কভার লেটার তৈরি করার প্রয়োজনীয়তা এখন আর কোন চাকরিপ্রার্থীকে বলার প্রয়োজন নেই। কারণ, সব চাকরিপ্রার্থীই জানেন যে, একটি আদর্শ সিভির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্ট হচ্ছে কভার লেটার। চাকরিতে আবেদনের জন্য আপনার CV অর্থাৎ curriculum vitae যেমন অপরিহার্য, তেমনি আপনার সিভিটিকে পরিপূর্ন করতে সিভির সাথে একটি আদর্শ মানের কভার লেটার যুক্ত করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কভার লেটার ছাড়া আবেদনের উদ্দেশ্যে পাঠানো আপনার সিভিটি নিয়োগকর্তার কাছে পরিত্যাক্ত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। কারণ, একটা সম্ভাব্য চাকরির বিপরীতে চাকরিদাতাদের হাতে অসংখ্য সিভি পৌঁছে থাকে।
আর কোন চাকরিদাতারই চাকরিপ্রার্থী সম্পর্কে জানার জন্যে তার সিভির সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ার সময় নেই। চাকরিদাতারা তাই সংক্ষেপে কভার লেটারটি পড়ে নেন যা চাকরিপ্রার্থী সম্পর্কে তাদেরকে প্রয়োজনীয় ধারণাটি দিয়ে দেয়। তাই, চাকরির জন্যে যদি সিভি পাঠাতে হয়, তার সাথে কভার লেটার যুক্ত করতে যেন ভুল না হয়।
চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই সহজে সিভি তৈরি করার উপায় জানেন। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে, কভার লেটার কি অথবা কিভাবে লিখবেন। বিশেষ করে যারা সদ্য পড়াশোনা শেষ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরির জন্য আবেদনের কথা চিন্তা করছেন।
আশা করছি, কভার লেটার নিয়ে আজকের লেখাটি চাকরিপ্রার্থীদের উপকারে আসবে। প্রথমেই কভার লেটার সম্পর্কে ছোট্ট একটি ধারনা নিয়ে নেওয়া যাক।
কভার লেটার কি এবং কেন প্রয়োজন
স্কুলজীবনে বাংলা ব্যাকরণ এবং ইংলিশ গ্রামার বই থেকে বিভিন্ন পদের জন্য চাকুরি চাহিয়া আবেদনপত্র/এপ্লিকেশন লেখা মোটামুটি আমরা সবাই শিখেছি। কভার লেটার মূলত ছোটবেলার সেই আবেদনপত্রের মতই। সিভির সাথে এক পৃষ্ঠা দৈর্ঘ্যের কাঙ্খিত পদের উদ্দেশ্যে লেখা আবেদনপত্রই মূলত কভার লেটার।
একটি কভার লেটার নিয়োগকর্তার কাছে আপনার আবেদনের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিবে। ভালো মানের একটি কভার লেটার নিয়োগকর্তাকে আপনার সিভিটি নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষন করতে আকৃষ্ট করবে। যে কোন কোম্পানিতে চাকরি পেতে হলে নিজের সকল যোগ্যতা নিয়োগকর্তার সামনে যথাযথভাবে উপস্থাপন করাটাও যথেষ্ট জরুরী। এক্ষেত্রে কভার লেটার আপনার জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবে।
ইন্টারনেট থেকে অনেক ধরনের কভার লেটারের টেম্পলেট পেয়ে যাবেন, যা থেকে কভার লেটার সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারনা হয়ে যাবে। সেখান থেকে একটি পছন্দসই টেম্পলেট বাছাই করে নিতে পারেন আপনার কভার লেটারটি তৈরী করার জন্য। আবার, অনলাইনে ফ্রিতে সিভি ও কভার লেটার তৈরির জন্যে কিছু ওয়েবসাইট আছে। চাইলে আপনি সেগুলো ব্যবহার করে সহজেই কভার লেটার তৈরি করে নিতে পারেন।
কভার লেটার তৈরি করার নিয়ম
কভার লেটারে কি কি তথ্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে?
কভার লেটারে নিজের সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরন দিন। মনে রাখবেন কভার লেটারটি আপনার সিভির সম্পূরক হিসেবে ব্যবহৃত হবে। তাই, কভার লেটারে আপনার জীবন বৃত্তান্ত দিতে যাবেন না। কারণ, আপনার সিভিতেই সেই সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া আছে।
আপনার আবেদনকৃত পদের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আপনি তাদের কোম্পানির জন্য কতটা উপযুক্ত তা সুন্দর এবং সাবলিলভাবে উপস্থাপন করুন। কিছু পদক্ষেপ অনুসরন করলেই খুব সহজেই আপনি তৈরী করে ফেলতে পারবেন একটি আকর্ষনীয় কভার লেটার। এর জন্য আপনাকে লেখালেখিতে খুব বেশি পারদর্শি হতে হবে এমন কোন কথা নেই। কভার লেটার তৈরী করার সময় যে বিষয়গুলো আপনাকে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে তা হলো-
- আপনি যে পদের জন্য আবেদন করছেন, সেই পদের নাম প্রথম অনুচ্ছেদেই উল্লেখ করবেন।
- চাকরির বিজ্ঞপ্তিটি যে মাধ্যম থেকে পেয়েছেন, তা তারিখসহ উল্লেখ করবেন।
- আপনি কেন চাকরিটির জন্য উপযুক্ত, তা সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরবেন।
- নিয়োগকর্তাকে আপনার সিভিটি পড়তে উৎসাহিত করবেন।
- ইন্টারভিউ কলের জন্য আবেদন করে কভার লেটারটি শেষ করবেন।
কভার লেটার কতটুকু বড় হবে?
কভার লেটার পেপার টাইপ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতামত রয়েছে। তবে, কভার লেটার সাধারনত এক পৃষ্ঠারই হয়ে থাকে। কারো কারো কাভার লেটার দুই পৃষ্ঠা হয়ে যেতে পারে। তবে, ২৫০ থেকে ৪০০ শব্দের বেশি না লেখাই ভালো।
কভার লেটারটিকে কিভাবে সাজাবেন?
একটি ভালো কভার লেটারের বৈশিষ্ট্য হলো প্রথম দর্শনেই নিয়োগকর্তার মনোযোগ আকৃষ্ট করা। কভার লেটার লেখার জন্য প্রথমেই আপনার চাকরির ধরনের সাথে মিল রেখে একটি সঠিক টেম্পলেট নির্বাচন করুন। এরপর নিচে দেওয়া ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনার কভার লেটারটিকে সাজিয়ে নিতে পারেন।
শিরোনাম
কভার লেটার তৈরি করার প্রথম ধাপ এটি। কভার লেটারের একদম উপরেই নিজের নাম ও যোগাযোগের বৃত্তান্ত দিন। এটি কভার লেটার তৈরী করার প্রথম ধাপ। সার্টিফিকেটের নাম ব্যবহার করুন, কোনভাবেই ডাকনাম ব্যবহার করা যাবে না। যোগাযোগের বৃত্তান্ত হিসেবে শুধুমাত্র নিজের ফোন নাম্বার এবং ইমেইল এড্রেসটি ব্যবহার করুন।
যেহেতু আপনার সিভিতেই বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা দেওয়া আছে সেক্ষেত্রে কভার লেটারে তার পুনরাবৃত্তি করার প্রয়োজন নেই। আপনার যদি একটি লিঙ্কডইন প্রোফাইল থাকে, তাহলে সেটার এড্রেস ব্যবহার করুন।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে যার বরাবর আবেদন করতে বলা হয়েছে, তার পদবী এবং যোগাযোগের ঠিকানা দিন। যেমন, আপনি যেই কোম্পানিতে আবেদন করছেন, সেই কোম্পানির এইচআর ম্যানেজার বরাবর আবেদন করতে বলা হয়েছে, সেক্ষেত্রে প্রথমে তার নাম লিখে নিচে তার পদবি এবং সেই কোম্পানির যোগাযোগের ঠিকানা লিখুন। পরপর এভাবে সাজিয়ে নিতে পারেন,
- নাম
- ফোন নম্বর
- ইমেইল এড্রেস
- তারিখ
- নিয়োগ ব্যবস্থাপকের নাম এবং পদবি
- কোম্পানির নাম এবং ঠিকানা
অভিবাদন
নিয়োগ ব্যবস্থাপককে অভিবাদন জানান। Dear sir/madam না লিখে নিয়োগকর্তার শেষ নাম ব্যবহার করুন। যেমন ধরুন, আপনি যার বরাবর আবেদন করছেন তার নাম Md. Faisal Ahmed. আপনি লিখতে পারেন Dear Mr. Ahmed. আপনি যদি নিয়োগকর্তার নাম না জেনে থাকেন, তবে Dear Hiring Manager লিখেও অভিবাদন জানাতে পারেন।
পরিচিতি
শুরুতেই যে অনুচ্ছেদটি লিখবেন সেখানে আপনার একটি দৃষ্টি আকর্ষনকারী পরিচিতি দিন। গতানুগতি ধারায় না যেয়ে সবার থেকে একটু ভিন্নধর্মী বৈশিষ্ট্য রাখার চেষ্টা করুন। প্রথম অনুচ্ছেদেই যদি নিয়োগকর্তার মনোযোগ আকৃষ্ট করতে পারেন, তবে কভার লেটার তৈরি সার্থক হবে। অর্থাৎ, এটা আপনাকে আপনার লক্ষের দিকে আরেকটি ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে। যেই পদের জন্য আবেদন করছেন এবং তাদের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিটি যেই মাধ্যম থেকে পেয়েছেন, সেই সম্পর্কে লিখুন।
আপনি কেন উপযুক্ত ব্যক্তি?
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে নিজের কিছু অর্জনের কথা লিখুন। আপনার অর্জনকৃত যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার সেই অংশটুকুই তুলে ধরুন যেটুকু তাদের কাঙ্খিত যোগ্যতার সাথে মিলে যায়। আবেদনকৃত পদের জন্য আপনি কেন বাকি সবার চেয়ে বেশি যোগ্য, তা তুলে ধরুন। নিয়োগকর্তাকে শুরুতেই উপস্থাপন করুন তারা যে দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা চাচ্ছে তা আপনার মাঝে বিদ্যমান। আপনার দক্ষতাগুলো লিস্ট আকারে সাজিয়েও উপস্থাপন করতে পারেন।
মনে রাখবেন প্রত্যেক কোম্পানিই সবচেয়ে যোগ্য এবং তাদের কোম্পানির জন্য বেশি উপযুক্ত ব্যক্তিটিকেই নিয়োগের জন্য বাছাই করবে। আবেদন করার পূর্বে সেই কোম্পানি সম্পর্কে গুগল থেকে কিছুটা ধারনা নিয়ে রাখবেন। যাতে কভার লেটার লেখার সময় এটা ব্যাখ্যা করতে পারেন যে, আপনি তাদের কোম্পানির জন্য কতটা যোগ্য। আপনার পূর্বে কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে সেই কোম্পানি সম্পর্কে তথ্য উল্লেখ করবেন, এতে নিয়োগকর্তা আপনার আবেদনপত্রটিকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে আগ্রহী হবেন। কভার লেটার তৈরী করার ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইন্টারভিউ কলের আবেদন
পরিশেষে আপনি তাদের কোম্পনিতে নিযুক্ত হতে কতটা ইচ্ছুক এবং নিয়োগকর্তাকে আপনার সকল যোগ্যতা বিবেচনা করে একটি ইন্টারভিউ কলের জন্য আবেদন করবেন। আপনার চাকরিটির কতটুকু প্রয়োজন সেটি তুলে না ধরে আপনাকে তাদের কোম্পানির জন্য কতটুকু প্রয়োজন সেই সম্পর্কে গুরুত্ব দিবেন।
পরিসমাপ্তি
সর্বশেষ অনুচ্ছেদটি লিখার পর নিয়োগকর্তাকে বিদায় সম্ভাষন জানিয়ে আপনার কভার লেটারটি সমাপ্ত করুন। এক্ষেত্রে কিছু পরিসমাপ্তি ব্যবহার করতে পারেন, যেমন:
Best Regards
Sincerely
Thank You
এরপর আপনার নাম এবং স্বাক্ষর দিন। কভার লেটারটি লেখা শেষ হয়ে গেলে অবশ্যই দুই তিনবার প্রুফ রিড করে গ্রামাটিকাল ভুলগুলো শুধরে নিবেন। বানানের দিকেও অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। ভুল বানান আপনার কভার লেটারের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
যাইহোক, এই ছিল কভার লেটার কিভাবে লিখবেন তা নিয়ে আজকের লেখা। আশা করছি, আজকের লেখায় সহজে কভার লেটার তৈরি করা সম্পর্কে একটি ধারণা আপনাদেরকে দিতে পেরেছি । আগামীতে হয়তো ক্যারিয়ার নিয়ে আরো নতুন কোন লেখা নিয়ে হাজির হবো।
Md.shariful islam says
কভার লেটার নিয়ে দারুণ এই লেখাটি পড়ে উপকৃত হয়েছি এবং কিছু সমাধান পেয়েছিম ধন্যবাদ ম্যাম।
Sazeda Rahman says
শুনে ভালো লাগলো। আপনাকেও ধন্যবাদ।