আপনার যদি একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই বুঝবেন যে চ্যানেল এবং ভিডিও র্যাংক কতটা জরুরী। যাদের অলরেডি হাজার হাজার সাবস্ক্রাইবার আছে, তারাও এক সময় ইউটিউব চ্যানেল র্যাংক এবং ভিডিও র্যাংক নিয়ে ভাবতো। ভবিষ্যতেও যারা ইউটিউবার হওয়ার স্বপ্ন দেখবে, তারা একটু হলেও এই বিষয়ের সম্মুখীন হবে।
আসলে, কোনো কিছুই সহজভাবে পাওয়া যায় না। ইউটিউবে লক্ষ লক্ষ ভিজিটর থাকলেও সঠিক উপায় না জানলে আপনার ভিডিও তাদের নিকট কখনোই পৌছাবে না। অন্যদিকে, অনেকের ভিডিও খুব সহজেই সবার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে এবং তারা ইউটিউব থেকে দেদারসে কামাচ্ছে। আপনি জেনে অবাক হবেন যে, শুধুমাত্র বিউটি টিপস্ ভিডিও তৈরি করে ইউটিউব থেকে মেক্সিকান এই ব্লগার আয় করছেন ৬ লক্ষ ডলার।
আবার, এমন অনেকেই আছেন যারা নিয়মিত ভিডিও আপলোড দিয়েও সফল হচ্ছেন না বা চ্যানেল র্যাংক করাতে পারছেন না। পাশাপাশি, এমনও অনেকে রয়েছেন, যারা নিজেদের চ্যানেলটি সার্চ দিয়ে পানও না। কিছু নিয়ম মেনে চললে চ্যানেল এবং ভিডিও র্যাংক করানো সম্ভব। তবে, সব ভিডিও হয়তো র্যাংক হয় না। কিভাবে একটি ইউটিউব চ্যানেল খোলার পর চ্যানেল র্যাংক এবং ভিডিও র্যাংক করাবেন তা নিম্নে দেওয়া হলো।
ইউটিউব চ্যানেল এবং ভিডিও র্যাংকিং টিপস্
চ্যানেল র্যাংক করাবেন যেভাবে
প্রথমেই জেনে নিন আপনার ইউটিউব চ্যানেলটি র্যাংক করানোর উপায়। আপনি যতই ভাল ভিডিও বানান না কেন, চ্যানেল যদি র্যাংকে না আনতে পারেন, তবে আপনার ভিডিও সার্চে আসবে না। আপনার চ্যানেলও জনপ্রিয়তা পাবে না এবং আপনিও সফল হবেন না। তাই, প্রথমেই চ্যানেলের দিকে নজর দিন। নিচের কয়েকটি বিষয় মেনে চলুন।
চ্যানেলের একটা ইউনিক নাম দিন
প্রথমেই বলবো, আপনার চ্যানেলের নামটি সম্পূর্ণ ইউনিক হতে হবে অর্থাৎ যে নামটি দিচ্ছেন সে নামে যেন ইতিমধ্যেই অন্য কোন চ্যানেল না থাকে, সেটা নিশ্চিত হয়ে নিন। এমন কোনো নাম দেওয়া যাবে না, যেই নামে অলরেডি হাজার হাজার চ্যানেল রয়েছে। যেমন : Funny Videos বা Amazing World ইত্যাদি। চ্যানেলের নামটি ইউনিক হলে সেই চ্যানেল সার্চ করলে ফাস্টেই থাকে সাধারণত।
এখন আসুন, কি ধরণের নাম দেবেন তা নিয়ে কথা বলা যাক। অবশ্যই আপনি এমন নাম দেবেন যা আপনার চ্যানেল আইডিয়া বা ভিডিওর ধরণের সঙ্গে মিল থাকে। ধরা যাক, ইউটিউবের জন্যে ২০টি ব্রিলিয়ান্ট চ্যানেল আইডিয়া থেকে যে কোন একটি আপনি পিক করেছেন। এখন, অবশ্যই আপনার চ্যানেলের নাম সেই আইডিয়ার সঙ্গে মিলতে হবে, আবার পাশাপাশি সেটি ইউনিকও হতে হবে।
চ্যানেলের কি-ওয়ার্ড নির্ধারণ করে দিন। অনেকেই চ্যানেলের কি-ওয়ার্ড না দেওয়ার ফলে চ্যানেলের নাম দিয়ে সার্চ করলেও অনেক সময় চ্যানেলটি দেখা যায় না। কি-ওয়ার্ডে আপনার চ্যানেলের নাম, কি টাইপের ভিডিও বানান, সেটাকে নির্দেশ করে। সঠিক কি-ওয়ার্ড দিলে দেখবেন চ্যানেলটি সার্চ করলে সবার আগেই থাকবে। এক্ষেত্রে চ্যানেল কি-ওয়ার্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং, সম্ভব হলে চ্যানেল খোলার আগেই কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করে নিন। বাংলায় কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করার উপায় দেখে নিন। আনন্দের খবর হচ্ছে এ উপায়ে আপনি ইউটিউবের জন্যে বাংলাতেই কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করতে পারবেন।
ভিডিও র্যাংক করাবেন যেভাবে
চ্যানেল র্যাংক করানোর সাধারণ কিছু টিপস্ দিলাম। এগুলো ফলো করলেই আপনি আপনার ইউটিউব চ্যানেলকে সহজেই র্যাংকে আনতে পারবেন। এবার আসুন ভিডিও র্যাংক করানোর কিছু টিপস্ নিয়ে আলোচনা করা যাক।
ভিডিওর ডিউরেশন বড় করুন
আপনি যেই ভিডিও তৈরি করতে চান, সেই রিলেটেড কন্টেন্টের ভিডিও ইউটিউবে সার্চ করলে অনেক পাবেন। সেখান থেকে আপনি আইডিয়া নিতে পারবেন। ধরুন, আপনি Make money online এর উপর ভিডিও বানাতে চাচ্ছেন। অলরেডি ইউটিউবে এর উপর হাজার হাজার ভিডিও আছে। সেখান থেকে ভিডিও ডিউরেশন দেখবেন। ৫/৭ টা ভিডিওর ডিউরেশন দেখলেই আপনি বুঝতে পারবেন যে, সবচেয়ে বড় ভিডিওগুলো ইউটিউবের সার্চ রেজাল্টে সব সময় ফাস্টের দিকে থাকে।
তাই, সব সময় চেষ্টা করবেন একটু বেশি ডিউরেশনের ভিডিও বানাতে। তবে, খুব বেশি বড় না হয়ে যায় এবং ভিউয়াররা যাতে বোরিং ফিল না করে, তার দিকেও নজর দিতে হবে। মূল কথা আপনাকে ভিডিওর লেংথ্ রাখতে হবে ভিউয়ারের কথা চিন্তা করে। অনেক সময় দেখা যায় যে, আকর্ষণীয় হওয়ার কারণে বড় লেংথের ভিডিও দেখতেও পাঠক বিরক্ত বোধ করে না। অথচ, ভিডিও আকর্ষণীয় না হওয়ার ফলে ছোট ডিউরেশন হলেও ভিউয়ার সেটা শেষ না করেই বেরিয়ে যায়।
নিয়মিত ভিডিও আপলোড করুন
ইউটিউবে যদি আপনি নতুন হয়ে থাকেন, তাহলে নিয়মিত ভিডিও আপলোড করুন এবং পারলে প্রতিদিন ভিডিও আপলোড করুন। মাসে অন্তত ১৫/২০ টা ভিডিও আপলোড দেওয়ার চেষ্টা করবেন। কিন্তু প্রতিদিনই ভিডিও বানানো তো আর সহজ কথা নয়। কারণ, একটা ভিডিওর মেকিংয়ের পেছনে প্রচুর সময় ও শ্রম দিতে হয়। তাহলে কি করে মাসে এতগুলো ভিডিও আপলোড দেবেন! উপায় আছে আর তা হচ্ছে আপনার চ্যানেল স্টার্ট করার আগেই বেশ কিছু ভিডিও বানিয়ে রাখুন এবং সেখান থেকেই প্রতিদিন আপলোড দিতে থাকুন।
আপনার চ্যানেল যখন জনপ্রিয়তা পেয়ে যাবে, তখন আর এত কষ্ট করতে হবে না। অর্থাৎ, তখন ২/৩ দিন পর পর একটা ভিডিও আপলোড দিলেই চলবে। প্রথম দিকে মূলত ইউটিউব যাতে আপনার চ্যানেলটিকে গুরুত্ব দেয়, আপনার চ্যানেলর ভিডিওগুলোকে সার্চে তুলে নিয়ে আসে, সেজন্য আপনাকে ঘন ঘন ভিডিও আপলোড করতে হবে। মোদ্দা কথা, ইউটিউবকে নিজের চ্যানেলের পরিচয় দিতেই নিয়মিত ভিডিও আপলোড দিতে হবে।
আকর্ষণীয় টাইটেল নির্বাচন করুন
বলুন তো মানুষ কি প্রথমে ভিডিও দেখে নাকি ভিডিওর টাইটেল দেখে? আপনিও নিশ্চয়ই একজন বুদ্ধিমানের মতোই উত্তর দিয়ে বলবেন যে, আগে টাইটেল দেখে। সত্যিই তাই, একজন ভিউয়ার যখন কোন টাইটেলের প্রতি আকর্ষিত হয়, তখনই সে ওই ভিডিওটিতে ঢুকে এবং দেখে।
কাজেই, টাইটেল গুরুত্ব আপনাকে আর বোঝানোর প্রয়োজন নেই। কারণ, টাইটেলের টেকনিকটা আপনি ইতিমধ্যেই বুঝে ফেলেছেন। কাজেই, আপনার ভিডিওর বিষয় যাই হোক না কেন, বিষয়ের সঙ্গে মিলে রেখে সুন্দর ও আকর্ষণীয় একটি টাইটেল দিয়ে দিন। সাধারণত, যে-সব ভিডিওর টাইটেল আকর্ষণীয় হয় এবং ভিডিওটিও ভাল হয়, সেগুলোই ভাইরাল হয়। ইউটিউবের জন্যে ভাইরাল ভিডিও তৈরি করার সহজ উপায় এর মধ্যে এটিও একটি।
ডেসক্রিপন দিন
ভিডিও র্যাংক করানোর জন্যে ডেসক্রিপশনও গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই, ভিডিওর বর্ণনাকে এটাকে এড়িয়ে যাবেন না। ডেসক্রিপশনে সব সময় ভিডিও টাইটেল রাখার চেষ্টা করবেন প্রথমেই। এছাড়াও ডেসক্রিপশন সুন্দরভাবে লেখার চেষ্টা করবেন। আপনার ভিডিওটিতে কি কি বোঝাতে চেয়েছেন তা ছোট করে ডেসক্রিপশনে লিখে দিতে পারেন এবং আপনার ফেসবুক, টুইটার চ্যানেলের লিংক দিতে পারেন এখানে।
ট্যাগ দিতে ভুলবেন না
ভিডিও র্যাংকিংয়ের জন্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, “ট্যাগ”। এই ট্যাগের মাধ্যমে ভিডিওর SEO করা সম্ভব হয় এবং ভিডিও র্যাংক হওয়ার প্রবল সম্ভাবণা থাকে। আপনি ভিডিও টাইটেলের গুরুত্বপূর্ণ শব্দকে ট্যাগ হিসেবে লিখতে পারেন। এছাড়াও ট্যাগে আপনার চ্যানেলের নাম, চ্যানেল কি-ওয়ার্ড দিতে পারেন। যেমন : আপনার ভিডিও টাইটেল যদি হয় – “How to earn money from online” তাহলে আপনি earn money, earn money online ইত্যাদি ট্যাগ দিতে পারেন।
সব শেষে বলবো, একটি সুন্দর থাম্বনেল নির্ধারণ করুন। বেশিরভাগ মানুষ ভিডিও দেখতে আগ্রহী হয়ে থাকে সুন্দর থাম্বনেলের কারণে।
উপরের প্রত্যেকটি কাজ যদি সঠিকভাবে করে থাকেন, তাহলে আপনার চ্যানেল এবং ভিডিও র্যাংক হওয়ার সম্ভাবণা আছে। অনেকেই বলে থাকে যে, আমার চ্যানেলে প্রায় ১০০ এর অধিক ভিডিও রয়েছে কিন্তু ভিডিও র্যাংক হচ্ছেনা কেনো? আপনি উপরের সব কয়টি নিয়ম মানার পরও এমন হওয়ার কথা নয়। যদি হয়ে থাকে তাহলে বুঝবেন আপনার ভিতর ক্রিয়েটিভিটি নেই। ভিজিটর বা ভিউয়ারদের আকর্ষণ করার মত বা প্রয়োজনীয় ভিডিও বানানোর ক্ষমতা না থাকলে আপনি কখনোই নিয়ম মেনেও সফল হতে পারবেন না।
Leave a Reply