কসমেটিক কেমিক্যাল সম্পর্কে ধারণা না থাকলে আপনি কসমেটিক প্রোডাক্টস্ তৈরিতে ঝামেলায় পড়বেন। এমন হতে পারে যে, আপনি কখনোই কসমেটিক পণ্য তৈরি করবেন না কিংবা কসমেটিক ব্যবসা শুরু করবেন না। কিন্তু আপনি জীবনে কখনো না কখনো কোন না কোন কসমেটিক প্রোডাক্ট ব্যবহার করবেনই। কাজেই, কসমেটিক প্রোডাক্টে যেসব কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়, সেগুলো সম্পর্কে জেনে রাখা নিশ্চয়ই আপনার জন্যে মন্দ হবে না।
কসমেটিক প্রোডাক্ট তৈরি করা হয় ত্বক পরিস্কার, ত্বক রক্ষা, চুলের যত্ন এবং শরীরের বিভিন্ন এক্সটার্নাল পার্টকে সুন্দর করে তুলতে। এক কথায়, সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্যেই নানা রকম কসমেটিক পণ্য উৎপাদন করা হয়ে থাকে।
কসমেটিক উৎপাদনে নানা ধরণের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। যার মাঝে প্রধানতম উপাদানগুলো হল পানি, ইমুলসাইফারস্, প্রিজারভেটিভস্, থিকনারস্, ময়েশ্চারাইজার্স, কালারস্ এবং ফ্র্যাগনেন্স বা সুগন্ধি।
এ সকল ইনগ্রেডিয়েন্টস্ হয় প্রাকৃতিকভাবে অথবা কৃত্রিমভাবে তৈরি হয়। কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্যের উপর যে কোনও সম্ভাব্য প্রভাব মূলত রাসায়নিক যৌগের উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ কি ধরণের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে সেটা শরীর বা ত্বকের উপর কেমন প্রভাব ফেলবে। যাইহোক, আসুন জানি কসমেটিক্সে কি ধরণের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
কসমেটিক কেমিক্যাল
কসমেটিক পণ্য তৈরি করার জন্যে নানা রকমের কেমিক্যালের সংমিশ্রণ ঘটানো হয়। এগুলোকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যাল, সিনথেটিক কেমিক্যাল এবং ন্যাচারাল প্রসেসড্ কেমিক্যাল বলা হয়ে থাকে। বিভিন্ন ক্যাটেগরির এসব কেমিক্যালের মধ্যে রয়েছে-
১. এএলএস – অ্যামোনিয়াম লরিল সালফেট
এটি মূলত অ্যামোনিয়াম ডোডসিল সালফেট (CH, CH2, CH2OSO2,NH4) এর কমন একটি নাম। পোলার সালফেট ইন্ড গ্রুপ এবং নন-পোলার হাইড্রো-কার্বন চেইনের সংমিশ্রণে এই কেমিক্যালটি তৈরি হয়ে থাকে।
অ্যামোনিয়াম লরিল সালফেট নামের এই কেমিক্যালটি ফোমিং অ্যাজেন্ট হিসেবে মূলত শ্যাম্পু এবং বডি ওয়াশে ব্যবহার করা হয়। কখনো কখনো ত্বক পরিস্কার পণ্যেও এটির মিশ্রণ ঘটানো হয়। এক্সটার্নাল ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই কেমিক্যালটির কোনও সাইড ইফেক্ট নেই।
২. ট্যাল্ক
অনেক কসমেটিক্সেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ কেমিক্যাল হচ্ছে ট্যাল্ক। তবে, এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ফেস পাউডার ও কনসিলারে। এটি মূলত হাইড্রেটেড ম্যাগনেসিয়াম সিলিকেটের একটি মিনারেল কম্পোজিশন। ভূট্টা থেকে তৈরি এক ধরণের পাউডারের সঙ্গে থিকনিক অ্যাজেন্ট হিসেবে লুব্রিকেন্ট, সিরামিক ইনগ্রেডিয়েন্ট ও রুপিং ম্যাটেরিয়েলের সমন্বয়ে ট্যাল্ক বানানো হয়। আর এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় বেবি পাউডারে।
৩. ফর্মালডিহাইড
নেলপলিশ, নেইলপলিশ রিমুভারসহ আরো কিছু কসমেটিক প্রোডাক্টে ফর্মালডিহাইড কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনারেও অল্প পরিমাণে এই কেমিক্যালটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। শাওয়ার জেল, লিকুইড হ্যান্ড সোপ, ক্লিনজার, স্কিন ময়েশ্চারাইজার ও টুথপেস্টেও ফর্মালডিহাইড মেশানো হয়।
ফর্মালডিহাইড মূলত এক ধরণের ফর্মিক অ্যাসিড যা প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া একটি অর্গানিক কম্পাউন্ড। এই কেমিক্যালের মূল ফর্মূলা হচ্ছে CH2o।
৪. অ্যালকোহল
পারফিউম জাতীয় সকল পণ্যের একটি কমন কেমিক্যাল হচ্ছে অ্যালকোহল। তবে, কসমেটিক পণ্যে এটি ব্যবহারের আগে ল্যাবের মাধ্যমে এর থেকে ফ্যাট এবং অয়েল রিমুভ করে নেয়া হয়। আর তখনই এটি পারফিউম এবং ত্বক পরিস্কারক পণ্যে ব্যবহার করা হয়। ডিটারজেন্ট পাউডারেও এই কেমিক্যালটি অল্প পরিমাণে মিশণ করা হয়ে থাকে।
৫. ল্যানোলিন
ভেডার সেভাসিয়াস (ফ্যাট ও অয়েল এর মিশ্রণ) গ্রন্থি থেকে পাওয়া একটি পুরু পদার্থ হচ্ছে ল্যানোলিন। শ্যাম্পু, ময়েশ্চারাইজার এবং নেইল পলিশে ল্যানোলিন কেমিক্যালটি ব্যবহার করতে হয় যা মূলত এসব পণ্যের ইমালসন হিসেবে কাজ করে।
৬. মিনারেল মোম
কসমেটিক পণ্যের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কেমিক্যাল হচ্ছে মিনারেল মোম। প্যারাফিন অয়েল, প্যারাফিন ওয়াক্স ও পেট্রোলিয়াম জেল বা ভেজলিনে মিনারেল মোম ব্যবহার করা হয়।
আজকের এই লেখা থেকে কয়েকটি কসমেটিক কেমিক্যাল সম্পর্কে জানলেন। কসমেটিক্স পণ্যগুলোতে যে ধরণের কেমিক্যালগুলো ব্যবহার হয়ে থাকে, তার প্রায় সবই আলোচনা করা হল। আশা করি, আপনার সাধারণ জ্ঞানের ভান্ডারে নতুন করে আরেকটি তথ্য যোগ হয়েছে। আর আপনি এ তথ্যটি শুধু নিজের কাছেই রাখবেন না, শেয়ার করে অন্যদেরও জানিয়ে দেবেন।
Leave a Reply