আপনি হয়তো একটি কম্পিউটার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আপনার সিদ্ধান্ত নেয়ার কাজকে সহজ করার জন্য এই লেখায় কম্পিউটার কিনতে খেয়াল রাখতে হবে অথবা কম্পিউটার কেনার আগে যে-সব বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিতে হবে, সে-সব বিষয়ে সহজ ভাষায় আলোচনা করা হয়েছে।
মার্কেটে বিদ্যমান হাজার রকম ও ধরনের কম্পিউটারের মধ্যে নিজের প্রয়োজনের ও পছন্দের কম্পিউটারটি খুঁজে বের করা মোটেও সহজ কাজ নয়। আপনি নিশ্চয়ই এমন কোন জিনিসে নিজের টাকা ব্যয় করতে চাইবেন না যা মাত্র এক বছর পর আপনার প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদন করার ক্ষমতা হারাবে।
আর আপনি যদি কম্পিউটার হার্ডওয়্যার সম্পর্কে মোটামোটি ভালো ধারণা না রাখেন, তাহলে আপনার এই জিনিসটা বুঝতেই অনেক সময় লেগে যেতে পারে যে প্রত্যেকটি কম্পিউটার সমান নয়। প্রত্যেকটি কম্পিউটার ইউজারের চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন। আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে আপনি এমন কোন যন্ত্রাংশের জন্য খরচ করছেন না যা আপনার মোটেও প্রয়োজন নেই।
কম্পিউটার কিনতে খেয়াল রাখতে হবে
এই লিখাটি আপনাকে কম্পিউটারের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে, যাতে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে কোনটি আপনার প্রয়োজন এবং কোনটিকে আপনার গুরুত্ব দেয়া উচিৎ। এভাবে আপনি আপনার জন্য প্রয়োজনীয় কম্পিউটারটি বেছে নিতে পারবেন এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ থেকে বাঁচতে পারবেন।
ডেস্কটপ নাকি ল্যাপটপ?
এটা সম্ভবত সবচেয়ে সহজ ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত যা আপনি নিতে পারেন একটি কম্পিউটার কেনার সময়। সাধারনত সমান ক্ষমতা সম্পন্ন ল্যাপটপের চাইতে ডেস্কটপ দামে সস্তা হয়। কারণ, ল্যাপটপে অতিরিক্ত একটি ব্যাটারিসহ অল্প জায়গায় সকল যন্ত্রাংশ ফিট করাতে হয় যা এটার প্রস্তুতকরণ প্রক্রিয়াকে জটিল করে তোলে।
আপনি যদি একটি দীর্ঘস্থায়ী কম্পিউটার চান এবং আপনার যদি কম্পিউটার নিয়ে বিভিন্ন যায়গায় যাওয়ার প্রয়োজন না থাকে, তবে আপনার ডেস্কটপ কেনা উচিৎ। ডেস্কটপ আকারে বড় হওয়ায় এটি ঠান্ডা রাখা সহজ যার ফলে এটি দীর্ঘস্থায়ী হয়।
ডেস্কটপের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি আপগ্রেডেবল। যার ফলে আপনার প্রয়োজন বৃদ্ধির সাথে সাথে আপনি এতে প্রয়োজনীয় নতুন যন্ত্রাংশ লাগাতে পারবেন অথবা কোন পার্টস নষ্ট হয়ে গেলে বা নতুন ও উন্নত কোন পার্টস বের হলে আপনি সাথে সাথে পুরনো পার্টসটি চেইঞ্জ করে নতুন পার্টস লাগাতে পারবেন।
যদি আপনার কম্পিউটার নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার প্রয়োজন থাকে তাহলে আপনি অবশ্যই ল্যাপটপ কিনবেন। যদি আপনার সাধারন ইন্টারনেট ব্যাবহার, হালকা লেখালেখি ও হিসেবের কাজের জন্য কম্পিউটার প্রয়োজন হয়ে থাকে, তবে আপনি ট্যাবলেট কম্পিউটার বা নেটবুক নিতে পারেন যা আপনি অল্প দামের মধ্যে পেয়ে যাবেন।
জেনে নিন প্রসেসর সম্পর্কে
প্রসেসরকে বলা যায় কম্পিউটারের ব্রেইন। প্রসেসরে লক্ষ্য রাখবেন কোর সংখ্যা আর প্রসেসরের স্পিড (যা গিগাহার্জ হিসেবে লিখিত থাকে)। প্রসেসরের স্পিড কতটুকু সময়ে কতটুকু ডাটা প্রসেস করার ক্ষমতা রাখে তা বোঝায়। তাই প্রসেসরের গিগাহার্জ যত বেশি হবে তত ভালো।
একইভাবে কোর সংখ্যা যত বেশি হবে তত ভালো। একটি সিংগেল কোর দুই গিগাহার্জ প্রসেসর যেই সময়ে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করবে, ওই একই পরিমান কাজ একটি ডুয়াল কোর দুই গিগাহার্জ প্রসেসর প্রায় অর্ধেক সময়ে করতে পারবে। মাল্টিটাস্কিং বা একই সময়ে একাধিক কাজ করার জন্য একাধিক কোর সম্পন্ন প্রসেসর খুব হেল্পফুল। এক্ষেত্রে প্রসেসরের কোরগুলো কাজ ভাগ করে নেয়।
র্যাম শুধুমাত্র একটি পার্টসের নাম নয়
র্যান্ডম এক্সেস মেমরী বা র্যাম একটি কম্পিউটারের সম্পূর্ণ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। আপনি যদি একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন প্রসেসর লাগান, কিন্তু তার সাথে মানানসই র্যাম ব্যাবহার না করেন, তাহলে আপনি আপনার প্রসেসরের সম্পূর্ণ ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবেন না।
র্যাম কম্পিউটারের যে-সব ডাটাগুলো বার বার প্রয়োজন হয় সে-সব ডাটাকে প্রস্তুত রাখে এবং প্রয়োজনে দ্রুত প্রসেসরকে সরবরাহ করে। র্যামের ক্ষমতাকে গিগাবাইটে প্রকাশ করা হয়। আপনার র্যামটি যত বেশি গিগাবাইট সম্পন্ন হবে তত বেশি প্রয়োজনীয় ডাটা জমা রাখতে পারবে। আপনি যদি একই সময়ে একাধিক কাজ করতে চান, তবে আপনার বেশি গিগাবাইট সম্পন্ন র্যাম প্রয়োজন হবে।
হার্ডড্রাইভ বাছাই করা কঠিন নয়
প্রত্যেকটি কম্পিউটারের ডাটা জমা রাখার জন্য সংরক্ষনাগার প্রয়োজন হয়। যদিও র্যাম এই কাজ কিছুটা করে থাকে, তারপরও সকল তথ্য জমা রাখার জন্য আপনার একটি বড় সংরক্ষনাগার প্রয়োজন হবে। কম্পিউটারের ভাষায় এটাকে হার্ডড্রাইভ বলা হয়।
আপনি যদি একসাথে অনেক তথ্য জমা রাখতে চান এবং পরবর্তীতে আলাদা কোন স্টোরেজ ড্রাইভ কেনার ঝামেলায় না যেতে চান, তবে আপনার একটি বড় হার্ডড্রাইভ কেনা উচিৎ। যেহেতু আপনার সকল ফাইল ও প্রোগ্রাম হার্ডড্রাইভে জমা হবে।
হার্ডড্রাইভের ধারণ ক্ষমতাকে গিগাবাইট বা টেরাবাইটে প্রকাশ করা হয়। মনে রাখবেন এক হাজার গিগাবাইটকে এক টেরাবাইট বলা হয়। আপনার হার্ডড্রাইভটি কত দ্রুত তথ্য জমা করতে ও বের করতে পারবে তা নির্ভর করে এটির ঘূর্ণন স্পিড এর উপর যা সাধারনত আরপিএম হিসেবে লিখিত থাকে। চেষ্টা করুন মার্কেটে এভেইলেবল সবচেয়ে বেশি আরপিএম সম্পন্ন হার্ডড্রাইভটি কিনতে।
মনযোগী হোন আনুষাংগিক যন্ত্রাংশে
মার্কেটে বিদ্যমান সকল প্রকার আনুষাংগিক যন্ত্রাংশ আপনার দরকার হবে না। নিজের প্রয়োজন বুঝে শুধুমাত্র দরকারি যন্ত্রাংশগুলোই কিনুন।
ইয়ুএসবিঃ কম্পিউটারের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হওয়া আনুষাংগিক যন্ত্রাংশ হচ্ছে ইয়ুএসবি হাব। কিবোর্ড, মাউস থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত স্টোরেজ কম্পিউটারে সংযুক্ত করতে আপনার প্রয়োজন হবে ইয়ুএসবি। ইয়ুএসবির বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছ। সচরাচর ব্যাবহার হওয়া ইয়ুএসবি টু এর চাইতে ইয়ুএসবি থ্রি অনেক বেশি দ্রুত গতি সম্পন্ন। আবার আপনার স্মার্টফোনটি আপনার কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত করতে চাইলে প্রয়োজন হবে টাইপ-সি ইয়ুএসবি।
এইচডিএমআইঃ আপনি যদি আপনার কম্পিউটারটি বিনোদনের জন্য ব্যাবহার করতে চান, তাহলে আপনার এইচডিএমআই প্রয়োজন হবে। এর মাধ্যমে আপনি আপনার টিভির সাথে কম্পিউটার সংযুক্ত করতে পারবেন।
এসডি স্লটঃ আপনার মোবাইল অথবা ক্যামেরার মেমরী কার্ড থেকে কোন ফাইল আপনার কম্পিউটারে নিতে প্রয়োজন হবে এসডি স্লট।
ওয়াইফাইঃ আপনি যদি আপনার কম্পিউটারকে তারবিহীনভাবে ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত করতে চান, তবে আপনি একটি এক্সটারনাল ওয়াইফাই ডিভাইস কিনতে পারেন।
অপারেটিং সিস্টেম
যেই অপারেটিং সিস্টেমের সাথে আপনি পরিচিত এবং সাচ্ছন্দ বোধ করেন, সেটিই বেছে নিন আপনার কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে। সাধারনত সবচেয়ে সহজ ও সর্বাধিক ব্যাবহার হয় উইন্ডোস অপারেটিং সিস্টেম। আপনি যদি প্রফেশনাল ছবি বা ভিডিও এডিটর হন, তবে ম্যাক অপারেটিং সিস্টেম আপনার কাজের গতি বৃদ্ধি করবে। আর আপনি যদি ওয়েব ডেভলপিং বা প্রোগ্রামিং করতে চান, তাহলে লিনাক্স ব্যবহার করতে পারেন।
গ্রাফিক্স
বেশিরভাগ কম্পিউটারে ইন্টিগ্রেটেড গ্রাফিক্স থাকে যা প্রসেসরের সাথে সংযুক্ত থাকে। সাধারন নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহার ও মিডিয়া প্লে-ব্যাকের জন্য এটি যথেষ্ট। তবে আপনি যদি কম্পিউটারে গেম খেলতে চান বা ভিডিও এডিট করতে চান, তবে আপনাকে কম্পিউটারের মাদারবোর্ডের সাথে একটি ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড সংযুক্ত করতে হবে। এ-সব গ্রাফিক্স কার্ডের নিজস্ব ভিডিও প্রসেসর ও মেমরী থাকে।
উপসংহারঃ কম্পিউটার কেনার সময় ধৈর্যশীল থাকুন। প্রযুক্তি দ্রুত উন্নত হয়। এমনটিও হতে পারে যে আপনি আজকে কম্পিউটার কিনে ফেললেন আর কালকেই একই দামে আরো ভালো প্রযুক্তি মার্কেটে চলে এলো। কেনার আগে খোঁজ খবর নিয়ে নিন।
এই পোস্টে উল্লেখ করা কম্পিউটার কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে এমন বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখুন। পত্রিকার প্রযুক্তি পাতায় চোখ রাখুন অথবা কোন অনলাইন তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কিত ওয়েবসাইটে ঠুঁ মারুন। লক্ষ্য করলে দেখবেন যে, বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় প্রায় সকল প্রযুক্তি পন্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের মুল্যে ছাড় দিয়ে থাকে। এই সময়ে কেনার চেষ্টা করুন অথবা পরবর্তী উন্নত প্রযুক্তি আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। সকল পন্য একই সাথে একই দোকান থেকে কেনার চেষ্টা করুন। সেক্ষেত্রে দোকানদার আপনাকে পুরো দামে কিছুটা ছাড় দিতে পারে।
Leave a Reply