আমরা যারা অনলাইনে কাজ করি, তাদের অনেকেরই এসইও হাতেখড়ি হয়েছে। অনলাইনে কাজ করেন অথবা কাজের ইচ্ছে পোষেণ অথচ এসইওর নাম শুনেন নি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু যদি আপনি নাই শুনে থাকেন, তো কী আর করা! শুনুন, এসইও এর পূর্ণরূপ হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন; ভাবছেন সেটা আবার কী!
আচ্ছা আপনার হাতে তো নিশ্চই স্মার্টফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ কিংবা ডেস্কটপ রয়েছে! নয়তো এই আর্টিকেল পড়ছেন কীভাবে! তাই না? আপনার যখন কোন তথ্য জানার প্রয়োজন হয়, গান ডাউনলোড করতে চান, অথবা নতুন আসা মুভিটার লিংক খোঁজেন, তখন কী করেন? গুগলে ডুঁ মারেন, তাই তো?
গুগলে সার্চ করার পর বেশকিছু রেজাল্ট দেখায়, একটা সবার উপর, তারপর একটা, তারপর আরেকটা, এভাবে…। সবার উপরের রেজাল্টটা সবার উপর কেন এলো? এটিই হচ্ছে এসইওর তেলেসমাতি।
সোজা কথায়, গুগল কিংবা যে-কোন সার্চ ইঞ্জিনে যে কোন গ্লোবাল কিংবা লোকাল ব্যবসাকে র্যাংকে আনা বা সার্চ রেজাল্টের প্রথম সারিতে নিয়ে আসার জন্য যা যা করা লাগে, সেটাই সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন। আজ আমরা এসইওর ক্ষেত্রে হাতেখড়ি বা শুরু বা এটি আসলে কি তা নিয়ে আলোচনা করবো।
এসইও হাতেখড়ি – কি ও কেন?
এসইও’র প্রয়োজনীয়তা
ফোর্বস এর তথ্য মতে, ২০২০ সালে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের এসইও মার্কেটের সাইজ হচ্ছে ৮০ বিলিওন মার্কিন ডলার!! ভাবা যায়! হিশেবটা সহজ করে দিচ্ছি। আশি টাকা রেট ডলারে বাংলাদেশি টাকার হিশেবে পরিমাণটা দাঁড়ায় ছয় লক্ষ চল্লিশ হাজার কোটি টাকা। আর জেনে অবাক হবেন যে বাংলাদেশের ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের মোট বাজেটই হচ্ছে পাঁচলক্ষ কোটি টাকা। হিশেবটা ধরতে পেরেছেন? শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের এসইও ইন্ডাস্ট্রিটাই গোটা বাংলাদেশের সম্পূর্ণ বাজেটের চেয়ে বড় !! গ্লোবাল এসইও মার্কেটের কথা নাই বা বললাম আর।
স্ট্যাটিসটিকস নিয়ে কথা বলতে গেলে মাথা ঘুরাবে। তাই চলুন, কথা না বাড়িয়ে জেনে আসি এত ডিমান্ডের কারণ কী।
কেন এসইও’র এত কদর
বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল্পগুলো সম্পর্কে একটি কথা নিশ্চয়ই শুনে থাকবেন, তারা অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে বিজ্ঞাপন দেয় না; বরং বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে অনুষ্ঠান দেখায়। তাই না? কিন্তু বিজ্ঞাপনের এই ধারাটা কি খুব কাজের? ধরুণ, আপনি টেলিভিশনের সামনে বসেছেন আর অমনি শুরু হল বিএমডব্লিউর বিজ্ঞাপন। নুন আনতে আমার মত যাদের পান্তা ফুরায়, তারা কি আদৌ কখনো বিএমডব্লিউ কিনবে?
এভাবে দেখা যাচ্ছে বিজ্ঞাপনটা যাদের প্রয়োজন এবং যাদের প্রয়োজন নেই, সবার কাছে পৌঁছাচ্ছে। আর এতে করে বিজ্ঞাপনদাতাদের কোটি কোটি টাকার অপচয় হচ্ছে।
কিন্তু এসইওতে কী হয়? আপনি যখন নির্দিষ্ট একটি পণ্য বা সেবা খুঁজছেন, তখনই আপনি যেচে গিয়ে সেটা সার্চ করেন। যে রেজাল্টগুলো শো হয়, তার মধ্য থেকে কোন একটাতে ঢু মারেন। এক্ষেত্রে পার্থক্যটা লক্ষ্য করুন- সাধারণ বিজ্ঞাপনগুলো সম্ভাব্য ক্রেতা-অক্রেতা সবার সামনে যাচ্ছে এবং সেটা কোম্পানি যেচে পড়ে আপনাকে দেখতে বাধ্য করছে। পক্ষান্তরে এসইও’তে আপনি নিজে যাচ্ছেন খুঁজতে এবং যারা খোঁজ লাগায়, তাদের অনেক বড় একটা অংশ সম্ভাব্য ক্রেতা।
এসইওর ভাষায় এই বিষয়টাকে বলা হয় কনভার্সন রেট। যখন আমরা আরো বিস্তারিত জানব, তখন এই বিষয়গুলা নিয়ে কথা হবে। আজকে শুধু এতটুকু জেনে নেই যে এসইও’র মাধ্যমে কোম্পানিগুলো বৃহৎ পরিসরে ক্রেতাদের নিকট পৌঁছতে পারে। তাই, এর এত ডিমান্ড।
শিখবেন নাকি এসইও?
বর্তমান গ্লোবালাইজেশনের যুগে কেউ পিছিয়ে থাকতে চায় না। সবাই চায় বাড়তি কিছু। আপনি যদি ভেবে থাকেন, ঘরে বসে যদি একটু উপরি আয় হয় তো মন্দ কি! তবে, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন শেখাটা হতে পারে আপনার পছন্দ তালিকার অন্যতম একটি আয়ের উৎস। অনলাইন-অফলাইনে প্রচুর আইটি প্রতিষ্ঠান এসইও কোর্স করিয়ে থাকে।
এছাড়া, এসইও শেখার জন্যে সেরা কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে। অন্যদিকে, ইউটিউবেও আপনি প্রচুর ভিডিও পাবেন। এগুলো থেকে বেসিক থেকে শুরু করে মোটামুটি এডভান্স লেভেল পর্যন্ত শিখতে পারবেন।
ব্যক্তিগতভাবে আমি আপনাকে রিকোয়ার করব শুরুতেই কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি না হয়ে আগে একটু নিজে ঘাঁটাঘাটি করুন। দেখুন আপনি কতটুকু বুঝতে পারেন। আপনার সাথে স্যুট করে কিনা। যদি মনে করেন আপনাকে দিয়ে হবে এটা, তবে আঁটঘাট বেঁধে নেমে পড়ুন।
সবশেষে যা না বললেই নয় তা হচ্ছে অনেকেই কনফিউশনে থাকেন যে শিখলাম, তারপর যদি এসইওর কদর কমে যায় তো আমার কী হবে! শ্রমটা মাঠে মারা যাবে। আচ্ছা ভাই, এই যে এত এত টিভি চ্যানেল, এতসব রেডিও স্টেশন, তবুও কি বিজ্ঞাপনের অভাব হয়?
এসইও হচ্ছে অনলাইন বিজ্ঞাপন, ভবিষ্যত পৃথিবীর বিজ্ঞাপন। শত শত নয়, লক্ষ লক্ষ ওয়েবসাইট আছে, প্রতিদিন এই সংখ্যাটা হু হু করে বাড়ছে। এদের ওয়েবসাইট অপটিমাইজেশনের প্রয়োজন হবেই। প্রয়োজন শুধু আপনি নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তোলা। তবেই কেল্লাফতে। তাই, আপনার এসইও হাতেখড়ি প্রয়োজন। জানা প্রয়োজন এটি কি আর কিভাবে কাজ করে। আশা করি, আপনাদের সামান্য হলেও এসইও সম্পর্কে ধারণা দিতে পেরেছি। পরবর্তীতে এর ওপর আরো বিস্তারিত পোস্ট নিয়ে আসছি, অপেক্ষায় থাকুন।
Leave a Reply