জীবন বৃত্তান্ত সাথে আনতে ভুলে যাওয়া থেকে শুরু করে হঠাৎ করেই ইন্টারভিউ কক্ষে আপনার ফোন বেজে ওঠার মত ঘটনাগুলো খুব সহজেই আপনার ইন্টারভিউকে বরবাদ করে দিতে পারে। যদিও ইন্টারভিউ গ্রহণের সময় কিছু কিছু ছোট ভুল নিয়োগদাতা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে থাকেন, তবু এমন কিছু বিষয় আছে যা তারা কখনোই মেনে নিতে পারেন না। তাই, আগে জেনে নিন চাকরির ইন্টারভিউর প্রস্ততি নেবেন যেভাবে। তারপর, আসুন জানা যাক যে কাজগুলো ইন্টারভিউতে করা যাবে না, করা উচিৎ নয়।
তাই, ইন্টারভিউ এর জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় আপনাকে দুইটি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। প্রথমত ইন্টারভিউকে সফল করার জন্য আপনাকে যা যা করতে হবে তা জানা এবং দ্বিতীয়ত ইন্টারভিউতে যা করা যাবে না তা সম্পর্কে ধারণা রাখা।
বর্তমান বাজারে একটি ভালো চাকরি খুঁজে পাওয়া যেমন দুষ্কর, তেমনি কোন ইন্টারভিউতে নির্বাচিত হওয়ার ততটাই কঠিন ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। কিন্তু এই কঠিন বিষয়টিকে সহজভাবে সমাধা করতে পারলে একদিকে যেমন চাকরি পেয়ে আপনি উপকৃত হবেন, অপরদিকে আপনার দক্ষতা ও পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে উক্ত কোম্পানীও লাভবান হবে।
তাই, এটিই সঠিক সময় চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে নিজের মেধা ও দক্ষতাকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে ইন্টারভিউতে নির্বাচিত হওয়ার।
ইন্টারভিউতে যা করা যাবে না
ইন্টারভিউতে সব সময় সেই সব বিষয় এড়িয়ে চলতে হবে যা নিয়োগদাতার মনে আপনার প্রতি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অনেকেই নিজেকে আত্মবিশ্বাসী হিসেবে উপস্থাপন করতে যেয়ে এমনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করে থাকেন যে, নিয়োগদাতার উক্ত প্রার্থীর যোগ্যতা সম্পর্কেই সন্দেহ চলে আসে। এরকম আরো বেশ কিছু ব্যাপার আছে, যা ইন্টারভিউ এর সময় এড়িয়ে চলতে হবে। তাই চলুন দেরি না করে জেনে নেই ইন্টারভিউতে যা যা করা যাবে না।
দেরীতে পৌছানো
আপনি যেখানে ইন্টারভিউ দিতে যাবেন, সেখান থেকে আপনার বাসস্থানের দুরত্ব ও পথঘাটের অবস্থা কেমন তা হিসাব করে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই হাতে সময় রেখে বাসা থেকে বের হতে হবে। দেরীতে পৌছানোর মানে হলো আপনার নিজেকে একজন দায়িত্বহীন এবং অলস কর্মী হিসেবে উপস্থাপন করা।
সুতরাং, যে-দিন আপনার ইন্টারভিউ তার আগের দিন থেকেই মানসিক প্রস্তুতি রাখুন। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, যেমন জামা-কাপড়, ফাইল-পত্র সব গুছিয়ে রাখুন। জামা-কাপড় ইস্ত্রি করার প্রয়োজন থাকলে, সেটি আগের দিনই করে রাখুন। আর ইন্টারভিউতে যাওয়ার অন্তত এক ঘন্টা আগেই রওনা দিয়ে দিন।
মুখে হাসি রাখুন
ইন্টারভিউ চলাকালীন সময়ে আপনাকে যেমনই প্রশ্ন করা হোক, মিষ্টি ভাষায় এবং মুখে হাসি রেখে তার উত্তর দিন। যদি কোন ব্যাপারে অভিব্যক্তি প্রকাশের জন্য হাসি থামাতে হয়, তাতে কোন সমস্যা নেই। তবে ইন্টারভিউ গ্রহণকারীর মনে যেন এই ভাবনা না আসে যে, আপনি চাপের মুখে ঘাবড়ে যান এবং সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন। কোন প্রশ্নের উত্তর না জানা থাকলে তা সহজভাবে স্বীকার করে নিন। যে বিষয়ে আপনার পরিষ্কার ধারণা নেই সে বিষয়ে অনুমানের উপর ভিত্তি করে উত্তর দিতে যাবেন না।
সবাইকে গুরুত্ব দিন
একটি কোম্পানী সফল তখনই হয়, যখন তার কর্মীরা নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠানের অংশ মনে করে। বিশ্বের সেরা কোম্পানীগুলো তাদের বিভিন্ন কর্মকান্ডের ব্যাপারে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদেরও মতামত গ্রহণ করে।
তাই আপনি যখন ইন্টারভিউ দিতে যাবেন, তখন উক্ত কোম্পানীর সবার সাথেই সদালাপ করুন এবং সুসম্পর্ক বজায় রাখুন। আপনাকে কোম্পানীর অন্যান্য কর্মীরা কিভাবে গ্রহণ করছেন এ বিষয়ে মতামত গ্রহণের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
মুঠোফোন বন্ধ রাখুন
ইন্টারভিউ এর জন্য নির্ধারিত স্থানে পৌছে অবশ্যই আপনার মুঠোফোন বন্ধ করে দিন। আমাদের সবারই কম বেশি মুঠোফোনে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন নোটিফিকেশন ও বার্তা দেখার অভ্যাস রয়েছে। কোন কারণে যদি ওই সময় আপনি কোন খারাপ খবর পান, তাহলে অবশ্যই সেটি আপনার ইন্টাভিউ এর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তাছাড়া, ইন্টারভিউ চলাকালীন সময়ে যদি আপনার মুঠোফোন বেজে ওঠে, তাহলে নিয়োগদাতার আপনার উপর বিরক্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবণা খুবই প্রবল।
ঘড়ির দিকে তাকাবেন না
আপনি যখন নিয়োগদাতার সামনে অবস্থান করবেন, তখন অবশ্যই ঘড়িতে সময় দেখা থেকে বিরত থাকুন। আপনি যদি বার বার সময় দেখেন, তাহলে তারা ভেবে বসতে পারে যে আপনি তাড়াহুড়ার মধ্যে আছেন অথবা চাকরিটির ব্যাপারে আপনি যথেষ্ট পরিমাণ আগ্রহী নন।
কাজেই, এমনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করুন যেন তাদের প্রতিটি কথা আপনি খুব মনোযোগ সহকারে শুনছেন এবং কাজটিতে আগ্রহ বোধ করছেন।
মিথ্যা বলা
আপনি হয়তো চাকরিটি পেতে খুবই আগ্রহী, কিন্তু তার মানে এই নয় যে আপনি যে বিষয়ে পারদর্শী নন সে ব্যাপারে মিথ্যা বলবেন। ক্যারিয়ার বিল্ডার্সের এক গবেষণা জরিপের তথ্য অনুযায়ী দেখা যায় যে, বেশিরভাগ চাকরি প্রার্থীদের জীবন বৃত্তান্তের প্রায় ৩০ শতাংশই এমন তথ্য দেয়া থাকে, যা তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
উদাহরণ স্বরুপ, বর্তমানে যে কোন চাকরি প্রার্থীর জন্য কম্পিউটার পরিচালনা করতে পারা একটি নূন্যতম যোগ্যতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু অনেকেরই শুধু এ বিষয়ে নামমাত্র ধারণা থাকা স্বত্বেও তারা নিজেদেরকে উক্ত বিষয়ে পারদর্শী বলে উপস্থাপন করতে চান।
মনে রাখবেন, আপনি যদি নির্বাচিত হয়েও যান, তাহলেও তারা অবশ্যই যে-সব বিষয় তাদের প্রয়োজন সেগুলির কিছু ব্যবহারিক পরীক্ষা অবশ্যই গ্রহণ করবেন। আর তখন সেটি করতে না পারা খুবই অপমানজনক। তাই ইন্টারভিউ এর ক্ষেত্রে মিথ্যা পরিহার করে আপনি যেমন তেমনভাবেই নিজেকে উপস্থাপন করুন।
অল্প কথায় ইন্টারভিউতে যা করা যাবে না এমন কাজের তালিকা লিখে শেষ করা যাবে না। সহজভাবে এটা বুঝে নিন যে, যে-সকল বিষয়গুলি আপনার সম্পর্কে যে-কোন ব্যক্তির মনে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে, সেগুলোই আপনাকে বর্জণ করে চলতে হবে। আর এটি যে শুধু আপনি ইন্টারভিউ এর ক্ষেত্রে করবেন তা নয়। চাকরি জীবনে সাফল্য লাভ করতে হলে অবশ্যই আপনাকে নিয়মানুবর্তিতার সাথে এ-সব বিষয় মেনে চলতেই হবে। যদি তা না করেন, তাহলে চাকরি আপনি ঠিকই পাবেন কিন্তু সাফল্য কখনোই না।
Leave a Reply