যদি কারো ইউটিউব র্যাংকিং ফ্যাক্টর জানা না থাকে, তবে তার পক্ষে নিজের চ্যানেল কিংবা ভিডিও র্যাংক করানো অনেক কঠিন হয়ে যাবে। কেননা, ভিডিও রান ও তার থেকে আর্ন করার জন্যে র্যাংকিং ফ্যাক্টর অনুযায়ী বেশ কিছু কাজ করতে হয়।
শুধু ভাল ভাল কন্টেন্ট বানিয়ে আপলোড করে বসে থাকলেই হয় না, ভিডিও থেকে বৃহৎ পরিসরে সফলতা পেতে হলে অনেক কিছু জানতে হয়। বিশেষ করে, সার্চ ইঞ্জিনে ভিডিওকে র্যাংক পাওয়ানোর ফর্মুলা সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকতে হয়।
গুগল সার্চের পরেই সবচেয়ে বড় সার্চ ইঞ্জিন এখন ইউটিউব। এমনকি, এটিই এখন ইন্টারনেটের সবচেয়ে বেশি ভিজিট করা ওয়েব পেজ যেখানে প্রতি মিনিটে কমপক্ষে ৩০০ ঘন্টার ভিডিও আপলোড করা হয় অসংখ্য চ্যানেল থেকে। ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয় করার সহজ উপায় থাকার কারণে একদিকে যেমন চ্যানেলের সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে বিজ্ঞাপনদাতাদের বিশাল একটা অংশও এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে।
কাজেই, ইউটিউবকে ইগনোর করার কোনও অপশন নেই। প্রকৃত পক্ষে, যে কোনও পণ্য বা সেবার ব্র্যান্ড ভিজিবিলিটি বাড়ানোর জন্যে এর কোনও বিকল্প নেই। আর যারা ইউটিউবের জন্যে ভিডিও বানান, তাদের জন্যে মার্কেটিং বা র্যাংকিং বোঝারও বিকল্প নেই।
ইউটিউব র্যাংকিং ফ্যাক্টর
১. চ্যানেল কিওয়ার্ড
সাধারণত, ইউটিউব চ্যানেল বিশেষ কোনও বিষয়ের উপর তৈরি করা হয়ে থাকে। যেসব চ্যানেলের নির্দিষ্ট কোনও বিষয় থাকে না, এলোমেলোভাবে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভিডিও তৈরি করা হয়, সেসব চ্যানেল সহজে র্যাংক পায় না।
সার্চ ইঞ্জিনকে চ্যানেলের কন্টেন্ট বোঝানোর জন্যে সহায়তা করে চ্যানেল কিওয়ার্ড। কাজেই, চ্যানেলের কিওয়ার্ড অপটিমাইজেশন র্যাংকিং বাড়িয়ে দেয়, গুগল এবং ইউটিউব উভয় সার্চ ইঞ্জিনেই। ইউটিউবের অ্যালগোরিদম মেটাডাটা এবং চ্যানেল কিওয়ার্ডের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এটি র্যাংকিং এর একটি সিগনিফিকেন্ট পার্ট।
এক বা একাধিক ওয়ার্ড দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের কিওয়ার্ড নির্ধারণ করা একদিকে যেমন ভিউয়ারদেরকে চ্যানেল সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেয়, অন্যদিকে সার্চ ইঞ্জিনকে সাহায্য করে চ্যানেলের কন্টেন্ট বুঝতে। কাজেই, আপনার চ্যানেলের কিওয়ার্ড নির্ধারণ করে দিন।
কোথায় চ্যানেলের কিওয়ার্ড দেবেন-
- চ্যানেল ডেসক্রিপশনে গিয়ে কিওয়ার্ড প্লেস করুন।
- এটি ইউটিউব স্টুডিও বাটনের সেটিংস্ সেকশনে পাবেন।
২. ভিডিও কিওয়ার্ড
কোনও সার্চ ইঞ্জিনই কিওয়ার্ড ছাড়া রেজাল্ট শো করার পক্ষপাতিত্ব করে না। ইউটিউবও তাই। কাজেই, চ্যানেলের পাশাপাশি আপনাকে প্রতিটি ভিডিওরই কিওয়ার্ড সেট করে দিতে হবে। কারণ, ভিডিওর সাথে কিওয়ার্ডের ব্যবহার, মেনশন করা এবং ট্যাগ করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ র্যাংকিং ফ্যাক্টর।
আপনি যত ভালভাবে কিওয়ার্ড দিয়ে ভিডিওর বর্ণনা দিতে পারবেন, ততটাই ইউটিউব অ্যালগোরিদম আপনার ভিডিওর ধরণ বুঝে নিতে পারবে। আর ইউটিউব সার্চ ইঞ্জিন যত ভালভাবে আপনার ভিডিও বুঝতে পারবে, ঠিক ততটাই র্যাংক নির্ধারণ করে দেবে।
কোথায় কোথায় কিওয়ার্ড দেবেন-
- ভিডিও ডেসক্রিপশনে।
- ভিডিওর টাইটেলে।
- ভিডিওর কন্টেন্টে।
- ভিডিও ট্রান্সক্রিপ্টস্-এ।
- ভিডিওর ট্যাগে।
৩. ভিডিও টাইটেল
অনপেজ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন যেমন যে কোনও ওয়েবসাইট বা ব্লগ পোস্টের জন্যে প্রয়োজন, তেমনই ইউটিউবের জন্যেও জরুরী। আর এর একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পার্ট হচ্ছে ভিডিও টাইটেল। সার্চ ইঞ্জিনের কাছে আপনার ভিডিওর টাইটেলই হচ্ছে প্রথম ইম্প্রেশন, এমনকি ইউজারদের কাছেও। কারণ, ভিউয়ারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে টাইটেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
টাইটেল দেয়ার ক্ষেত্রে করণীয় ও বর্জণীয় বিষয়-
- টাইটেল অবশ্যই আপনার ভিডিওর ধরণের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করুন।
- টাইটেলের শুরুতেই কিওয়ার্ড রাখুন।
- ভিডিওর টাইটেল যেন বড় না হয়, শর্ট টাইটেল দেয়ার চেষ্টা করুন; ৫ শব্দের বেশি না হওয়া ভাল।
৪. ভিডিও ডেসক্রিপশন
র্যাংকিং পেতে ভিডির ডেসক্রিপশন দারুণ কাজে দেয়, এটি টাইটেলের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। ইউটিউব কিংবা গুগল সার্চ যেহেতু আপনার ভিডিও বোঝার জন্যে এক্সট্রাক্ট করে না অর্থাৎ মানুষের মতো ভিউ করে না, সেহেতু সেগুলো যেটা করে সেটা হচ্ছে ভিডিওর ডেসক্রিপশন থেকে ডিটারমাইন করে নেয় যে, ভিডিও এই বিষয়ে।
আপনি যদি ভিডিওর বর্ণনা না দেন, তবে সার্চ ইঞ্জিন আপনার ভিডিওর ধরণ সম্পর্কে বুঝবে না এবং সেটিকে র্যাংক দেবে না। ফলে, আপনি ভিডিও আপলোড করবেন ঠিকই, কিন্তু ভিউ পাবেন না।
ভিডিওর ডেসক্রিপশন যা কিছুর প্রতি গুরুত্ব দেবেন-
- ডেসক্রিপশন যেন ২৫০ শব্দের বেশি না হয়ে যায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
- টাইটেলের মতোই ডেসক্রিপশন বা বর্ণনার ভেতরে উপযুক্ত কিওয়ার্ড দিন।
- চেষ্টা করুন প্রথম ২৫ শব্দের ভেতরেই কিওয়ার্ড রাখতে, যাতে সার্চ ইঞ্জিন শুরুতেই সেটি পেয়ে যায়।
- ডেসক্রিপশনে কিছু ইন্টারনাল কিংবা এক্সটার্নাল লিংক যুক্ত করুন। ইন্টারনাল হিসেবে অন্যান্য ভিডিওর লিংক আর এক্সটার্নাল হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়া বা ব্লগ বা ওয়েবসাইটের লিংক দিন।
৫. ভিডিও ট্যাগ
ভিডিও বোঝার জন্যে ইউটিউবের সব ধরণের সহযোগীতা দরকার। তাই, তারা ভিডিও ডেসক্রিপশনে ট্যাগ ফিচারটি চালু করেছে। আপনি যখন ভিডিও পোস্ট করেন, তখন ইউটিউব আপনার কাছ থেকে ট্যাগ আশা করে, যাতে ভিডিওটি সম্পর্কে স্লাইটলি হলেও জানা যায়।
ট্যাগ যদিও ভিডিওর রিলেভেন্সির সঙ্গে খুব বেশি কানেকটেড নয় এবং গুরুত্বপূর্ণ র্যাংকিং ফ্যাক্টরও নয়, তবু এটি র্যাংক পাওয়াতে সামান্য হলেও সাহায্য করে থাকে। কাজেই, ট্যাগকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়ার কিছু নেই। বরং, সহজ ও সাবলীলভাবে ট্যাগের ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
ট্যাগ ব্যবহারে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে-
- ট্যাগ হিসেবে কিছু স্পেসিফিক কিওয়ার্ড দিন।
- টার্গেট কিওয়ার্ডটিকে প্রথম ট্যাগ হিসেবে ব্যবহার করুন।
- ট্যাগে কিছু লম্বা কিওয়ার্ড ব্যবহার করুন যেগুলো ভিডিওর টপিকের সঙ্গে মিলে যায়।
শেষ কথা
লেখাটিকে বেশি বড় হওয়া থেকে বাঁচানোর জন্যে এখানেই শেষ করতে চাইছি। উপরোক্ত ৫টি ইউটিউব র্যাংকিং ফ্যাক্টর ছাড়াও আরো কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে ভিডিও ক্রিয়েটরদের অবশ্যই গুরুত্ব দেয়া উচিৎ। যেমন-
- কোয়ালিটি ভিডিও তৈরি করা।
- সঠিক থাম্বনেইল ব্যবহার করা।
- সোশ্যাল শেয়ারের মাধ্যমে ইউজার অ্যাংগেজমেন্ট বাড়ানো।
- ওয়াচ টাইম বাড়ানোর জন্যে ভিডিওকে আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা করা।
Hasibul says
ইউটিউবে কাজ করলে, র্যাংকিং ফ্যাক্টর মাথায় রাখতেই হবে। নৈলে ভিডিও বা চ্যানেল র্যাংক পাবে না। র্যাংকিং ফ্যাক্টর নিয়ে দরকারি এই আর্টিকেলটির জন্যে রাইটারকে ধন্যবাদ।
Asif says
ভিজিটর তো পেলাম, কিন্তু কিভাবে ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার বৃদ্ধি করা যায়? এটাই ভাবছেন তো! ভিউয়ারসকে সাবস্ক্রাইবার বানানোর জন্য কিছু রুলস অনুসরণ করা জরুরী।
MD SAIFUL ISLAM says
আমি ইউটিউব মার্কেটিং এর জড়িত। যে কারো ইউটিউব চ্যানেল বা ভিডিও র্যাংক করানোর জন্যে আমার সাথে যোগাযোগ করতে আমার ব্লগটি ভিজিট করুন।