উন্নত বিশ্বের প্রায় সব দেশেই প্রচলিত বা পুরনো সাধারণ টিভির স্থান দখল করে নিয়েছে স্মার্ট টিভি। আমাদের দেশেও স্মার্ট টিভির ফিচার এবং নানা রকম সুবিধার কারণে এর ব্যবহার বাড়ছে প্রতিনিয়ত। প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষের রুচির, বিশেষ করে বাড়ি সাজানো কিংবা বিনোদন উপভোগের ধরণ উন্নত হয়েছে।
কিছু কিছু মানুষ হয়তো এখনো জানেন না স্মার্ট টিভি কি আর সাধারণ টিভির সঙ্গে এর পার্থক্য কি। তবে, যারা জানেন, তারা কিন্তু এখন আর সাধারণ টিভি দেখে মজা পান না। তাই, বদলে নিয়েছেন ড্রইং রুমের পুরনো টিভি আর উপভোগ করছেন অন্যরকম দুনিয়া। কি এমন ফিচার রয়েছে স্মার্ট টিভিতে যা এটিকে সাধারণ টিভি থেকে আলাদা করেছে আর মানুষের রুচির পরিবর্তণ করে দিয়েছে? আসুন জানি সেগুলো।
স্মার্ট টিভির ফিচার
নিত্য নতুন ফিচার সংযুক্তির কারণে টিভি ইন্ড্রাস্ট্রিতে এখন স্মার্ট টিভিই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে, স্মার্ট টিভির বিশেষ কিছু সুবিধা মানুষকে উৎসাহিত করছে পুরনো দিনের টিভিটাকে নতুন টিভিতে বদলে নিতে।
এখনো তবু কিছু মানুষ আছেন, যারা এর সুবিধাগুলো সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত নন। তাদের জন্যেই আমাদের আজকের আয়োজন যেখানে স্মার্ট টিভির ২১টি ফিচার নিয়ে আলোচনা করা হল যা তাদের অবাক এবং উৎসাহিত করবে।
১. উৎকৃষ্ট ছবি
যদিও এটি তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনার বিষয় নয়, তবু জেনে রাখতে পারেন যে স্মার্ট টিভির পিকচার কোয়ালিটি সব ধরণের টিভি থেকেই উন্নত। অসাধারণ কন্ট্রাস্ট রেট, পারফেক্ট কালার ম্যাচিং আর মুগ্ধকর উজ্জ্বলতা কেবল স্মার্ট টিভিতেই দেখা যায়।
অন্য টিভির তুলনায় স্মার্ট টিভি ব্যবহারকারীদের পিকচার কোয়ালিটি উপভোগের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। কারণ, পিকচার কোয়ালিটির কারণে একটা সাধারণ মানের ভিডিও স্মার্ট টিভিতে হয়ে ওঠে অসাধারণ।
২. ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি
স্মার্ট টিভিতে একটি বিল্ট-ইন ওয়াই-ফাই সিস্টেম রয়েছে যা ইউজারকে খুব সহজেই ইন্টারনেটের সঙ্গে কানেক্ট করতে সাহায্য করে। স্মার্টফোনের মতোই, স্মার্ট টিভির ইন্টারনেট কানেকশন সিস্টেম অটোমেটিক এবং প্রত্যেকবার ম্যানুয়াল্লি কানেক্ট করার প্রয়োজন পড়ে না।
যেটার প্রয়োজন হয়, সেটা হচ্ছে ওয়াই-ফাই যেন টিভির রেঞ্জের ভেতর থাকে, সেটা কনফার্ম করা। এর মানে ওয়াই-ফাই কানেকশন হয় টিভির রুমেই থাকতে হবে, না হয় পাশের রুমে থাকলেও যাতে কানেকশন পায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ইন্টারনেট কানেকশন রেঞ্জের বাইরে হলে কিংবা কানেক্টিভিটি দূর্বল হলে, স্মার্ট টিভি ঠিক মতো ভিডিও স্ট্রিমিং করতে পারে না।
৩. স্লিম ডিজাইন
দেখতে ভাল বা আকর্ষণীয় হওয়ার প্রসঙ্গ আসলে অবশ্যই স্মার্ট টিভি সবার থেকে এগিয়ে আছে। কারণ, স্মার্ট টিভি একটি স্ট্যান্ডার্ড ডাইমেনশনে তৈরি হয় যা এটিকে দেখতে অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে তোলে। এক ধরণের পাতলা মেটাল ফেব্রিক্স আর গ্লাস প্যানেল দিয়ে এখনকার প্রায় সব ফোরকে স্মার্ট টিভিকে মিনিমালিস্ট আর সুন্দর করে ডিজাইন করা হয়।
৪. গেমস্ ও অ্যাপস্ ব্যবহার
স্মার্ট টিভিতে মোবাইল ফোনের মতোই অ্যাপস্ ব্যবহার করা যায় এবং গেমস্ খেলা যায়। আর এটাই হচ্ছে স্মার্ট টিভির দ্রুত জনপ্রিয়তা পাওয়ার মূল কারণ। যখন গেম খেলার ব্যাপার আসে, তখন অনায়াসেই স্মার্টফোনকে টিভির সঙ্গে কানেক্ট করে কম্পিউটারের মতো ইউজ করা যায়। যারফলে, গেমের গ্রাফিক্স ফোনের চেয়ে অনেক বেশি উপভোগ করা যায়।
আপনি যদি একজন গেম লাভার না হয়ে থাকেন এবং এ কারণে স্মার্ট টিভির প্রতি আপনার আগ্রহ কমে গিয়ে থাকে, তবে এর ব্যতিক্রমী ফিচারগুলোর কথা কি ভাববেন না? গুগল প্লে এবং ক্রোমকাস্ট স্মার্ট টিভির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিল্ট-ইন ফিচার যা আপনাকে অনলাইনে থাকা যে কোন কনটেন্ট ডাউনলোড করতে সাহায্য করবে।
৫. কর্ড কার্টিং
আপনি যদি আপনার কেবল টেলিভিশনের উপর বিরক্ত হয়ে থাকেন, তবে এখনি সেটি কেটে দিতে পারেন। স্মার্ট টিভি আপনাকে সেই সুবিধা দিয়ে দেবে। স্মার্ট টিভি যে কোন সময় যে কোন লাইভ স্ট্রিমংয়ে সক্ষম। ফ্রি এবং পেইড, সব ধরণের স্ট্রিমিং সুবিধাই আপনি অনায়াসে উপভোগ করতে পারবেন।
৬. পিকচার কাস্টোমাইজেশন
বিশ্ব সেরা গ্রাফিক্স প্রোভাইড করা ছাড়াও, স্মার্ট টিভিতে এক ডজনের উপরে সেটিংস্ রয়েছে যা আপনাকে আপনার নিজের পছন্দ মতো কাস্টোমাইজ করার সুবিধা দিয়ে থাকে। আপনি হয়তো ডার্কার পিকচার চাইছেন এবং সেই সাথে কালার কন্ট্রাস্টও হাই লেবেলে রাখতে চাইছেন। কোনও অসুবিধা নেই, স্মার্ট টিভি আপনাকে সেই সুবিধা দিচ্ছে। অল্প কয়েকটি কমান্ড দিয়েই আপনি আপনার মনের মতো পিকচার সেট করে নিতে পারবেন।
৭. ভয়েস কন্ট্রোল
স্মার্ট টিভির ভয়েস কন্ট্রোলিং একটি দারুণ ট্রিক যা আপনি যে কোনও সময় ব্যবহার করতে পারেন। আপনি যদি ক্লান্ত বোধ করেন বা আপনাকে যদি অলসতায় পেয়ে বসে কিংবা আপনি যদি ক্লাসিক রিমোট সিস্টেমে বোর ফিল করে থাকেন, তবে শুধু মাত্র ‘ভয়েস কন্ট্রোল’ বাটনটিতে ক্লিক করুন। আর সেই সাথে সেট করে নিন, আপনি কেমন ভয়েস চাইছেন।
৮. ভিডিও ভ্যারাইটি
স্মার্ট টিভির সবচেয়ে বড় আর উপভোগ্য সুবিধা হচ্ছে নানা ধরণের ভিডিও এবং মুভি দেখা। নেটফ্লক্সের মতো অল্প কিছু পেইড ভিডিও ওয়েবসাইট ছাড়া ইউটিউবসহ বাকী সব ওয়েবসাইটের কন্টেন্টই ফ্রিতে ইউজ করা যায়। আর স্মার্ট টিভিতে ব্যবহারের উপযোগী ভিডিও কন্টেন্টের পরিমাণ প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে।
৯. ডিভাইস কানেকশন
প্রায় প্রতিটি স্মার্ট টিভিতেই কমপক্ষে ৩টি ইউএসবি পোর্ট থাকে যা আপনাকে স্মার্টফোন, ক্যামেরা এবং ট্যাবলেটসহ আরো নানা ডিভাইস কানেক্ট করতে সাহায্য করে। এই ফিচারটি সত্যিকার অর্থেই দারুণ উপকারি, বিশেষ করে যখন আপনার ফটো, মিউজিক, ভিডিওসহ নানা রকম ফাইল ট্রান্সফারের প্রয়োজন পড়ে।
১০. ইন্টেলিজেন্ট সার্চ
নানা রকম গুরুত্বপূর্ণ ফিচারের মতোই আরো একটি উল্লেখযোগ্য ফিচার হচ্ছে ইন্টেলিজেন্ট সার্চ অপশন। আপনাকে সব সময় একেবারে পারফেক্ট টাইটেল দিয়েই সার্চ করতে হবে না। বরং, একটুখানি লিখলেই পুরোটা এসে পড়বে। এমনকি, আপনি টপিক, জেনার অনুযায়ীও সার্চ দিতে পারবেন। যখনই আপনি কোনও একটি টপিক দিয়ে সার্চ দেবেন, আপনার স্মার্ট টিভি আপনাকে একটা লিস্ট শো করবে যেখান থেকে আপনি পছন্দ করে দেখতে পারবেন। সেই সাথে, সার্চ বাটন থেকে আপনি টপিক ফিল্টারও করতে পারবেন।
১১. রিকোমেন্ডেশন
স্মার্টফোনের মতোই স্মার্ট টিভি আপনাকে বিভিন্ন কন্টেন্ট সাজেস্ট করবে। যেখান থেকে আপনি আপনার পছন্দের অনেক কন্টেন্ট পেয়ে যাবেন। ফলে, আপনাকে বারবার সার্চ করে কন্টেন্ট খুঁজতে হবে না। কারণ, এটি আপনার ভিউ হিস্ট্রি অ্যানালাইজ করেই সাজেস্ট করবে। এটা অনেকটা ইউটিউবের সাজেশনের মতোই। এমনকি, এটি আপনাকে সেই ধরণের কন্টেন্ট যেই ধরণের কন্টেন্ট আপনারা বন্ধুরা দেখছে।
১২. স্মার্টফোন ও ট্যাব কন্ট্রোলিং
স্মার্ট টিভি থেকে আপনি আপনার স্মার্টফোন ও ট্যাব কন্ট্রোল করতে পারবেন। অন্যদিকে, স্মার্টফোন বা ট্যাব থেকেও আপনি স্মার্ট টিভি কন্ট্রোল করতে পারবেন। অর্থাৎ, আপনার টিভিতে যা কিছু আছে তা ফোনে অ্যাক্সেস করতে পারবেন। আবার ফোনে যা কিছু রয়েছে সেগুলো টিভিতে অ্যাক্সেস করতে পারবেন। এজন্যে আপনাকে সিম্পলি যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে ইউএসবি পোর্ট দিয়ে স্মার্টফোন ও স্মার্ট টিভিকে একটা আরেকটার সঙ্গে কানেক্ট করে নিতে হবে।
১৩. ইন্টারনেট সার্ফিং
স্মার্ট টিভি থেকে ইন্টারনেট সার্ফিং করার মতো সহজ আর কিছু নেই। সব স্মার্ট টিভিতে একটি প্রি-ইনস্টলড্ ওয়েব ব্রাউজার থাকে যা আপনার জন্যে নেট ব্রাউজিং করা সহজ করে দেবে। বেসিক রিমোট দিয়ে কিংবা ভয়েস কন্ট্রোল কমান্ড ব্যবহার করে আপনি যে কোন ওয়েবসাইট ব্রাউজ করতে পারবেন।
১৪. ভিডিও কনফারেন্স
প্রায়ই অফিস কলিগ কিংবা ভার্সিটি মেট কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের প্রয়োজন পড়ে। স্মার্ট টিভি আপনাকে এই সুবিধাটিও দিচ্ছে। পিসি কিংবা ফোনের মতোই আপনি আপনার স্মার্ট টিভিতে স্কাইপিসহ আরো নানা রকম ভিডিও কলিং অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন।
১৫. হোম থিয়েটার
যারা বড় পর্দায় সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন, তাদের জন্যে ঘরে বসেই বড় স্ক্রিন উপভোগের জন্যে স্মার্ট টিভি আর্শিবাদ স্বরূপ। অসাধারণ পিকচার কোয়ালিটি, বড় পর্দা, সেটিং কাস্টোমাইজেশন সুবিধা এনে স্মার্ট টিভি আপনাকে হোম থিয়েটারের অভিজ্ঞতা দিচ্ছে।
১৬. অটোমেটিক আপডেট
স্মার্টফোনের মতো টিভিরও আপডেট দিতে হয়। কারণ, এটিও একটি অপারেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে চলে আর মাঝে অনেক বিল্ট ইন প্রোগ্রাম থাকে যেগুলোর নিয়মতি আপডেট প্রয়োজন। কিন্তু নিয়মিত আপডেট দেয়া প্রায় সময়ই সবার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না, বিশেষত আপডেট দেয়ার কথা মনে থাকে না। যদি আপডেট দেয়ার কথা ভুলেও যান, সমস্যা নেই; স্মার্ট টিভির অটো আপডেট ফিচার আপনার অজান্তেই আপডেট নিয়ে রাখবে।
১৭. সোশ্যাল মিডিয়া
যদি ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়াই ইউজ করা না যায়, তো ইন্টারনেট কানেকশন দিয়ে কি হবে? আর যদি স্মার্ট টিভির মতো বড় স্ক্রিণে ফেসবুক ইউজ করা যায় তো কেমন হবে? হুম, স্মার্ট টিভিতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের সুবিধাটি রয়েছে। আপনি এতে সব ধরণের সোশ্যাল সাইটই ব্যবহার করতে পারবেন। এমনকি, ব্যবহার করতে পারবেন মেসেঞ্জারও।
উপরোক্ত স্মার্ট টিভির ফিচার দেখে এতক্ষণে নিশ্চয়ই আপনার স্মার্ট টিভি কিনতে ইচ্ছে করছে। এ ১৭টি স্মার্ট ফিচারের বাইরেও আরো কিছু সুবিধা রয়েছে স্মার্ট টিভিতে। কাজেই, আপনি যদি স্মার্ট টিভি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তবে আপনাকে অভিনন্দন।
Leave a Reply