রক্তে কোলেস্টেরল কমায় যেসব খাবার সেগুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখা দারুণ কাজের। কারণ, বারবার ডাক্তারের পেছনে দৌড়োতে না চাইলে এবং ঔষধের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে হলে প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বণ করতে হবে। আর কোলেস্টেরল কমানোর প্রাকৃতিক পদ্ধতির মধ্যে খাদ্য গ্রহণে সচেতনতাই সবার উপরে।
দৈনন্দিন আপনি যেসব খাদ্য গ্রহণ করেন, সেগুলোতে সামান্য কিছু পরিবর্তণ এনে আপনার রক্তের কোলেস্টেরল কমিয়ে দিতে পারেন। সেই সাথে আপনার রক্ত প্রবাহে ভাসমান চর্বির আর্মাডাকে উন্নত করতে পারেন। মোট কথা, আপনার হার্টের স্বাস্থ্যকে সুসংহত রাখতে হলে আপনাকে এমন খাবার গ্রহণ করতে হবে যেগুলো রক্তে কোলেস্টেরল কমায়।
কোলেস্টেরল কি?
কোলেস্টেরল হচ্ছে আমাদের রক্তে থাকা এক ধরণের ফ্যাট যা আমাদের শরীর naturally উৎপাদন করে থাকে। এটা শরীরের একটা অর্গানিক জৈব অণু (Molecule) যার আরেক নাম স্টেরল, এক ধরনের লিপিড। মানুষসহ সকল প্রাণীর শরীরেই কোলেস্টেরল কম্পোনেন্টের প্রয়োজনীয় স্ট্রাকচার রয়েছে। এই স্ট্রাকচার একটি সহনীয় মাত্রা বহন করে থাকে। যখনই এই মাত্রা কম বা বেশি হয়, তখনই তৈরি হয় শারীরিক সমস্যা।
কোলেস্টেরল কত প্রকার ও কি কি?
রক্তের Lipoproteins এর মাধ্যমে সারা শরীরে কোলেস্টেরল প্রবাহিত হয়। আর এই Lipoprotein ২ প্রকার। অর্থাৎ, Lipoprotein এর ভিত্তি করে কোলেস্টেরল ২ প্রকার। যথা-
- Low-density lipoprotein বা LDL – এটি দু’টি গুরুত্বপূর্ণ Lipoprotein এর একটি যা খারাপ বা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল হিসেবে পরিচিত।
- High-density lipoprotein বা HDL – এটি গুড এবং গুরুত্বপূর্ণ বা উপকারী কোলেস্টেরল।
ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কি?
উপরে দেয়া প্রকারভেদ থেকেই আমরা জেনে গিয়েছি যে, ক্ষতিকর কোলেস্টেরল হচ্ছে প্রথমটা, অর্থাৎ এলডিএল। কেন এটি ক্ষতিকারক? কারণ, এটি আমাদের রক্তনালী বা ধমনীর (Blood Vessel) দেয়ালে জমা হয়, রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে, ফলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো স্বাস্থ্য সমস্যা তেরি হয়।
প্রকৃতপক্ষে, কোলেস্টেরল মোটেই ক্ষতিকর নয়। বরং, এটি আমাদের রক্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা আমাদের নার্ভকে রক্ষা করতে এবং শরীরের জন্যে স্বাস্থ্যকর সেল ও হরমোন তৈরিতে অবশ্যই প্রয়োজন হয়। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় তখন, যখন কোলেস্টেরলের মধ্যে এলডিএলের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে, এটিকে ক্ষতিকারক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
রক্তে এই কোলেস্টেরল বেশি হয়ে গেলে বিপদ ঘটার সম্ভাবণা রয়েছে। সুতরাং, রক্তে কোলেস্টেরলের স্বাভাবিক মাত্রা জেনে রাখা প্রয়োজন। অর্থাৎ, কতটুকু কোলেস্টেরল থাকলে কোন সমস্যা হয় না। সেই সাথে, স্বাভাবিক মাত্রা থেকে কম কিংবা বেশি থাকলে কি হয় সেটাও জেনে রাখতে হবে।
যদি দেখেন যে আপনার রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল রয়েছে, তাহলে দ্রুত কমানোর প্রস্তুতি নিতে হবে। আর কোলেস্টেরল কমানোর সবচেয়ে ভাল এবং প্রাকৃতিক উপায় হচ্ছে কম কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া এবং যেসব খাবার ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে সেগুলোতে অধিক মনোযোগ দেওয়া। আসুন, সেরকম কিছু খাবার সম্পর্কে জানা যাক।
কোলেস্টেরল কমায় যেসব খাবার
রক্তে মাত্রাতিরিক্ত কোলেস্টেরলের লক্ষণ থাকলে আপনি অবশ্যই হার্ট ডিজিজের মারাত্মক ঝুঁকিতে আছেন। এমতাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ নেয়ার পাশাপাশি নিম্নোক্ত খাবারগুলি খাওয়া শুরু করুন।
মটর জাতীয় ডাল (legumes)
আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে সব ধরণের ডালের উৎপাদন হয়। কিন্তু অন্যান্য দেশগুলোতে ডাল উৎপন্ন হলেও কিন্তু সব ধরণের ডাল পাওয়া যায় না। যারফলে, বাইরের দেশের মানুষ ডাল বলতে বোঝে Legume বা মটর জাতীয় ডাল। এই জাতীয় ডালের মধ্যে রয়েছে শিমের বিচি, মটর শুটি, মসুর ডাল ও ছোলা।
এমন ধরণের ডাল বা লেজুমে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, মিনারেল ও প্রোটিন রয়েছে। সুতরাং, আপনার দৈনন্দিন ডায়েটে যদি মাংস বা প্রক্রিয়াজাত মাংসের বদলে লেজুম রাখতে পারেন, তবে আপনার রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমবে এবং আপনার হার্ট ডিজেজের ঝুঁকিও হ্রাস পাবে।
প্রায় ২৬টি ভিন্ন ভিন্ন গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে যে, প্রতিদিন ১ থেকে ২ কাপ লেজুম রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল low-density lipoprotein বা LDL কে এভারেজে ৬.৬ মিলিগ্রাম কমিয়ে দিতে পারে।
মটর জাতীয় ডালের সারসংক্ষেপ-
- যারা লেজুম বা মটর জাতীয় ডাল খায় না, তাদের কোলেস্টেরল বেশি থাকে।
- যারা নিয়মিত লেজুম খায়, তাদের শুধু কোলেস্টেরলই কমে না, পাশাপাশি অযাচিত ওজনও কমে।
- প্রাকৃতিকভাবে প্রোটিন পেতে লেজুমের জুড়ি নেই।
টিপস্: বাজারে এখন টিনজাত লেজুম পাওয়া যায়। সবচেয়ে ভাল হয় যদি সেগুলো কিনে খান। কারণ, প্রায় সব ধরণের মটর জাতীয় ডাল বা লেজুমকে একত্র করে প্রক্রিয়াজত করা হয়।
অ্যাভোকাডো
অ্যাভোকাডো একটি ব্যতিক্রমী পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল (nutrient-dense fruit)। মনোঅনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ফাইবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হচ্ছে অ্যাভোকাডো। আর আমরা জানি যে, এ দু’টি ভিটামিন রক্তে ক্ষতিকর LDL বা low-density lipoprotein কে কমাতে ও উপকারি কোলেস্টেরল HDL (high-density lipoprotein) বাড়াতে সাহায্য করে।
আমেরিকার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করা একটি গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে যে, উচ্চ মাত্রার এলডিএল কোলেস্টেরলের ঝামেলায় ভুগছেন এমন অতিরিক্ত ওজনের এবং স্থূলকায় কিছু প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিদিন একটি অ্যাভোকাডো খেয়েছেন। ফলে, তাদের এলডিএলের মাত্রা অনেক কমে গিয়েছে তাদের তুলনায় যারা অ্যাভোকাডো খাননি।
শুধু গবেষণাই নয়, অসংখ্য ক্লিনিক্যাল স্টাডি থেকেও জানা গিয়েছে যে, অ্যাভোকাডো কোলেস্টেরলের উপর দারুণ প্রভাব ফেলে। আমাদের রক্তে থাকা ক্ষতিকারক টোটাল কোলেস্টেরল, এলডিএল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের সম্পৃক্ত ফ্যাটকে কমাতে অ্যাভাকাডো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অ্যাভোকাডোর সারসংক্ষেপ-
- অ্যাভাকাডোতে রয়েছে মনোঅনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড।
- ফাইবারের একটি অসাধারণ উৎস অ্যাভোকাডো।
- হেলদি হার্ট ও কোলেস্টেরল কমানোর পুষ্টি পেতে অ্যাভাকাডোর জুড়ি নেই।
টিপস্: আপনার যদি ল্যাটেক্স অ্যালার্জি জণিত সমস্যা থাকে, তবে অ্যাভোকাডো খাওয়া শুরু করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না। কারণ, যাদের ল্যাটেক্স অ্যালার্জি আছে, অ্যাভাকাডো খাওয়ার পর সেটা মারাত্মকভাবে বেড়ে যেতে পারে।
বিভিন্ন ধরণের বাদাম
সব ধরণের বাদামই কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে এবং হৃৎরোগ থেকে রক্ষায় ভূমিকা রাখে। তবে, এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে সাহায্য করে কাঠবাদাম ও আখরোট। বাদামে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি যা শুধু হার্টের স্বাস্থ্যই ভাল রাখে না, পাশাপাশি শরীরের জন্যে আরো অনেক উপকার বয়ে আনে।
অ্যাভোকাডোর মতো বাদামেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মনোঅনস্যাচুরেটেড ফ্যাট যা ক্ষতিকর এলডিএল কমায় এবং উপকারি এইচডিএল বাড়ায়। শুধু তাই নয়, হার্টের সাথে সম্পৃক্ত পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের একটা সমৃদ্ধশালী উৎস হচ্ছে বাদাম, বিশেষ করে কাঠবাদাম।
বাদামে ফাইটোস্টেরল নামক অত্যন্ত উপকারি একটি উপাদান রয়েছে। এই উপাদানটি কাঠামোগতভাবে কোলেস্টেরলের অনুরূপ। আর এটি আমাদের অন্ত্রের শোষণকে বাধা দিয়ে রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
এল-আর্জিনিন নামক যে উপাদানটি আমাদের শরীরকে নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করতে সহায়তা করে, তা আখরোটে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে। আর, মেডিকেল সায়েন্স থেকে আমরা জানি যে, নাইট্রিক অক্সাইড রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। কোলেস্টেরল কমায় যেসব খাবার সেগুলোর মাঝে তাই আখরোট অন্যতম।
বাদামের সারসংক্ষেপ-
- দৈনিক ২ আউন্স পরিমাণ বাদাম ১০.২ মিলিগ্রাম এলডিএল কমায়।
- বাদামে থাকা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়াম ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণ করে।
- ফাটাল এবং নন-ফাটাল হৃৎরোগের ঝুঁকি ২৮% পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে নিয়মিত বাদাম খাওয়া।
টিপস্: চেষ্টা করুন প্রতিদিনই কিছু না কিছু বাদাম খেতে। কিন্তু কোনভাবেই সেটা যেন অতিমাত্রায় না হয়। কারণ, অতিরিক্ত মাত্রায় বাদাম খেলে ডায়েরিয়াসহ আরো কিছু শারিরীক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
চর্বিযুক্ত মাছ
সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে চর্বি থাকে আর চর্বিযুক্ত মাছ, যেমন স্যামন এবং ম্যাকেরেল হচ্ছে লং-চেইন ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের উত্তম উৎস। আমরা জানি, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এইচডিএল কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে, এলডিএল কোলেস্টেরল কমায়, যে কোনও ধরণের প্রদাহ শুকাতে সাহায্য করে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে হার্টের স্বাস্থ্যকে শক্তিশালী করে।
যারা মাংশ খেতে পছন্দ করেন, তারা জেনে রাখুন যে এটি খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএল বাড়ায়। সুতরাং, তাদের উচিৎ এখন থেকে মাংশের পরিবর্তে মাছ, বিশেষ করে চর্বিযুক্ত মাছ সামুদ্রিক মাছ খাওয়া।
বিভিন্ন হৃৎরোগ গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, যারা নিয়মিত চর্বিযুক্ত মাছ খান, তাদের মধ্যে মেটাবলিক সিনড্রোম হওয়ার সম্ভাবনা কম। উচ্চ রক্ত চাপ কিংবা এলডিএল কোলেস্টেরলের ঝুঁকিও সামান্যই। অন্যদিকে, উপকারি কোলেস্টেরল হিসেবে পরিচিত এইচডিএলের মাত্রাও দারুণ পর্যায়ে থাকে।
চর্বিযুক্ত মাছের সারসংক্ষেপ-
- চর্বিযুক্ত মাছ হার্ট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে পারে ২৭% পর্যন্ত।
- ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের পিউর সোর্স হচ্ছে চর্বিযুক্ত সামুদ্রিক মাছ।
- চর্বিযুক্ত মাছ রক্তনালী থেকে ক্ষতিকর ট্রাইগ্লিসারাইডস্ দূর করতে সাহায্য করে।
- চর্বিযুক্ত মাছে Mediterranean diet এর একটি মেজর পার্ট।
টিপস্: প্রতিদিন না হলেও অন্তত সপ্তায় একবার চর্বিযুক্ত মাছ খাওয়ার চেষ্টা করুন। একান্তই যদি স্যামন বা ম্যাকেরেলের মতো সামুদ্রিক মাছ সংগ্রহ করতে না পারেন, তবে আমাদের দেশে চাষ হওয়া পাঙ্গাস মাছ খান। কারণ, পাঙ্গাসেও প্রচুর ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়।
ওটস এবং বার্লি
হোল গ্রেইন হিসেবে পরিচিত ওটস ও বার্লি হৃৎরোগের ঝুঁকি কমায়, এটা বিভিন্ন গবেষণায় বিশেষভাবে প্রমাণিত হয়েছে। বস্তুত, প্রায় ৪৫টি গবেষণা থেকে এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে যে, নিয়মিত হোল গ্রেন খাওয়া মানুষদের মাঝে কোলেস্টেরলের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে, স্ট্রোক কিংবা হার্ট সমস্যার ঝুঁকি খুবই কম।
শুধু তাই নয়, ওটস এবং বার্লির মতো হোল গ্রেইন শরীরের প্রায় সমস্ত অঙ্গ সুস্থ্য ও সবল রাখতে সাহায্য করে। কারণ, হোল গ্রেইনে আছে ভিটামিন, ফাইভার, মিনারেল ও প্ল্যান্ট কম্পাউন্ড।
ওটস এবং বার্লির সারসংক্ষেপ-
- ওটস- এ আছে বিটা-গ্লুকান যা একটি ফ্যাট সলিউবল ফাইবার। এই ফাইবার মূলত ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমায়।
- প্রতিদিন অল্প পরিমাণ ওটস্ খাওয়া টোটাল কোলেস্টেরলকে ৫% কমিয়ে দেয় এবং ভাল কোলেস্টেরলকে ৭% পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়।
- বার্লিতে বিটা-গ্লুকান রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে, যা এলডিএল কোলেস্টেরল কমায়।
টিপস্: যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা হাই কোলেস্টেরল সমস্যা রয়েছে, তারা প্রতিদিন তিনবেলা ওটস ও বার্লি খেলে সর্বাধিক উপকার পাবেন।
বিভিন্ন প্রকারের ফলমূল
নানা কারণেই কোলেস্টেরল কমিয়ে হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে ফলমূল খাওয়া প্রয়োজন। অনেক ধরণের ফলেই রয়েছে সলিউবল ফাইবার যা কোলেস্টেরলের লেবেল কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে। লিভারকে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল উৎপাদন থেকে বিরত রাখতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে ফলমূল। এমনকি, এমন ১০টি ফল আছে যেগুলো যৌণশক্তি বৃদ্ধি করে।
আঙ্গুর, আপেল, ও স্ট্রবেরিসহ আরো কিছু ফলে পেকটিন (Pectin) নামক এক ধরণের সলিউবল ফাইবার পাওয়া যায়, যা উল্লেখযোগ্যভাবে কোলেস্টেরল কমায়।
এছাড়াও, ফলে রয়েছে বায়ো-অ্যাক্টিভ কম্পাউন্ডস্ যা হার্টের সমস্যা দূর করার পাশাপাশি নানা রকম ক্রনিক ডিজিজও সারাতে সাহায্য করে থাকে।
ফলমূলের সারসংক্ষেপ-
- ফলমূলে থাকা পেকটিন ফাইবার ১০% পর্যন্ত কোলেস্টেরল কমাতে সক্ষম।
- ফলমূলে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হার্টকে সুস্থ্য ও সবল রাখতে সাহায্য করে।
- ফল শুধু ক্ষতিকর কোলেস্টেরলই কমায় না, পাশাপাশি উপকারি কোলেস্টেরলও বাড়ায়।
টিপস্: সবসময় সিজনাল ফলমূল খাওয়ার চেষ্টা করবেন। কারণ, প্রতি সিজনে যে ফলগুলো পাওয়া যায় সেগুলোতে রয়েছে ওই সিজনের রোগব্যাধির প্রতিকার। মনে রাখবেন কোলেস্টেরল কমায় যেসব খাবার তার মাঝে ফলমূল অত্যন্ত গরুত্বপূর্ণ।
ডার্ক চকলেট ও কোকোয়া
ডার্ক চকলেটের মূল উপাদানই হচ্ছে কোকোয়া। খাদ্য বিশারদদের করা নানা রকম স্টাডি থেকে দেখা গিয়েছে যে, ডার্ক চকলেট কোলেস্টেরলের খারাপ অংশ অর্থাৎ এলডিএল কমায়। যাদের উপর গবেষণা করা হয়েছে, তাদের প্রায় সকলেই ডার্ক চকলেট খেয়ে নিজেদের রক্তের কোলেস্টেরলের কারণে সৃষ্ট উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সক্ষম হয়েছে।
আমাদের রক্তে যে অক্সিডেশন হয়, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে হৃৎরোগ তৈরি করে, সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে ডার্ক চকলেট চমৎকার ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও, ডার্ক চকলেটের আরো অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।
ডার্ক চকলেট ও কোকোয়ার সারসংক্ষেপ-
- নিয়মিত ডার্ক চকলেট খেলে ৬.৫ মিলিগ্রাম পর্যন্ত কোলেস্টেরল কমতে পারে।
- ডার্ক চকলেটে থাকা Flavonoids এলডিএল কমায়, আবার এইচডিএল বাড়ায়। ফলে, রক্তের মধ্যে থাকা উভয় কোলেস্টেরলের মধ্যে ভারসাম্য থাকে।
টিপস্: যেহেতু ডার্ক চকলেটে প্রচুর পরিমাণে মিষ্টি থাকে, সেহেতু যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ডার্ক চকলেট
রসূন
রসূনে রয়েছে বহু রকমের প্ল্যান্ট কম্পাউন্ডস্ যেগুলো রোগমুক্তির জন্যে খুবই পাওয়ারফুল। এর মাঝে অন্যতম একটি কম্পাউন্ড হচ্ছে Allicin যা ব্লাড প্রেশার কমায়। বিশেষ করে, রক্তের জন্যে ক্ষতিকর এলডিএলের মাত্রা কমিয়ে হার্টকে হরহামেশাই ভাল রাখতে সাহায্য করে রসূন।
রসূনের সারসংক্ষেপ-
- রসূন শুধু হৃৎরোগই নয়, আরো অনেক শারীরিক সমস্যা থেকে রক্ষা করে আমাদের।
- রক্ত ধমনীতে প্লাক তৈরি হওয়া থেকে রক্ষা করে রসূন।
- শরীরের সেল ডেমেজ হওয়া থেকে রসূন আমাদের রক্ষা করে থাকে।
টিপস্: কাঁচা রসূন মুখে দুর্গন্ধ তৈরি করতে পারে। এছাড়া, হার্টবার্ন, গ্যাস ও ডায়েরিয়ার কারণ হতে পারে। এমনকি, কারো কারো ক্ষেত্রে অ্যালার্জিক রি-অ্যাকশন তৈরি করে ব্লিডিং ঘটাতে পারে। তাই, কাঁচা রসূন খেলে দিনে ১/২ কোষের বেশি নয়।
শাক-সবজি
হার্ট হেলদি ডায়েট হিসেবে যত খাবার রয়েছে, তার মাঝে শাক-সবজি অন্যতম। কারণ, শাক-সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা শুধু কোলেস্টেরলই কমায় না, সেই সঙ্গে কম ক্যালোরির কারণে ওজনও নিয়ন্ত্রণে রাখে। বেগুন, গাজর এবং আলুসহ আরো কিছু শাক-সবজিতে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণকারী উপাদান Pectin রয়েছে।
শাক-সবজির সারসংক্ষেপ-
- শাক-সবজিতে প্ল্যাট কম্পাউন্ড আছে যা হার্টসহ শরীরের নানা অর্গানকেই সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে।
- পটাশিয়াম, ফোলেট, ভিটামিন এ ও সি এবং আরো নানা রকম পুষ্টি রয়েছে শাক-সবজিতে।
টিপস্: শাক-সবজি থেকে সর্বাধিক বেনিফিট পেতে বিভিন্ন ধরণের শাক-সবজিকে একত্র করে ব্ল্যান্ডিং মেশিনের সাহায্যে স্যুপ বানিয়ে খেতে পারেন।
অলিভ অয়েল
জলপাই বা অলিভ থেকে তৈরি অয়েল, বিশেষ করে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল হার্টের জন্যে মেডিটারিয়ান ডায়েট যা কোলেস্টেরল কমিয়ে হার্টকে রাখে হেলদি।
একদল মানুষকে বিভিন্ন মেডিটেরিয়ান ডায়েট আর অন্যদলকে শুধু এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল খেতে দিয়ে একটি গবেষণা চালানো হয়েছিল। ফলাফলে দেখা গেল, ৪ টেবিল চামচ পরিমাণ অলিভ অয়েল গ্রহণকারী দলটির প্রায় প্রতিজনেরই ৩০% পর্যন্ত হৃৎরোগের ঝুঁকি কমে গিয়েছে।
অলিভ অয়েলের সারসংক্ষেপ-
- অলিভ অয়েলে প্রচুর পরিমাণে মনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা উপকারি এইচডিএল বাড়াতে সাহায্য করে।
- ইনফ্লেমেশন বা ক্ষত সারাতে প্রয়োজনীয় পলিফেনলের দারুণ উৎস অলিভ অয়েল।
টিপস্: অতি মাত্রায় অলিভ অয়েল গ্রহণ ক্রনিক ডিজিজের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
শেষ কথা
অতিরিক্ত কোলেস্টেরল হৃৎরোগের মেজর রিস্ক ফ্যাক্টর। কাজেই, কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে, বিশেষ করে রক্তের এলডিএল কমাতে ও এইচডিএল বাড়াতে উপরোক্ত খাবারগুলো ডায়েটে যুক্ত করে নিন। কোলেস্টেরল কমায় যেসব খাবার সেগুলোর মাঝে উপরোক্ত খাবারগুলো আপনাকে ধীরে ধীরে হার্টের সুস্থতার জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যালেন্সড্ ডায়েটের দিকে নিয়ে যাবে।
Leave a Reply