আপওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড হওয়ার খবরটি কি আপনি পেয়েছেন। জেনেছেন কী পরিমাণ অ্যাকাউন্ট ইতিমধ্যেই সাসপেন্ড করা হয়েছে এবং প্রতিদিন কী হারে আরো অসংখ্য অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড করা হচ্ছে? জানার আগে একজন ভূক্তভোগীর গল্প শুনুন-
আজমল হোসাইন দিপু সাতক্ষিরা থেকে প্রায় ৭ বছর আগে ঢাকায় আসেন কাজের সন্ধানে। মফস্বল শহর থেকে স্নাতক পাস করা দিপু ঢাকায় এসে একটা মোটামুটি মানের চাকরির জন্যে বিভিন্ন কোম্পানীর দ্বারে দ্বারে ধর্না দিয়েছেন বহুদিন।
পুরনো পরিচিত এবং নতুনভাবে পরিচয় হওয়া বহু লোকের পিছে পিছে ঘুরেছেন, কিন্তু মোটামুটি মানের তো দূরের কথা একটা যেনতেন টাইপের চাকরিও জুটাতে পারলেন না। যদিও দিপুর স্নাতকের রেজাল্ট তেমন একটা ভাল ছিল না, তবে তার ইংরেজীতে ছিল দারুণ দক্ষতা। কিন্তু সেই দক্ষতা প্রমাণ করারও তো একটা জায়গা পাওয়া লাগবে!
দিপু যখন দিশহারা হয়ে কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে সাতক্ষিরায় ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন, তখন তার সাথে পরিচয় হলো এমন এক ব্যক্তির যিনি কিনা আপওয়ার্ক থেকে প্রতি মাসে মিনিমাম ১ লক্ষ টাকা আয় করছিলেন।
আশরাফুল ইসলাম সুমন নামের সেই বড় ভাই দিপুকে তার ম্যাচ বাসায় নিয়ে গেলেন। আপওয়ার্কে একটা অ্যাকাউন্ট খুলে দিলেন, বিট করা শিখিয়ে দিলেন। দিপু উঠে পড়ে আপওয়ার্কের পিছনে লেগে গেলেন। ১৫ দিন একটানা বিট করার পর অবশেষে আপওয়ার্কে প্রথম কাজ পেলেন। সেটা ২০১৩ সালের কথা।
এরপর দিপুকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক কাজ পেতে লাগলেন। ২০১১ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত প্রচুর টাকা-পয়সা আয় করলেন। পরিবারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনলেন, বহু পারিবারিক সম্যার সমাধান করলেন।
২০১৬ সালের জানুয়ারীতে দিপু পারিবারিকভাবে বিয়ে করলেন, ঘরে তুলে আনলেন ফুটফুটে সুন্দরী এক নারী। না, এক মাসও টিকলো না দিপুর সংসার। কারণ, ওই সুন্দরীর সঙ্গে আগে থেকেই এক জনের মনের এবং শরীরের সম্পর্ক ছিল। যাইহোক, সে এক বিশাল কাহিনী। আমরা ওই দিকে আর না যাই।
বউ হারানোর পর দিপুর জীবন এলেমেলো হয়ে গেল। দিপু আপওয়ার্কে কাজ করা ছেড়ে দিলেন, পাগলের মত বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে প্রায় আড়াই বছর কাটিয়ে দিলেন। কিছুদিন আগে দিপু আবার সুস্থ্য সুন্দর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলেন। দ্বিতীয় বিয়ে করলেন এবং সংসারের জন্যে আবার আপওয়ার্কে কাজ করা শুরু করতে চাইলেন।
সুতরাং, অ্যাকাউন্টে ঢুকে দিপু আগের মত বিট করা শুরু করলেন। অল্পদিনে অনেকগুলো বিট করলেন। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্যি যে, এতগুলো বিটের বিপরীতে তিনি একটি কাজও পেলেন না। তাতে তেমন সমস্যা নেই, কাজ পাবেন, এটা দিপু ভাল করেই জানেন।
কারণ, আপওয়ার্কে তার ১৬শ ঘন্টা কাজের রেকর্ড রয়েছে। রয়েছে অসংখ্য ফিক্সড্ প্রাইসের কাজ করার রেকর্ডও। এ রকম ভারী একটা প্রোফাইল দিয়ে কাজ পাওয়া যাবে না, এটা তো হতেই পারে না। কিন্তু এটা না হলেও হয়ে গেল অন্যটা, যেটা দিপুর জীবনকে নতুন করে হতাশায় ভরে তুললো।
এ কয়দিনে কাজের জন্যে যে বিটগুলো করেছেন দিপু, সেগুলোর অবস্থা জানার জন্যে আপওয়ার্কের অ্যাকাউন্টে ঢুকলেন। আর ঢুকেই তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল, নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তিনি। এটা তিনি কী দেখছেন!
উপরের ছবি দেখে নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছেন যে, দিপুর অ্যাকাউন্টটি আপওয়ার্ক সাসপেন্ড করে দিয়েছে। কিন্তু কেন? আপওয়ার্ক এখানে কোন কারণ দেখায়নি। শুধু কাস্টোমার সাপোর্ট টিমের সঙ্গে কন্টাক্ট করতে বলেছে।
সাপোর্ট টিমের সঙ্গে কন্টাক্ট করার আগে, আপওয়ার্কে কাজ করে এমন কিছু বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিত লোকের সঙ্গে ফোনে কথা বলে দিপু যা জানলো, তা বিস্ময়কর। শুধু দিপুই নয়, তার বন্ধু ও পরিচিতজনদের মধ্যে অনেকের অ্যাকাউন্টই সাসপেন্ড হয়েছে। এটা জানার পর দিপু মেল চেক করলো এবং দেখলো আপওয়ার্ক সেফটি এন্ড ট্রাস্ট টিমের কাছ থেকে আসা নিচের মেলটি এসেছে।
মজার বিষয় হচ্ছে, দিপু অন্যদের সঙ্গে আবার যোগাযোগ করে জানলো যে, সবার মেইলে হুবহু এই কথাগুলোই রয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে যে, আসলে অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড করার স্ট্রং কোন কারণ নেই এবং আসল কারণটিও অজানা। সবাইকে মেইলের মাধ্যমে যে কারণটি জানানো হয়েছে, সেটি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।
ইমেলে প্রত্যেককেই বলা হচ্ছে যে, সে অনেক বেশি প্রপোজাল পাঠিয়েছে অথচ কাজ বা আর্নিং পাচ্ছে না। যার মানে দাঁড়ায় যে, তার স্কিলের সঙ্গে ক্লায়েন্টের জব পোস্টের মিল খাচ্ছে না। একজন ফ্রিল্যান্সারের অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড করার জন্যে এটা কি কোন স্ট্রং কারণ হতে পারে!
- আরো পড়ুন: কিভাবে আপওয়ার্কের স্কিল টেস্টে পাস করবেন
কারণ স্ট্রং হোক আর না হোক, এটাই এখন আপওয়ার্কের স্বাভাবিক চিত্র। আপওয়ার্ক ফ্রিল্যান্সার ছাটাই করছে। কারো কিছু করার নেই, তাদের ডিসিশনই ডিশিসন।
খেয়াল করে দেখুন, মেইল বডির ৪র্থ প্যারায় বলা আছে, যদি সে আপওয়ার্কের এই ডিসিশনের বিপক্ষে আপিল করতে চায়, তাহলে তাদেরকে মেইল করতে। এটা শুনে খুশি হওয়ার কিছু নেই। কারণ, এটা তাদের একটা পলিসি মাত্র, একটা ফরমালিটি মেনটেন করা ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ, আপিল করার পর অটো জেনারেটেড একটা রিপ্লে আসে, যা নিম্নরূপ-
বুঝতেই পারছেন, সবাই এই একই রিপ্লে পাচ্ছে যা ওই মেইলটায় অটো রিপ্লে হিসেবে সেট করা আছে, যেখানে বলা হচ্ছে-
১. আপনি কেন তাদের ডিসিশনের বিপক্ষে আপিল করেছেন, তা ডিটেইলে জানাতে হবে।
২. আপনার যদি প্রোপাইলে অ্যাড করা স্কিলের বাইরে আর কোন স্কিল থাকে, তবে সেটা সার্টিফিকেট অ্যাটাস্ট করে প্রমাণসহ তাদেরকে জানাতে।
তার মানে, বোঝাই যাচ্ছে আপিল করে কোন লাভ নেই। অ্যাকাউন্ট গেছে তো গেছে, এটা আর উদ্ধার করা যাবে না।
আপনার অ্যাকাউন্টটিও যদি সাসপেন্ড হয়ে থাকে, তবে আপনার এখন করণীয় কী তা নিয়ে আসছে আমাদের পরবর্তী পোস্ট, অপেক্ষায় থাকুন।
আর আপনার অ্যাকাউন্টটি যদি সাসপেন্ড না হয়ে থাকে, তবে আপাতত: প্রপোজাল দেয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ, জানা গেছে যে অ্যাকাউন্টগুলো থেকে বিট করা হচ্ছে না অর্থাৎ কোন ক্লায়েন্টের জব পোস্টের বিপরীতে প্রপোজাল দেয়া হচ্ছে না, সেগুলো যেমন আছে তেমনই থাকছে।
আর যদি বিট করতেই চান, তবে বুঝে শুনে বিট করুন। যে কাজের প্রপোজাল দিচ্ছেন, তা পাওয়ার সম্ভাবণা বিচার করুন। ঘন ঘন প্রপোজাল দেয়া থেকে বিরত থাকুন। নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করুন, আপনি যে কাজটির জন্যে প্রপোজাল দিচ্ছেন, সে কাজটি করার জন্যে যে স্কিলগুলোর প্রয়োজন সেগুলো আপনার প্রোফাইলে অ্যাড করা আছে কিনা। অর্থাৎ, আপনার প্রোফাইলে যে স্কিল অ্যাড করা আছে, সে স্কিল রিলেটেড জবগুলোতেই কেবল প্রপোজাল দিন।
আপওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড হওয়া থেকে কিভাবে রক্ষা পাবেন তা নিয়ে আমাদের আরেকটি পোস্ট আসছে, সুতরাং অপেক্ষায় করুন আর হৈচৈ বাংলার সাথেই থাকুন।
Leave a Reply