কিউ আর কোড কে আপনাদের সাথে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার মত কিছুই নেই। তবে সেরা কিউ আর কোড রিডার অ্যাপ সম্পর্কে জানার আগে কিউ আর কোড কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নেওয়ার জন্য এই পোষ্টটি পড়ে ফেলতে পারেন।
দিন বদলের সাথে সাথে মোবাইল ইন্ডাস্ট্রী দ্রুত গতিতে প্রসারিত হচ্ছে। একটা সময় ছিল যখন মানুষকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে কম্পিউটারে লগ ইন করার প্রয়োজন হতো। কিন্তু এখন ব্যপারগুলি অনেকটাই ভিন্ন। কম্পিউটারের চাইতে মানুষ এখন স্মার্টফোনগুলিতে শুধুমাত্র একটি ট্যাপের মোবাইল ডাটা কানেকশন অন করে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে বেশি অভ্যস্ত। কোটি কোটি মানুষের ব্যবহারের ফলে বিশ্বের বড় বড় কোম্পানীগুলোও মোবাইল ভিত্তিক পেমেন্ট গ্রহণ পদ্ধতিতে আগ্রহী হয়ে উঠছে যার কারণে কিউ আর কোডের প্রসার আরো বেড়েই চলেছে।
সেরা কিউ আর কোড রিডার অ্যাপ
অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস চালিত স্মার্টফোনগুলো বাজারে আসার পর থেকেই ১০ বছর পূর্বে নোকিয়ার মত কোম্পানীগুলো আমাদের যে সকল সেবা ব্যবহারে অভ্যস্ত করেছিল, তার অনেকগুলিকেই বিলুপ্ত করে চলেছে। এমনকি এসএমএস, এমএমএস, জিএসএম কলও এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। বর্তমান সময়ে টেলিকম কোম্পানীগুলোর আয়ের সিংহভাগই আসে ইন্টারনেট ভিত্তিক সেবা থেকে।
কিউ আর কোডের দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাওয়া জনপ্রিয়তার কারণে অনেক কোম্পানীই ইতিমধ্যেই বারকোড ব্যবহার করা ছেড়ে দিয়েছেন। যদিও এই দুটিই একই ধরনের প্রযুক্তি কিন্তু কিউ আর কোডের জনপ্রিয়তার সবচয়ে বড় কারণটি হলো স্মার্টফোনের সাহায্যে পরিচালনার সুবিধা। তাই দেরি না করে চলুন পরিচিত হয়ে নেই সেরা ৫টি কিউ আর কোড রিডার অ্যাপ এর সাথে।
QR Code Reader by Scan Corp
কিউ আর কোড রিডার অ্যাপগুলির মধ্যে স্ক্যান কর্প কোম্পানীর কিউ আর স্ক্যানার অ্যাপটি প্লে ষ্টোরে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। ১১.৪ মেগাবাইটের এই অ্যাপটি ইতিমধ্যে ৫০ লক্ষেরও বেশি ব্যবহারকারী ডাউনলোড করেছেন এবং স্বক্রিয়ভাবে ব্যবহার করছেন।
অ্যাপটি চালু করার সাথে সাথে এটি তার নিজস্ব ক্যামেরা মডিউলকে স্বক্রিয় করে এবং কোড স্ক্যান করার জন্য একটি নির্দিষ্ট বর্গাকৃতির সীমারেখা প্রদর্শ করে। নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে কিউ আর কোডটি রাখলেই অ্যাপটি ফলাফল প্রদর্শন করে। এছাড়াও অ্যাপটিতে রয়েছে অন্ধকারে স্ক্যানিং এর সুবিধা।
QR Code Reader by TWMobile
কিউ আর কোড রিডিং এর জন্য এটি আরো একটি অসাধরণ অ্যাপ। অ্যাপটি ডেভেলপ করেছে টিডব্লিউএম মোবাইল। এই অ্যাপটির কাজ কররা জন্য ক্যামেরার এক্সেস পারমিশন প্রদান করার প্রয়োজন হয়।
অ্যাপটি চালু করলে এটি একটি ইনফোগ্রাফিক এর মাধ্যমে নিজের কার্যপ্রনালী ও ব্যবহারবিধি সম্পর্কে ব্যবহারকারীকে তথ্য সরবরাহ করে। তবে সবচেয়ে ভালো দিকটি হচ্ছে এই অ্যাপটি সম্পূর্ণ বিজ্ঞাপন মুক্ত।
QR Droid Scanner
এই অ্যাপটির কাজ করার জন্য ডিভাইস এবং অ্যাপ এর হিস্টোরি এক্সেস, কনট্যাক্ট, ফটো/মিডিয়া ফাইল এবং ক্যামেরা এক্সেস পারমিশন প্রদানের প্রয়োজন হয়ে থাকে। অ্যাপটি একই সাথে একাধিক অ্যাপের সুবিধা প্রদান করে থাকে। চলুন এক নজরে ১২ মেগাবাইটের এই অ্যাপটির উল্লেখযোগ্য কিছু ফিচার সম্পর্কে জেনে নেই।
- ফোন কনট্যাক্ট, ব্রাউজার বুকমার্ক, ম্যাপ ইত্যাদি থেকে কিউ আর কোড তৈরীর সুবিধা।
- ওয়েবসাইট, ম্যাগাজিন, বই ইত্যাদির কোড পড়তে পারার ক্ষমতা।
- স্ক্যানকৃত কোডগুলি পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণের সুবিধা।
- ইএসডিডি কোড ডায়াল প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
- উইডগেট সমর্থন করে।
Avira QR Scanner
ইন্টারনেটে তথ্য আদান প্রদানের সবগুলি মাধ্যম আজকের দিনে কোনমতেই নিরাপদ নয়। সম্প্রতি কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে হ্যাকাররা কিউ আর কোডের মধ্যে তাদের হ্যাকিং স্ক্রিপ্টগুলিকে লুকিয়ে রাখে। উক্ত কিউ আর কোডটি কোন ডিভাইস দ্বারা স্ক্যান করা হলে ডিভাইসটি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ব্যবহারকারীর সকল তথ্য হ্যাকারের কাছে পাচার করে দেয়।
আভিরা কিউ আর স্ক্যানার বারকোড এবং কিউ আর কোড সংক্রান্ত এ সকল ঝুঁকি থেকে আপনাকে মুক্ত রাখে। অ্যাপটি কিউ আর কোডের মধ্যে থাকা প্রতিটি লিংক স্ক্যান করে এবং সন্দেহজনক যে কোন কোডকে সাথে সাথে ব্লক করে দেয় যা আপনাকে ফিশিং এর মত হ্যাকিং থেকে নিরাপদ রাখে। আভিরা কিউ আর স্ক্যানার এর আরো কিছু উল্লেখযোগ্য ফিচার হলো:
- শক্তিশালি এবং দ্রুতগতি সম্পন্ন কিউ আর কোড স্ক্যানার।
- আভিরা ইউআরএল কাউড টেকনলোজি সমৃদ্ধ যা রিয়্যাল টাইম ইআরএল স্ক্যান করতে সক্ষম।
- ভাইরাস আক্রান্ত ওয়েবসাইটগুলি লোড হওয়ার পূর্বেই ব্লক করতে সক্ষম।
- কিউ আর কোডের সাথে লিংক থাকা ওয়েবসাইটের পূর্ণ ইউআরএল আগেই প্রদর্শন করে।
- ওয়েবসাইটগুলিকে ফেসবুক, টুইটারের মত সোস্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করার সুবিধা সম্বলিত।
সেরা কিউ আর কোড রিডার অ্যাপ কেন বারকোড থেকে অনেকগুন বেশি ভালো তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যেখানে বারকোড মাত্র ৪৮টি অক্ষর ধারণ করতে পারে, কিউ আর কোডের ক্ষমতা সেখানে ১০০। এছাড়াও অক্ষরগুলি ম্যাট্রিক্স অ্যারে ফরম্যাটে থাকে বলে মাত্র ২-৩ সেকেন্ডেই তা সনাক্ত করা সম্ভব হয়।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে কিউ আর কোড প্রযুক্তি অনেক সহজ করে তুলেছে। মোবাইল ফোনে ওয়েবসাইটের ইউআরএল কপি করা বা টাইপ করার মত ঝামেলার কাজগুলিকে এটি এক নিমিষেই সম্পাদন করতে পারে। আর একারণেই উপরের অ্যাপগুলির ডাউনলোডকারীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সেই দিন বোধ হয় খুব বেশি দুরে নয়, যেদিন কিউ আর কোড প্রযুক্তি পুরোপুরিভাবে বারকোডের স্থান দখল করে নেবে।
Leave a Reply