যে কোন ব্যবসায়িক সাইটের জন্যে এসইও যেমন অনেক গুরুত্ব রাখে, তেমনই এসইওতে কনভার্সন রেট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে, কনভার্সন কিন্তু এসইও না। এমনকি, এটি একটি ওয়েবসাইটে একজন ভিজিটরের লং কিংবা শর্ট জার্নির সমাপ্তিও না। কারণ, এই ভিজিটর আপনার ওয়েবসাইটে আবার আসতে পারে এবং আপনার ব্যবসার নতুন জার্নিতে অংশ নিতে পারে।
প্রতিটি ব্যবসার মালিক, বিপণনকারী সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট সকলেরই একটা কমন প্রশ্ন থাকে। আর তা হচ্ছে, আমার অর্গানিক ট্রাফিকের কতটা লিডে কনভার্ট হওয়া উচিৎ? এই প্রশ্নের ভেতরে লুকায়িত রয়েছে একটি অনলাইন ব্যবসার অন্তর্মূখী সাফল্য। কাজেই, কনভার্সন রেটের আদ্যোপান্ত জানা সকলেরই জন্যেই আবশ্যক।
এক নজরে দেখে নিন যা আছে এই লেখায়-
কনভার্সন রেট কী?
একটি উদাহরণের মাধ্যমে কনভার্সন রেট বুঝা যাক। এখন তো শীতকাল, ধরুন আপনি একটি গিজার কিনবেন। পাঁচটি শোরুম ঘুরে আপনার একটি গিজার পছন্দ হল, আপনি সেটি কিনলেন। তো আপনার নিকট বিক্রি করেছে কিন্তু শুধুমাত্র একটি শোরুম। আপনি ঘুরে ফিরে দেখেছেন আরো চারটি শোরুম। এমন প্রতিটি শোরুমেই সম্ভাব্য ক্রেতা আসে, কিন্তু কিনে না।
সারাদিনে কতজন সম্ভাব্য ক্রেতা এলো, আর কতজন পণ্য ক্রয় করল, এই হিসেবটাকেই বলা হয় কনভার্সন রেট। ইংরেজিতে CVR। এটা সহজ হিসাব, অফলাইনের হিসাব।
অনলাইন কনভার্সন
এখন অনলাইনে হাজার হাজার নয়, লাখ লাখ ওয়েবসাইট রয়েছে। তাদের সবার উদ্দেশ্য কিন্তু পণ্য বিক্রি নয়। কেউ হয়ত ওয়েবসাইট খুলেছে তার ম্যাগাজিনের সাবস্ক্রাইবার বাড়ানোর জন্য। আরেকজন তার স্কুলের প্রচারণার জন্য। কোন দাতব্য সংস্থা হয়ত ভলান্টিয়ার খুঁজছে, একটি ফর্ম ফিলাপের মাধ্যমেই যা সম্পন্ন হতে পারে। তো এখানে কোনো বিক্রি-বাট্টার অপশন নেই, তাহলে কনভার্সন রেট কিভাবে নির্নয় করা যায়?
খুবই সহজ মেথড। আপনি যে উদ্দেশ্যে ওয়েবসাইট খুলেছেন, ঠিক কতজন ভিজিটর সে উদ্দেশ্য সাধন করছে তার হিসেব করার দ্বারাই আপনি আপনার কনভার্সন রেট যাচাই করতে পারেন। যেমন ধরুন, কতজন ভিজিটর দাতব্য সংস্থার ফরমটা ফিলাপ করল অনলাইনে। অথবা ঠিক কতজন ভিজিটর ম্যাগাজিন সাবস্ক্রাইব করল।
এক কথায়- মোট ভিজিটরের মধ্য থেকে কত শতাংশ ওয়েবসাইটের মূল উদ্দেশ্য পূরণ করছে, তার পরিমাপই হল কনভার্সন রেট। আর, যে-সব ভিজিটর ওয়েবসাইটের মূল উদ্দেশ্য পূরণ করছে তাদেরকে বলা হয় কনভার্টেড ভিজিটর। ভলান্টিয়ার হিসেবে ফর্ম ফিলাপকারী একজন কনভার্টেড ভিজিটর, ম্যাগাজিন সাবস্ক্রাইবারও একজন কনভার্টেড ভিজিটর।
কনভার্সন রেট বের করার পদ্ধতিটা একদম পানিভাত। মোট ভিজিটরকে কনভার্টেড ভিজিটর দ্বারা ভাগ করতে হবে। যেমন, মোট ভিজিটর যদি হয় ১০০ জন, আর কনভার্টেড ভিজিটর হয় ১০ জন, তবে ১০০÷১০ = ১০, অর্থাৎ কনভার্সন রেট হল ১০%।
A/B Test (এ/বি টেস্ট)
সহজ কথায় এবি টেস্ট হচ্ছে কনভার্সন রেট বাড়ছে না কেন, কী করলে সেটা বৃদ্ধি পাবে তা যাচাইয়ের পদ্ধতি। এক্ষেত্রে একই ওয়েবপেজ অথবা অ্যাপসের দুটি ভার্সন ছাড়া হয়, কোন ভার্সনটি বেশি কনভার্টেড ভিজিটর পাচ্ছে তা লক্ষ্য করা হয়। আবার প্রতিটি ভার্সনেই বিভিন্ন পরিবর্তণ ও পরিমার্জণ এনে ভিজিটরদের রেসপন্স যাচাই করা হয়। সংক্ষেপে একেই বলে এ/বি টেস্ট।
কনভার্সন রেট অপটিমাইজিং
ইংরেজিতে একে বলা হয় CRO। কনভার্সন রেট অপটিমাইজিং’র দুটি প্রধান অংশ। প্রথমাংশে মূলত অফার পূণর্মূল্যায়ন করা হয়। গ্রাহকদেরকে আকৃষ্ট করবে বেশি এমন অফার প্রোভাইড করতে হয়। দ্বিতীয়াংশে দেখা হয় ওয়েবপেজের সমস্যাগুলো। যেমন- যদি একই পেজে পাঁচটি সাবস্ক্রাইব বাটন দিয়ে রাখা হয়, তবে ভিজিটর নির্ঘাত বিরক্ত হবে। আবার বাটন যদি এতই ছোট হয় যে দেখাই যায় না, তাহলেও ভিজিটর নেক্সট স্টেপে যেতে আগ্রহী হবে না। পেজের কনটেন্ট বা বিষয়বস্তু হতে হবে আকর্ষণীয় যা পাঠককে উদ্ধুদ্ব করবে।
কনভার্সন রেট বনাম বাউন্স রেট
বাউন্স রেট হচ্ছে কনভার্সন রেটের বিপরীত। একদম একাডেমিক ভাষায় বলতে গেলে বাউন্স রেট হচ্ছে যা ওয়েবসাইট ইন্ডিকেটরকে একজন ভিজিট থেকে শুধুমাত্র একটি অ্যাকশনের সিগন্যাল দেবে। বুঝতে পারেননি নিশ্চয়ই, সমস্যা নেই; একাডেমিক ভাষা ছেড়ে নিজের ভাষায় বুঝিয়ে বলছি।
একজন ভিজিটর যখন কোনো ওয়েবসাইটে ঢুকে আর কোনো কিছুই না করে বের হয়ে যায়, একে বলা হয় বাউন্স। অর্থাৎ ঢুকল আর বের হল, আর কিছুই না। তো মোট ভিজিটরকে কতজন বাউন্স করল তা দিয়ে ভাগ করলেই বাউন্স রেট বের হয়ে আসে।
এখন কথা হল অধিক বাউন্স রেট কি ক্ষতিকর? এটা মূলত ওয়েবসাইটের ধরনের উপর নির্ভর করে। যদি সাইটটি হয় অ্যাডসেন্স ওয়েবসাইট, কিংবা ই-কমার্স সাইট, যেখানে ভিজিটর হোম পেজ থেকেই চলে গেলে সাইটের স্বার্থসিদ্ধি হয় না, সেক্ষেত্রে অধিক বাউন্স রেট অবশ্যই ক্ষতিকর। অন্যদিকে সাইটটি যদি ইনফরমেটিভ হয়, যেমন ব্লগ সাইট, যেখানে সাধারণত হোমপেজেই প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত দেওয়া থাকে, তবে বেশি বাউন্স রেট ক্ষতিকর নয়।
CRO নাকি SEO?
অনেকেই কনভার্সন রেট অপটিমাইজেশন এবং সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনএই দুটি গুলিয়ে ফেলেন। দুটি আলাদা কিন্তু পরস্পর সম্পৃক্ত বিষয়। এসইও করা হয় সাইটের ভিজিটর বাড়ানোর জন্য। আর কনভার্সন অপটিমাইজ করা হয় আগত ভিজিটরদের মধ্য থেকে কনভার্টেড ভিজিটর বাড়ানোর জন্য।
অর্থাৎ, এসইওর উদ্দেশ্য হল সার্চ রেজাল্টে গুগলের ফাস্ট পেজে আসা, সেখান থেকে যথাসম্ভব বেশি ট্রাফিক আনা। আর কনভার্সন রেট অপটিমাইজেশনের লক্ষ্য হচ্ছে আগত ভিজিটরদেরকে তাদের পণ্য/সেবা গ্রহণে আগ্রহী করে তোলা।
আপনি অনলাইন ব্যবসার জন্য ভাল একটি ই-কমার্স সাইট করলেন, ধামাকা সব অফার দিলেন। কিন্তু ভিজিটর নাই, তো সবই পন্ডশ্রম। আবার এসইওর মাধ্যমে ভুরি ভুরি ভিজটর ধরে নিয়ে এলেন, তারা এসে দেখে এগুলো সব বোগাস অফার। সাইট থেকে কেনার মত কিছুই নাই। দাম বেশি, কোয়ালিটি ভাল না অথবা ডেলিভারি সিস্টেম ফালতু, তাহলে এসইওর পিছনে কাঁড়ি কাঁড়ি পয়সা ঢেলে লাভ নেই। ভিজিটর আসবে আর যাবে। লাভের লাভ এতটুকু হবে যে বাউন্স রেট বেশি হওয়ার ফলে গুগলের পেনাল্টি খেয়ে ফাস্ট পেজ থেকে তো বটেই, এমনকি লাস্ট পেজ থেকেও বিদেয় হওয়া লাগতে পারে।
সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে একটি ছাড়া অন্যটি অচল। তাই, দুটোই লাগবে। এসইও করে ট্রাফিক আনতে হবে। আর সে-সব ট্রাফিক থেকে কাঙ্খিত উদ্দেশ্য সাধন করতে কনভার্সন রেটটাকে অপটিমাইজ করতে হবে। কিন্তু কোত্থেকে? অনলাইনে বহু ডেডিকেটেড সাইট রয়েছে যারা CRO সেবা প্রদান করে থাকে।
সংক্ষেপে কনভার্সন রেট সম্পর্কে বেসিক এবং ওভারঅল একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি, বিষয়টি আপনাদেরকে বুঝাতে পেরেছি, সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
Leave a Reply