আজ হাজির হয়েছি স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯ এবং স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯+ নিয়ে। বাংলাদেশে মোবাইলের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের মধ্যে স্যামসাং একটি। আর শুধু বাংলাদেশে নয়, স্যামসাং এর জনপ্রিয়তা সারা বিশ্বব্যাপী। এই জনপ্রিয়তা অক্ষুন্ন রাখতে কোম্পানি নিত্য নতুন আকর্ষণীয় সব স্মার্টফোন বাজারে এনেছে। তারই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বাজারে এসেছে ২টি দারুন হ্যান্ডসেট, স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯ (Samsung Galaxy S9) এবং স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯+ (Samsung Galaxy S9+)।
২০১৮ সালে বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত লাভিস ইভেন্টে দুটি ফ্ল্যাগশীপ স্মার্টফোন স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯ এবং স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯+ লঞ্চ হয়েছে। দুটি ফোনের স্পেশিফিকেশনই ব্যাপক আকারে লিক হয়েছিল ঘোষনা হওয়ার সাথে সাথেই। অপেক্ষার দিন শেষ করে ক্রেতাদের হাতের কাছে এসে গেছে ফোন দুটি। আর আজকের আলোচনায় আমি আপনাদের বলবো বহু প্রতিক্ষিত এই ফোন দুটির মিল ও অমিল নিয়ে।
আপনি যদি একটি নতুন ডিভাইসের কথা চিন্তা করে থাকেন আর স্যামসাং যদি আপনার পছন্দের ব্র্যান্ড হয় তবে জন্য জানা জরুরি যে ঠিক কোন কোন বিষয়গুলো ফোন দুটিকে একে অপরের থেকে পৃথক করেছে। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯ এবং স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯+ এর সংক্ষিপ্ত স্পেসিফিকেশনঃ
প্রথমেই আমরা ফোন দুটির প্রধান প্রধান স্পেসিফিকেশনের একটি তালিকা দেখে নেই-
|
স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯ |
স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯+ |
ব্যাটারি |
৩০০০ মিলি আম্প্যায়ার |
৩৫০০ মিলি আম্প্যায়ার |
ক্যামেরা |
১২ মেগাপিক্সেল, f/২.৪ এবং f/১.৫ এপেচার |
১২ মেগাপিক্সেল, f/২.৪ এবং f/১.৫ এপেচার। সেকেন্ডারি টেলি ফটো ক্যামেরা (১২ মেগাপিক্সেল) |
ডিসপ্লে |
৫.৮ ইঞ্চি OLED (১৪৪০*২৫৬০) |
৬.২ OLED (১৪৪০*২৫৬০) |
প্রসেসর |
স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫/Exynos 9810 |
স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫/Exynos 9810 |
স্টোরেজ |
৬৪ জিবি/২৫৬ জিবি |
৬৪ জিবি/২৫৬ জিবি |
র্যাম | ৪ জিবি |
৬ জিবি |
ডিজাইন
স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯ এর আয়তন ১৪৭.৭*৬৮.৭*৮.৫ (উচ্চতা* প্রস্থ * পুরুত্ব) মিলিমিটার এবং ওজন ১৬৩ গ্রাম। অপরদিকে এস৯+ এর আয়তন হল ১৫৮.১*৭৩.৮*৮.৫ (উচ্চতা* প্রস্থ * পুরুত্ব) মিলিমিটার এবং ওজন ১৮৯ গ্রাম।
এছাড়া স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯ এবং স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯+ দুটি ফোনেরই এলুমিনিয়াম ফ্রেম দিয়ে তৈরি বডির ফ্রন্ট এবং ব্যাকে গোরিলা গ্লাস ৫ ব্যবহার করা হয়েছে। সিঙ্গেল সিম (ন্যানো সিম) অথবা হাইব্রিড ডূয়াল সিম (ন্যানো সিম, ডুয়াল স্ট্যান্ড বাই) ব্যবহার করা যবে। ফোন দুটি আইপি সারটিফাইড অর্থাৎ ১.৫ মিটার এবং ৩০ মিনিট পর্যন্ত ধুলা/পানি থেকে নিরাপদ থাকবে।
ডিসপ্লে
স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯ এবং স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯+ এর ভিন্নতা রয়েছে ডিসপ্লের সাইজে। এস৯ এর ডিসপ্লে ৫.৮ ইঞ্চি OLED এবং এর রেজুলেশন হল ১৪৪০*২৫৬০। অপরদিকে এস৯+ এর ডিসপ্লে অপেক্ষাকৃত বড়। এর ডিসপ্লে ৬.২ ইঞ্চি OLED এবং রেজলেশন হল ১৪৪০*২৫৬০।
দুটি ফোনেই রয়েছে সুপার এমোলেটেড ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন। দুটি ফোনেই মাল্টিটাচ রয়েছে। এছাড়াও হোম বাটনে ৩ডি টাচ আছে, প্রটেকশনের জন্য রয়েছে করনিং গোরিলা গ্লাস ৫।
প্ল্যাটফর্ম
আমি আগেই দেখিয়েছি, স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯ এবং স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯+ এর প্ল্যাটফর্মে কোন পার্থক্য করা হয়নি। দুটি হ্যান্ডসেটই চলবে অ্যান্ড্রয়েড ৮.০ অরিও দিয়ে। এদের চিপসেট হিসেবে আছে Exynos ৯৮১০ অক্টা – EMEA, কোয়ালকম MSM৮৯৯৮।
১.৭ গিগাহার্জ অক্টা কোর সিপিইউ আছে দুটি ফোনেই। আর জিপিইউ এ আছে মালি-জি৭২ MP১৮ – EMEA।
মেমরি
স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯ ফোনে ইন্টারনাল মেমোরি হিসেবে ৪জিবি র্যাম দেয়া হয়েছে। মাইক্রো এসডি স্লট ব্যবহারের মাধ্যমে একে ৪০০জিবি পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।
স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯+ এর র্যাম কিছুটা বড়, ৬জিবি এবং এখানেও অনুরূপভাবে ২য় সিম স্লটে মাইক্রো এসডি কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে মেমোরি ৪০০জিবি পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।
ক্যামেরা
১২ মেগাপিক্সেল প্রাইমারি ক্যামেরা আছে স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯ এ। ফেজ ডিটেকশন অটোফোকাস, OIS ও LED ফ্ল্যাশ রয়েছে এই ক্যামেরায়। এছাড়া অন্যান্য ফিচারে আছে জিও ট্যাগিং, সিমুলটেনাস ৪কে ভিডিও এবং ৯এমপি ইমেজ রেকরডিং, টাচ ফোকাস, ফেস/স্মাইল ডিটেকশন, অটো এইচডিআর আর প্যারানোমা। এস৯ এর সেকেন্ডারি ক্যামেরা ৮ মেগাপিক্সেল। এতেও আছে অটো ফোকাস, ডুয়াল ভিডিও কল এবং অটো এইচডিআর।
স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯+ ক্যামেরার দিক দিয়ে এস৯ থেকে বেশ খানিকটা ভিন্ন। এস৯+ রিয়ারে ১২ মেগাপিক্সেল + ১২ মেগাপিক্সেল ডুয়াল ক্যামেরা আছে। সাথে আছে OIS, ফেজ ডিটেকশন অটোফোকাস, 2x অপটিকাল জুম এবং LED ফ্ল্যাশ। তবে এস৯ এর অনুরুপ ফিচার জিও ট্যাগিং, সিমুলটেনাস ৪কে ভিডিও এবং ৯এমপি ইমেজ রেকরডিং, টাচ ফোকাস, ফেস/স্মাইল ডিটেকশন, অটো এইচডিআর আর প্যারানোমা আছে। এস৯+ এর সেকেন্ডারি ক্যামেরা এস৯ এর অনুরুপ।
সাউন্ড
স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯ এবং স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯+ এর সাউন্ড সিস্টেমে কোন পার্থক্য নেই। দুটি ফোনেই ভাইব্রেশন, MP3, WAV রিংটোন আছে। লাউড স্পিকার এবং স্টেরিও স্পিকারও আছে দুটিতেই। আর আছে ৩.৫মিলিমিটার হেডফোন জ্যাক।
ফিচারসমুহ
সহোদর ফোন দুটির ফিচারসমুহতেও কোন পার্থক্য করা হয় নি। আইরিশ স্ক্যানার, রিয়ারে ফিঙ্গারপ্রিন্ট, এক্সেলেরোমিটার, গাইরো, প্রক্সিমিটি, কম্পাস, ব্যারোমিটার, হার্ট রেট এবং SpO2 ইত্যাদি সব ফিচার পাবেন দুটি ফোনেই। ম্যাসেজিং এর জন্য দুটি ফোনে আছে এসএমএস, এমএমএস, ই-মেল, পুশ মেল এবং আইএম।
ব্যাটারি
স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯ ৩০০০ মিলি আম্প্যায়ার নন রিমুভেবল লি-অন ব্যাটারি দেয়া হয়েছে তবে স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯+ এর ব্যাটারি ৩৫০০ মিলি আম্প্যায়ারের। তবে এটাও নন রিমুভেবল লি-অন ব্যাটারি আর উভয় ফোনেই ফাস্ট চারজিং এর সুবিধা আছে।
কালার এবং দাম
মিডনাইট ব্ল্যাক, কোরাল ব্লু, টাইটানিয়াম, লাইলাক পারপেল ইত্যাদি রঙে স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯ পাওয়া যাবে এবং বাংলাদেশে ফোনটির দাম হবে আনুমানিক ৭০,০০০ থেকে ৮০,০০০ টাকা।
স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯+ এর কালার গুলো এস৯ এর অনুরুপ। এর দাম আরো একটু বেশী, আনুমানিক ৯০,০০০ থেকে ১০০,০০০ টাকা হতে পারে।
মতামত
যন্ত্র নির্ভর জীবনকে আরামদায়ক করতে প্রযুক্তি এগিয়ে চলেছে অনেক দ্রুতগতিতে আর তার সুস্পষ্ট নিদর্শন অত্যাধুনিক ফিচারে সজ্জিত স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯ এবং স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯+।
আজকের আলোচনায় আপনাদের সিদ্ধান্ত গ্রহনের সুবিধায় আমি কেবল হ্যান্ডসেট দুটির মধ্যকার মিল ও অমিলগুলো বললাম। আপনারা সিদ্ধান্ত নিন কে কোনটা কিনতে চাচ্ছেন আর ফোন দুটির অসাধারন ফিচার আর রিভিউ নিয়ে আমি আবারো কোন এক সময় আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনায় বসবো।
বিঃ দ্রঃ উপর্যুক্ত আলোচনার যাবতীয় তথ্য স্যামসাং এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট এবং ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত।
Leave a Reply