ইউটিউবের অজানা তথ্য রয়েছে অনেক যেগুলো জানার পর ইউটিউব সম্পর্কে আপনার ধারণা আরো পরিস্কার হয়ে যাবে। এটা ঠিক যে ইউটিউবে ভিডিও দেখার জন্যে ইউটিউব সম্পর্কে বিস্তারিত জানার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন নেই অজানা তথ্যেরও। কিন্তু যদি জানেন, তো লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই। মানুষের জানার আগ্রহ, বিশেষ করে বিভিন্ন টেকনোলোজিক্যাল প্লাটফর্ম সম্পর্কে জানার কৌতুহল আছে অনেকেরই। আপনিও যদি তেমনই একজন হয়ে থাকেন যার জানার আগ্রহ প্রবল, তবে এই লেখাটি আপনার জন্যেই।
যদিও ইউটিউবের বিকল্প অনেক ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইট রয়েছে, তবু আমরা প্রতিদিন ইউটিউবেই ভিডিও দেখে থাকি। কেউ কেউ সারাদিন ইউটিউব নিয়েই ব্যস্ত থাকে, কারণ ইউটিউবে এখন সব পাওয়া যাচ্ছে। শিক্ষণীয় পড়ালেখার ভিডিও থেকে শুরু করে মুভি কিংবা মিউজিক সবকিছুই এখন এখানে সহজলভ্য। ইউটিউবের এই দীর্ঘ পথচলায় আছে অনেক মজার ঘটনা, আছে অনেক রেকর্ড গড়ার ইতিহাস। আজ ইউটিউব সম্পর্কে এমনি কিছু তথ্য জানাবো, যেগুলো হয়তো আপনি জানেন না।
ইউটিউবের অজানা তথ্য
ইউটিউবে আমরা যে-সব ভিডিও দেখে থাকি, সেগুলো তৈরির পেছনে রয়েছে অনেকের অবদান। আর ইউটিউব ভিডিও তৈরি করে এ-সব মানুষের অনেকেই আজ কোটিপতি, ইউটিউব থেকে আয় করছেন মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার, তাদের সম্পর্কেও রয়েছে অজানা তথ্য। ইউটিউব দিনদিন এতই জনপ্রিয়তা লাভ করছে যে এখন ইউটিউব থেকেই অনেক সেলিব্রিটি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এই ইউটিউব আজ থেকে ১০ বছর আগেও এমনটা ছিল না, এই দীর্ঘ সময়ের কিছু তথ্য জেনে নিন।
ইউটিউবের জন্মদাতা যারা
এখন তো আমরা সবাই জানি ইউটিউব গুগলের একটি ভিডিও শেয়ারিং এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। কিন্তু জানেন কি ইউটিউব কারা বানিয়েছিল এবং তাদের সঙ্গে একজন বাংলাদেশীও ছিলেন?
এখন যে ইউটিউব দেখছেন তার মেইন মাস্টারমাইন ছিল হার্লি, স্টিভ চেন এবং জাওয়াদ করিম, যিনি একজন বাংলাদেশী জার্মান নাগরিক। তারাই ২০০৫ সালে ইউটিউব বানিয়েছিল। তখন তারা সবাই ছিল পেপ্যালের কর্মকর্তা। ইউটিউব প্রতিষ্ঠার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এই বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত জার্মাণ নাগরিক, জাওয়াদ করিম সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন।
ইউটিউবের সূচনা ডিনার পার্টিতে
সানফ্রানসিসকোতে আয়োজিত স্টিভ চানের এক ডিনার পার্টিতে সবাই মিলে সেদিন খুব মজা করল। কিন্তু সমস্যাটা শুরু হল যখন তারা তাদের ক্যাপচার করা ভিডিও ইমেইলের মাধ্যমে সবার সাথে শেয়ার করতে গিয়ে ঝামেলায় পড়লেন। মোবাইলে ভিডিও শেয়ারিং তখন মোটেও সহজ ছিল না। কিন্তু অন্য বন্ধুদের তো দেখাতে হবে, কি করা যায়!
ভাবতে ভাবতে একজনের মাথায় আসে একটা ভিডিও শেয়ারিং সাইট তৈরির আইডিয়া। অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করতেই সবাই পজিটিভ মতামত দিয়ে দেয়। যে চিন্তা সেই কাজ, তিন বন্ধু মিলে খুলে বসে এমন একটি সাইট যা আজকের দুনিয়ায় ইউটিউব নামে পরিচিত।
ইউটিউবের খরচ চলতো বোনাসের টাকা দিয়ে
আপনি কি জানেন আজকের এই কোটি কোটি মিলিয়ন ডলারের ইউটিউব এক সময় এই রকম ছিল না। ইউটিউবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরা তাদের মাসিক বেতন থেকে যে বোনাস পেত সেটা দিয়েই ইউটিউব চালতো।
ইউটিউবের আসল উদ্দেশ্য
শুরুর দিকে ইউটিউবে ছিল অনেকটা ডেটিং সাইটের মতো। যেখানে সবাই তাদের ডেটিং এর ভিডিও আপলোড দিত।
ইউটিউবের আরেক নাম Utubeonline
২০০৫ সালে ভ্যালেন্টাইনের দিনেই ইউটিউব ডট কম নামের এই ডোমেইনটি কিনা হয়। কিন্তু পরে তারা এই নামটি পরিবর্তণ করে নাম দেয় Utubeonline। ফলে এই বিষয় নিয়ে একদিকে যেমন গ্রাহকরা কনফিউজড হয়ে যায়, তেমনি তারা নিজেরাও এই বিষয়ে কনফিউজড হয়ে যায়। পরে আবার এই নামটি পরিবর্তণ করে দেয়া হয়।
ইউটিউবের প্রথম ভিডিও
আচ্ছা ইউটিউবে তো আপনি অনেক ভিডিও দেখেন কিন্তু জানেন কি ইউটিউবের প্রথম ভিডিও কি নিয়ে ছিল? হ্যাঁ, ইউটিউবের প্রথম ভিডিও ছিল প্রতিষ্ঠাতা জাওয়াদ করিমের যিনি ২০০৫ সালের ২৩ এপ্রিলে একটি চিড়িয়াখানায় ঘুরার সময় ভিডিও করে আপলোড করেন। এই ভিডিওটির টাইটেল ছিল ‘মি এট জু’।
এপ্রিল ফুল ডে
ইউটিউব ২০০৮ সালে এপ্রিল ফুল প্রাংক শুরু করেছিল। এবং প্রত্যেক বছরেই তারা সফলতার সাথে এটি করে আসছে। ২০০৮ সালে ইউটিউবের সব ভিডিও রিক এস্টলির মিউজিক ভিডিও নেভার গোন্না গিভ ইউ আপে রিডাইরেক্ট করে। ফলে ভিউয়াররা যে ভিডিও দেখার উদ্দেশ্যে ক্লিক করে সেই ভিডিওই ইউটিউব থেকে রিকের গানে চলে যায়। এতে করে ভিউয়াররা প্রাংকের স্বীকার হয়।
সবচেয়ে বেশি দেখা ভিডিও
মিউজিক ভিডিও ছাড়া ইউটিউবে দেখা সবচেয়ে বেশি ভিউয়ারপ্রাপ্ত ভিডিও ছিল চার্লি বিট মাই ফিংগার। এই ৫৫ মিনিটের ভিডিওতে দুই ভাইয়ের মজার একটা মুহুর্ত দেখানো হয়েছে। এই ভিডিওর বর্তমান ভিউ ৮৬২ মিলিয়ন।
গানের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল গাননাম স্টাইল ভিডিওটি। যেটি ২০১২ সালে পোস্ট করা হয় এবং সে বছরেই ভিডিওটি ১ বিলিয়ন ভিউয়ার লাভ করে। বর্তমানে ভিউয়ার সংখ্যা প্রায় ১.৮ বিলিয়ন।
ইউটিউব হিট
২০১১ সালেই ইউটিউব ১ ট্রিলিয়ন ভিউয়ারের এক বিশাল মাইলফলক অর্জণ করে। যার অর্থ পৃথিবীতে বসবাস করা ১৪০ জন মানুষের মধ্যে ১ জন ইউটিউব দেখে।
সবচেয়ে বেশি ডিসলাইক
নিশ্চয়ই জানেন ইউটিউব ভিডিওতে যেমন লাইক দেয়ার অপশন রয়েছে, তেমনি ভিডিওটি ভাল না লাগলে ডিসলাইক দেয়ার অপশনও রয়েছে। আর এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ডিসলাইক পাওয়া ইউটিউব ভিডিও হচ্ছে জাস্টিন বিবারের মিউজিক ভিডিও “বেবি”। এই মিউজিক ভিডিওটি এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ কোটি ৪০ লক্ষ ডিসলাইক পেয়েছে।
ইউটিউব বিজনেস
ইউটিউব প্রায় ১০ হাজার অ্যাডভারটাইজ কোম্পানির সাথে পার্টনার করেছে যেখানে ডিজনি, টার্নার, ইউনিভিশনের মত চ্যানেলও আছে। প্রতি বছরে এই পার্টনারশিপ আরও বাড়ছে। বর্তমানে মিলিয়ন বিলিয়ন পার্টনার আছে যারা ইউটিউবকে টাকা দিচ্ছে তাদের প্রোমোশনাল ভিডিও দেখানোর জন্য।
ইউটিউবের সব ভিডিও
ইউটিউবে প্রতি সেকেন্ডে হাজার হাজার ভিডিও আপলোড হচ্ছে। এটা জেনে সত্যিই অবাক হবেন আপনি যদি ইউটিউবের সব ভিডিও দেখতে চান তাহলে আপনার ১৭০০ বছর সময় লাগবে।
ইউটিউব বেশি দেখে অ্যামেরিকানরা
ইউটিউবের জন্ম আমেরিকায় তাই আমেরিকা থেকেই ৩০% ট্রাফিক ইউটিউবে আসে। আর বাকি দেশ থেকে ৭০% আসে। ইউটিউব প্রায় ৬১ টি ভাষায় এভেইলেবল আছে।
ইউটিউব এখন বড় সার্চ ইঞ্জিন
জানেন কি ইউটিউবই এখন সবচেয়ে বড় সার্চ ইঞ্জিন? হ্যাঁ, আপনি অবাক হবেন যে, পৃথিবীর প্রায় ৯০ ভাগ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এখন কোন কিছু জানার জন্যে গুগল, বিং বা ইয়াহুতে সার্চ না দিয়ে ইউটিউবেই সার্চ দিয়ে থাকেন।
ইউটিউবে সুপারহিরো
এখন পর্যন্ত ব্যাটম্যানেই ইউটিউবে সুপার হিরো কারণ ইউটিউবে ব্যাটম্যানের ভিডিও প্রায় ৩ বিলিয়ন বার দেখা হয়েছে।
১০টি দেশে ইউটিউব ব্যান
এটা সত্য যে অনেক দেশেই ইউটিউবকে ব্যান করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২০০৯ সালে চীন এবং ২০১২ সালে পাকিস্তান ইউটিউব ব্যান করে। যার কারণ ছিল ইনোসেন্স অফ মুসলিম ক্লিপ ভিডিও। মোট ১০টি দেশ ইউটিউব ব্যান করে তারা হল ব্রাজিল, তুর্কি, জার্মানি, লিবিয়া, থাইল্যান্ড, তুর্কমেনিস্তান, চীন, উত্তর কোরিয়া, ইরান এবং পাকিস্তান।
পিসি বনাম মোবাইল
পরিসংখ্যানে জানা যায় ৭০% ইউটিউব ভিউয়ার মোবাইল থেকেই দেখেন এবং ৩০% পিসি ইউজ করেন ইউটিউব ভিডিও দেখার জন্যে।
ইউটিউবের জনপ্রিয়তা এখন আরও বাড়ছে। এর প্রধান কারণ ইউটিউবে অনেক নতুন নতুন ক্রিয়েটর তৈরি হচ্ছে। আর এই ক্রিয়েটররাই মূলত ইউটিউবকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আশা করি, ইউটিউবের অজানা তথ্য নিয়ে এই লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে। কিছু নতুন তথ্য জানতে পেরেছেন। এই তথ্যগুলো শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে।
Leave a Reply