নতুন ফ্রিল্যান্সারদের সবচেয়ে বড় সমস্যা আপওয়ার্কে জব না পাওয়া। আসলে যেকোনো কাজ পাওয়ার জন্য প্রথমে উক্ত কাজে দক্ষ হতে হয় এবং কাজ আদায় করে নেয়ার কিছু কৌশল জেনে নিতে হয়। কারণ, আপনি যখন নতুন হবেন, তখন ক্লায়েন্টকে কিভাবে বুঝাবেন আপনি কাজটি ভালোভাবে করে দিতে পারবেন।
এছাড়া একজন ক্লায়েন্ট হাজার হাজার প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্সার রেখে কেন আপনাকে নির্বাচন করবে! এজন্যই কিছু কৌশল অবলম্বন করে আপনাকে কাজ পেতে হবে।
আর তাই এই লেখায় আপওয়ার্কে জব পাওয়ার কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই লেখা পড়ে আপনি হয়তো আপনার কাজে দক্ষ হবেন না কিন্তু কাজ আদায় করার কৌশল রপ্ত করে নিতে পারবেন।
এখানের দেয়া প্রতিটি কৌশল সব বড় বড় ফ্রিল্যান্সারদের থেকে নেয়া অর্থাৎ তাদের সফলতার সোনার কাঠি কি উপায়ে পেয়েছিলেন তার উপর ভিত্তি করে এই লেখা। আর যারা এখনো অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেননি তারা কিভাবে আপওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয় তা দেখে নিন।
আপওয়ার্কে জব পাওয়ার কৌশল
আপওয়ার্কে কাজের ধরণ
আজ থেকে ৪ বছর আগে ২০১৫ সালে ওডেস্ক এবং ইলেন্সকে একত্র করে গঠিত হয় আপওয়ার্ক। ফলে বৃদ্ধি পায় আপওয়ার্কে ফ্রিল্যান্সারদের প্রতিযোগিতা। আপওয়ার্কে বর্তমানে দুই ধরণের কাজ পাওয়া যায়। যথা:
- ঘণ্টা ভিত্তিক জব: নির্দিষ্ট ঘণ্টা ভিত্তিতে কাজ করা হয়। আপনি কত ঘণ্টা কম্পিউটারে কাজ করছেন এটা আপওয়ার্কের অত্যাধুনিক ট্র্যাকার প্রযুক্তি ট্র্যাক করতে সক্ষম। অর্থাৎ আপনার প্রতি ঘণ্টার রেট যদি হয় ১০ ডলার তাহলে ১টা ওয়েবসাইট ডিজাইন করে দেয়ার জন্য যদি আপনার ১০ ঘণ্টা লাগে, তাহলে পাবেন ১০০ ডলার। যা আপনার অ্যাকাউন্টে প্রতি ঘণ্টায় যোগ হবে।
- ফিক্সড জব: ফিক্সড জব হল আপনি একটা ওয়েব ডিজাইন করে দিবেন, তারা আপনাকে ১০০ ডলার দিবে। অর্থাৎ সম্পূর্ণ কাজ করে দিলে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পাবেন।
এই ছিল আপওয়ার্কের জবের ধরন। এবার চলুন আপওয়ার্কে জব পাওয়ার উপায়গুলো জেনে নেয়া যাক।
১. প্রোফাইল কমপ্লিট করা
অসম্পূর্ণ প্রোফাইল দিয়ে কাজ পাওয়ার আশা করা বোকামি। আপওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট খোলার পর আপনার প্রথম কাজ হলো নিজের প্রোফাইলের সব কিছু সঠিকভাবে পূরণ করা। এছাড়া আরও কিছু কাজ করা যেমন:
- আপনার একটি প্রফেশনাল প্রোফাইল ফটো আপলোড করা।
- নিজের স্কিলগুলোর তালিকা দেয়া।
- অভিজ্ঞতা যুক্ত করা।
- পোর্টফলিও যুক্ত করা।
- সঠিক ঘণ্টা রেট যুক্ত করা। অনেকে আন্দাজে এবং ইচ্ছামত দিয়ে দেয়, এটা ঠিক না।
এছাড়া প্রোফাইল কিভাবে সাজাবেন এটা আরও ভাল বুঝার জন্য আপনি আপওয়ার্কের অন্যান্য প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্সারদের প্রোফাইল দেখুন। সম্ভব হলে তাদের মেম্বারশীপ কিনুন।
২. লক্ষ্য ঠিক করা
লক্ষ্য ঠিক করা ছাড়া শুধু ফ্রিল্যান্সিং নয়, কোন কাজে সফল হওয়া যায় না, তাই লক্ষ্য থাকা জরুরি। যদিও আপওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট খোলার অন্যতম উদ্দেশ্য অর্থ উপার্জন কিন্তু সেই উপার্জন আপনি কি কাজ করে করবেন তা আগে ঠিক করুন। আপওয়ার্কে কাজ করার অনেক ক্যাটেগরি আছে।
এসব ক্যাটেগরির মধ্যে আপনি যেসব ফ্রিল্যান্সিং কাজ করতে পারেন সেগুলোর একটি তালিকা দেখে নিন। আর সেখান থেকে আপনি যেই কাজ ভাল পারেন এবং স্বাচ্ছন্দ্য পান সেটা নির্বাচন করুন।
৩. সঠিক জব নির্বাচন
আপওয়ার্কে অনেক ধরণের জব বা কাজ থাকলেও সবগুলোর চাহিদা এক রকম নয়। এরমধ্যে কিছু জব আছে যার পরিমাণও বেশী, আবার চাহিদাও বেশী। আবার কিছু জব আছে যেগুলো বেশী হলেও দক্ষ ফ্রিল্যান্সার না থাকায় দক্ষ ফ্রিল্যান্সারদের চাহিদা থাকে।
তাই আগে আপনি কোন কাজে দক্ষ সেটা নির্বাচন করুন। তারপর দেখুন মার্কেট-প্লেসে কোনটার চাহিদা বেশী। যেমন বর্তমানে প্রোগ্রামিং এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের চাহিদা অনেক বেশী।
৪. সঠিকভাবে বিড করা
অনেকেই আবেগের বশবর্তী হয়ে অ্যাকাউন্ট খোলার পাশাপাশি বিড করে বসেন, এই কাজ করা ঠিক নয়। অবশ্যই আগে সঠিকভাবে বিড করা শিখতে হবে। আবার অনেকে মনে করে যত কম মূল্য দিয়ে বিড করা যায়, তত তাড়াতাড়ি কাজ পাওয়া যাবে, এটাও একটি ভুল ধারণা। সুতরাং বিড করার পূর্বে অবশ্যই সব কিছু জেনে, জব পোস্টের বিবরণ ঠিক মত পড়ে নিতে হবে। এছাড়া নিচের কাজগুলো করতে হবে, যথা:
- সঠিক মূল্যে বিড করতে হবে।
- অন্যের বিড কপি পেস্ট করা পরিহার করতে হবে।
- সঠিক এবং আকর্ষণীয় কভার লেটার লেখা। এক্ষেত্রে অন্যের কভার লেটার কপি পেস্ট করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে অন্যের কভার লেটার থেকে আইডিয়া নিতে পারেন। আপনি যখন একজন ফ্রিল্যান্সার নিবেন, তখন কি কি গুন দেখবেন এবং যাচাই করবেন তার উপর ভিত্তি করে লিখবেন।
- নিজেকে প্রকাশ করুন। আপনার দক্ষতাগুলো এবং পোটফলিও দেখান। এক্ষেত্রে জবের ক্যাটাগরি দেখবেন। কেননা ক্লায়েন্ট চাইলো ওয়েব ডিজাইনার, আপনি আপনার লোগো ডিজাইনের কাজ দেখালে হবে না।
৫. কাজের পোর্টফলিও দেখানো
একজন নতুন ফ্রিল্যান্সারের দক্ষতা যাচাইয়ের প্রধান উপায় হল তার পোর্টফলিও। তাই সবার আগে নিজের পোর্টফলিও তৈরি করুন এবং আপনার আপওয়ার্ক প্রোফাইলে তা শেয়ার করুন। মনে রাখবেন, একটি ভাল পোর্টফলিও আপনার কাজ পাওয়ার একমাত্র হাতিয়ার হিসাবে কাজ করতে পারে।
সুতরাং, সুন্দর আর পাওয়ারফুল একটি পোর্টফোলিও তৈরি করুন। প্রয়োজনে আপওয়ার্কে কাজ করে এবং এক্সপার্ট কারো সাহায্য নিন। কিংবা অন্যদের কিছু পোর্টফোলিও কালেকশন করুন। আর সেগুলো দেখে দেখে নিজেরটা আরো আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করুন।
৬. ক্লায়েন্টের চাহিদা পূরণ
আপনি কি চাইছেন বা আপনার মন কি চাইছে সেটা নয়, বরং ক্লায়েন্ট কি চায় সে চাহিদা মত কাজ করুন। আপনার ভাল লাগাকে কবর দিয়ে ক্লায়েন্টের ভাললাগাকে গুরুত্ব দিন। কেননা ক্লায়েন্ট সন্তুষ্ট হলে পরবর্তীতে সে আবার আপনার সাথে যোগাযোগ করবে। এছাড়া ভাল রেটিং পেতেও সহায়তা করবে।
এমন হতে পারে যে, আপনি একটি ডিজাইন করছেন যেখানে এমন কিছু ক্রিয়েটিভিটি রয়েছে যা খুব সুন্দর হয়েছে। অথচ ক্লায়েন্ট সেটাকে রাখতে চাইছে না। আপনি ভাল করেই বুঝতে পারছেন, যদি বিশেষ সেই ডিজাইনটি সরানো হয়, তবে মূল ডিজাইনের আকর্ষণই নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু আপনাকে মাথায় রাখতে হবে, আপনি আপনার জন্যে নয়, ক্লায়েন্টের জন্যে কাজ করছেন। কাজেই, তার কথাই শুনতে হবে, তার মতামতকেই প্রাধান্য দিতে হবে।
৭. অনলাইনে সক্রিয় থাকা
বিড করার পর ক্লায়েন্ট আপনার সাথে যদি যোগাযোগ করতে না পারে, তবে ওয়ান্টেড লিখে পোস্টার বিলি করবে না। বরং বিরক্ত হবে এবং অন্য ফ্রিল্যান্সারের সাথে যোগাযোগ করে তাকে কাজ দিবে। তাই চেষ্টা করবেন সর্বদা অনলাইনে সক্রিয় থাকার। এটি কাজ পাওয়া এবং ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার বিল্ড-আপের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক প্রপেশনাল ফ্রিল্যান্সার শুধু মাত্র ক্লায়েন্টের সাথে সংযুক্ত থাকার জন্যেই রাত জেগে থাকে। আপনার ক্লায়েন্ট যদি হয় অ্যামেরিকার, তবে আপনার ক্ষেত্রেও রাত জাগার দরকার হতে পারে। কারণ, আমেরিকায় যখন দিন, তখন আমাদের রাত; আর আমাদের যখন দিন তখন অ্যামেরিকায় রাত। এখন আপনার ক্লায়েন্টে নিশ্চয়ই আপনার ঘুমের কথা চিন্তা করে, তার ঘুম হারাম করবে না। বরং, আপনাকেই ক্লায়েন্টের ঘুমের কথা ভেবে নিজের ঘুম মাটি করতে হবে।
৮. কাজের পর ফিডব্যাক
কাজ করার পর অবশ্যই অত্যন্ত নম্রভাবে ক্লায়েন্টের নিকট ফিডব্যাক এবং রেটিং চাইবেন। কেননা এই ফিডব্যাক এবং রেটিং পরে আবার অন্যান্য ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কাজ পেতে সহায়তা করবে।
৯. ধৈর্য
ধৈর্য না থাকলে আপওয়ার্কে আপনি টিকে থাকতে পারবেন না। পৃথিবীর প্রতিটি কাজে ধৈর্য প্রয়োজন। তাই কাজ না পেলে হতাশ না হয়ে পুনরায় চেষ্টা করুন।
১০. দক্ষতা বৃদ্ধি
নিয়মিত স্কিল বৃদ্ধি করার চেষ্টা করুন। পৃথিবী থেমে থাকে না, প্রতিনিয়ত আপডেট হচ্ছে। তাই যুগের সাথে নিজেকে আপডেট করুন। চাহিদা মোতাবেক দক্ষতা বৃদ্ধি করতে থাকুন। দক্ষ ব্যক্তিরা কখনও পরাজিত হয় না।
শেষ কথা
আপওয়ার্কে জব পাওয়ার এই ছিল সংক্ষিপ্ত আলোচনা। অনেকে আপওয়ার্কে জব না পেয়ে হতাশ। আশা করি আজকের এই লেখা আপনাদেরকে সহায়তা করবে। আর বর্তমানে প্রচুর আপওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড হচ্ছে, সাবধান হউন।
Leave a Reply