ওয়েবসাইট ফ্লিপিং থেকে আয় করার জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে। কৌশল ছাড়া শুধু ওয়েবসাইট তৈরি করে রেখে দিলে কোন আয় বা লাভ হবে না বরং ক্ষতি হবে। অনেকে ওয়েবসাইট তৈরি করে কিন্তু সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে ওয়েবসাইট থেকে কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়। এই ব্যর্থতা তাকে হতাশায় নিমজ্জিত করে।
ইতিমধ্যে আপনারা অনেকেই জেনেছেন যে ওয়েবসাইট ফ্লিপিং কি আর এর থেকে কেমন আয় করা যায়। যারা এই অনলাইন ব্যবসাটি করার জন্যে উৎসাহিত হয়েছেন, তাদের অবশ্যই কিছু বিষয় সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা থাকা দরকার। আজকের লেখায় ওয়েবসাইট ফ্লিপিং থেকে কিভাবে আয় করবেন কিংবা আয় করার জন্যে কি কি কৌশল অবলম্বন করবেন তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
ওয়েবসাইট ফ্লিপিং থেকে আয়
ওয়েবসাইট ফ্লিপিং হতে পারে এখনকার সময়ের অন্যতম স্মার্ট অনলাইন বিজনেস। তাই, এই বিজনেসে সফল হওয়ার জন্যে যেসব বিষয় জানা দরকার বা যে সকল কৌশল অবলম্বণ করা দরকার সেগুলো নিয়ে নিচে আলোচনা করা হল।
১. উপযুক্ত ওয়েবসাইট নির্বাচন
উপযুক্ত ওয়েবসাইট নির্বাচন বলতে মূলত আপনি কি ধরণের ওয়েবসাইট নিয়ে কাজ করতে চাচ্ছেন তা বোঝাচ্ছে। আপনি বিভিন্ন বিষয়ের উপর ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে বুদ্ধিমানের কাজ হবে প্রথম দিকে মার্কেট রিসার্চ করা এবং রিসার্চ করে নেয়া যে বর্তমানে কোন ধরণের ওয়েবসাইটের চাহিদা বেশী। আমি বর্তমানে জনপ্রিয় কিছু ওয়েবসাইটের টাইপ দিচ্ছি:
- ই-কর্মাস
- ব্লগ
- নিউজ
- ম্যাগাজিন
- বিজনেস ওয়েবসাইট
- রিভিউ সাইট
- চাকুরীর ওয়েবসাইট
- অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সাইট
- শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট
- টিভি বা ভিডিও স্ট্রিমিং
উপরে উল্লেখিত বিভাগ কিংবা আপনি যেটা নিয়ে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন সেই বিষয়ের উপর কাজ করতে পারেন।
২. ডোমেইন এবং হোস্টিং
আপনি যদি একদম স্কেচ থেকে শুরু করতে চান অর্থাৎ নিজের ডোমেইন এবং হোস্টিং কিনে ওয়েবসাইট বানাতে চান, তবে এই ধাপটি আপনার জন্য বেশী গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক ডোমেইন নেম নির্বাচন করাটা বেশ জরুরি। যেমন আপনি একটি ব্লগ সাইট নিয়ে কাজ করতে চাচ্ছেন, কিন্তু ডোমেইন নেম হিসাবে abulmia.org নির্বাচন করলেন। অথচ .org সাধারণ সংগঠনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। আর নাম ব্যবহার করা হয় ব্যক্তিগত কিংবা পোর্টফলিও ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে। এছাড়া সঠিক ডোমেইন নেম এসইও এর ক্ষেত্রেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
এবার যারা হোস্টিং নিবেন তাদেরকেও অনেকগুলো বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। নিচে এর তালিকা দেয়া হল:
- প্রথমবারের ক্রয় মূল্য এবং পরবর্তীতে রিনিউ খরচ কেমন?
- ডিস্ক স্পেস কেমন? যেমন আপনি ডাউনলোড বা কোন বড় ফাইলের ওয়েবসাইট তৈরি করতে চাইলে অনেক বেশী ডিস্ক স্পেস লাগবে।
- ব্যান্ডউইথ আনলিমিটেড কিনা?
- ওয়েব হোস্টিং কন্ট্রোল প্যানেলের সম্পূর্ণ অধিকার আপনার হাতে থাকবে কিনা?
- তাদের কাস্টমার সার্পোট কেমন?
উপরে উল্লেখিত কাজ গুলো নতুন ডোমেইন এবং হোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এছাড়া আপনি যদি তৈরি করা ওয়েবসাইট ক্রয় করতে চান, তবে অবশ্যই দেখে নিবেন তারা আপনাকে ডোমেইন এবং হোস্টিংয়ের পূর্ণ অধিকার দিচ্ছে কিনা।
৩. ওয়েবসাইট থিম নির্বাচন
নতুন ওয়েবসাইট তৈরি করতে গেলে এই দিকটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সময়ে ওর্য়াডপ্রেস অনেক জনপ্রিয় মাধ্যম। অধিকাংশ ক্লাইন্ট ওর্য়াডপ্রেস দিয়ে তৈরি ওয়েবসাইট তৈরি করতে বেশী আগ্রহী হয়ে থাকে। সবচেয়ে বড় কথা ওর্য়াডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করা অনেক বেশী সহজ।
তবে আপনি চাইলে নিজস্ব থিম দিয়েও ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন। এটা যেমন ব্যয়বহুল কাজ তেমনি এর আয়ের পরিমাণও অনেক বেশী। যদিও মাত্র ৫ মিনিটে ওয়ার্ডপ্রেসে ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়, তবু ওয়েবসাইট ফ্লিপিং ব্যবসার জন্যে আপনার উচিৎ হবে সম্পূর্ণ প্রপেশনাল হওয়া। অর্থাৎ, ডোমেইন, হোস্টিং এবং থিম কিনে ওয়েবসাইট তৈরি করা।
আর আপনি যদি ওয়েবসাইট তৈরি আর সেটিকে র্যাংকিংয়ে আনার ঝামেলায় না গিয়ে পুরাতন ওয়েবসাইট ক্রয় করতে চান, সেক্ষেত্রেও ওয়েবসাইট থিম দেখে নিবেন। ভাল ডিজাইনের ওয়েবসাইটের চাহিদা সবসময় বেশী থাকে।
৪. আকর্ষণীয় কন্টেন্ট
ওয়েবসাইট শুধু ডিজাইন করে রাখলে হবে না এর মধ্যে অবশ্যই ভাল মানের এবং আকর্ষণীয় কন্টেন্ট এবং তথ্য থাকতে হবে। অন্যথায় এটা যেমন এসইও ফ্রেন্ডলি হবে না, তেমনি বাজারে চাহিদাও থাকবে না।
৫. এসইও
এসইও ছাড়া ওয়েবসাইট ফ্লিপিং কল্পনা করা যায় না। অনপেজ এসইও এবং অফপেজ এসইও দুটোই ফ্লিপিং করার উদ্দেশ্যে তৈরি ওয়েবসাইটের প্রাণ হিসাবে কাজ করে। আপনার ওয়েবসাইটের ব্যাক-লিংক বৃদ্ধি করতে হবে, ফ্লিপিং করুন আর না করুন, যে কোন ওয়েবসাইটের এসইও যত ভাল হবে ট্রাফিক বা ভিজিটর তত বৃদ্ধি হবে।
ওয়েবসাইটের এসইও যত বেশী শক্তিশালী হবে আপনি ওয়েবসাইট থেকে তত বেশী আয় করতে পারবেন। এমনকি ওয়েবসাইট যদি আপনি বিক্রি নাও করেন। এই সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
৬. স্যোশাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকা
স্যোশাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকা বলতে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারা কিংবা গল্প গুজব করার জন্য নয়। বরং স্যোশাল মিডিয়াকে আপনার ওয়েবসাইটের মার্কেটিং করার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করার জন্য সর্বদা সক্রিয় থাকার কথা বলা হচ্ছে। বিভিন্ন গ্রুপগুলোতে নজর রাখা প্রয়োজন, নিজের একটা পেজ খুলে নেয়া প্রয়োজন। ক্লায়েন্ট খোঁজ করা ইত্যাদি কাজ স্যোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে করা সম্ভব।
৭. গুগল অ্যাডসেন্স যুক্ত করা
গুগল অ্যাডসেন্স থেকে প্রতিমাসে কয়েক লক্ষ টাকাও আয় করা সম্ভব। যদিও সেটা আপনার ওয়েবসাইটের ভিজিটরের উপর নির্ভর করে। আর এই কারণে পূর্বে এসইওর কথা বলা হয়েছে।
গুগল অ্যাডসেন্স কিংবা লোকাল কোন বিজ্ঞাপন আপনার ওয়েবসাইটে দিয়ে আপনি প্রতিমাসে অনেক টাকা আয় করতে পারেন।
৮. ওয়েবসাইট বিক্রি
যেহেতু ওয়েবসাইট ফ্লিপিংয়ের চূড়ান্ত লক্ষ্য ওয়েবসাইট বিক্রি। তাই আপনার কাঙ্ক্ষিত ওয়েবসাইট বিক্রি করতে হলে বেশ কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে। নিচে দ্রুত ওয়েবসাইট বিক্রির কিছু টিপস এবং ট্রিকস দেয়া হল:
- ওয়েবসাইট সম্পর্কে বেশী বেশী তথ্য প্রদান করা।
- লেনদেন এবং কথাবার্তায় স্বচ্ছতা অবলম্বন করা।
- বেশী বেশী ওয়েবসাইট প্রচার করা।
- ইমেইল মার্কেটিংয়ে গুরুত্ব প্রদান করা।
- ওয়েবসাইটের মূল্য খুব বেশী কিংবা খুব কম না দেয়া। কেননা প্রত্যেকেই চাইবে দামাদামি করে ওয়েবসাইট ক্রয় করতে তাই দামাদামি করার সুযোগ রাখা।
ওয়েবসাইট বিক্রি করার জন্য অনলাইনে অনেক মার্কেপ্লেস রয়েছে। সেসমস্ত মার্কেটপ্লেস নিয়ে ইতোমধ্যে হৈচৈ বাংলাতে ওয়েবসাইট ফ্লিপিং ব্যবসা করার জন্যে সেরা ৫টি মার্কেটপ্লেস আলোচনা করা হয়েছে তাই প্রয়োজনে এই লেকাটি পড়ে নিতে পারেন।
শেষ কথা
এই ছিল আজকে ওয়েবসাইট ফ্লিপিং থেকে আয় করার কিছু টিপস এবং ট্রিকস। আসলে পৃথিবীর প্রতিটি কাজ কঠিন কাজ, তবে সব কঠিন কাজ থেকে খুব বেশী টাকা আয় করা যায় না। মজার ব্যাপার হচ্ছে ওয়েবসাইট ফ্লিপিং কাজটা আপনার নিকট কঠিন মনে হতে পারে কিন্তু ওয়েবসাইট ফ্লিপিং থেকে আয়ের পরিমাণ অনেক বেশী।
Leave a Reply