ই-বুক এখন খুবই পরিচিত একটা শব্দ! আপনি যদি একজন বই প্রেমী মানুষ হয়ে থাকেন এবং ই-বুক নিয়ে কোন অ্যালার্জি না থাকে, তাহলে নিশ্চিত করা বলা যায় কখনো না কখনো ই-বুক আপনার পড়া হয়েছে। পড়তে পড়তে এক সময় নিজে একটি ই-বুক তৈরী করার ইচ্ছেটা মনে আসা একটুও অস্বাভাবিক নয়। একটা সময় ই-বুক তৈরীর কাজটি খুবই কষ্ট সাধ্য আর কম্পিউটার নির্ভর হলেও এখন কিন্তু তা নয়, স্মার্টফোনে ইবুক তৈরি করা এখন খুবই সম্ভব একটি কাজ।
বাংলায় যে স্ক্যান করা পিডিএফ ই-বুক আমরা পাই, সেগুলো তৈরী করা যথেষ্ঠ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কিন্তু তা সত্ত্বেও এগুলো কোন ডিভাইসের দ্বারা পাঠযোগ্য নয়। অর্থাৎ, আপনি সেই বইটি পড়তে পারলেও আপনার মোবাইল বা কম্পিউটার বা ই-বুক রিডার সেটি পড়তে পারবে না।
স্পিচ টু টেক্সট ব্যাবহার করে আপনার ডিভাইস আপনাকে বইটি পড়ে শোনাতে পারবে না। কোন লাইন পছন্দ হলে সেটা মার্ক করে রাখতে পারবেন না। কিন্তু যদি টেক্সট থেকে ইপাব বা মোবি ফরম্যাটে বইটি তৈরী করা হয়, তাহলে এ-সবসহ ই-বুকের দারুন সব সুবিধার সবগুলো পাওয়া যায়।
সহজে বহনযোগ্য, সংরক্ষণ নিয়ে কোন চিন্তা নেই, ফাইল সাইজ একেবারেই ছোট, যে কোন ডিভাইসে পাঠযোগ্য এবং এরকম হাজারো সুবিধার জন্য ই-বুক পৃথিবীব্যাপী এখন খুবই জনপ্রিয়। উদাহরণ হিসেবে, Amazon, ibook, Google Play Books বা Sheiboi, Banglalink Boighor, Boipoka এর মতো প্রজেক্টের কথা বলা যেতে পারে।
স্মার্টফোনে ইবুক তৈরি করুন
আপনি যদি একজন বইপ্রেমী হিসেবে ইবুক তৈরীর কাজটিতে অংশ নিতে চান, তাহলে আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোনটিকে কাজে লাগানোর সময় এসে গেছে। তাই কীভাবে স্মার্টফোনে ই-বুক তৈরি করা করা যায় সেই ব্যাপারটি আজকে আমরা এখানে দেখবো।ই-বুক তৈরি শুরু করার জন্য চলুন প্রথমেই বিনামূল্যের অ্যাপ দুইটি ডাউনলোড করে নিই।
Google Photos
আমরা এখানে শুধু এর একদম নতুন ফিচার গুগল লেন্সের ব্যাবহার করব। গুগলের এই নতুন ফিচারটি সম্পর্কে হয়ত অনেকেই জানেন। এক কথায় বলতে গেলে, এটি আপনার তোলা ছবির বিষয়বস্তু সম্পর্কে পুর্ণাঙ্গ একটি ব্যাখ্যা দেওয়া চেষ্টা করে।
ছবিতে যদি কোন বিখ্যাত স্থাপনা, কোন প্রাণি বা শনাক্ত করার এমন কোন কিছু থাকে যার ব্যাখা গুগলের কাছে আছে তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে সেটি আপনাকে দেখাবে। সেই সাথে ছবি যদি কোন লেখা থাকে, সেটা যে ভাষারই হোক না কেন, সেটার টেক্সট করে দেবে। মানে শুরু লেন্স বাটনটা চাপ দিয়ে ছবি থেকে যে কোন লেখা আলাদা করে ফেলতে পারবেন!
Ebook Converter
নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে এটি একটি কনভার্টিং অ্যাপ। এটির সাহায্য যেকোন ডকুমেন্ট বা ই-বুক ফরম্যাট থেকে *.mobi ও *.epub সহ *.fb2, *.docx, *.azw3, *.txt, *.lrf, *.snb, *.rb, *.pdb, *.oeb, *.lit ফরম্যাটে কনভার্ট করে নিতে পারবেন। অ্যাপটি বিনামূল্যর, তাই অ্যাড দেখার বিরক্তিটুকু সহ্য করতে হবে।
তবে চাইলে এর no ads ভার্সনটি ১০০ টাকায় কিনে ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু শুধু মাত্র অ্যাড দেখানো বন্ধ করা ছাড়া আর কোন ফিচার পরিবর্তন হবে না। অর্থাৎ ফ্রি ভার্সনিটিতে অ্যাডের বিরক্তটুকু করলে কাজের কোন ক্ষেত্রে কোন কমতি হবে না আপনার।
ইন্সটল করা শেষ। এবারে আসি ই-বুক তৈরীর কায়দাকানুনে।
কিভাবে তৈরী করবেন ই-পাব ই-বুক?
ই-বুক তৈরী করার জন্য এখানে পুরো বিষয়টি আমরা চারটি ধাপে দেখবো।
প্রথম ধাপঃ স্ক্যানিং
ই-বুক তৈরীর জন্য বেছে নেওয়া বইটির প্রথম পৃষ্টা থেকে শুরু করে ত্রমান্বয়ে সবগুলো পৃষ্ঠার ঝকঝকে ছবি তুলে নেব। ছবি তোলার সময় শুধুমাত্র এক পাতার ছবি যেন সুন্দরভাবে আসে সেদিকে খেয়াল করব। দুইপাতা বা এক পাতা আর অন্য পাতার কিছু অংশের ছবি তুললে ওসিআর করার সময় একটুখানি সমস্যায় পড়তে হতে পারে। তবে এটা সে রকম জরুরী কিছু না। মূল ব্যাপার হচ্ছে লেখা গুলো একদম পরিষ্কার আসলেই হবে।
দ্বিতীয় ধাপঃ ওসিআর
এই ধাপে আমরা আমাদের ফোনে যে গুগল ফটোস ইন্সটল করেছিলাম, এবারে সেটা ওপেন করব। এখানে ঢুকে Photos ট্যাবে গেলে আমরা আমাদের ছবিগুলো দেখতে পাবো। আমরা এখন প্রথম পৃষ্ঠার ছবিটি ওপেন করবো। এর পরে লেন্স বাটনে ক্লিক! একটু খানি অপেক্ষা। ব্যাস, আমাদের ওসিআর করা শেষ।
নতুন যে পপ-আপ উইন্ডোটি ওপেন হয়েছে সেখান থেকে Text Selection এ গেলেই আমরা আমাদের পৃষ্ঠাটির লেখাগুলো টেক্সট আকারে পেয়ে যাবো এবং সেটা কপি করে ফেলব!
তৃতীয় ধাপঃ এডিটিং
আমাদেরকে কপি অংশটুকু এডিট করার পর কোন টেক্সট ফাইল কিংবা ওয়ার্ড ডকুমেন্টে পেস্ট করে দিতে হবে। দেখবেন, লেখার মধ্য অযাচিত অনেকগুলো নতুন লাইন তৈরী হয়েছে; সেগুলো কেটে পুরো লেখাটি জাস্ট একটু বই এর মতো সুন্দর প্যারাগ্রাফ করে নিবেন। একটু বানান সংশোধনও করা লাগতে পারে। এ পর্যায়ের কাজ শুধু এ রকম এডিটিং।
এভাবে একটি পৃষ্ঠার এডিটিং শেষ হয়ে গেলে হয়ে পরের পৃষ্ঠাগুলো আবার দ্বিতীয় ধাপ থেকে এই পর্যন্ত একে একে করে ফেলতে হবে। প্রতিটা পৃষ্টার এডিটিং এ মোটামুটি গড়ে ১০ মিনিট করে সময় লাগে। এভাবে একদম শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত টেক্সটগুলো নিয়ে চমৎকার ভাবে একটি ডক অথবা টেক্সট ফাইল তৈরি করে ফেলা লাগবে।
চতুর্থ ধাপঃ ই-বুক ফরম্যাটে কনভার্টিং
আমাদের মূল কাজ শেষ, এবারে চতুর্থ ধাপ। এই ধাপের কাজ শুধুই আপনার ওয়ার্ড বা টেক্সট ফাইলটিকে ebook ফরম্যাটে কনর্ভাটিং। এটি করা এখন খুবই সহজ। অ্যাপটি ওপেন করে ডান পাশের নিচের কোনায় থাকা অ্যাড বাটনে ক্লিক করে যে ডকুমেন্ট বা টেক্সট ফাইলটি তৈরি করে ছিলেন তা সিলেক্ট করবেন।
এক্ষেত্রে সার্চ অপশনটিকে কাজে লাগাতে পারেন, তাহলে খুঁজে পেতে সুবিধা হবে। ফাইল যোগ করা হয়ে গেলে, স্ক্রিন সোয়াইপ করে Converting ট্যাবে চলে যাবেন। সেখানে Change Destination Directory অপশন থেকে চাইলে আপনার তৈরিকৃত ই-বুক ফাইলটি কোথায় গিয়ে পড়বে সেটা ঠিক করে দিতে পারেন। না চাইলে কিছু করার করার দরকার নেই এখানে।
এরপরে ফরম্যাট ঠিক করে দেবেন। ই-বুক ফরম্যাট হিসেবে সাধারণত *.epub কিংবা *.mobi ফরম্যাটই বেশি জনপ্রিয়। এগুলো সব ডিভাইসেই পড়া যায়। Output profile যে রকম আছে সেরকমই থাক। বই এর কভারের একটি ছবি তুলে এখানে দিতে পারেন। না দিলে ডকুমেন্টটি যে নামে সেভ করেছিলেন, সে নামে একটি কভারপেজ অটোমেটিকভাবে তৈরি হবে।
এখন বইটির নাম, লেখকের নাম। এটাও সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছা। দেওয়াটাই ভালো। বাংলা ইংরেজি যে কোন ভাষাতেই এটা দিতে পারেন। কাজ শেষ। এবার Converting বোতামে চাপ দিন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুণ। Booommm!! আপনার ই-বুকটি তৈরী হয়ে গেছে। স্বাগতম আপনাকে। এখান থেকেই ইচ্ছে করলে পড়তে পারবেন, আপনার ফোনে যদি একটি ই-বুক রিডার ইন্সটল করা থাকে। আউটপুট ফোল্ডার থেকে ফাইলটি নিয়ে এখন ছড়িয়ে দিতে পারেন সবার মাঝে!
কিভাবে স্মার্টফোনে ইবুক তৈরি করা যাবে আশা করি সে ব্যাপারে আপনার ধারণা এখন পরিষ্কার। ইচ্ছে করলেই আজকেই ফোনে অপচয় করা সময়গুলো থেকে একটুখানি সময় বের করে শুরু করে দিতে পারেন, এই চমৎকার কাজটি। এর মাধ্যমে স্মার্টফোনকে যেমন সত্যিকারের কাজে লাগাতে পারবেন, সেই ই-বুক জগতেও রাখতে পারবেন নিজের অবদান। আর যদি এই অভিজ্ঞতাগুলোকে কাজে লাগিয়ে বাণিজ্যিকভাবে কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হতে পারেন, তাহলে এর সাথে ভালো একটা অর্থের সম্ভাবনা কিন্তু থাকছেই।
Anwar says
Thank you so much for the post on the easiest way of creating ebook on smartphone. So, thank you, Sonia this useful post.
content quickly says
Though I don’t know this language at all, I can understand the subject what you write about here. As I am using the same texts everywhere to submit comments for having backlinks, you can easily delete the link I put on.