রিপোর্টিং স্টাইলে। যেমন, ধরুন বাংলাদেশে যে রোহিঙ্গা সংকট চলছে, আপনি সেখানে গেলেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বললেন। তাদের সুখ-দু:খগুলোকে গল্প আকারে তুলে আনলেন, এটাই হচ্ছে রিপোর্টিং স্টাইলের গল্প। রোহিঙ্গাদের কথা বলেছি উদারহণ দেয়ার জন্য। আপনি আবার এটাই লিখতে যাবেন না। আপনি যা-ই লিখবেন তা হতে হবে পরিবেশ বিষয়ক, পৃথিবীর জন্য সামগ্রিক কাজে লাগবে, পৃথিবীর মানুষকে ভাবিয়ে তুলবে, এ রকম গল্প।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে, এ অর্গানাইজেশনটি তাদেরকে খুবই গুরুত্ব দেয়, প্রমোট করে যারা এমন বিষয় আবিস্কার করেছে যা বদলে দিতে পারে অনেক কিছু, আরামদায়ক এবং উপভোগ্য এবং আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে পৃথিবীর মানুষের জীবনযাত্রা। সুতরাং, আপনি যদি এমন কাউকে আপনার গল্পের ক্যারেক্টার হিসেবে বেছে নিতে পারেন তো নিশ্চিত থাকুন যে, আপনার গল্পটি তাদের পছন্দ হবেই।
এমন ক্যারেক্টার কিংবা এমন বিষয় কোথায় পাবেন? চারপাশের খোঁজ-খবর রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ভিডিও বার্তা পাঠানো শরীফুলের খবরটি নিশ্চয়ই আপনি জানেন, না জানলে এখানে গিয়ে জেনে নিন।
শরীফুল সম্পূর্ণ জ্বালানীবিহীন ইঞ্জিন আবিস্কার করেছেন যা পুরো পৃথিবীর যান-বাহন ব্যবস্থাকে বদলে দিতে পারে। এ সম্পর্কে এখানে আর বিস্তারিত বললাম না, উপরের লিংকে গিয়ে বিস্তারিত জেনে আসুন।
আপনি ইতিমধ্যেই জেনেছেন যে, আর্থ আইল্যান্ড এ ধরণের কাজকে প্রাধান্য দেয়, এ ধরণের কাজের পেছনে কোটি ডলার ইনভেস্ট করে। সুতরাং, এই নন-প্রপিটেবল চ্যারিটি অর্গানাইজেশনের অনলাইন ম্যাগাজিনে গল্প লেখার জন্য আপনি যদি শরীফুলের টপিকটাই কাজে লাগান তো দারুণ হবে।
আপনাকে যেহেতু রিপোর্টিং স্টাইলে গল্প লিখতে হবে, আপনি শরীফুলের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। তার প্রজেক্টের বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন। তার ফ্যামিলিকে গল্পের একটা পার্টে নিয়ে আসতে পারেন। তার সম্পর্কে অন্যদের ভাবনাটাকে গল্পে তুলে আনতে পারেন। এই প্রজেক্টের পেছনে তার কত ব্যয় হয়েছে, প্রজেক্টটাকে শেষ করতে আরো কত খরচ হতে পারে সে-সব বিষয়ও তুলে আনতে পারেন।
এ রকম একটা প্রজেক্টের চিন্তা তার মাথায় কিভাবে এলো, সেটা দিয়েই আপনি একটা চমকপ্রদ ভূমিকা নিয়ে মূল গল্পে যেতে পারেন। মোদ্দাকথা, শরীফুলের সঙ্গে দেখা করলে আপনি আপনার গল্পের টোটাল আইডিয়া পেয়ে যাবেন।
শুধু এ-রকমই নয়, আরো নানা রকম বিষয় নিয়ে আপনি এই ওয়েবসাইটের জন্য রিপোর্টিং গল্প লিখতে পারেন। কী কী বিষয় নিয়ে গল্প সাজালে এরা পছন্দ করবে তা জানতে এখানে ক্লিক করে আর্থ আইল্যান্ড জার্নালের রাইটার্স গাইডলাইনটি পড়ে নিন।
আপনার গল্প লেখার আগে থেকেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগের প্রয়োজন নেই। আমাদের দেশের লোকজনের একটা বড় সমস্যা হচ্ছে, তারা লিখতে পারুক আর না পারুক, নিজের যোগ্যতা থাক আর না থাক, আগেই টাকা তুলবো কিভাবে এই নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে। আরে ভাই, আগে লিখুন না, আপনার লেখা মনোনীত হোক না, তারপর না হয় পেমেন্ট নিয়ে চিন্তা করবেন। যাইহোক, লেখা শেষ হলে এই ইমেলে (submissions@earthisland.org) সম্পাদককে সন্বোধন করে নিজের সম্পর্কে দু’চার লাইন লিখে, পুরো ঠিকানা, ফোন নাম্বারসহ লেখা পাঠিয়ে দিন। আপনার লেখা মনোনীত হলে ওরাই আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবে।
আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, অনেকেই প্রশ্ন করেন- কোথায় লিখবো। তাই, আগেই বলে দেই, লিখবেন আপনার কম্পিউটার বা ল্যাপটপের মাইক্রোসফট্ ওয়ার্ড ফাইলে। আর ওই ওয়ার্ড ফাইলটিই অ্যাটাস্ট্ করে ওদেরকে মেইল করবেন।
গল্প লিখে আয় করার এই দারুণ সুযোগটি আশা করি আপনি কাজে লাগাবেন। একবার কোথাও ব্যর্থ হলেই যে ছেড়ে দেবেন তা নয়, বারবার চেষ্টা করবেন। যারা এখন পেশাদার আর্টিকেল রাইটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, তাদের শুরুটা এমনই ছিল যে ১০ জায়গা থেকে হতাশ হয়েছেন। এরপর কোন এক সময় এক জায়গায় সফলতা পেয়েছেন। এরপরই শুরু হয়েছে দারুণ ক্যারিয়ার।
সত্যিই এটা একটা অসাধারণ ক্যারিয়ার হতে পারে যা আপনাকে একটা স্মার্ট চাকরির চেয়েও অনেক বেশি আর্নিং এনে দেবে। উদারহণ হিসেবে দেখুন, আমরা নিজেরাই আমাদের ইংরেজী ব্লগটির জন্য গেস্ট রাইটার চেয়ে আপওয়ার্কে জব পোস্ট করেছিলাম।
প্রতি লেখার জন্য আমরা ৫০ ডলার বা ৪ হাজার টাকা বাজেট দিয়েছিলাম। এরপরও আমরা কাউকে হায়ার করতে পারিনি। কারণ, যারা আমাদের জব পোস্টে আবেদন করেছেন, তাদের বেশিরভাগেরই স্কিল এবং অবস্থান সন্তোষজনক ছিল না। আর যাদেরকে আমরা ইনভাইট করেছি, পেয়েছি সন্তোষজনক পজিশনে, তাদের কেউ-ই এই বাজেটে মানে ৪ হাজার টাকায় একটা আর্টিকেল লিখে দিতে রাজী হয়নি। এর মাঝে পাকিস্তানি একটা মেয়েকে পেয়েছিলাম, ভাবলাম পাকিস্তানি মেয়ে কী এমন আর ডিমান্ড করবে। কিন্তু সে প্রতি আর্টিকেলের জন্য কত ডিমান্ড করেছে জানেন? ৩০০ ডলার তার মানে প্রায় ২৪ হাজার টাকা।
অথচ আমাদের টোটাল বাজেটই ছিল ৩০০ ডলার। প্রতি আর্টিকেলের জন্য ৫০ করে মোট ৬টা আর্টিকেল চেয়েছিলাম। আর ওই মেয়ে একটা আর্টিকেলের জন্যই ৩০০ ডলার চেয়েছিল। এবার বুঝুন, আর্টিকেল রাইটিং এর ডিমান্ড কেমন আর এখানে গিয়ে দেখে নিন শুধু আপওয়ার্কেই কি পরিমাণ কাজ রয়েছে লেখা-লেখির উপর।
যাইহোক, এই সেক্টরে কাজ করার জন্য ইংরেজীতে আপনার ভাল দক্ষতা থাকতে হবে। আপনি হয়তো খুব ভাল ইংরেজী জানেন, তবু নিজেকে আরো সমৃদ্ধ করার জন্য প্রচুর পড়া-শুনা করুন। আর্থ-আইল্যান্ড জার্নালের ওয়েবসাইটে যান, ওদের ওখানে এ যাবৎ প্রকাশিত গল্প বা রিপোর্টিংগুলো পড়ে আইডিয়া নিন। এরপর আপনার লেখার জন্য আইডিয়া খুঁজুন, আপনি বাংলাদেশে আছেন বলেই যে বাংলাদেশী প্রেক্ষাপটে লিখতে হবে, এমন নয়। আপনাকে গ্লোবাল চিন্তা করতে হবে। ভাল থাকুন, ফেসবুকে অহেতুক সময় নষ্ট না করে আর্টিকেল রাইটিং শিখুন, লেখা-লেখিটাকেই পেশা হিসেবে নিন, আপনার আগামীটা সুন্দর আর সফল করে তুলুন।
MD BILASH UDDIN says
আমি আমার লেখা কিভাবে এই পেজে, Earth Island Journal এ দেখতে পারব?
টি আই অন্তর says
আপনার লেখা যদি মনোনীত হয় এবং পাবলিশ করা হয়, তবেই আপনি সেটি দেখতে পাবেন। সাধারণত, কোন লেখা পাবলিশ হলেই সেটি হোম পেজে চলে আসে, সেখানেই দেখতে পাবেন। এছাড়া, লেখাটি যে ক্যাটেগরিতে পাবলিশ হবে, সেই ক্যাটেগরিতে গিয়েও দেখতে পাবেন। এমনকি, লেখাটি পাবলিশ হওয়ার আগে ও পরে Earth Island Journal এর কতৃপক্ষ আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবে। সুতরাং, তাদের ওয়েবসাইটে লেখাটি দেখতে আপনার কোনই অসুবিধা হবে না। কারণ, আপনি লেখাটির ব্যাপারে সব সময়ই আপ-টু-ডেট থাকছেন।
Md.Al amin says
আমি গল্প লিখে দিব।
Md.maruf says
বাংলাদেশে যে-সব রোহিঙ্গা রয়েছে, এদেরকে ট্রেনিং দিয়ে এই সব কাজ শেখানো যেতে পারে। এতে করে এরা খারাপ কাজ ছেড়ে দেবে এবং স্বাবলম্বী হবে।
টি আই অন্তর says
লিখে দিন, দিন মানে এই ওয়েবসাইটে পাঠিয়ে দিন।
Sourav ghosh says
ইংলিশ গল্পের শব্দ সংখ্যা কতর মধ্যে লিখব একটু বলুন।
টি আই অন্তর says
এই ওয়েবসাইটের রিকোয়্যারমেন্ট প্রায় ৪ হাজার ওয়ার্ড। মানে ৪ হাজার ওয়ার্ডের কাছাকাছি, অর্থাৎ কম-বেশি হলে সমস্যা নেই।
Rakib Islam says
এখানে লাভ স্টোরি গল্প লিখলে কি পেমেন্ট পাইব
টি আই অন্তর says
যেহেতু তারা খুঁজছে আকর্ষণীয়, চিন্তাশীল এবং সেই সাথে মানুষের জন্যে উপকারী গল্প, সেহেতু আপনার লাভ স্টোরি যদি তাদের চাওয়াকে পূরণ করতে সক্ষম হয়, তবে অবশ্যই পেমেন্ট পাবেন। মোট কথা হলো, আপনার গল্প যে বিষয়েই হোক না কেন, যদি সেটি ছাপা হয়, তবে পেমেন্ট নিয়ে কোনও সমস্যা নেই।
Shariar Nihal says
গ্রেট, একটা গল্প লিখে এত টাকা আয় করার সুযোগ আছে জেনে খুবই ভাল লাগলো। আশা করি, তথ্যটি জেনে অনেকেই আগ্রহী হবে, আমিও চেষ্টা করবো।
Ishak Mahmud says
আর্থ-আইল্যান্ড সম্পর্কে জানা ছিলো না। এই আর্টিকেলটি না পড়লে হয়তো কখনোই জানা হতো না। টুকটাক গল্প লিখলেও লেখার হাতেখড়ি হয়তো খুব বেশি ভালো নয়। তবুও চেষ্টা করতে মন্দ কী। ধন্যবাদ আপনাকে, আর্থ-আইল্যান্ডের সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর জন্য।