দৈনন্দিন বিভিন্ন লেখালখির কাজ এখন আমরা অনেকেই স্মার্টফোনের মাধ্যমে সেরে থাকি। আর লেখালিখির বড় একটা অংশ হয় বাংলায়। প্লে স্টোরে ফোনেটিক, জাতীয়, প্রভাত, ইউনিজয় কিংবা এর বাইরে আরও বেশ কিছু লে-আউটের অনেক কি-বোর্ড অ্যাপস্ রয়েছে। প্রায় সব কি-বোর্ডেই ছোট বড় কিছু সুবিধা অসুবিধা রয়েছে। আর এ সব সুবিধা অসুবিধাগুলো বিবেচনা করে আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে এ রকম ৫টি অ্যান্ড্রয়েড বাংলা কি-বোর্ড নিয়ে আজকে কথা বলব।
অ্যান্ড্রয়েড বাংলা কি-বোর্ড
Ridmik Keyboard
আন্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করেন, কিন্তু রিদমিকের নাম জানেন না, এ রকম মানুষ বোধ হয় বাংলাদেশে নেই। এখন পর্যন্ত এটি ডাউনলোড হয়েছে এক কোটি বারেরও উপরে! এবং এ পর্যন্ত এটিই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বার ডাউনলোড হওয়া দেশীয় বাংলা কীবোর্ড অ্যাপস্। শুধু ডাউনলোডেই নয়, এই মুহুর্ত পর্যন্ত ৮৮,২৯৪ জন ব্যবহারকারীর দেওয়া ৪.৬ রেটিং রয়েছে অ্যাপটির! তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, ২০১৫ সালের ২৫ অক্টোবরের পর অ্যাপটির আর কোন আপডেট আসেনি।
Word Suggestion, কপি-কাট-পেস্টের জন্য শর্টকাটের ব্যবস্থা, কীবোর্ড হাইট অ্যাডজাস্টিং, পুপ-আপ, লং প্রেস টাইম সেটাপ, ভাইব্রেশন, কী সাউন্ড, ভলিউম কী দিয়ে কার্সর মুভমেন্ট এ ধরণের সব সুবিধাই পাওয়া যাবে এতে। আছে ট্যাব বাটন। প্রয়োজনীয় ফর্মে T9 কীবোর্ডও চলে আসে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। তবে শেষ ভার্সনটাতে যোগ করা হলেও তার পরিমাণ খুব বেশি নয়। ৭৮ টি। নতুন ভার্সনে সিম্বলও রয়েছে তুলনামূলকভাবে অনেক কম। স্পিচ টু টেক্সট সিস্টেমটি ব্যবহার করতে গেলে সমস্যায় পড়তে হবে নিয়মিতই।
আমার কীবোর্ড
এটি তৈরী করেছে দেশের অন্যতম সফল অ্যাপ ডেভেলপার Creative Apps BD নামের প্রতিষ্ঠানটি। অল্পদিনেই দশ হাজার ডাউনলোডের ঘর ছাড়িয়েছে। একদমই স্বকিয়তা বজায় রেখে তৈরী এই কীবোর্ডটির সাদা-মাটা কিন্তু রুচিশীল ডিজাইন যে কারোরই মন ভালো করে দেওয়ার মতো!
কীবোর্ডটিতে পপ-আপ সিস্টেম নেই। ওয়ার্ড সাজেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিও এতে একদমই নেই। ট্যাব বাটনের কাজ যদি আপনার থেকে থাকে, তাহলেও এই কীবোর্ডটি আপনার জন্য আপাতত নয়। ভয়েস টাইপিং এর ব্যাবস্থা এতে নেই। সিম্বলের ক্ষেত্রে অতি প্রয়োজনীয়গুলোই শুধু আছে। তবে ইমোজির ব্যাপারে কোন কার্পন্য করা হয় নি। গুগলের প্রায় সবগুলো ইমোজিই পাবেন এতে।
সাদামাটা সেটিং আছে সাউন্ড/ভাইব্রেশন অন অফ, থিম পরিবর্তন আর কীবোর্ড হাইট কমানো বাড়ানোর সুবিধা। তবে ওয়ার্ড সাজেশনে ব্যাপারটি না থাকায় দারুন একটা সুবিধা আপনি এতে পাবেন, যদি আপনার ফোনে মেইল, বা এভারনোটে নোট লেখার সময় ফন্ট ভেঙে যাওয়ার এ রকম সমস্যা থেকে থাকে! যেখানে অন্যসব ফোনেটিক কীবোর্ড অচল হয়ে পড়ে সেখানে এটি আপনাকে একটুও ঝামেলাতে ফেলবে না।
Avroid
অভ্র+অ্যান্ড্রয়েড! অভ্র এর চেয়ে বেশি কিছু!! হ্যাঁ, একে যদি কেউ আদর রিদমিক বা অভ্র এর ছোট ভাই ডাকতে চায়, তাহলে তাকে একেবারেই দোষ দেওয়া যাবে না! আপগ্রেড বন্ধ করে দেওয়ায় রিদমিকের ব্যাবহারকারীরা যে সমস্যাগুলোর সমাধান পাচ্ছিলেন না, তার প্রায় সব সমাধানই চলে এসেছে এতে!! এর বাইরে সবসময় যোগাযোগের জন্য আছে অফিয়াস টেলিগ্রাম গ্রুপ! ইমোজি স্বল্পতা, সিম্বলের স্বল্পতা, এ ধরণের সমস্যা অনেকটাই সমাধান হয়েছে।
প্লে স্টোরে খুব অল্পদিনের মধ্যই জনপ্রিয় হওয়া এই কীবোর্ডটিরও ডাউনলোড হয়েছে ১০ হাজার বারেও উপরে। আছে ৯১৬ জন ব্যাবহারকারীর দেওয়া ৪.৭ রেটিং। রিদমিকের সবগুলো সুবিধাই এতে আছে। বোনাস হিসেবে আছে ১৫০ টি দরকারি ইমোজি। প্রয়োজনীয় সকল ধরণের সিম্বল। যেটা আমার কাছে খুবই চমৎকার মনে হয়েছে। ১৮ টি দরকারী ইমোটিকনও যুক্ত করা আছে ফুলস্টপ বাটনে। STT ও কাজ করে চমৎকারভাবে।
থিমের ব্যাপারে প্রশংসা বা নিন্দা কোনটাই করা ঠিক হবে না। আরেকটু ভালো করলে অনেকটাই পারফেক্ট হতো। T9 কি-বোর্ডের সিস্টেমটা না থাকায় এর আরও একটা অসুবিধা।
Parboti Keyboard
অনস্ক্রিন কি-বোর্ডের পাশাপাশি এক্সটানাল কি-বোর্ডেও বাংলা লেখার সুবিধা আমার কাছে এই কি-বোর্ডের প্রধান বৈশিষ্ট্য মনে হয়েছে। এছাড়াও ইচ্ছে মতো লে-আউট কাস্টমাইজ আর মাল্টি ট্যাপের মতো ইউনিক ফিচারও এতে আছে। তবে সেটা যেহেতু ফোনেটিক লে-আউটে কোন কাজে লাগবে না, তাই সেদিকে যাবো না। ফোনেটিকে লেখা যাবে অভ্র লে-আউটেই। তবে ভাষা পরিবর্তনের বাটনটি অন্য কি-বোর্ডগুলোর সিম্বল বাটনের জায়গায় থাকায়, প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা হতে পারে।
৭০০+ ইমোজি আছে Parboti Keyboard এ। তবে সেগুলো ক্যাটাগরি অনুযায়ী ভাগ করা না থাকায় এটাও একটু বিরক্তিকর মনে হতে পারে। থিমের ক্ষেত্রেও প্রায় একই রকম কথা বলতে হবে। অন্য কি-বোর্ডগুলোর চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে থিম এখানে থাকলেও সেগুলো খুব একটা দৃষ্টিনন্দন বলা যাবে না। Parboti Keyboard এর আরেকটি সমস্যা হল, ভয়েস কি-বোর্ড নেই এতে।
তবে অন্য যেকোন কীবোর্ডের চেয়েই বেশি কাস্টমাইজ করা যাবে একে। এমনকি কি-বোর্ডের থাকা ফন্টগুলোর সাইজ, ফ্যামিলি পরিবর্তন করে নিতে পারবেন ইচ্ছেমতো। কপি, কাট, পেস্ট বা অন্য যে কোন মেন্যুতে যাওয়ার জন্য শর্টকাট একটা মেন্যুবার আছে এতে। ওয়ার্ড সাজেশনও কাজ করে চমৎকারভাবে। কিন্তু দুঃখের কথা হলো, এক লাখেরও বেশি ডাউনলোড হওয়া এ কীবোর্ডটির সর্বশেষ আপডেটটি এসেছে একবছরেরও আগে। রিদমিকের মতো এটিও নিভে না গেলে নিঃসন্দেহে সমস্যাগুলোর সমাধান এতোদিনে হয়ে যেত!
<
Gboard
গুগলের জি-বোর্ড নিয়ে আসলে বলার মতো কিছু নেই। গুগলের অন্য অ্যাপস্গুলোর মতই চমৎকার একটি অ্যাপস্। ফোনেটিক লেখার সিস্টেমটা যদি সেইম “আমার কি-বোর্ড” এর মতো হতো, তাহলে চোখ বন্ধ করে এক শব্দে এটাকে পারফেক্ট বলে দেওয়া যেত!
বাংলা লেখার জন্য জি-বোর্ডে মূলত তিনটি লে-আউট আছে। ফোনেটিক, সাধারণ আর হ্যান্ডরাইটিং। ফোনটিকে এর নির্দিষ্ট করে আসলে কোন লে-আউট নেই। ইংরেজিতে যেটা লিখবেন ঠিক সেটার কাছাকাছি সঠিক শব্দ বা সেই শব্দটা লেখা হয়ে যাবে। সহজ বাংলায় একে বলা যায় নিখুঁত ফোনেটিক কি-বোর্ড।
একটা কি-বোর্ড যা যা থাকা সম্ভব, তার থেকে আসলেই বেশি কিছু আছে জি-বোর্ডে। সরাসরি ওয়েবে সার্চ করা, সরাসরি গুগল ট্রান্সলেটর ব্যবহার করে অন্য একটা ভাষায় লেখার সুবিধা আমি অন্তত অন্য কোথাও দেখিনি। থিম ইমোজি এগুলোর কথা বলা এখানে হাস্যকর দেখাবে। সোয়াইপ করে লেখার মজাটুকু পুরোপুরিভাবে উপভোগ করতে পারবেন এতে। সাথে সমস্যা ছাড়া বাংলা STT এর মজা তো আছেই!
লেখালিখির জন্য এই কি-বোর্ডটিকে আদর্শ বলাই যেতে পারে। বিশেষ করে যারা বাংলা লেখাটাকে ঝামেলার মনে করেন বা অভ্র এর ফোনেটিক লে-আউট মনে থাকে না – বানান ভুলের করেন বা চন্দ্রবিন্দু, যুক্তাক্ষর ইত্যাদি কীভাবে লিখবেন বুঝতে পারেন না, তারা এটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন। কথা দিতে পারি, বাংলা লিখতে একটুও বিরক্ত বা খারাপ লাগবে না।
পাঁচটি অ্যান্ড্রয়েড বাংলা কি-বোর্ড নিয়ে লিখতে গিয়ে এখানে অনেকগুলো কি-বোর্ডের কথা বাদ পড়ে গেছে! যেমন আমার অ্যান্ড্রয়েড লেখার শুরুটা ছিল মায়াবী কি-বোর্ডের সাথে। বাদ পড়ে গেল স্বরচক্র কি-বোর্ডের মতো ইউনিক একটা কি-বোর্ড! গুগলের হ্যান্ডি রাইটিং কি-বোর্ড! ফোনেটিক কি-বোর্ড নিয়ে লিখতে গিয়েও এরকম আরও চমৎকার কিছু কি-বোর্ডকে বাদ দিতে হয়েছে।
তবে যাইহোক, বাংলায় লেখালিখির ক্ষেত্রে প্রায় সব প্রয়োজন পূরণ করতে আমার কাছে মনে হয়, পাঁচটি কি-বোর্ড অ্যাপস্ যথেষ্ট্য, পরীক্ষা প্রার্থনীয়।
Leave a Reply