স্মার্টফোনের স্পিড চেক করবেন কিভাবে? এই বিষয়টা কম-বেশী সব স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর মাথায়ই ঘুরপাক খায়। কারণ,স্মার্টফোন এমন একটি জিনিস যেটা নিয়ে আমাদের সারাদিনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করতে হয়। তাই কম-বেশী সবাই আগ্রহেই থাকে তার স্মার্টফোনটিকে যুগোপোযোগী এবং গতিশীল রাখা ।
স্মার্টফোনের বর্তমান বাজারে কোম্পানিগুলোও প্রতিনিয়তই নিয়ে আসছে নতুন নতুন ফিচার সমৃদ্ধ স্মার্টফোন। তাছাড়া বর্তমান বিশ্বে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যাও নেহাতই কম নয়। তাই প্রায় প্রত্যেকেই স্মার্টফোন কেনার আগেই এর ফিচারগুলো সম্পর্কে জেনে যান এবং কেনার আগে বা পরে স্মার্টফোনের স্পিড চেক করার চেষ্টা করেন।
প্রায় প্রত্যেকেই আশা করেন যেন তার স্মার্টফোনটা অন্য আরেকটি স্মার্টফোনের চেয়ে একটু বেশী গতি সম্পন্নভাবে এবং দ্রুত কাজ করবে। তাহলে জেনে নিই কিভাবে স্মার্টফোনের স্পিড চেক করা যায়।
স্মার্টফোনের স্পিড চেক
আপনি যখন নতুন একটি স্মার্টফোন কিনে ব্যবহার করতে শুরু করেন, তখন আপনার সখের স্মার্টফোনটি অনেক স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু আপনার বিশ্বস্ত স্মার্টফোনটি এক-দুই বছর পর আর আগের মতো ব্যবহার করতে পারেন না। আপনার মনে হতে পারে এটি আগের তুলনায় একটু ধীর গতি সম্পন্ন হয়ে পড়েছে এবং স্মার্টফোনটির আপডেটের প্রয়োজন। অথবা আপডেট দিলে হয়তো ফোনটির স্পিড বাড়বে।
আপনি যদি এমনটি ভেবে থাকেন, তাহলে রীতিমত অবশ্যই আপনাকে এই ধারণা থেকে সরে আসতে হবে। আর আপনাকে বৈজ্ঞানিক রীতিতে চিন্তা করতে হবে যে, আপনার স্মার্টফোনটিতে কোনো ড্রপ-অফ আছে কিংবা এখানে কিভাবে বেঞ্চমার্ক চালানো যায় এবং স্পিড পরীক্ষা চালানো ব্যবস্থা আছে কিনা। এ সকল জিনিসগুলো সঠিকভাবে না থাকলে আপনাকে অবশ্যই নিচের বিষয়গুলি সম্পর্কে জানতে হবে এবং এই বিষয়গুলি জানতে পারলে আপনি অবশ্যই ফোনের স্পিড টেষ্ট সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং স্পিড টেস্ট করতে পারবেন।
স্মার্টফোনের স্পিড চেক কি
স্মার্টফোন কিংবা যে কোন ডিভাইসের স্পিড চেক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্পিড চেক হলো, স্মার্টফোনটির প্রসেসর এবং র্যাম অনুযায়ী এটি সঠিক গতিতে চলছে কিনা এটা পরীক্ষা করা।
স্পিড চেক কেন দরকার
- ফোনকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা জন্য।
- ফোনের ফিচার অনুযায়ী কাজগুলো সঠিকভাবে করার জন্য।
- ফোনের অভ্যন্তরীণ সফটওয়্যারগুলোকে সঠিকভাবে পরিচালনার করা জন্য।
- ফোনটিকে দীর্ঘস্থায়ীভাবে ব্যবহার করার জন্য।
- গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার সময় ফোনটি যেন বিকল হয়ে না যায়, সে বিষয়টা গুরুত্ব দেয়ার জন্য।
- ফোনের ব্যাটারি এবং ডিসপ্লে সুরক্ষিত রাখার জন্য।
বেঞ্চমার্ক বেসিকস (Benchmark Basics)
বর্তমানে বাজারে যে সকল স্মার্টফোন পাওয়া যায় প্রায় সকল স্মার্টফোনেই বেঞ্চমার্ক বেসিকস সফটওয়্যার ইন্সটল করা যায় এবং ব্যবহার করা যায়। বেঞ্চমার্ক মূলত একটি প্রোগ্রাম, স্মার্টফোনে সাধারণত এই প্রোগামের প্রাক কম্প্রোমেড অপারেশনগুলির একটি সিরিজসহ অভ্যন্তরীণ উপাদানগুলির পরীক্ষা করে।
সাধারণত এ ধরণের বেঞ্চমার্ক বেসিকস্ সফট্ওয়্যারগুলো প্রি-প্রোগ্রামড্ অপারেশনের মাধ্যমে স্মার্টফোনের ইন্টারনাল কম্পোনেন্ট চেক করে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ, ব্রাউজার বেঞ্চমার্ক আপনার ফোনের নেট চেক করার জন্য একটা ওয়েব পেজকে অন্তত ২০বার লোড করে থাকে। গ্রাফিক্স বেঞ্চমার্ক ফোনের ইন্টারনাল অ্যাপস্, পেজ এবং অন্যান্য ফিচার কত দ্রুত ডিসপ্লেতে আসে, সেটা চেক করে থাকে।
মূল কথা, বেঞ্চমার্ক সফট্ওয়্যারগুলো সঠিকভাবে আপনার ফোনের পারফরমেন্স চেক করে দিতে পারে। কিন্তু এ জাতীয় অনেক সফট্ওয়্যার থাকায়, আপনাকে সঠিক সফট্ওয়্যারটি বাছাই করে নিতে হবে।
সঠিক অ্যাপ্লিকেশন নির্বাচন (Choosing the right apps)
সঠিক অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করে, আপনি আপনার সিস্টেমের পারফরম্যান্স ট্র্যাক করতে পারবেন এবং স্ল্যাডাউনগুলিও দেখতে পারবেন। আপনি অন্যান্য ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে আপনার ফোনের স্কোরগুলি তুলনা করতে পারবেন। যদি এটা সম্ভব না হয় অর্থাৎ স্কোরগুলি খুজে না পান তাহলে বেঞ্চমার্ক নাম এবং আপনার ফোনের মডেলের নাম ব্যবহার করে একটি দ্রুত ওয়েব অনুসন্ধান চালাতে পারেন। তবে নিচে যে কয়টি অ্যাপ্লিকেশন সাজেস্ট করেছি, তার সবগুলোই সঠিকভাবে চেক করে দিতে পারবে আপনার স্মার্টফোনের স্পিড।
অ্যানটুটু বেঞ্চমার্ক (Antutu Benchmark )
এটি শীর্ষস্থানীয় বেঞ্চমার্ক অ্যাপলিকেশনগুলির মধ্যে একটি। এটি আপনার ফোনের প্রসেসর, র্যাম, গ্রাফিক্সগুলি বিভিন্ন পরীক্ষার একটি সিরিজের মাধ্যমে দেখাতে সক্ষম যে আপনার ফোনটি কতটা শক্তিশালী। এই পরীক্ষার অংশ হিসেবে এটি প্রসেসর এবং মেমোরির চাপ পরীক্ষা করে ফোনটিকে রান করে। প্রতিটি রান শেষে আপনি অন্যান্য ব্যবহারকারীদের সাথে আপনার ফলাফল তুলনা করতে পারেন। বেঞ্চমার্কিং ছাড়াও অ্যাপ্লিকেশনটি আপনার ফোনের সিপিইউ লোড এবং ব্যাটারির তাপমাত্রাও বলে দিতে সক্ষম।
গীকবেঞ্চ ৪ (Geekbench 4)
আরো একটি কার্যকর অ্যাপ, যেটি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসগুলির জন্য সম্পূর্ণ ফ্রি। কিন্তু আইওএস ডিভাইসগুলোতে ইন্সটল করার জন্য $১(১ ডলার) খরচ করতে হবে। এই অ্যাপসটি মূলত প্রসেসরের স্পিড এবং মেমোরির স্পিড নিয়ে কাজ করে থাকে। অ্যাপ্লিকেশনটি আপনার ডিভাইসে রান করালে এটি ডিভাইসের কোর স্কোর রেকর্ড করে রাখে, যে কারণে আপনি ডিভাইসের কর্মদক্ষতার উন্নতি এবং অবনতি চেক করতে পারবেন। এই অ্যাপসটি আপনার ডিভাইসটিকে অন্যান্য ডিভাইসের সাথে তুলনা করতে দেয়, যা একই বেঞ্চমার্কিং পরীক্ষার মাধ্যমে করা হয়েছে।
ফ্রি অ্যাপ থ্রিডি মার্ক(3DMark)
এই অ্যাপসটি সম্পূর্ণ ফ্রি ভাবে ব্যবহার করতে পারবেন অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস ব্যবহারকারীরা। এই অ্যাপসটি মূলত গেমস এবং গ্রাফিক্স এর গুরুত্ব দেয়। আপনার ডিভাইসটি জটিল ভিজ্যুয়াল দৃশ্যগুলো কিভাবে প্রেজেন্ট করছে, এই অ্যাপসের মাধ্যমে আপনি সেগুলো বুঝতে পারবেন। অ্যাপসটির ইন্সটল করে রান করার পর যখন ডিভাইসটির স্কিন টাচ করে কাজ শুরু করবেন, তখন একই মডেলের অন্য একটি ফোনের সাথে নিজের ফোনের টাচ, গ্রাফিক্স, গতি ইত্যাদি চেক করলে বুঝতে পারবেন যে আপনার ডিভাইসটির আগের চেয়ে উন্নত না অবনত হয়েছে।
আরও পরীক্ষা (Further tests)
উপরে উল্লেখিত অ্যাপসগুলি আপনাকে আপনার ডিভাইসের পারফরম্যান্স এর একটি ব্যাপক ওভারভিউ দেবে। তবে আপনি আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আপনার ফোন বা ডিভাইসের ওয়েব ব্রাউজার এবং ব্যাটারির আরও নির্দিষ্ট দিক পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
আপনি আরও একটি পরীক্ষা দ্বারা জানতে পারবেন যে, ইন্টারনেট পরিসেবা প্রদানকারী (আইএসপি) ডাউনলোড এবং আপলোডের গতিগুলো চাহিদানুযায়ী প্রদান করছে কিনা। আমরা আপনাকে সাজেশন হিসেবে ওকলা (Ookla) এবং নেটফ্লিক্স (Netflix) এর কথা উল্লেখ করতে পারি। এই দুটি অ্যাপসই অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস ডিভাইসগুলোতে কাজ করতে সক্ষম। দুটি অ্যাপসই ফ্রি, কিন্তু ওকলাতে কাজ করার সময় অ্যাড চলে আসতে পারে। অ্যাডগুলো রিমুভ করার জন্য আপনাকে $১ ডলার খরচ করতে হবে।
পারফরম্যান্স সংশোধন (Reclaim your performance)
এই পোষ্টটি পড়ার পর আপনি অনেকগুলি বেঞ্চমার্ক অ্যাপ্লিকেশন এর সাথে পরিচিত হয়েছেন। অ্যাপসগুলি নিয়মিতভাবে ডিভাইসে চালালে, আপনি এর কার্যকারিতা সম্পর্কে বুঝতে পারবেন। অ্যাপস চলাকালে কখনও যদি ড্রপস দেখেন, তাহলে আপনি অ্যাপস থেকে এই সমস্যার সমাধান করতে পারবেন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, আপনাকে অবশ্যই আপনার ফোনের ক্লাস্টারটি পরিষ্কার রাখতে হবে। ফোনটিকে গতি সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশনস ব্যতিত অন্য অ্যাপ্লিকেশনগুলো ব্যাক আপ হিসেবে অন্য কোথাও রাখুন।আপনি চাইলে বেশী জায়গা নিয়েছে এমন ধরণের ভিডিওগুলোকেও ব্যাকআপ এ রাখতে পারেন। আপনার ফোনের মেমোরির সুষম বন্টনের ব্যাপারটিও ফোনের সুরক্ষা এবং গতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।
আরেকটি কাজ করতে পারেন, আপনার ফোনটিকে শীর্ষ গতিতে চালানোর জন্য ফ্যাক্টরি রিসেট দিতে পারেন। এটি করলে হয়তো আপনার ফোন প্রথমাবস্থার মতো শীর্ষ গতিতে চলতে থাকবে না, কিন্তু নতুন নতুন অ্যাপ্লিকেশন চালানোর ক্ষেত্রে এই কাজটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। রিসেট করার জন্য আপনার প্রয়োজনীয় ফাইল, অ্যাপস এবং ভিডিওগুলি কোনো ব্যাক-আপ ষ্টোরে রাখুন। কারণ, একবার রিসেট দিলে আপনার এইসব প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
আপনার আরেকটি বিষয় চেক করে নেয়া উচিত যে, আপনার ফোনের সেট-আপ পাসওয়ার্ড আপনার খেয়াল আছে কিনা।
একবার রিসেট হয়ে গেলে, ফোনটিকে আরও একবার স্ক্র্যাচ থেকে সেট করে নিতে হবে। এই কাজটি করার সময় সিস্টেমের পারফরম্যান্সে ট্যাবগুলি রাখার জন্য একটি বেঞ্চমার্কিং টুল ইন্সটল করতে ভূলবেন না।
আমাদের পোষ্টটি বুঝে পড়ে থাকলে, আপনারা অবশ্যই ভালো ফলাফল পাবেন, আপনার স্মার্টফোনের স্পিড চেক করতে পারবেন সহজে। আমরা যারা স্মার্টফোন ব্যবহার করি, তারা অবশ্যই চেষ্টা করব উপরের নিয়ম-কানুনগুলো মেনে স্পিড চেক করতে। স্পিড চেক সংক্রান্ত এই টিউটোরিয়াল সম্পর্কে কোন মতামত দিতে চাইলে কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করুন। আমরা চাই, আপনাদের গ্রহনযোগ্য মতামত নিয়ে কাজ করতে। কারণ, আপনাদের মন্তব্যই আমাদেরকে ভালো কিছু উপস্থাপন করতে আশা জাগায়।
Leave a Reply