আমরা কম্পিউটারে নানান কিছু লিখি। বাংলা, ইংরেজি, মান্দারিন, ফরাসি, আরবি, উর্দু, হিন্দিসহ আরো কত নাম না জানা ভাষায় প্রতিদিন মানুষ কম্পিউটারে লিখছে, সে এসব কীভাবে বুঝে! কম্পিউটার কি সব ভাষার পণ্ডিত? মোটেও না। কম্পিউটার শুধু একটি ভাষাই বুঝে- বাইনারি সংখ্যা। এটাই তার ভাষা। আপনি এর সাথে যোগাযোগ করতে হলে এই ভাষায়ই করতে হবে। ভাবছেন কই, জীবনেও তো বাইনারির নামই শুনলাম না। অথচ কম্পিউটারে কত্ত কিছু করি!
বাইনারি সংখ্যা কী?
আমরা যে এক, দুই, তিন গুনি এগুলোকে বলা হয় দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি বা ডেসিম্যাল নাম্বার। কারণ, এই পদ্ধতিতে সংখ্যা মোট দশটা। বাইনারি এমনই একটি সংখ্যা পদ্ধতি যেখানে মাত্র দুটি সংখ্যা- ০ এবং ১। এজন্য একে বলা হয় দ্বিমিক সংখ্যা পদ্ধতি। বাইনারির ব্যবহার যদিও অনেক প্রাচীন কিন্তু আধুনিক বাইনারির জনক হচ্ছে লিবনিজ নামক এক ভদ্রলোক।
বাইনারি সংখ্যার ব্যবহার
একটা প্রতীক আমরা সব সময় দেখি, পাওয়ার বাটন। মোবাইল, ল্যাপটপ, টিভি, রিমোট, ওভেন, ওয়াশিং মেশিনসহ সব ধরণের ইলেক্ট্রিক পণ্যে আমরা এই বাটনটি দেখি। একটি গোলাকার বৃত্ত, উপরে একটি খাড়াখাড়ি দাগ টানা। এটি কী আসলে? এটি হচ্ছে বাইনারি শূন্য ও ওয়ানের প্রতীক। মূলত, সব ধরণের ইলেক্ট্রিক যন্ত্র নিয়ন্ত্রিত হয় বাইনারির মাধ্যমে। যেহেতু মাত্র দুটি সংখ্যা, একটি দিয়ে অন, অপরটি দিয়ে অফ এর সংকেত দেওয়া হয়।
বাইনারি সংখ্যা যেভাবে কাজ করে
আমরা যখন কম্পিউটারের কীবোর্ডে কোনো কিছু লিখি, সেটা কম্পিউটারের নিকট যায় শুধুই সংখ্যা হিসেবে। যেমন যদি “১” লিখি, কম্পিউটার এর জন্য আটটা সংখ্যা পায়। ধরা যাক- ০১০০০১১০- এ-রকম। কারণ, বাইনারিতে ০ এবং ১ ছাড়া কোনো সংখ্যা নেই। এজন্যই এই সংখ্যা পদ্ধতিতে ১+১ = ১০!! সেটা কীভাবে তা অন্যদিন কথা হবে। তো আমরা কম্পিউটারে গেমস, টেক্সট, অডিও, ভিডিও যা কিছুই রাখি না কেন, তার কাছে এগুলো শুধুই অসংখ্য অগণিত সংখ্যার সমাহার। আর কিছু না।
এনকোডার ও ডিকোডার
কিন্তু কথা হচ্ছে আমরা তো কেউই কম্পিউটারকে সংখ্যায় কমান্ড দেই না। আমরা যার যার ভাষায় লিখি। পৃথিবীজুড়ে শত শত ভাষায় মানুষ লেখে। কম্পিউটার সেগুলো বাইনারিতে রূপান্তরিত করে নেয়। আবার আমরা কম্পিউটার থেকে কিছু দেখতে চাই, সিপিইউ থেকে সেগুলো সংখ্যা আকারেই আসে। কিন্তু আমাদের সামনে প্রদর্শিত হয় অডিও, ভিডিও, ফটো কিংবা অন্য কোনো রূপে। সেটা কীভাবে হয়?
যে ডিভাইসের মাধ্যমে মানুষের ভাষাকে কম্পিউটারের ভাষায় অর্থাৎ বাইনারিতে রূপান্তর করা হয়, তাকে বলে এনকোডার। আবার বাইনারি থেকে মানুষের বোধগম্য ভাষা বা আকৃতিতে রূপান্তর করার যন্ত্রকে বলা হয় ডিকোডার। কম্পিউটারের কীবোর্ডে একটি এনকোডার লাগানো থাকে। আবার মনিটরে থাকে একটি ডিকোডার। ফলে আমাদের কিছুই করা লাগে না। আমরা নিজেদের ভাষায় কমান্ড দেই, আবার নিজেদের ভাষায়ই রেজাল্ট দেখি। মাঝে এনকোড-ডিকোড করার কাজটা কম্পিউটার নিজেই করে নেয়। শুধু কম্পিউটার নয়, বরং সব ইলেক্ট্রিক ডিভাইসই এই প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে যায়।
দৈনন্দিন জীবনে বাইনারি সংখ্যা
যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে, তারা কিন্তু সব সময় বাইনারিতে ডুবে আছে। এমনকি প্রতিদিন অসংখ্যবার বাইনারি গণনা পদ্ধতি উল্লেখ করছে। অথচ সে হয়ত আজকেই প্রথম বাইনারি শব্দটা শুনছে! বিষয়টা মজার না? আগেই বলেছি বাইনারি পদ্ধতিতে প্রতিটি সংখ্যা সংরক্ষণ করার জন্য আটটি সংখ্যার প্রয়োজন হয়। এই প্রতিটি সংখ্যাকে বলা হয় বিট। আট বিটে হয় এক বাইট। ১০২৪ বাইটে হয় এক কিলোবাইট। সংক্ষেপে আমরা যাকে বলি কেবি (kb)। আবার ১০২৪ কিলোবাইটে হয় এক মেগাবাইট, সংক্ষেপে এমবি (mb)। ১০২৪ মেগাবাইট বা এমবিতে হয় এক গিগাবাইট বা জিবি (gb)।
এবার নিশ্চয়ই হিসাব মিলে গেছে। হ্যাঁ, আমরা যে বলি এই পিকচারের সাইজ এক কেবি, তার মানে হচ্ছে কম্পিউটারে এই পিকচারটা সংরক্ষণ করতে ১০২৪ বাইট বা এক কিলোবাইট জায়গার প্রয়োজন হয়েছে। পাঁচশ এম্বির মুভির ক্ষেত্রেও একই কথা। এমনকি আমরা যে এত এত টাকা খরচ করে ডাটা কিনি, ওয়ান জিবি, টু জিবি, এগুলো মূলত সংখ্যা কিনি! বাইনারি সংখ্যার পরিমাণ!! ভারী অদ্ভুত!
থিওরিটিক্যালি আমরা বাইনারি সংখ্যার সাথে পরিচিত না হলেও প্র্যাকটিক্যালি আমাদের আধুনিক জীবনের নিয়ন্ত্রক হচ্ছে এই সংখ্যা। প্রতিনিয়ত নিজেদের অজ্ঞাতেই আমরা এটি ব্যবহার করছি।
মোহাম্মদ রাশেদ আলী says
কম্পিউটারের ভাষা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম, ভাই। কম্পিউটারের বাইনারি সংখ্যা নিয়ে খুব ভালো একটা পোস্ট।