অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৩ এখন নিঃসন্দেহে বাজারের সেরা একটি স্মার্ট ওয়াচ। কিন্তু এই বছর অ্যাপল আরো নতুন বৈশিষ্ট্য এবং আরও বড় পর্দাসহ এর একটি উত্তরাধিকারী বের করবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত বছরের মডেলটি ১২ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করা হয়েছিল। তাই আমরা সম্ভবত অ্যাপল ওয়াচ ৪ এর প্রকাশ থেকে মাত্র কয়েক মাস দূরে রয়েছি। তবে ইতিমধ্যেই নির্ভরযোগ্য সুত্র থেকে এর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য ফাঁস হয়েছে। চলুন এক নজরে দেখে নেয়া যাক কি কি অপেক্ষা করছে অ্যাপল ওয়াচ ৪ এ।
অ্যাপল ওয়াচ ৪ এর ডিজাইন ও হার্ডওয়্যার
কেজিআই সিকিউরিটিজের একটি বিশ্বস্ত সুত্র মতে, অ্যাপল ওয়াচ ৪ সিরিজটিতে আগের মডেলের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি স্ক্রিন এর অংশ থাকবে। তবে এতে বড় পর্দা ব্যবহার করার জন্য আগের বাড়তি বেজেল কমানো হবে নাকি সম্পূর্ণ ঘড়িটির আয়তনই বাড়বে তা এখনো নিশ্চিত নয়। অপর দিকে প্রযুক্তি বিশ্লেষক মিঃ মিং চি কুও অ্যাপল এর এই নতুন প্রজন্মের ঘড়িতে আগের তুলনায় বড় ব্যাটারি থকবে বলে ধারণা করছেন। তাই অ্যাপল ওয়াচ এর পূর্ববর্তী সব প্রজন্মের মাপ ৩৮মিমি এবং ৪২মিমি এর মাঝে হলেও নতুন অ্যাপল ওয়াচ এর ক্ষেত্রে আকার আগের মতই থাকবে কিনা সেটা এখনো নিশ্চিত নয়।
তার মতে, পূর্ববর্তী অ্যাপল ওয়াচ গুলোতে পর্দার চারপাশে মোটা বেজেল ছিল। তাই যদি অ্যাপল এই বেজেল কমিয়ে ফেলে তাহলে আমরা হয়ত আগের চেয়ে খুব বড় কোন ডিভাইস দেখতে পাব না। কুও আরও বলেন, নতুন ঘড়িটি ডিজাইন এর দিক থেকে আরও বেশি প্রচলিত এবং আধুনিক হবে যা তাদের বিক্রি বাড়াতে সহয়তা করবে। তাই আমরা আশা করতে পারি অ্যাপল ওয়াচ ৪ খুব বেশি মোটা বা ভারি হবে না।
অ্যাপল ক্যালিফোর্নিয়াতে তাদের নিজস্ব কারখানায় মাইক্রো এলইডি পর্দা প্রস্তুত করছে বলে জোর গুজব রয়েছে। তাই অ্যাপল ওয়াচ ৪ এই প্রযুক্তির প্রথম ডিভাইস হতে পারে। বর্তমান ডিভাইসগুলো ও এলইডি নির্ভর, যদি ঘড়িটিতে মাইক্রো এল ই ডি ব্যাবহার করা হয় তবে তা বেশ কিছু সুবিধা দিবে। কারণ মাইক্রো এলইডি আরও পাতলা এবং কম শক্তি খরচ করে। ফলে এর বাইরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি এর ব্যাটারি ব্যাকআপও বেশি পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। তবে এখনো যেহেতু মাইক্রো এলইডি এর যোগান অ্যাপল এর চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত নয় সেহেতু অ্যাপল ওয়াচ ৪ এই প্রযুক্তির প্রথম ডিভাইস নাও হতে পারে।
যেহেতু পর্দা নিয়ে কথা হচ্ছে আমরা বলতে পারি, গোলাকার পর্দার অ্যাপল ঘড়ি আমরা হয়ত খুব দ্রুতই দেখতে পাব। তবে তা যে এ বছরই আসবে তা বলা যায় না। তবে অ্যাপল বলেছে তারা এই মুহূর্তে গোলাকার ঘড়ির কথা ভাবছে না। কারণ তারা মনে করে স্মার্ট ঘড়ি এবং সাধারন ঘড়ির মাঝে পার্থক্য থাকা উচিৎ। যেহেতু সাধারণ ঘড়ি গোল তাই তারা স্মার্ট ওয়াচ এর ক্ষেত্রে চারকোনা আকৃতি রাখাটাই যুক্তিযুক্ত মনে করে। তবে যেহেতু বেশিরভাগ লোক স্মার্ট ওয়াচ কে ফ্যাসন অনুষঙ্গ মনে করে সেহেতু গোল স্মার্টওয়াচ এর আবেদন যথেষ্ট। সে ক্ষেত্রে অ্যাপল যে গোলাকার ঘড়ি তৈরি করবে না তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।
অ্যাপল ওয়াচ ৪ এর স্মার্ট বেল্ট
অ্যাপল তাদের পরিধানযোগ্য যন্ত্রে স্মার্ট বেল্ট যুক্ত করবে বলেও গুজব রয়েছে। প্রাথমিকভাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফিট হয় এমন বেল্ট আনতে পারে তারা যা ব্যাবহারকারীর হাতের মাপ মত নিজে নিজে ফিট হবে। অ্যাপল গত বছর এ সংক্রান্ত একটি পেটেন্ট নিবন্ধন করেছে। তাই এটা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না যে অ্যাপল ওয়াচ ৪ এ এই প্রযুক্তি থাকবে না।
যাই হোক, এসবই এখন পর্যন্ত ধারণা। অ্যাপল অবশ্য বলেছে তারা স্মার্ট বেল্ট নিয়ে কাজ করছে যাতে এর ওজন কিছুটা কমানো যায় এবং তা যেন পাতলা ঘড়ির সাথে মানায়। এছারাও ঘড়ির ব্যাটারি বেল্ট এ বসানো যায় কিনা তাও অ্যাপল এর ভাবনায় রয়েছে। এর মধ্যে কোরিয়ান কোম্পানি লিবেস্ট অ্যাপল এর একটি ভার্সন এর জন্য এ ধরনের একটি ঘড়ি বের করেছে। ব্যাটারিসহ বেল্ট এর ব্যাপারে অ্যাপল ২০১৫ সালে একটি পেটেন্ট নিবন্ধন করেছিল। তাই অ্যাপল ওয়াচ ৪ এ এই প্রযুক্তিও থাকতে পারে। কিন্ত তা জানতে হলে আমাদের অ্যাপল ওয়াচ রিলিজ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
অ্যাপল ওয়াচ ৪ এর ব্যাটারি লাইফ
সাধারণ অ্যাপল ওয়াচ প্রতিদিন চার্জ করতে হয় যা অন্য স্মার্ট ওয়াচ এবং ফিটনেস গিয়ার এর তুলনায় অসুবিধাজনক। অ্যাপল এ দিকে নজর দিচ্ছে। তারা স্মার্ট ওয়াচ ২ এবং ৩ তে ব্যাটারি লাইফ এর কিছুটা উন্নতি করতে পেরেছে কিন্ত এখনো অনেক উন্নতির সুযোগ রয়েছে। ঘড়ির সাথে একটি বড় ব্যাটারি বা এর বেল্ট এ একটি ব্যাটারি শুধু এর বার বার চার্জ করার ঝামেলাই কমাবে না বরং এর উপযোগিতা এবং ডাটা গ্রহন সক্ষমতা বাড়াবে।
যেমন, অ্যাপল ওয়াচ এ রাতে ঘুমানোর সময় চার্জ না থাকলে এটি সঠিক ঘুমানোর ডাটা নিতে পারে না।তাই ব্যাটারি সক্ষমতা বাড়ানো গেলে এ ঝামেলা দূর করা সম্ভব।
অ্যাপল ওয়াচ ৪ এর হেলথ, ফিটনেস ও অন্যান্য
২০১৭ সালের ডিসেম্বর এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী অ্যাপল তাদের পরবর্তী ঘড়ির জন্য একটি ইকেজি হার্ট মনিটর নিয়ে কাজ করছে। ইকেজি ইসিজি বা ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম নামেও পরিচিত যা হার্ট এর বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ রেকর্ড করে যা বর্তমানে ব্যবহৃত প্রযুক্তির চেয়ে অনেক গুন নিখুঁত। অ্যাপল এর অভ্যন্তরীণ সুত্র দিয়ে এক প্রতিবেদন এ লেখা হয়েছে যে, অ্যাপল হার্ট এর অস্বাভাবিক কার্যকলাপ বুঝতে পারে এমন একটি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে।
গ্যালাক্সি এস 9 এবং এস 9 + এ সম্প্রতি প্রমাণিত হয়েছে যে, স্মার্টফোন সঠিকভাবে রক্তচাপ পরিমাপের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। তাই অ্যাপল তার অনুরূপ বৈশিষ্ট্যটি চালু করার চেষ্টা করলেও আমরা অবাক হব না। এটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বেল্ট যুক্ত হবে বলেও গুজব রয়েছে, যা ব্যবহারকারির সর্বনিম্ন হস্তক্ষেপে সঠিকভাবে রক্তচাপ নির্ণয় করতে পারবে।
অ্যাপল ওয়াচ ৪ এর ফেস আইডি
অ্যাপল ওয়াচ এ একই সাথে একটি ক্যামেরা ও স্মার্ট বেল্ট রাখার ধারনা উদ্ভট মনে হলেও অ্যাপল এর সাম্প্রতিক পেটেন্টগুলোর মধ্যে এটা অন্যতম। তবে এখনি আমরা স্মার্ট ওয়াচ এ আইফোন এক্স এর মত ৩ডি ফেস আইডি আশা করতে পারি না। কারণ স্মার্ট ওয়াচ প্রযুক্তি এখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছেনি। তবে অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৪ এ ২ডি ফেস আইডি থাকলে অবাক করার বিষয় হবে না। এটি হলে আইফোন ছাড়াই ঘড়িতে ফেস আইডি পাওয়া যাবে যা হবে দারুন একটি ব্যাপার।
দাম এবং সম্ভব্য রিলিজ ডেট
বর্তমানে অ্যাপল ওয়াচ ৩ এর ওয়াইফাই অনলি মডেলটি বিক্রি হচ্ছে ৩২৯ ডলার এবং ওয়াইফাই এবং সেলুলর মডেলটি বিক্রি হচ্ছে ৩৯৯ ডলারে। আশা করা যায় অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৪ এর দাম অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৩ এর কাছাকাছি হবে। যদিও জোর গুজব রয়েছে যে এর দাম গত বছরের মডেলটির চেয়ে একটু বেশি হতে পারে। চলুন এক নজরে দেখে নেয় অ্যাপল ওয়াচ এর ইতিহাস-
- অ্যাপল ওয়াচ: 24 এপ্রিল 2015
- অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ 1 এবং সিরিজ 2: 16 সেপ্টেম্বর 2016
- অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ 3: 22 সেপ্টেম্বর 2017
- অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ 4: সেপ্টেম্বর 2018 (আনুমানিক প্রকাশের তারিখ)
উপরে উল্লেখিত দাম শুধু অ্যাপল ওয়াচ ৩ এর ক্ষুদ্রতম সংস্করণ এর। বৃহত্তর সংস্করণ এর ক্ষেত্রে ফিতার উপাদান এবং ঘড়ির উপাদান এর উপর নির্ভর করে মূল্য বৃদ্ধি হবে। আসলে, কিছু সিরিজ ৩ “সংস্করণ” বর্তমানে $ ১২৯৯ পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আমরা একটি নুন্যতম হিসেব দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
Leave a Reply