ব্যায়াম কিংবা ডায়েট কন্ট্রোল ছাড়া ওজন কমানোর উপায় খুঁজতে খুঁজতে যদি এখানে এসে পড়েন, তবে আপনি ঠিক জায়গাতেই এসেছেন। আপনার জন্যেই ডায়েট ও ওয়েট গবেষকরা বহু গবেষণা করে বের করে এনেছেন এমন কিছু উপায় যা আপনাকে খাবারও খাইয়ে দেবে, আবার ওজনও কমিয়ে ছাড়বে।
উপায়ে যাওয়ার আগে জেনে নিন ডায়েট ও ডায়েট কন্ট্রোল বলতে আসলে কি বোঝায়।
ডায়েট কি?
সাধারণ ভাষায় ডায়েট হচ্ছে মানুষসহ যে কোনও জীবের বিভিন্ন ধরণের খাবারের সমষ্টি। তবে, মেডিকেল সায়েন্সের ভাষায় ডায়েট হলো সুস্বাস্থ্যের জন্যে পুষ্টি গ্রহণের একটা নির্দিষ্ট মাত্রা। আর ওয়েট ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রেই এই শব্দটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
মানুষ যদিও সর্বভুক প্রাণী, অর্থাৎ সব ধরণের খাবারই খেয়ে থাকে, তবু প্রতিটি দেশের সংস্কৃতি এবং প্রতিটি ব্যক্তির নিজস্ব রুচিবোধ অনুযায়ী খাবারের তালিকা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। পছন্দ মতো খাবার গ্রহণ ও বর্জণ অনেকাংশেই ব্যক্তিগত রুচি বা নীতিগত কারণে হতে হয়ে থাকে। তবে, এই পছন্দ অনুযায়ী খাবার গ্রহণটা কারো জন্যে স্বাস্থ্যকর, আবার কারো জন্যে অস্বাস্থ্যকর হয়ে থাকে। যারফলে, পুষ্টির দিক এবং শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় সচেতন মানুষের জন্যে এই ডায়েটের একটা কন্ট্রোল থাকা দরকার।
ডায়েট কন্ট্রোল কি?
ডায়েট কন্ট্রোল হচ্ছে ডায়েটের উপর অর্থাৎ খাবার গ্রহণের উপর কন্ট্রোল। যদিও একজন মানুষ যা খুশি তাই খেতে পারে, কিন্তু শারীরিক অবস্থা এবং পুষ্টিগত দিক বিবেচনা করে খাবারের কন্ট্রোল করতে হয়, যাকে ডায়েট কন্ট্রোল বলে।
একজন সুস্থ্য মানুষ সবকিছু খেতে পারলেও, একজন হৃৎরোগী কিন্তু সব ধরণের খাবার খেতে পারবে না। আবার একজন ক্যান্সার রোগীর খাবারের ক্ষেত্রেও রয়েছে বিধি-নিষেধ। এভাবে, প্রতিটি অসুস্থ্যতার ক্ষেত্রেই ডাক্তারের দিক থেকে রোগীর প্রতি খাবারের ব্যাপারে কিছু দিক নির্দেশণা থাকে, যা মেনে চলতে হয়।
কিন্তু, আমাদের ডায়েট কন্ট্রোলিংটা কোনও রোগীর জন্যে নয়। বরং, এটি তাদের জন্যে, যারা মোটা হয়ে যাচ্ছেন কিংবা মুটিয়ে যাওয়ার আশংকায় আছেন। কারণ, এখন রোগাগ্রস্থ না হলেও ডায়েট কন্ট্রোল না করলে অচিরেই রোগীদের কাতারে পড়ে যেতে হতে পারে। তাই, সময় থাকতেই শরীরের অতিরিক্ত মেদের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। সেক্ষেত্রে, ডায়েট কন্ট্রোল না করেই কিভাবে ওয়েট লস করা যায়, তা-ই আজকের আলোচ্য বিষয়।
ব্যায়াম ও ডায়েট কন্ট্রোল ছাড়াই ওজন কমানোর উপায়
ডায়েট কন্ট্রোল না করলে ওজন বেড়ে যায়। আর ওজন বেড়ে গেলে ডায়াবেটিসসহ নানা রকম রোগ-ব্যাধি দেখা দেয়। তখন ডাক্তাররা হাঁটাহাটি, দৌড়াদৌড়ি এবং নিয়মিত ব্যায়ামের কথা বলে থাকেন যা অনেকের কাজেই বিরক্তিকর লাগে। বিশেষ করে, এটা বেশি দেখা যায় মহিলাদের ক্ষেত্রে। কারণ, যে ১০টি হরমোন ওজন বাড়ানোর জন্যে দায়ী, তার প্রায় সবই আছে মহিলাদের মধ্যে। তাই, ডায়েট কন্ট্রোল ও ব্যায়াম করতে মহিলাদেরই বেশি কষ্ট হয়।
আসলে, মহিলাদের কথা বলে লাভ নেই। পছন্দমতো মজার মজার খাবার খাওয়া বাদ দিতে কার মন চায়! এমন অনেক মানুষই রয়েছেন যারা বিশেষ কিছু পছন্দের খাবার না খেয়ে থাকতেই পারেন না। কিন্তু, ডাক্তার সেগুলো ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন এবং নিজের ওজনের কথা চিন্তা করে সেগুলো ছাড়তেই হচ্ছে। ফলে, মনটা অনেক খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
আপনিও যদি এমনই একজন হয়ে থাকেন, যিনি পছন্দের খাবারও খেতে চান, আবার ওজনও নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তবে নিচের উপায়গুলো অবলম্বণ করা শুরু করুন।
খাবারের ক্ষেত্রে মেনে চলুন ওজন কমানোর কিছু নিয়ম
না খেয়ে তো থাকতে পারবেন না। আবার, অতিরিক্ত খেতেও পারবেন না। কি করবেন? খাবারের বেলায় নিম্নোক্ত কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলুন, ওজন কমবেই।
খাবার ভাল করে চিবিয়ে খান
আলহামদুলিল্লাহ্, “যথেষ্ট্য পরিমাণে খাওয়া হয়েছে”, এই কথার প্রসেস করতে আমাদের ব্রেনের বেশ সময় লাগে, বিশেষ করে খাওয়া চলাকালীণ অবস্থায়। কাজেই, খাবার যখন ভালভাবে চিবানো হয়, তখন একদিকে খাবার খাওয়ার পরিমাণটা অটোমেটিক কমে যায়, অন্যদিকে ব্রেন মেসেজ পায় যে, যথেষ্ট্য।
হজমশক্তি বাড়ানোর ১২টি প্রাকৃতিক উপায় এর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে খাবার অত্যন্ত ভাল করে চিবিয়ে খাওয়া। এটা শুধু হজমের ক্ষেত্রেই নয়, ওজন কমানোর বেলায়ও দারুণ কার্য্যকর। কারণ, খাবার চিবিয়ে খেতে বেশ সময় লাগে, খাওয়ার গতি কমে যায়। এতে করে মনে হয় যে, পেট ভরে গিয়েছে।
আর আপনি যত দ্রুত ব্রেনকে এই মেসেজ দিতে পারবেন যে পেট ভরে গিয়েছে, তত দ্রুতই আপনি অতিরিক্ত খাওয়া থেকে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবেন। কে না জানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার ওজন বাড়ানোর ওস্তাদ। কাজেই, ওজন কমানোর উপায় হিসেবে ভাল করে চিবিয়ে ধীরে ধীরে খাবার খান।
ভিটামিন-ডি যুক্ত খাবার খান
ভিটামিন ডি এর সাথে ওজন বাড়ার সম্পর্কটা খুব সুক্ষ্ণ যা আপনি হয়তো সাধারণভাবে বুঝতে চাইবেন না। কিন্তু, মেডিকেল সায়েন্সের একাধিক রিসার্চ থেকে প্রমাণিত যে, ভিটামিন ডি এর অভাবে ব্লাড লেবেল বেড়ে গিয়ে ওয়েট ইনক্রিজিংয়ের দিকে নিয়ে যায়।
ভিটামিন-ডি এর অভাব মেটাবোলিক সিন্ড্রোম (metabolic syndrome), ডিপ্রেশন ও উদ্বেগ তৈরি হয়। আর এগুলোর প্রায় প্রতিটিই ওজন বাড়ানোতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। সুতরাং, যথেষ্ট্য পরিমাণে ভিটামিন ডি-যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। জেনে নিন যে ১০টি খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি আছে।
প্রোটিনযুক্ত খাবার খান
প্রোটিনযুক্ত খাবারই হচ্ছে সর্বাধিক স্বাস্থ্যকর খাবার। পর্যাপ্ত প্রোটিন আমাদের শারিরীক ও মানসিক বিকাশে ভূমিকা রাখে। সেই সাথে, হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি শরীরকে প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দেয়। শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন থাকলে আমাদের ক্ষুধা লাগে দেরীতে। কাজেই, কম খাওয়া হয়। প্রোটিনের জন্যে প্রয়োজন প্রোটিনযুক্ত খাবার।
উচ্চ মাত্রার প্রোটিনযুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে-
- ডিম
- কাজু বাদাম
- মুরগির শিনা
- কটেজ চিজ
- টক দই
- দুধ ও
- সামুদ্রিক মাছ।
শুধু প্রোটিন সরবরাহই নয়, সামুদ্রিক মাছের ১৭ প্রকার উপকারিতা রয়েছে।
ফাইবারযুক্ত খাবার খান
অন্যান্য অনেক খাবার থেকে ফাইবারযুক্ত খাবার একটি ব্যতিক্রম। কারণ, আমাদের শরীর এটাকে ছোট পরিসরে হজম করে না। বরং, ফাইবারযুক্ত খাবার বড় পরিসরে কাজ করে, ঠিক যেখানে আমাদের খাবার গিয়ে জমা হয়। অর্থাৎ, পাকস্থলীতে খাবার যাওয়ার পর সেটাকে প্রসেস করা ও ধীরে সুস্থে হজম হতে সাহায্য করার ক্ষেত্রে ফাইবারের ভূমিকা পর্যাপ্ত।
ফাইবারযুক্ত খাবারের তালিকায় রয়েছে-
- সিম ও সিমের বিচি
- ব্রোকোলি
- কালো জাম
- অ্যাভোকাডো
- আপেল
- পপকর্ণ
- আলু ও
- বাদাম।
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন
যথেষ্ট্য পরিমাণে পানি খেলে খাবার খাওয়ার পরিমাণটা অটোমেটিক কমে যায়। ফলে, ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। বিশেষ করে, যদি খাবার খাওয়ার আগে পানি পান করা হয়।
এক গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, একটানা ১২ সপ্তাহ ধরে খাবারের আগে পানি পান করার অভ্যাশ ৪৪% ওয়েট কমিয়ে থাকে। আপনি যদি পানির সঙ্গে খাবার সোডা কিংবা কোনও ফলের জুস খেতে পারেন, তবে এটি আরো বেশি ইফেক্টিভ হবে।
গ্রীণ টি গ্রহণ করুন
সাধারণ চায়ের পরিবর্তে যদি নিয়মিত গ্রীণ টি পান করতে পারেন, তবে আপনি অনেকখানিই ওজন কমিয়ে একটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। গ্রীণ টি গ্রহণ ওজন কমানোর জন্যে দারুণ একটি স্ট্র্যাটিজি হিসেবে বহু মানুষের কাছে জনপ্রিয়।
গ্রীণ টি-তে ক্যাটেচিন (catechins) নামক এক ধরণের ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে যার ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে ওজন কমে থাকে।
যা খাবেন, বাসায় খান
চেষ্টা করুন, যা কিছু খাবেন, সবকিছুই যেন হোম-মেড হয়। অর্থাৎ, বাইরের খাবার অ্যাভয়েড করতে হবে, যদি ওজন কমাতে চান। কেননা, বাইরের খাবার, বিশেষ করে ফাস্টফুড জাতীয় খাবার সবসময়ই ফ্যাটি হয়ে থাকে যা ওয়েট বাড়িয়ে থাকে। যদি ওয়েট কমাতে চান, তবে কষ্ট করে ন্যাচারাল খাবার ও বাড়ির খাবার খান। এটি আপনার জন্যে ওজন কমানোর উপায় হিসেবে ভাল হবে।
এটি সত্যি যে, প্রতিদিন বাসায় রান্না করা অনেকের কাছেই বিরক্তিকর লাগে। কিন্তু, ভেবে দেখুন এই বিরক্তির চেয়ে ওজন বেড়ে যাওয়া আরো বেশি বিরক্তিকর। একান্তই যদি না পারেন, তবে সপ্তাহে একবেলা বাইরে খেতে পারেন।
মিষ্টি জাতীয় খাবার কম খান
মিষ্টি খেতে মজা লাগবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, সেই মজা যদি সাজা দিয়ে বসে, তখন কি হবে! হ্যাঁ, চিনি খাওয়ার মজা মারাত্মক ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে আপনার সুস্বাস্থ্যের জন্যে। কেননা, এটি ওজন বাড়ায়, এটা কাউকে বলতে হয় না।
সেসব খাবার খান, যেসব খাবার ওজন কমায়
ওজন বাড়ানো ঠেকাতে ডায়েট কন্ট্রোল করা বা পরিমিত খাবার গ্রহণ অপরিহার্য্য হলেও এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো ওজন বাড়ানো তো দূরের কথা বরং ওজন কমিয়ে থাকে। আসুন, যাদুকরি সেই খাবারগুলো সম্পর্কে জানা যাক-
ওজন কমাতে দারুচিনি দারুণ কার্য্যকর
বিশ্বাস করুন বা না করুন, দারুচিনিতে আপনার ফ্যাট বার্নিং হার বাড়ানোর যাদুকরি ক্ষমতা রয়েছে। এক টেবিল চামচ দারুচিনি (cinnamon) বিভিন্ন খাবারে যোগ করুন, এটা খাবারে খুব ভাল স্বাদ দেবে, সেই সাথে ফ্যাট বার্ন করে ওজন কমিয়ে দেবে। খাবার সুবিধার্থে কিংবা অভ্যাশ তৈরিতে, যে কোনও গরম পানীয় পান করার সময় ১ টেবিল চামচ দারুচিনি যোগ করতে পারেন।
এছাড়া, আরেকটি কাজ করতে পারেন। দিনে দু’বার দারুচিনি ও মধু পান করতে পারেন। এক কাপ পানিতে কেবল এক টেবিল চামচ মধু এবং আধা টেবিল চামচ দারুচিনি মিশিয়ে দিয়ে ভাল করে নাড়ুন, তারপরে এগুলি একটি সসপ্যানে রাখুন এবং না ফোঁটা পর্যন্ত আগুনের তাপে রেখে দিন। আর প্রতিদিন সকালে প্রাতঃরাশের আগে প্রথম কাপ এবং বিছানায় যাওয়ার আগে দ্বিতীয় কাপ খেয়ে নিন।
সতর্কতা: দারুচিনির উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই আছে। তবে, অপকারিতার বিষয়টি নির্ভর করছে অতিমাত্রায় খাওয়ার উপর। অতিমাত্রায় দারুচিনি খেলে লিভার ড্যামেজ হতে পারে, ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে, ব্লাড সুগার কমে যাওয়ার সম্ভাবণাসহ আরো কিছু সমস্যা তৈরি হতে পারে।
জই যারপরনাই ওজন কমায়
জই ডায়েট ছাড়াই ওজন হ্রাস করার জন্য আদর্শ খাদ্য। জই খেলে তাৎক্ষণিকভাবে এটি আমাদের তৃপ্তি প্রদান করে এবং দীর্ঘক্ষণ আমরা না খেয়েও কাটিয়ে দিতে পারি। এটি এমনকিছু প্রাকৃতিক উপাদান সমৃদ্ধ খাবার যা দেহ এবং হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। এমনকি, পুরোটা দিন আপনি যাতে নিজের কাজ সঠিকভাবে চালিয়ে যেতে পারেন সেজন্য জই আপনাকে শক্তি দিয়ে থাকে ।
তাই, সকালের নাস্তার সাথে জই খাওয়া ডায়েট ছাড়াই ওজন হ্রাস করার দুর্দান্ত উপায়। জই এর সাথে আপনার পছন্দ অনুযায়ী কিছু বাদাম এবং ফল যুক্ত করুন সকালের নাস্তার সময়।
সতর্কতা: জই যদিও প্রায় সকল মানুষের জন্যেই নিরাপদ, তবে সন্তান সম্ভবা নারীদের জন্যে অতিরিক্ত মাত্রায় জই খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে বলে জানিয়েছেন খাদ্য বিশারদরা। প্র্যাগন্যান্ট ও ব্রেস্ট ফিডিং মহিলাদের অতিরিক্ত জই খাওয়া গ্যাস জমা ও বমি হওয়ার সম্ভাবণা তৈরি করে থাকে।
ওজন কমাতে কমলার জুস যুৎসই ফল
কমলার রস আমাদেরকে শুধু তৃপ্তিই দেয় না, সেই সাথে দেহের চর্বি পুড়িয়ে ওজন কমিয়ে রাখে। শুধু তাই নয়, যেসব খাবার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, সেগুলোর মাঝে এক নাম্বারেই রয়েছে লেবু জাতীয় ফল, কমলা।
কমলায় ক্যালোরির পরিমাণ খুবই সামান্য। আবার, এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি ও ফাইবার। অতএব, প্রতিদিনের মৌলিক খাবার খাওয়ার সময় চিনি ছাড়া কমলার রস খাওয়া উচিত।
সতর্কতা: কমলায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকায়, কিডনী সমস্যায় ভোগা রোগীদের ক্ষেত্রে ডাক্তাররা এটি অ্যাভয়েড করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে, পরিমিত মাত্রায় খেলে কিডনির উপর এটি বড় ধরণের কোনও প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছেন পুষ্টি বিশারদরা।
আদা চা চর্বি পুড়িয়ে ওজন কমায়
আদা চা ওজন হ্রাস করতে ব্যবহৃত হয়। কারণ, এর মধ্যে ক্যালোরি বার্ন করার উপাদান বিদ্যমান এবং এই উপাদানগুলো ক্যালরী বার্ণ করার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। তাছাড়া, আদা চা দেহের রক্ত সঞ্চালনকে উদ্দীপিত করার পাশাপাশি টক্সিন জাতীয় উপকরণ থেকে এটি শরীরকে পরিশুদ্ধ করে।
অন্যদিকে, আদা চা ক্ষুধা কমাতে সহায়তা করে। এটি ডায়েট ছাড়াই স্লিমিংয়ের জন্য আদর্শ একটি উপাদান। আদর্শ স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাবারের জন্য আপনারা আদা চা এর সাথে দারুচিনি মিশিয়ে খেতে পারেন। ওজন কমানোর উপায় বলতে গেলে, এটি আসবেই।
সতর্কতা: আদতে আদাতে উপকার বৈ তেমন কোনও অপকারই নেই। কিন্তু, অতি মাত্রায় আদা খাওয়া, বিশেষত Raw আদা হার্ট বার্ন সৃষ্টি করতে পারে। পেটের পীড়া, এমনকি ডায়রিয়াও হতে পারে। আর গর্ভবতী মহিলারা যদি অতি মাত্রায় আদা খায়, তবে ব্লিডিং হওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারে। সুতরাং, ডেলিভারির বেশ কিছু দিন আগে থেকেই আদা খাওয়া বন্ধ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
সম্ভবপর ওজন কমায় সবুজ সালাদ
খাবারের সঙ্গে কিংবা আলাদাভাবেই সালাদ খাওয়া সবারই খুব পছন্দের। কিন্তু, এই পছন্দের খাবারটিই যে আপনার অযাচিত ওজন কমিয়ে আপনাকে স্লিম করে তুলতে পারে তা কি আপনি জানেন! হুম, ডায়েট ছাড়াই ওজন কমানোর জন্যে নিয়মিত সালাদ খাওয়া একটি দারুণ কৌশল হতে পারে।
আপনি যদি সকাল, দুপুর ও রাতের মূল খাবার গ্রহণের মাঝামাঝি সময় খুব ক্ষুধার্ত বোধ করেন, তবে আপনার এমন খাবার খাওয়ার দরকার নেই যা আপনার ওজন বাড়ায়। বরং, এ সময় আপনি সবুজ সালাদ খেতে পারেন।
সতর্কতা: সালাদের সাথে লবণ যোগ করবেন না। চেষ্টা করুন লবণ ছাড়াই সালাদ খাওয়ার অভ্যেশ করতে। কারণ, লবণ মানব শরীরে পানি সঞ্চয় করে দেহের ওজন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
সেসব নিয়ম মেনে চলুন, যেসব নিয়ম ওজন কমায়
অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন, অর্থাৎ নিয়ম না মেনে চলা আপনার ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে বেশি দায়ী। কাজেই, সুস্থ্য ও স্লিম থাকার জন্যে আপনার দৈনন্দিন জীবন পদ্ধতিকে নিম্নোক্ত নিয়মগুলোর আওতায় নিয়ে আসুন।
রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমান
ঘুমের সময় আমাদের দেহ ক্যালোরি বার্ন হয়। যার অর্থ পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম আমাদের ওজন হ্রাসে ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন আট ঘন্টা ঘুমানো ক্ষুধা বোধের জন্য দায়ী হরমোনের নিঃসরণকে হ্রাস করে। যার অর্থ আপনি কম পরিমাণ ক্ষুধা অনুভব করবেন এবং কম খাবার খাবেন।
অপর্যাপ্ত ঘুম অস্বাস্থ্যকর, অর্থাৎ আপনার স্বাস্থ্যকে ওজন বাড়ানোসহ আরো কিছু জটিলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। প্রয়োজনের কম ঘুম হলে শরীরের কিছু হরমোনাল ইমব্যালান্স তৈরি হয়, যা ওজন বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং, প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর চেষ্টা করুন এবং আপনার শরীরকে যথেষ্ট্য পরিমাণ ঘুমোনোর অবসর দিন।
মানসিক চাপ কমান
অতিরিক্ত স্ট্রেস বা মানসিক চাপ মারাত্মক ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। মানুষ বেশি চাপে পড়লে তার শরীরে কিছু হরমোনাল ইমব্যালান্স সৃষ্টি হয় যা তাকে মুটিয়ে তোলে।
বিশেষ করে, কেউ যখন অত্যাধিক মানসিক চাপে থাকে, তখন তার শরীরে গ্লুকোকোর্টিকয়েড নামক একটা হরমোন তৈরি হয়। আর এই হরমোনটি তার ক্ষুধা বাড়িয়ে দেয় বিপুল পরিমাণে যা তাকে নিয়ন্ত্রিত ওজনের বাইরে নিয়ে যায়।
সুতরাং, জেনে নিন মারাত্মক মানসিক চাপে পড়লে কি করবেন।
টিভির সামনে খাবার খাবেন না
অধিকাংশ মানুষেরই অভ্যাশ টিভি ছেড়ে দিয়ে খাবার খেতে বসা। অর্থাৎ, টিভি দেখতে দেখতে খাবার খাওয়া কিংবা খাবার খেতে খেতে টিভি দেখা। এটাকে আপনি হয়তো একটা সাধারণ বিষয় ভাবতে পারেন। কিন্তু, এর প্রভাবটি খুব বড়।
আমি আপনাকে বলব যে টিভি, ল্যাপটপ, এমনকি মোবাইলের সামনে বসে খেলে আপনি খাওয়ার পরিমাণের দিকে সঠিকভাবে মনোযোগ দিতে পারেন না।
লাল প্লেটে খাবার খাবেন
এটি হাস্যকর ও মজার হলেও সত্যি বেশ কাজের। কারণ, এটার সঙ্গে আপনার ব্রেনের সাইকোলোজি জড়িত। লাল বা রেড কালারকে আমাদের ব্রেন একটা সতর্কতামূলক সিগন্যাল হিসেবেই নিয়ে থাকে। তাই, একটা লাল প্লেট কিনুন এবং সেই প্লেটে খাবার খাওয়ার অভ্যেশ করুন।
না, সব খাবার নয়। শুধু মাত্র অস্বাস্থ্যকর খাবারগুলোই লাল প্লেটে নিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনার ব্রেন আপনাকে ধীরে ধীরে এ ধরণের খাবার থেকে বিরত রাখবে।
সঠিকভাবে শ্বাস নিন
আমরা বেশিরভাগই ভুল উপায়ে শ্বাস নিয়ে থাকি। সুবিন্যস্তভাবে এবং সঠিক পদ্ধতিতে শ্বাস নেওয়া দেহের ওজন হ্রাসে অবদান রাখে। সুতরাং, আমাদের অবশ্যই গভীর এবং সুশৃঙ্খলভাবে শ্বাস নিতে হবে।
শেষ কথা
ডায়েট কন্ট্রোল ও ব্যায়াম ছাড়াই ওজন কমানোর উপায় জানলেন। আশা করি, এগুলো এবার মানবেন। আর ওজন কমিয়ে সবাইকে দেখিয়ে দেবেন। মাঝে মাঝে ডায়েট কন্ট্রোলিং অ্যাপস্ এর মাধ্যমে ফিটনেস গাইড নেবেন। সেই সাথে, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে দীর্ঘ জীবন লাভ করবেন।
Leave a Reply