অনলাইনে আয়ের সেরা উপায়গুলোর অন্যতম একটি হচ্ছে ইউটিউব ভিডিও তৈরি। ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে কোটি টাকা আয় করছেন এমন অনেক মানুষই রয়েছেন, একজনের আয় তো বছরে ১১২ কোটি টাকা। কি ভিডিও বানান তিনি? তেমন বড় ধরণের কিছুই না, অনলাইনে গেম খেলেন আর সেগুলোর স্ক্রিন শট নেন। এটাই তার ভিডিও। তবে একটা কারিশমা আছে। সেটা হচ্ছে, গেম খেলার পাশাপাশি তিনি কমেন্টারি করনে।
আরেকজন আছেন যিনি বিউটি টিপস্ ভিডিও তৈরি করে বছরে ৬ লক্ষ ডলার আয় করেন। কি ধরণের বিউটি টিপস্ দেন তিনি? একদম আলাদা কিছু নয়, নিজের লাইফ স্টাইল আর সৌন্দর্য চর্চাই তার ভিডিওর মূল আইডিয়া। বাড়তি যেটা আছে তার ভিডিওগুলোতে, সেটা কিন্তু আলাদাই। আর সেটা হচ্ছে উপস্থাপনা, একেবারে নিজস্ব স্টাইল, তাও আবার নিজ দেশ মেক্সিকোর ভাষাতেই।
নানা রকম ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে চ্যানেল খুলে আয় করতে পারেন আপনিও। ভাবছেন কি নিয়ে ভিডিও বানাবেন, পাচ্ছেন না আইডিয়া! কোন সমস্যা নেই, এখানে আপনার জন্য ১০ সেরা আইডিয়া দেয়া হল। যে কোনটি নিয়ে শুরু করে দিতে পারেন।
হাজার হাজার আইডিয়ার ভেতর থেকে এখানে যে ১০ টি আইডিয়া দেয়া হচ্ছে সেগুলোরই রয়েছে সবচেয়ে বেশি চাহিদা। আপনি যে আইডিয়া নিয়ে শুরু করতে চান সেটা যেন আপনার ভাল-লাগা বিষয়গুলোর মধ্য থেকে হয়, সে-দিকে খেয়াল রাখুন। অর্থাৎ, যে বিষয়টি আপনার ভাল লাগে, আপনি পছন্দ করেন, ঠিক সেই বিষয়টি নিয়েই ভিডিও বানান।
ইউটিউব ভিডিও তৈরি করার সেরা আইডিয়া
ইউটিউব থেকে উল্লেখযোগ্য আয় করতে হলে, আপনাকে প্রচুর সাবস্ক্রাইবার এবং দর্শক পেতে হবে। অধিকাংশ ইউটিউবার ভিডিও তৈরির জন্য ভাল আইডিয়া নিয়ে ভাবেন না, যেনতেন বিষয় নিয়ে ভিডিও বানিয়ে ছেড়ে দেন। যারফলে, যথেষ্ট্ পরিমাণ দর্শক পান না। অনেকে আবার টেলিভিশন নাটকগুলো থেকে কেটে-কুটে ভিডিও ছাড়েন, কিংবা দিয়ে দেন পুরো নাটকটিই। এটা একদিকে কপিরাইট ভায়োলেশন, আরেক দিকে নিজস্ব সৃষ্টিশীলতা নেই বলে দর্শক হারান।
তাই এমন বিষয় নিয়ে কাজ করুন যা আপনার তৈরি, আপনারই সৃষ্টি। আর যদি সেটা ভাল হয়, মানুষের জন্য মজার কিংবা উপকারী হয়; মানুষ ঠিকই আপনার ভিডিও দেখবে, আপনার চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করবে আর আপনিও অনায়াসে ঘরে বসে আয় করতে পারবেন অন্যদের মতোই।
১. মজার মজার খাবারের রেসিপি নিয়ে ভিডিও তৈরি করুন
মানুষ যতদিন বাঁচবে, ততদিনই খাবার খাবে। আর তৈরি হবে নতুন নতুন খাবার আইটেমের চাহিদা। ইউটিউবে মজার মজার খাবার তৈরির ভিডিওর চাহিদা প্রচুর। অনেক অনেক লোক শুধু মাত্র ইউটিউব ব্রাউজ করে রেসিপির ভিডিও দেখতে। আর অন্যদের মত এ সুযোগটা নিতে পারেন আপনিও।
আপনি যদি একজন ভাল কুকার হন, আর যদি সেগুলোকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনা করার ভাল গুণ থাকে আপনার, তাহলে আপনি নিশ্চিতরূপেই আয় করতে পারবেন ইউটিউব থেকে। নিচে ইউটিউবের একটি জনপ্রিয় কুকিং চ্যানেল “VahChef” এর একটি ভিডিও দেখুন যেখানে পিজা তৈরির উপায় এমন চমৎকারভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন। এ ভিডিওটি ইতিমধ্যে ৫৫ লক্ষ ৪৮ হাজার ৯৮৯ ভিউ পেয়েছে।
২. রসনা বিলাসীদের জন্য ভিডিও বানান
আমাদের দেশে অনেক ভাল ভাল রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেগুলোতে আপনিও মাঝে মাঝে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে খেতে বসেন। যে কোন রেস্টুরেন্টের কুকারের সঙ্গে সম্পর্ক পাতান, তার থেকে রেসিপি নিন অথবা তার রেসিপি নিয়ে তাকে মডেল করে ভিডিও বানান। পেয়ে যাবেন প্রচুর দর্শক।
এছাড়াও, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরগুলোতে দেখবেন রাস্তার মাঝে এমন কিছু দোকান রয়েছে যেগুলোতে মানুষ লাইন ধরে খাবার কিনে খায়। এ দোকানগুলো খাবার তৈরিও করে রাস্তায়, মানুষের সামনে। তাদের খাবার বানানোর প্রক্রিয়াটি ভিডিও করুন, আপলোড করুন আপনার চ্যানেলে। বিনাকষ্টে সুন্দর সুন্দর অনেক ভিডিও পেয়ে যাবেন।
নিচে ইন্ডিয়ান স্ট্রিট ফুডের একটি ভিডিও দেখুন। আপলোড করার ৫ মাসের মাথায় ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৪৫ লক্ষ, ২৩ হাজার ৭০৬বার। আর সংখ্যাটি প্রতিনিয়তই বাড়ছে।
৩. মোবাইল রিভিউ ভিডিও তৈরি করুন
আপনি কি একজন মোবাইল অ্যাডিক্ট? নতুন নতুন মোবাইল কিনতে পছন্দ করেন? মোবাইলের ফিচারগুলো, গ্যাজেটগুলো নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেন? তাহলে শুরু করুন মোবাইল রিভিউ ভিডিও তৈরি। যখনই একটা নতুন মোবাইল কিনবেন, সে মোবাইলের ফিচার, গ্যাজেট, ব্যবহারের সুবিধা-অসুবিধা ইত্যাদি নিয়ে ভিডিও তৈরি করতে পারেন।
আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, একটা রিভিউর ভিডিও থেকেই আপনি আপনার মোবাইল কেনার খরচ তুলে ফেলতে পারবেন। শুধু তাই নয়, আপনার রিভিও যদি আকর্ষণীয় হয়, যদি আপনি অন্যদের মনোযোগ কাড়তে পারেন, তবে দেখবেন যে কিছু কিছু কোম্পানী আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবে তাদের মোবাইলের রিভিউ করে দিতে কিংবা আপনাকে দিয়ে দেবে তাদের কোম্পানীর সোশাল মিডিয়া ম্যানেজারের চাকরি। নিচে ‘Galaxy S6/ S6 Edge’ এর একটি রিভিউ দেখুন।
৪. প্রোডাক্ট রিভিউ বা আনবক্সিং ভিডিও বানান
শুধু মোবাইলই নয়, যে কোন প্রোডাক্টেরই রিভিউ ভিডিও তৈরি করতে পারেন। একটা ল্যাপটপ কিনেছেন কিংবা কিনেছেন স্পিকার কিংবা যে কোন ইলেকট্রোনিক্স পণ্য, বানিয়ে ফেলুন ওই পণ্যের ব্যবহার, ফিচার, ভাল-মন্দ নানা দিক নিয়ে রিভিউ ভিডিও। পণ্যটি যদি ভাল হয়, তাহলে ভিডিওর সাথে জুড়ে দিতে পারেন আমাজন, ইবে, ফ্লিপকার্ট কিংবা স্ন্যাপডিলের অ্যাপিলিয়েট লিংক।
৫. “How to” ভিডিও তৈরি করুন
যে কোন বিষয় ‘কিভাবে’ করতে হয়, ‘কিভাবে’ ব্যবহার করতে হয়, ‘কিভাবে’ চালাতে হয়, ‘কিভাবে’ ম্যানেজ করতে হয় ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে ভিডিও তৈরি করতে পারেন। এ টপিকটা অনেক বড় এবং এর চাহিদাও প্রচুর। মানুষ অনলাইনে যা কিছু সার্চ করে তার ৫০ ভাগ একাই দখল করে আছে, ‘How to’. কম্পিউটারের জটিল সমস্যার সমাধান থেকে শুরু করে সাধারণ কাপড়ের দাগ দূর করার পদ্ধতি নিয়ে হাজার হাজার ‘How to’ ভিডিও বানানো যেতে পারে। নিচে খুবই মজার একটি ভিডিও দেখুন-‘কিভাবে কাগজের পিস্তল বানাবেন যা সত্যিই গুলি ছোঁড়ে’!
৬. স্ক্রিন রেকডিং ভিডিও তৈরি করুন
আপনাকে হয়তো প্রায়ই কম্পিউটারে কোন না কোন সফট্ওয়্যার সেট আপ দিতে হয়। সেট আপ দেয়ার সময় সেটার স্ক্রিন রেকর্ড করে নিন। টিউটোরিয়াল বেইজড্ এ ভিডিওগুলোর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষেরই এখন কম্পিউটার রয়েছে এবং সংখ্যাটা বাড়ছে। আর প্রতিনিয়তই মানুষ কম্পিউটারের সেটআপ কিংবা অন্যান্য নানা রকম সমস্যায় পড়ছে। সাধারণত মানুষ যে সব সমস্যার মুখোমুখি হয়, সেগুলোর সমাধান নিয়ে ভিডিও তৈরি করুন, নি:সন্দেহে আপনি প্রচুর ভিউয়ারস্ পাবেন। নিচে ফটোশপ স্ক্রিন শটের একটি ভিডিও দেখুন-
৭. অনলাইন টিউটোরিয়াল ভিডিও বানান
দেশের প্রায় সব মানুষই এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করুন, অনলাইনে অল্প হলেও প্রতিদিন সময় কাটান। মানুষের অনলাইন ব্যবহারকে আরো সহজ করে তুলতে তাদের জন্য বানাতে পারেন অনলাইন ভিডিও টিউটোরিয়াল। যদিও গুগল সার্চ করে যে কোন অনলাইন সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়, কিন্তু মানুষ পড়ার চেয়ে দেখে সমাধান নিতেই বেশি পছন্দ করে। ফেসবুকের বিশেষ কোন ব্যবহার নিয়ে ভিডিও তৈরি করতে পারেন। টুইটার, গুগল প্লাসসহ অন্যান্য সোশাল মিডিয়া নিয়ে তৈরি করতে পারেন টিউটোরিয়াল ভিডিও।
ওয়েবসাইট তৈরি, উইন্ডোজ সেটআপ, উইন্ডোজের নানা সমস্যার সমাধান, ওয়ার্ডপ্রেস সেটআপ, ডোমেইন সেটআপ ইত্যাদি অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো নিয়ে টিউটোরিয়াল ভিডিও প্রকাশ করে সহজেই ইউটিউবে আপনার সাবস্ক্রাইবার বাড়াতে পারেন।
৮. হাস্য-রসাত্মক ভিডিও বানান
মানুষ স্বভাবতই হাসতে পছন্দ করে। ইউটিউবের বেশির ভাগ ইউজারই বসে বসে ‘প্র্যাংক’ ভিডিও দেখে। আর এ ভিডিওগুলোর চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। এ ধরণের ভিডিও দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন কিংবা কলিগদের নিয়ে মজা করতে পারেন আর তৃতীয় কাউকে দিয়ে সেগুলোর ভিডিও রেকর্ড করে নিতে পারেন। কিংবা স্পাই ক্যামেরা ব্যবহার করেও গোপনে অনেক মজার দৃশ্য ধারণ করতে পারেন।
৯. ভ্রমণ বিষয়ক ভিডিও বানান
আপনি হয়তো বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে প্রায়ই দেশের এখানে সেখানে বেড়াতে যান। হোক ট্রেনে, বাসে কিংবা লঞ্চে করে ঘুরতে যাচ্ছেন- যাওয়া থেকে শুরু করে ফিরে আসা পর্যন্ত সবটাই রেকর্ড করে নিন। ফিরে এসে এডিট করে ইউটিউবে আপলোড করে দিন। এ ভিডিওগুলো অন্যদের ভ্রমণে যেমন সহায়ক হবে, তেমনি আপনাকে এনে দেবে বাড়তি আয়।
১০. মানুষের অভিজ্ঞতা বিষয়ক ভিডিও বানান
আপনি হয়তো মিডিয়ার বড় বড় সেলিব্রেটিদের ইন্টারভিউ নিতে পারবেন না। কিন্তু আপনার চারপাশের সাধারণ মানুষগুলোর ইন্টারভিউ তো নিতে পারবেন, পারবেন না? সাধারণ মানুষের ইন্টারভিউ নিন, মানুষকে তাদের জীবনের নানা দিক নিয়ে প্রশ্ন করুন, আর ভিডিও রেকর্ড নিয়ে নিন। তাদের জীবনের যত প্রেম ভালবাসা, পাওয়া না পাওয়া, ভয়ংকর, মজার কিংবা তিক্ত অভিজ্ঞতাগুলো তুলে আনুন আপনার ভিডিওতে। এটা শুধু মাত্র ইউটিউব থেকে আয়ের জন্যই নয়, এটা অন্যদের উৎসাহিত করতেও দারণ কাজে দেবে। যেমন, আপনার পরিচিত একজন সফল ব্যবসায়ীর ইন্টারভিউ নেন, সেটা দেখে অন্যরা সফল হওয়ার চেষ্টায় নামবে। এক অর্থে, আপনি তো মানুষের উপকারই করছেন, তাই না?
আশা করি, ইউটিউব ভিডিও তৈরি করার এ সিম্পল আইডিয়াগুলো আপনার কাজে লাগবে। আইডিয়াগুলোর একটিও যদি আপনার ভাল লাগে, তবে টাইম লাইনে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আর যদি এগুলোর কোনটিই আপনার সঙ্গে না যায় অর্থাৎ আপনার পছন্দ না হয়, তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই. আপনার জন্য রয়েছে ইউটিউব ভিডিও মেকিং এর আরো ১০টি আইডিয়া।
আর কিভাবে ভিডিও বানাবেন তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন? দূর মিয়া! এইটা একটা কথা হইলো! একটা ভাল ক্যামেরা কিনতে পারবেন না!!! আচ্ছা ধরলাম, পারবেন না, আপনার যথেষ্ট্য টাকা পয়সা নাই। কিংবা থাকলেও শুরুতে এত টাকা ইনভেস্টে যেতে চাইছেন না। কিন্তু আপনার হাতে তো একটা মোবাইল ফোন আছে, না কী? নিয়ে নিন মোবাইলে ভিডিও তৈরির ৫টি সেরা ফ্রি অ্যাপস্। আপাতত: মোবাইল দিয়েই শুরু করুন না! টাকা পয়সা কামিয়ে না হয় একটা হাই কোয়ালিটির ক্যামেরা কিনে ফেলবেন!
Leave a Reply