সবাই আমার সঙ্গে একমত হবেন যে মশা মানুষের জন্যে যেমন ক্ষতিকর, তেমনই মশার কয়েলও ক্ষতিকর। কিন্তু কোনটি বেশি? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই তৈরি হলো হৈচৈ বাংলার আজকের প্রতিবেদন। আর এ প্রতিবেদন থেকেই আমরা জানবো মানুষের জন্যে মশা না মশার কয়েল বেশি ক্ষতিকর।
তার আগে চলুন, জেনে নেই মশার কামড় থেকে কি সমস্যা হয় আর মশার কয়েল কি দিয়ে তৈরি হয়।
মশার কামড় ভয়ংকর শারীরিক ক্ষতি বয়ে আনতে পারে, আমরা সবাই জানি। মশার কামড় থেকে মারাত্মক ১০টি রোগ হয় যার কোন কোনটি আক্রান্ত রোগীকে মৃত্যুর দিকে পর্যন্ত ঠেলে দেয়। এসব রোগের মাঝে আছে আমাদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত আর কিছু আছে একেবারেই অপরিচিত।
পরিচিত রোগগুলোর মধ্যে রয়েছে-
- ম্যালেরিয়া
- ডেঙ্গু
- চিকনগুনিয়া
- জিকা ভাইরাস
- হলুদ জ্বর বা ইয়ালো ফিভার
আর অপরিচিত রোগগুলোর মাঝে রয়েছে-
- ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস
- ফিলারিয়াসিস
- ডিরোফিলারিয়াসিস
- টুলারেমিয়া
- জাপানিজ এনসেফালাইটিস
- সেন্ট লয়েন্ট এনসেফালাইটিস
- ওয়েস্টার্ন ইকুইন এনসেফালাইটিস
- ভেনেজুয়েলান ইকুইন এনসেফালাইটিস
- রোস রিভার ফিভার
- বার্মা ফরেস্ট ফিভার
- ল ক্রোসি এনসেফালাইটিস, ইত্যাদি।
পরিচিত হোক আর অপরিচিত হোক, মশার কামড় দ্বারা সৃষ্ট এসব রোগের অধিকাংশরই টিকা আবিস্কার হয়েছে। আর যেগুলোর জন্যে এখন পর্যন্ত কোন টিকা আবিস্কার করা সম্ভব হয়নি, সেগুলোর সাধারণ চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে যার মাধ্যমে রোগীকে স্বল্প কিংবা দীর্ঘ মেয়াদে মেডিকেশনের মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব।
মশার কামড় থেকে যেসব রোগের উৎপন্ন হয় সেগুলো সম্পর্কে আমরা একটা ভাল ধারণা পেলাম। এবার আমাদের জানা দরকার মশার কয়েল কি কি জিনিস দিয়ে তৈরি করা হয় আর এসব জিনিস কতটা ক্ষতিকর। আশা করি, সবারই জানা হয়ে গিয়েছে। এবার আসুন মূল প্রসঙ্গে অর্থাৎ এ দু’টোর মধ্যে মানবদেহের জন্যে কোনটি বেশি ক্ষতিকর, সে আলোচনায় যাওয়া যাক।
মশা না মশার কয়েল, কোনটি ক্ষতিকর বেশি?
সাম্প্রতিক একটি রিসার্চ থেকে জানা গিয়েছে যে, মশার কয়েলে যে পরিমাণ কেমিক্যাল ব্যবহার করা হচ্ছে তা নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি।
ওয়ার্ল্ড হেলথ্ অর্গানাইজেশন (WHO) কয়েলে ব্যবহৃত কেমিক্যালের মাত্রা আন্তর্জাতিকভাবে নির্ধারণ করে দিলেও বাংলাদেশের কয়েল উৎপাদন কোম্পানীগুলো সেটা মানছে না। আর তাদেরকে মানানোর জন্যে সরকারও কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না। ফলে, অতিমাত্রায় ব্যবহৃত কেমিক্যালের কারণে কয়েল এখন মানবদেহের জন্যে মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মশার কয়েলে ব্যবহৃত বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান বাতাসের সঙ্গে মিশে থাকে। আর সেগুলো নি:শ্বাসের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে হার্ট, ফুসফুস ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে। কেউ যদি হাত ধোয়া ছাড়া খাবার খায়, তবে খাবারের সঙ্গেও কয়েলের ক্ষতিকর কেমিক্যাল পাকস্থলীতে চলে যায়।
ঘরে উড়তে থাকা বালুকণার সঙ্গেও এসব কেমিকেল সহজে মিশে যায় আর এরকম কিছু ধুলা-বালি আমরা খাবারের সঙ্গে খেয়ে ফেলি। শুধু তাই নয়, আমাদের শরীরের ত্বকও কয়েলে থাকা কিছু রাসায়নিক পদার্থ অ্যাবজর্ব করে নেয়।
সব ধরণের মানুষই কয়েলে থাকা কেমিক্যালের কারণে ভুক্তভোগী হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি ভোগে থাকে আমাদের শিশুরা, বিশেষ করে যাদের এখনো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়নি। অর্থাৎ যেসব শিশুদের ইমুইন সিস্টেম এখনো ডেভেলপ হয়নি, তাদের জন্যে কয়েলে থাকা রাসায়নিক মারাত্মক ক্ষতিকর।
গর্ভবতী মায়েদের শরীরে যদি কয়েলে বিদ্যমান কেমিক্যাল প্রবেশ করে, তবে তাদের সন্তান কিছু কিছু শারীরিক অক্ষমতা নিয়ে জন্ম নিতে পারে। যেমন, শিশুর ঠোঁট কাটা যেতে পারে। তালু ফাটা হতে পারে। স্নায়ুজনিত কিছু কিছু রোগ হতে পারে। এমনকি, শিশু হার্ট ডিজিজ নিয়ে জন্ম নিতে পারে।
শুধু তাই নয়, মশার কয়েলের এইসব মারাত্মক রাসায়নিক উপাদান মহিলাদের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস করতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে অকাল গর্ভপাতের ঝুঁকিও তৈরি করতে পারে।
বিভিন্ন গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, একটা মশার কয়েল যে পরিমাণ ধোয়া উৎপন্ন করে তা ১০০টি সিগারেট থেকে উৎপন্ন ধোয়ার সমপরিমাণ।
মালয়েশিয়ার বিখ্যাত ও প্রধান বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট এর এক গবেষণা থেকে উঠে আসা তথ্য বলছে ১০০টি সিগারেট খেলে যে ক্ষতি হয়, একটা মশার কয়েলের ধোয়ায় সেই একই পরিমাণ ক্ষতি হয়।
সুতরাং, পাঠক আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিন মশা বেশি ক্ষতিকর না মশার কয়েল বেশি ক্ষতিকর।
Leave a Reply