ওয়েব ডিজাইন বলতে আমরা বুঝি ওয়েব পেজ ডিজাইন যা অনেকগুলো তথ্য বহন করে এবং আমরা ঐ সব পেজ ইন্টারনেটে কোনো ওয়েবসাইটে দেখতে পাই। কিন্তু বর্তমানে ওয়েব ডিজাইন মানে শুধু একটা সোজা-সাপটা পেজে অনেকগুলো তথ্য দেখানো না। সময়ের সাথে সাথে ওয়েব ডিজাইনে এখন আকর্ষণীয় নকশা আর অনেক জটিল ফাংশন ব্যবহার করা হচ্ছে যা বর্তমানে ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। সুতরাং, আপনি যদি একজন প্রপেশনাল ডিজাইনার হতে চান, তবে ওয়েব ডিজাইনের লেটেস্ট ট্রেন্ড সম্পর্কে আপনার কিছু না কিছু ধারণা থাকতে হবে।
ওয়েব ডিজাইনে নতুন নতুন টেকনোলজি যুক্ত হচ্ছে, আর এর জন্য হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ট্রেন্ড আসে, ট্রেন্ড যায়, পুরাতন পদ্ধতি যখন বিলিন হয়, তখন নতুন ট্রেন্ড এসে রাজত্ব করে। তাই ওয়েব ডিজাইনার হিসেবে আপনাকে অবশ্যই ওয়েব ডিজাইনের লেটেস্ট ট্রেন্ড নিয়ে অবগত থাকতে হবেG কেননা ক্লাইন্ট আপনার কাছে লেটেস্ট কিছু চেয়ে বসতে পারে।
ওয়েব ডিজাইনের লেটেস্ট ট্রেন্ড
একজন ওয়েব ডিজাইনার হিসেবে আপনাকে অবশ্যই লেটেস্ট ট্রেন্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে। উদাহরণস্বরুপ, আপনি কখনই সোস্যাল মিডিয়া বাটন বাদ দিতে পারবেন না। বর্তমান সোস্যাল মিডিয়ার যুগে আপনার ওয়েব পেজ সোস্যাল মিডিয়া বাটন ছাড়া নিশ্চয়ই কল্পনা করা যায় না।
অন্যদিকে আপনি বাদ দিতে পারেন না রেস্পোনসিভ ওয়েব পেজ। আপনাকে এমনভাবে ওয়েব পেজ ডিজাইন করতে হবে যেনো মোবাইল, ট্যাব সবখানে আপনার ওয়েবসাইট ভালোভাবে দেখা যায়।
প্রকৃতপক্ষে ওয়েব ট্রেন্ড বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। তাই আজকে ওয়েব ডিজাইনের লেটেস্ট কিছু ট্রেন্ড নিয়ে আপনাদের বললাম। শুধু এইগুলোই না, এর বাইরেও আরো অনেক আছে। প্রত্যেক ট্রেন্ডই গুরুত্বপূর্ণ এবং এটা নির্ভর করে আপনি কি ধরণের ওয়েব পেজ ডিজাইন করছেন।
১। ওয়েবসাইটের ব্যাকগ্রাউন্ড ছবি যুক্ত করুন
আপনার ওয়েব পেজের ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে আপনি ইমেজ বা ছবি ব্যবহার করতে পারেন। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড ব্যবহার করলে ইউজারের আকর্ষণ বাড়ে। অনেক আগে থেকেই এই ট্রেন্ড চললেও এখনো এর চাহিদা অনেক। তবে মনে রাখতে হবে যে ছবি ব্যবহার করবেন সেটা যেন ভালো কোয়ালিটির ছবি হয় এবং আপনার ওয়েবসাইটের কন্টেন্টকে প্রেজেন্ট করে।
২। সোস্যাল মিডিয়া বাটন যুক্ত করুন
আগেই যেমন বলেছি, সোস্যাল মিডিয়া বাটন কখনই বাদ দেওয়া যাবে না। ওয়েব ডিজাইনের লেটেস্ট ট্রেন্ড হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়া বাটন যোগ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষজন এখন সব কিছুই সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে। তাই আপনার ওয়েবসাইটের ইউজার বাড়াতে এটা অনেকটা সহায়ক। তাই কখনই সোস্যাল মিডিয়া বাটন বাদ দেওয়া যাবে না, বিশেষ করে যেগুলো মানুষ এখন বেশি ব্যবহার করছে।
বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন মিডিয়াতে বেশি থাকে। তাই যতগুলো সম্ভব যোগ করতে হবে, যাতে মানুষ তাদের প্রিয় ওয়েবসাইটের জিনিসগুলো চাইলেই শেয়ার করতে পারে। আর এই বাটন ব্যবহার করার জন্য বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া আইকন আছে। আর এটা নির্ভর করে ডিজাইনার কতো সুন্দর করে সেগুলো ফুটিয়ে তুলতে পারে।
৩। এক পেজের ওয়েবসাইট তৈরি করুন
এই ট্রেন্ডটি শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত প্রোফাইলের ওয়েবসাইটের জন্য উপযুক্ত। এটা দেখতে অনেকটা ডিজিটাল বিজনেস কার্ডের মতো যেখানে একজন নিজের প্রয়োজনীয় তথ্য, যোগাযোগের তথ্যসহ অনেক কিছু রাখতে পারে। এই জন্য অনেক বড় ওয়েবসাইট তৈরী করার কোনো দরকার হয় না।
এক পেজের বানালে ওয়েবসাইটটি ছোট হবে এবং সব তথ্য মার্জিতভাবে প্রেজেন্ট করা যাবে। তাহলে আজই তৈরী করে ফেলুন এক পেজের ওয়েবসাইট যদি আপনি আপনার ব্যাক্তিগত প্রোফাইল ওয়েবে রাখতে চান।
৪। রেসপনসিভ ওয়েব পেজ ডিজাইন করুন
একটা ওয়েব পেজ ডিজাইন করার সময় অবশ্যই মনে রাখতে হবে ওয়েবসাইটটি যেনো প্রত্যেক ডিভাইসের সামঞ্জস্য রক্ষা করে। বর্তমান স্মার্টফোন আর ট্যাবের যুগে আপনার ওয়েবসাইট যেন প্রত্যেক ডিভাইসের স্ক্রিনে দেখা যায়, সেটা হোক ছোট কিংবা বড়ো স্ক্রিনের ডিভাইস। ওয়েব ডিজাইনের লেটেস্ট ট্রেন্ড এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে হলে আপনাকে অবশ্যই রেসপনসিভ ওয়েব পেজ বানাতে হবে।
৫। এইচটিএমএল৫ এবং সিএসএস৩
যদিও অনেক ওয়েব ডিজাইনার ফ্ল্যাশ ব্যবহার করে আজকাল। কিন্তু এইচটিএলএল৫ আসার পর এটাকেই অনেকে ব্যবহার করছে। মোবাইল ডিভাইসের জন্য রেস্পোনসিভ ওয়েব পেজ ডিজাইনের সকল উপাদান এইচটিএলএল৫ এ আছে। সেই সাথে ডিজাইনারদের তারাতারি ডিজাইন ডেলিভারি করে। সিএসএস৩ আরেকটি ট্রেন্ড যা ওয়েব ডিজাইনারদের কাজ আরো সুন্দর করার সুযোগ করে দিয়েছে।
৬। হাত দিয়ে ডিজাইন এঁকে নিন
এটা আরেকটা ট্রেন্ড যা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে দেখা যায়। ওয়েব ডিজাইন করার আগে নিজেই এঁকে ফেলুন আপনার ডিজাইন। এতে সুবিধা হবে আপনার ডিজাইন তাড়াতাড়ি শেষ করার, আর আপনার ওয়েবসাইট হবে ইউনিক আর ট্রেন্ডি।
৭। অ্যানিমেশন এবং 3D
আপনার ওয়েবসাইটের গভীরতাকে প্রকাশ জন্যে অ্যানিমেশন হতে পারে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস। এটা একটু আপনার কাছে কঠিন মনে হলেও, একবার করতে পারলে আপনিও বুঝতে পারবেন আপনার ওয়েবসাইটটি হয়েছে ইউনিক এবং আলাদা। ইউজার আপনার ওয়েবসাইট গ্রহণ করবে আউট অফ দি বক্স হিসেবে এবং আপনার এমন জিনিস থাকবে যা অন্য কোনো ওয়েবসাইটে নেই।
৮। টাইপোগ্রাফি
ওয়েব ডিজাইনে টাইপোগ্রাফির ব্যবহার একটা লেটেস্ট না হলেও, এর ব্যবহার আপনার ওয়েবসাইটকে সুন্দর করার জন্য আবশ্যই দরকার। টাইপোগ্রাফি বলতে আপনার ওয়েবসাইটের টেক্টগুলোকে সুন্দরভাবে প্রেজেন্ট করা। টাইপোগ্রাফি ব্যবহার করে আপনার ওয়েবসাইটে চমৎকার প্রভাব ফেলতে পারেন গ্রাফিক্স ব্যবহার না করেই।
শুধু এগুলোই নয়, ওয়েব ডিজাইনের লেটেস্ট ট্রেন্ড হিসেবে আরো অনেক ট্রিকস্ আর টেকনিক চলছে। সময়ের সাথে সাথে মানুষের চিন্তা-ভাবনা যেমন বদলায়, ঠিক তেমনি টেকনোলজির ক্ষেত্রেও মানুষের চাহিদা আর চিন্তা-ভাবনা বদলে যাচ্ছে দিন দিন। ওয়েব ডিজাইনার হিসাবে আমাদের উচিত ডিজাইন টেকনোলজির নতুন নতুন সব জিনিস আর ট্রেন্ড সম্পর্কে অবগত থাকা।
কখন কোন জিনিসের চাহিদা মার্কেটে বেশি আমরা যদি না জানি তাহলে আমরা অনেক পিছিয়ে যাবো। একজন ভালো ডিজাইনার হতে হলে সবার আগে আপনাকে জানতে হবে এখন কি চলছে, কোনটার চাহিদা বেশি। ওয়েব ডিজাইনে নিজেকে আপডেট রাখুন সব সময়।
Leave a Reply