আমরা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক নির্ভর হয়ে পড়েছি। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ফেসবুক ঘাটাঘাটি করা থেকে শুরু করে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করাসহ সবই ফেসবুকের মাধ্যমেই করে থাকি। তবে এই ফেসবুকে দিনকে দিন অপরাধ বেড়েই চলছে। সাইবার ক্রাইম থেকে বাঁচতে হলে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। নিজের সুরক্ষার পাশাপাশি ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি যাতে নিরাপদ থাকে সেই জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে আপনাদেরকে, তবেই আপনি আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টকে নিরাপদ রাখতে পারবেন।
ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখার ৮ উপায়
নিজের অজান্তেই আমরা আমাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টকে হুমকির মুখে ফেলে দেই। আমাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি যাতে হ্যাক না হয়ে যায়, সে জন্য কিছু সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এমন ৮টি উপায় আছে যা আমাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টকে নিরাপদ রাখবে, সেই ৮টি উপায় নিচে আলোচনা করা হলো।
নাম্বার ১ : শক্তিশালী পাসওয়ার্ড
আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টকে নিরাপদ রাখার সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা। আমরা অনেকেই পাসওয়ার্ডে আমাদের নাম বা মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে থাকি, যেটা সবচেয়ে বড় একটা ভুল। পাসওয়ার্ডটি হতে হবে নাম্বার, অ্যালফাবেট এবং স্পেশাল ক্যারেক্টার মিশ্রিত।
সবচেয়ে ভালো হবে যদি বড় হাতের অক্ষর এবং ছোট হাতের অক্ষর মিলিয়ে একটা শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করা হয়, যেমন : $eCure-25r49 . তবে পাসওয়ার্ডটি যাতে অতিরিক্ত বড় না হয়ে যায় সেই ব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হবে এবং এমন একটি পাসওয়ার্ড নির্ধারণ করবেন যেটা আপনার মনে থাকবে।
নাম্বার ২ : সঠিক তথ্য
ফেসবুকের নাম, জন্মতারিখ, লোকেশন ইত্যাদি তথ্যগুলো অবশ্যই সঠিক দিতে হবে। কারণ, আপনার অ্যাকাউন্টটি যদি হ্যাক হয়ে যায় তখন আপনাকে ফেসবুকের কাছে রিপোর্ট করে অ্যাকাউন্টটি ফেরত আনতে হলে অবশ্যই ন্যাশনাল আইডি বা পাসপোর্ট দিয়ে সঠিক প্রমাণ করতে হবে। নামটি যদি ফেইক হয় কিংবা ভুল নামে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়, তাহলে সঠিক তথ্য দিতে না পারায় আপনাকে আপনার অ্যাকাউন্টটি চিরতরের জন্য হারাতে হতে পারে।
তাই, সব সময় চেষ্টা করবেন সঠিক নাম দেওয়ার, যেই নামটা আপনার ন্যাশনাল আইডিতে আছে অথবা পাসপোর্টে আছে এবং একইভাবে জন্মতারিখ সঠিক দেওয়ার চেষ্টা করবেন (সমস্যা থাকলে অনলি-মি করে রেখে দিবেন জন্মতারিখ)। তবে বাংলাতে নাম লিখবেন না, এখনো পর্যন্ত ফেসবুক ১০০% বাংলা সাপোর্ট করে না।
নাম্বার ৩ : টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন
যখন আপনি আপনার ফেসবুকে লগইন করতে যাবেন, তখন আপনার মোবাইল নাম্বারে একটি অনটাইম পাসওয়ার্ড এসএমএসের মাধ্যমে পাঠানো হবে এবং সেই কোডটি দেওয়ার পরই আপনি ফেসবুকে প্রবেশ করতে পারবেন। এই টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশনও ফেসবুকের নিরাপত্তা অনেকগুন বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং, যদি টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন চালু করা না থাকে তবে আজই চালু করে নিন।
নাম্বার ৪ : প্রয়োজনীয় তথ্য হাইড রাখুন
আপনার প্রয়োজনীয় তথ্যাদি ফেসবুক বা অন্য কোনো সোশাল মিডিয়াতে শেয়ার করবেন না বা উন্মুক্ত রাখবেন না। এখানে প্রয়োজনীয় তথ্য বলতে বুঝানো হয়েছে আপনার ই-মেইল বা মোবাইল নাম্বারকে। যেই ই-মেইল বা মোবাইল নাম্বার দিয়ে আপনার অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে সেই ই-মেইল বা মোবাইল নাম্বারটি সব সময় হাইড রাখার চেষ্টা করবেন।
যদি ফেসবুকে আপনার টুইটার বা গুগল প্লাস ইত্যাদি একাউন্টের লিংক যোগ করেন তাহলে নিশ্চিত হয়ে নিন যে, আপনার টুইটার বা গুগল প্লাস একাউন্টে কোনো প্রয়োজনীয় তথ্য ছিলো না। মনে রাখবেন, হ্যাকাররা সব সময় ই-মেইল বা মোবাইল নাম্বারকেই প্রথমে টার্গেট করে হ্যাক করার চেষ্টা করে।
যেমন : আপনার মোবাইল নাম্বাটি তারা নকল করে অ্যাকাউন্ট হ্যাকের চেষ্টা করতে পারে। বর্তমানে অনেক সাইট আছে যেখানে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে অনলাইনেই সিম নাম্বার নকল করা সম্ভব এবং আপনার নাম্বারে যাওয়া কোনো এসএমএস তারা দেখে নিতে পারবে অনায়াসেই। সুতরাং, প্রয়োজনীয় সব তথ্য হাইড/লুকিয়ে রাখুন।
নাম্বার ৫ : অ্যাপ পারমিশন
অনেক সময় আমরা যখন ফেসবুক থেকে বিভিন্ন সাইটে ভিজিট করি অথবা আমরা যখন কোনো থার্ডপার্টি অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করতে যাই, তখন ফেসবুকে লগইন করার প্রয়োজন পড়ে। অ্যাপ্লিকেশনগুলো ব্যবহার করতে হলে ফেসবুকে লগইন করতে হয় এবং তারা আপনার ফেসবুকে দেওয়া বিভিন্ন তথ্য দেখে নেয়।
অনেক ফানি টাইপের গেম বা অতীতে কি ছিলেন বা ভবিষ্যতে কি হতে পারবেন এরকম ফানি টাইপের অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করতে হলে তারা অ্যাপ পারমিশন চায়। আপনি যখনই Continue তে ক্লিক করেন, তখন আপনার অজান্তেই তারা আপনার বিভিন্ন তথ্য দেখে নেয় এবং সেই তথ্য যাচাই-বাছাই করে একটা সম্ভাব্য তথ্য দেয় এবং অনেক সময় তা মিলে গেলে আমরা অবাক হই।
কিন্তু এ-সব অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের আগে তারা কি কি পারমিশন নিচ্ছে তা পড়ে দেখা উচিত এবং প্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশন বাদে অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ, অনেক সময় অ্যাপ পারমিশনে আপনার মোবাইল নাম্বার, ই-মেইলটি তারা রিসিভ করে এবং এর মাধ্যমেও আপনার পাসওয়ার্ডটি হ্যাক হয়ে যেতে পারে।
নাম্বার ৬ : অচেনা লিংকে ক্লিক করবেন না
ফেসবুকে অনেক সময় অনেক ফ্রেন্ড বা অচেনা-অজানা ব্যক্তির থেকে অনেক সময় মেসেজের মাধ্যমে বিভিন্ন লিংক পেয়ে থাকি আমরা। কখনো ভুলেও সেইসব লিংকে ক্লিক করবেন না। এইসব লিংক সাধারণত ফিশিং সাইট থেকে কপি করে বা হ্যাকারদের মাধ্যমে পাঠানো হয়। লিংকে ক্লিক করলে আপনার ই-মেইল এবং পাসওয়ার্ডটি সহজেই তারা জেনে যাবে এবং ফেসবুক অ্যাকাউন্টের অ্যাকসেস সহজেই তারা নিয়ে নিতে পারবে।
নাম্বার ৭ : আগের লগইন সেশনগুলো রিমুভ করা
আপনি আগে যে-সব ডিভাইস থেকে ফেসবুকে লগইন করেছিলেন সে-সব ডিভাইস লগআউট করতে হবে। আপনি ফেসবুকে লগইন করে Settings থেকে Security and Login-এ যেয়ে Where You’re Logged In থেকে Previous সব লগইন সেশন লগআউট করে দিবেন। Log Out Of All Sessions-এ ক্লিক করলেই আগের লগইন করা সব ডিভাইস থেকে লগআউট হয়ে যাবে।
এটা করার মূল কারণ হলো, আপনি যদি অন্য কোনো ফ্রেন্ড বা আত্নীয়ের মোবাইল থেকে লগইন করে থাকেন এবং সেটা লগইন সেশন থেকে রিমুভ না করেন তাহলে টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন চালু থাকা সত্ত্বেও সেই ডিভাইসে লগইন পারমিশন থাকার কারণে টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন চাইবে না। সেক্ষেত্রে আপনার ফেসবুকে সহজেই প্রবেশ করা সম্ভব হবে। এজন্যই আগের লগইন সেশনগুলো রিমুভ করা খুবই প্রয়োজনীয়।
নাম্বার ৮ : অচেনা জায়গায় ফেসবুক লগইন করবেন না
অচেনা জায়গায় ফেসবুক লগইন করবেন না বলতে বুঝানো হচ্ছে অচেনা কোথাও যেমন : সাইবার ক্যাফে বা অচেনা কারোর ডিভাইস থেকে। এর ফলে আপনার পাসওয়ার্ডটি হ্যাক হতে পারে। তাছাড়া সাইবার ক্যাফের কম্পিউটারে স্পাইওয়্যার থাকতে পারে, যারফলে পাসওয়ার্ডটি হ্যাক হয়ে যেতে পারে।
আশাকরি, যারা এই ৮টি উপায় মেনে চলবেন তারা তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টকে ১০০% নিরাপদ রাখতে পারবেন। পোস্টটি থেকে যদি উপকার পেয়ে থাকেন তবে শেয়ার করে অন্যদেরকে সতর্ক হওয়ার সুযোগ করে দিন।
Khama chakma says
ইদানিং সবচেয়ে বেশি হ্যাক হচ্ছে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। তাই, হ্যাক হওয়া থেকে নিজ নিজ অ্যাকাউন্ট রক্ষা করার জন্যে যে উপায়গুলো আলোচনা করা হয়েছে, সেগুলো বেশ কার্যকরী বলেই মনে হচ্ছে। কেউ যদি এ সহজ ৮টি উপায় মেনে চলেন, তবে নিজের অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখা সম্ভব। লেখককে ধন্যবাদ, উপায়গুলো বাতলে দেয়ার জন্যে।