শুরুতেই বলে নিই, পোর্টেবল গেমস কোনভাবেই হার্ডকোর গেমারদের জন্য নয়। কেবলমাত্র যারা একটু আধটু শখের বসে গেম খেলে থাকে, তাদের জন্যই পোর্টেবল গেম। খুবই অল্প সাইজ, একদম সাধারণ কৌশল, চলনসই একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের গ্রাফিক্স কিংবা ক্লাসিক বোর্ডগেম এসবই এই গেমগুলোর পরিচয়।
তবে বিশেষত্বটা হচ্ছে এগুলো পোর্টেবল, এবং গ্রাফিক্স, গল্প, কিংবা স্ট্র্যাটেজি খুব সাধারণ হলেও বিনোদন নিয়ে অবসর সময় কাটানোর জন্য এই গেমগুলো অসাধারণ।
পোর্টেবল সফটওয়্যার আসলে কী জিনিস সেটা যদি আপনার জানা না থাকে, তাহলে এই লেখার অনেক জায়গা একটু দুর্বোধ্য লাগতে পারে। সেকারণে আগে পোর্টেবল সফটওয়্যার সম্পর্কে একটুখানি বলে নেওয়া দরকার। তবে আপনি যদি এ সম্পর্কে ইতিমধ্য জেনে থাকেন, তাহলে এই অংশটুকু বাদ দিতে পারেন।
পোর্টেবল গেম বা সফটওয়্যার কি
সাধারণ যে কোন সফটওয়্যার সেটা অ্যাপ্লিকেশনই হোক, বা গেমই হোক তা ব্যবহার করতে হলে সেটিকে ইনস্টল করে নিতে হয়। আর ইন্সটল হওয়ার পর সেই সফটওয়্যারটির বিভিন্ন ডাটার জায়গা হয় সি ড্রাইভে। অর্থাৎ যেখানে আপনার উইন্ডোজটি সেটাপ দেওয়া আছে। ইন্সটল করা সফটওয়্যারটি আপনি চাইলে অন্য কোন কম্পিউটারে ব্যবহার করতে পারবেন না। যদি ব্যবহার করতে হয়, তাহলে আবার ইন্সটল করে নিতে হবে।
আর এখানেই মূলত পোর্টেবল সফটওয়্যারের বাহাদুরী। পোর্টেবল সফটওয়্যারও ইন্সটল করতে হয়, কিন্তু সেটি ইন্সটল করার পর সি ড্রাইভে ছড়িয়ে পড়ে না। বরং আপনি যেখানে মুল ফাইলটি ইন্সটল করবেন, সেখানেই একটা ফোল্ডার তৈরী হয়ে এটার সমস্ত ডাটা জমা হবে।
এবার আপনি এটাকে যেখানে ইচ্ছা সেখানে মুভ করে নিতে পারবেন। তাই পেনড্রাইভেও পোর্টেবল সফটওয়্যার ইনস্টল করে রাখতে পারবেন। যখন তখন যে কোন কম্পিউটারে পেনড্রাইভটি ঢুকিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন সেই সফটওয়্যারগুলো। এছাড়া অনেক পোর্টেবল সফটওয়্যার রয়েছে যেগুলো ইন্সটল পর্যন্ত করতে হয় না। দারুণ সুবিধা না!
অ্যান্ড্রয়েডের এই যুগে আমাদের খেলার জন্যে গেমের অভাব নেই। কিন্তু সেগুলোকে ডাউনলোড করতে হয়, এমনকি অনলাইনে খেলতে হয়। অর্থাৎ, ইন্টারনেট কানেকশনের দরকার হয়। তবে, অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্যে কিছু অফলাইন গেম রয়েছে যেগুলো আপনি ইন্টারনেট কানেকশন ছাড়াই খেলতে পারবেন। আর এখানকার গেমগুলো পুরনো সময়ের হলেও আপনাকে নিয়ে যাবে সোনালী অতীতে, দেবে সি-ড্রাইভ ছাড়াই ইনস্টল করে খেলার মজা।
তো যাইহোক, এই পোর্টেবল গেমগুলো তাহলে কেন একটু আলাদা সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। নিজের কম্পিউটারে এগুলো যে কোন জায়গায় রাখতে পারবেন, যে কোন জায়গায় মুভ করে নিয়ে রাখতে পারবেন। চাইলে পেনড্রাইভে করে পকেটে নিয়ে ঘুরতে পারবেন, যে কোন কম্পিউটারে পেনড্রাউইভ ঢুকিয়েই আগের জায়গা থেকে গেমগুলো খেলতে পারবেন। এবার চলুন, মূল আলোচনায় গেমগুলোর সংক্ষিপ্ত রিভিউ দেখে নিই।
চমৎকার ৫টি পোর্টেবল গেমস!
পোর্টেবল গেমের সুবিধা জেনেছেন, বুঝতে পেরেছেন এগুলো কেন খেলবেন। এর বাইরেও চাইলে আপনি আপনার মোবাইলে কিছু অফলাইন জম্বি গেম খেলতে পারেন যেগুলোর জন্যে কোন রকম ইন্টারনেট কানেকশনের প্রয়োজন হবে না। এবার আসুন পোর্টেবল গেমগুলো সম্পর্কে জানি।
Canabalt
টু-ডি গ্রাফিক্সের একটি এন্ডলেস রেসিং গেম এটি। এখানে আপনাকে দৌড়াতে হবে সীমানাবিহীন একটি শহরের দালানকোঠার ছাদের উপর দিয়ে কিংবা করিডোর দিয়ে, কখনো দৌড়াতে হবে ক্রেনের উপর দিয়ে। সামনে নানা রকম বাঁধা আসবে তখন আপনাকে লাফ দিয়ে সেটি পার হতে হবে। এছাড়া এক বিল্ডিং থেকে বিল্ডিং যাওয়ার সময়ই লাফ দিয়ে যেতে হবে। যেহেতু রাস্তার কোন শেষ নেই, তাই যতক্ষণ লাইফ শেষ না হচ্ছে ততক্ষণ দৌড়াতে পারবেন।
Canabalt গেমটির সাইয মাত্র ৫ মেগাবাইট। উইন্ডোজের যে কোন ভার্সনে গেমটি খেলতে পারবেন। সেই সাথে আরও একটি ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে, গেমটি অ্যান্ড্রয়েডেও খেলা সুযোগ রয়েছে। প্লে স্টোরে Canabalt লিখে সার্চ দিলে পেয়ে যাবেন, তবে প্লে স্টোরে এটি আপনাকে ২৫০ টাকা দিয়ে কিনতে হবে।
Lucas Chess
যদি দাবা খেলতে পারেন, তাহলে নিশ্চয়ই জানে এটি কতটা মজার এবং বুদ্ধিদীপ্ত একটা খেলা। স্মার্টফোন কিংবা কম্পিউটার, সবখানে প্রচুর পরিমাণে দাবা খেলার গেম রয়েছে। হয়ত দাবা খেলার পোর্টেবল গেমসও খুঁজলে বেশ কয়েকটি পাওয়া যাবে। তবে প্রচুর অপশন এবং পোর্টেবলিটি এসব দিক থেকে এই গেমটি আমার কাছে ভালো লেগেছে, তাই এখানে যোগ করলাম।
দাবা ভক্তরা গেমটি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন নিচের লিংক থেকে। গেমটির সাইজ ৫৮ মেগাবাইট, আর ইন্সটল করার পর এটি ১৬৬ মেগাবাইটের মতো জায়গা নেবে। Canabalt মতো এটিও খেলতে পারবেন উইন্ডোজের যে কোন ভার্সনে। আর যদি মোবাইলে খেলতে চান, তবে এই ৫টি অ্যান্ড্রয়েড দাবা গেম থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন যে কোনটি।
LBreakout 2
উপরে অনেকগুলো ইটের সারি, একটা বল গিয়ে সেই ইটে লাগলে ইটটা ভেঙে পড়ছে আর বলটাকে ধরে বাউন্স করে আবার উপরে পাঠানোর জন্য নিচের ছোট্ট বারটি এদিক করতে হচ্ছে আপনাকে। ক্লাসিক সেই ব্রেক-আউট গেমটির কথা মনে আছে? আমার মতো অনেকেরই হয়ত ছোটোবেলার খুব প্রিয় গেম ছিলো এটি।
চমৎকার এই গেমটির পোর্টেবল ভার্সনের সাইয মাত্র ৩ মেগাবাইট, ইন্সটল করার পর যেটি মাত্র ৪ মেগাবাইট জায়গা ব্যবহার করবে। উইন্ডোজ এক্সপি, ৭, ৮, ১০ সবগুলোতেই খেলা যাবে গেমটি।
Kobo Deluxe
চমৎকার ৫ টি পোর্টেবল গেমস এর তালিকায় এবার গেমটি অ্যাকশন ধর্মী। মহাকাশে একা একটা ছোট্ট স্পেশশিপ নিয়ে যাচ্ছেন আপনি আশেপাশে শত্রুর ছড়ানো ছিটানো স্পেস স্টেশন যেখান থেকে আপনার দিকে অবিরত গুলি ছোঁড়া হচ্ছে। সেই সাথে শত্রুর স্পেসশিপও এদিক ওদিক থেকে আসছে মাঝে মাঝে। এর মধ্য দিকে আপনাকে যেতে হবে গুলি করে সেসব ধ্বংস করতে করতে।
অবিশ্বাস্য হলেও চমৎকার গ্রাফিক্স আর সাউন্ড সম্বলিত এই গেমটির সাইয মাত্র ২.১৩ মেগাবাইট। ইনস্টল করার পর ফোল্ডারের আকার হয় ৭.৩০ মেগাবাইট। উইন্ডোজের যে কোন ভার্সনে Kobo Deluxe গেমটি খেলা যাবে।
Super Tux Kart
এতক্ষণ যে গেমগুলো দেখলেন, সেগুলো খুবই সাদামাটা মনে হলে এই গেমটি হয়ত আপনার ভালো লাগবে। Super Tux Kart একটি চমৎকার থ্রিডি রেসিং গেম। অনেক রকম রাস্তা, অনেক ধরণের গাড়ি এমনকি ড্রাইভিং অ্যাভাটারকেও পরিবর্তন করে নেওয়া সুযোগ আছে গেমটিতে।
টাইম রেস, কম্পিটিশিন, ফলো দ্য লিডার ইত্যাদি বেশ কয়েক রকম মোডে রেস করতে পারবেন। পথে নানা প্রতিবন্ধকতা এড়াতে রয়েছে মজার মজার অস্ত্র। গেমটির যে জিনিসটি আমাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে তা হলো, এর কন্ট্রোল।
পোর্টেবল এবং যে কোন রেসিং গেমের তুলনায় বেশ কম সাইযের গেম হলেও কন্ট্রোল সিস্টেম ছিল খুবই চমৎকার।
গেমটির সাইয ৫০৬ মেগাবাইট, আর ইন্সটলের পর ফোল্ডার সাইজ হয় ৬৫৩ মেগাবাইট। বাকিগুলোর মতো এটিও খেলতে পারবেন উইন্ডোজের যেকোন ভার্সনে।
পোর্টেবল গেমস নিয়ে এই ছিলো আজকের আয়োজন। আপনারা চাইলে এই সাইট থেকে এরকম আরও চমৎকার কিছু গেম খুঁজে বের করে নিতে পারেন। কোন গেমটি কেমন লাগল সেটি অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানান।
Leave a Reply