ইন্টারনেট, যেটি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, যার আবিষ্কারেই ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ম্যাজিক্যাল ইনভেনশন। যার আবিস্কার না হলে আমরা আজকের এই ফেইসবুক, টুইটার, ইউটিউব, অনলাইন পেমেন্ট, মেসেজিং সিস্টেম কিছুই পেতাম না। সেই ইন্টারনেট সম্পর্কে অজানা তথ্য আছে অনেক, আছে অদ্ভূত কিছু তথ্যও যা জানলে আপনিও অবাক হবেন।
এমনই কিছু তথ্য নিয়ে আজ আপনারদের সামনে উপস্থিত হলাম।
যদিও ১৯৬০ সালে এই ইন্টারনেটের জন্ম কিন্তু সবার জন্য উন্মুক্ত হয় ১৯৮৯ সালে। শুরুতে এর নাম ছিল আরপানেট, বর্তমানে বিশ্বের সব স্থানেই ইন্টারনেট রয়েছে। তাহলে চলুন, জেনে নেয়া যাক ইন্টারনেট নিয়ে কিছু অসাধারণ তথ্য।
ইন্টারনেট সম্পর্কে অজানা তথ্য
১. ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭.৩ বিলিয়ন
পৃথিবীর প্রায় ৭.৩ বিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। অবাক করা ব্যাপার হল এই ৭.৩ বিলিয়নের মধ্যে ৫০% মানে প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন মানুষ এশিয়ার। এটা শুনে আরও বেশি অবাক হবেন যে, ইন্টারনেট যদি একদিনের জন্য বন্ধ থাকে, তাহলে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ইমেইল এবং ৫ বিলিয়ন গুগল তথ্য ওয়েটিং এ থাকবে।
এতে করে প্রায় কয়েকশ বিলিয়ন ট্রানজেকশন বন্ধ থাকবে। এতে এই একদিনের বিশ্বের অর্থনীতিতে ধ্বস নামবে। যা রিকোভার করতেও লেগে যাবে মাসখানেক।
২. ৪ বিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট থেকে বঞ্চিত
৭.৩ বিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে জেনে আপনি হয়তো অবাক হয়েছেন। কিন্তু জানেন কি পৃথিবীর ৪ বিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত?
এটা জাতিসংঘের রিপোর্ট যেখান থেকে জানা যায়, দরিদ্র দেশ ও বিভিন্ন দেশের সংখ্যালঘু প্রায় ৪ বিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট সুবিধা পায় না।
৩. সবচেয়ে বেশি ব্যবহার
যদিও চায়নাতে ফেইসবুক থেকে শুরু করে ইউটিউবসহ অনেক ওয়েবসাইটকেই তাদের সরকার ব্যান করেছে কিন্তু আপনি জানলে অবাক হবেন যে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট ব্রাউজ করা হয় এই চায়নাতেই।
প্রায় ২০০ মিলিয়ন মানুষ এখানে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। যাদের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ বছর। এর ফলে তারা নিজের উপরেই কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলছে।
৪. ওয়েবসাইট হ্যাক
প্রত্যেকদিন ৩০ হাজারের বেশি ওয়েবসাইট হ্যাক হচ্ছে বিভিন্ন হ্যাকার দ্বারা। তারা এই হ্যাক করার জন্য সাধারণত হাইলি ইফেকটিভ কম্পিউটার সফটওয়্যার প্রোগ্রাম ব্যবহার করে থাকে। তাদের মুল টার্গেট থাকে দুর্বল সাইটগুলোর দিকে, যাতে সহজে হ্যাক করা যায়।
এজন্য এখনই জেনে নিন ওয়েবসাইট যে কারণে হ্যাকিং এর শিকার হয় আর আপনার ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন আজই।
৫. প্রথম ওয়েবসাইট
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, ইন্টারনেটে বানানো প্রথম ওয়েবসাইটটি আজও আছে। ১৯৯১ সালের ৬ই আগস্টে তৈরি ওই ওয়েবসাইটটি এখনও বন্ধ করা হয়নি। তবে, অরিজিনাল ডোমেনটি নেই। কম্পিউটার অ্যাট দ্যা ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ, CERN টিম বার্নারর্সের বানানো পৃথীবীর প্রথম ওয়েবসাইটটি তাদের অফিসিয়াল ডোমেইনের সঙ্গে সংযুক্ত করে সংগ্রহ করে রাখে। দেখে নিন ইন্টারনেটে পৃথিবীর প্রথম ওয়েবসাইট।
৬. প্রথম ওয়েবক্যাম
কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে প্রথম ওয়েবক্যাম বানানো হয়েছিল, যার কারণ ছিল একটি ট্রোজেন কফি পটকে মনিটর করা। ভিডিও ফিড হিসাবে একটি ১২৮ গুন ১২৮ গ্রেস্কেল পিকচার রাখা হয়েছিল।
৭. ইমেইল
ইন্টারনেটে প্রতি মিনেটেই ২০৪ মিলিয়ন ইমেইল আদান-প্রদান হয়ে থাকে। কিন্তু মজার বিষয় হল এই ২০৪ মিলিয়নের প্রায় ৭০% থাকে স্পার্ম ই-মেইল। আর এটা কি জানেন একটা ই-মেইল আদান-প্রদান করতেই লেগে যায় ২০০ বিলিয়ন ইলেকট্রন।
৮. প্রথম ইমেইল
ইন্টারনেটে ইমেইল আবিস্কার করেন যুক্তরাজ্যের প্রোগ্রামার রে টমিলিনসন। আর পৃথিবীর প্রথম ইমেইলটিও তিনি পাঠিয়েছেন তার অপর এক প্রোগ্রামার বন্ধুর কাছে।
৯. ইন্টারনেটে লোডশেডিং
আমরাতো দিনের যে কোন সময় চাইলেই ইন্টারনেট চালাতে পারি। আচ্ছা এটা কি ভেবে দেখেছেন, সব ধরনের ইলেকট্রনিক জিনিস চালাতে কারেন্ট লাগে, তাহলে ইন্টারনেটেও কি কারেন্ট লাগে? আর কখনো কি ইন্টারনেটে লোডশেডিং হয় না?
সারাবিশ্বে ইন্টারনেট চালাতে লাগে প্রায় ৫০ মিলিয়ন হরসপাওয়ার এনার্জি আর এই শক্তির যোগান অনবরত হয়ে থাকে। তাই লোডশেডিংয়ের কোন প্রশ্নই আসে না।
১০. ইন্টারনেট স্পিড
আচ্ছা আপনার মোবাইল ফোনের ইন্টারনেট স্পিড এখন কত? যদি ওয়াইফাই ইউজ করে থাকেন, তাহলে ওয়াইফাইয়ের স্পিড কত? না জানলে এখনই এক ক্লিকেই আপনার ইন্টারনেট স্পিড চেক করে নিন। চেক করার পর আপনার উত্তর সম্ভত ১-২০ এমবিপিএস হয়ে থাকবে। জানেন কি এই ইন্টারনেটের সর্বোচ্চ স্পিড কত হতে পারে?
এখন পর্যন্ত এর সর্বোচ্চ স্পিড ১০০ এমবিপিএস। অপটিক্যালের সাহায্যে এর চেয়ে বেশি স্পিড নেয়া সম্ভব না। যদি এরচেয়েও বেশি স্পিড নিতে হয়, তাহলে বিকল্প কোন ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে হবে।
১১. ইন্টারনেট ট্রাফিক
ধরুন, আজকে আপনি একটি ওয়েবসাইট খুললেন, আর কালকে সকালে দেখলেন আপনার সাইটে মোট ভিজিটর ১ লাখ। এটা দেখে তো আপনি পুরাই হতভম্ব। কীভাবে সম্ভব? আপনি তো কোন প্রচারই করলেন না। যদি এই রকম আপনার সাথে হয়, তাহলে বুঝে নিতে হবে এটা কোন মানুষের কাজ না।
এটাকে বলা হয় বট এন্ড ম্যালওয়্যার ট্রাফিক। কিছু অসাধু মানুষেই ইন্টারনেটে এমন সফটওয়্যার বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছে, যারা বিভিন্ন সাইটে ঘুরে বেড়ায়। এক গবেষনায় জানা যায়, ৬১% ওয়েবসাইটের ট্রাফিক এই বট এন্ড ম্যালওয়্যার দিয়েই হয়ে থাকে।
১২. ইন্টারনেটের বয়স
ইন্টারনেটের বর্তমান বয়স প্রায় ১০ হাজারের চেয়েও বেশি দিন। আপনাকে আমি এমন একটি সাইটের লিংক দিচ্ছি যেখানে গেলে আপনি ইন্টারনেটের বর্তমান বয়স একেবারে এক্সেট জানতে পারবেন। এই মুহুর্তে ইন্টারনেটের বয়স ১০৭২৪ দিন।
এই সাইটেও আপনি আরও জানতে পারবেন যেদিন আপনার জন্ম হয়েছে, সেদিন থেকে ইন্টারনেটের এখন বয়স কত।
১৩. ইন্টারনেট ও WWW
আপনি কি ইন্টারনেট বলতে www কে মনে করেন? দুইটাই কি আসলেই সেইম? না, এই দুইটার মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য আছে।
ইন্টারনেট হচ্ছে অনেকগুলো কম্পিউটারের জাল। আর www হচ্ছে একটা ব্রীজের ন্যায়, যার মাধ্যমে আপনি কোন ইনফরমেশন নিতে পারেন, আরেকজনের সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং বিভিন্ন ওয়েবে প্রবেশ করতে পারেন।
১৪. প্রথম ছবি
আচ্ছা বলতে পারবেন ইন্টারনেটে প্রথম কোন ছবিটি আপলোড করা হয়? এটা ছিল একটি জোকস বেন্ড অফ উইমেন যেটা আপলোড করেছিল সার্নের নিউক্লিয়ার রিচার্স টিম।
১৫. আরো কিছু ছোট ছোট তথ্য
- ইন্টারনেটের প্রথম আইডিয়া যার মাথায় আসে, তার নাম টিম বার্নার্স লি।
- ইন্টারনেটের জনক বলা হয় ভিনটন জি কার্ফকে।
- ১৯৬৯ সালে প্রথম পৃথিবীতে ইন্টারনেট চালু হয়।
- ১৯৯৬ সালে প্রথম বাংলাদেশে ইন্টারনেট আসে।
- ইমেলের জনক বলা হয় রে টমলিসনকে।
- ইন্টারনেটের প্রথম নাম ছিল আর্পানেট।
ইন্টারনেট আমাদের সভ্যতার জন্য একটি আশীর্বাদ স্বরূপ। কারণ ইন্টারনেটের মাধ্যমেই আমাদের সভ্যতা ও প্রযুক্তি আজ এখানে এসেছে। এক সময় মোবাইল ফোন ছিল না, আজ আমরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভিডিও কল করে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি।
অন্যদিকে গুগল ইন্টারনেটের এই সেবাকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে, যার ফলে আমরা খুব সহজেই সব তথ্য জানতে পারছি। আশা করি এই আর্টিকেল থেকে ইন্টারনেট নিয়ে নতুন কিছু জানতে পেরেছেন। লেখাটিতে থাকা কোনও একটি তথ্যও যদি ভাল লাগে, তবে শেয়ার করে সেটি অন্যজনকে জানার সুযোগ দিবেন।
Leave a Reply