ক্রিকেট খেলায় ডার্কওয়ার্থ-লুইস বা ডি/এল পদ্ধতি কি? এ প্রশ্ন হয়তো অনেকের মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
বিশেষ করে উইন্ডিজ সফরে প্রথম ও শেষ টি-টোয়েন্টি ডাকওয়ার্থ-লুইস বা ডি/এল পদ্ধতিতে নিস্পন্ন হওয়ায় এই প্রশ্ন আবার সামনে এসেছে।
ক্রিকেটের সবচেয়ে ঘোলাটে ও রহস্যময় নিয়মগুলোর মধ্যে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতি একটি।
অনেকের কাছে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতি একটি রহস্যের নাম। চলুন আজকে জেনে নেই, ক্রিকেট খেলায় ডাকওয়ার্থ-লুইস বা ডি/এল পদ্ধতি আসলে কি?
ক্রিকেট খেলায় ডার্কওয়ার্থ-লুইস বা ডি/এল পদ্ধতি কি
দুজন ইংরেজ পরিসংখ্যানবিদ ফ্রাঙ্ক ডাকওয়ার্থ ও টনি লুইস এ পদ্ধতির প্রবক্তা।
বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে কিংবা আলোক স্বল্পতাজনিত খেলায় পরবর্তীতে ব্যাটিং করার দলকে যে পদ্ধতিতে নতুন লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়, তাকে ডাকওয়ার্থ-লুইস বা ডি/এল পদ্ধতি বলা হয়।
ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ ও টি টোয়েন্টি ম্যাচে। ডি/এল পদ্ধতি হিসাব করা হয় ব্যবহৃত ওভার এবং হাতে থাকা উইকেট এর মাধ্যমে।
ওয়ানডে ম্যাচে ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে হলে উভয় দলকে কমপক্ষে ২০ ওভার ব্যাটিং করতে হয়। আর টি-টোয়েন্টিতে উভয় দলকে কমপক্ষে ৫ ওভার ব্যাটিং করতে হয়। নয়তো ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতি কার্যকর হয় না। ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।
ডি/এল পদ্ধতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হিসেবের মধ্যে রাখা হয়।
১. ইনিংসের শুরুতে যতটুকু রিসোর্স ছিল
২. যতটুকু রিসোর্স ব্যবহৃত হয়েছে
৩. যতটুকু রিসোর্স বাকি আছে
নিচে একটি চার্ট দেওয়া আছে, যে চার্টে ওভার ও উইকেট এর ভিত্তিতে রিসোর্স দেওয়া আছে।
ডি/এল পদ্ধতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে, পরবর্তীতে ব্যাটিং করা দলের ইনিংসের শুরুতে থাকা মোট রিসোর্স থেকে অবশিষ্ট রিসোর্স বিয়োগ করা হয়।
তারপর ব্যবহৃত রিসোর্সকে ১ম ইনিংসে প্রথম দলের ব্যবহৃত রিসোর্স দ্বারা ভাগ করা হয়। তারপর মূল টার্গেটের সাথে গুন করা হয়।
অর্থাৎ ডি/এল পদ্ধতি সূত্রটি হল এরকমঃ
ব্যবহৃত রিসোর্স = (ইনিংসের শুরুতে থাকা মোট রিসোর্স – অবশিষ্ট রিসোর্স )
ডি/এল পদ্ধতি = টার্গেট X (ব্যবহৃত রিসোর্স/১ম ইনিংসে প্রথম দলের ব্যবহৃত রিসোর্স)
একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টা পরিষ্কার করা যাক।
মনে করি, “ক” দল প্রথম ইনিংসে ৫০ ওভারে করেছে ৩৭০ রান। ৩৭১ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে “খ” দল ৩৫ ওভারে ৬ উইকেটে করেছে ২৬২ রান। এরপর বৃষ্টির কারণে আর খেলা হয়নি।
প্রথম ইনিংসে “ক” দল পুরো ৫০ ওভার খেলেছে, ফলে তারা ব্যবহার করেছে ১০০ শতাংশ রিসোর্স।
“খ” দলের ইনিংসের শুরুতে ছিল ১০০ শতাংশ রিসোর্স। ৩৫ ওভার খেলার কারণে বাকি আছে ১৫ ওভার।
তাই চার্ট অনুযায়ী “খ” দলের অবশিষ্ট রিসোর্স ২৭.৮।
সুতরাং, ব্যবহৃত রিসোর্স= (১০০-২৭.৮) = ৭২.২
ডি/এল পদ্ধতি= ৩৭১ X (৭২.২/১০০)
= ৩৭১ X ০.৭২
= ২৬৭.১২
অর্থ্যাৎ ৩৫ ওভারে ৬ উইকেট হারানোর ফলে ২৬৮ রান করলে জয়ী হত “খ” দল, ২৬৭ রান করলে ম্যাচ হত ড্র । কিন্তু তারা করেছে ২৬২ রান।
যেহেতু আর খেলা হয়নি তাই ডি/এল পদ্ধতিতে ৫ রানে জয়ী হয়েছে “ক” দল।
আশা করি, ক্রিকেট খেলায় ডার্কওয়ার্থ-লুইস বা ডি/এল পদ্ধতি কি? তা আপনারা বুঝতে পেরেছেন।
এ পদ্ধতি প্রথম ব্যবহৃত হয় ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে। জিম্বাবুয়ে বনাম ইংল্যান্ড এর ম্যাচে এ পদ্ধতিতে জিম্বাবুয়ে ৭ রানে জয়ী হয়।
Leave a Reply